বিদেশে উদ্ধার হওয়া ৯৭% লিবিয়ায়
প্রকাশিত:
২৭ নভেম্বর ২০২২ ০৩:১০
আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৪৪

ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন পূরণে দালালদের ১০ লাখ টাকা দিয়েও লিবিয়াতে আটক থেকে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন হবিগঞ্জের ফ্রজাতপুরের বাসিন্দা মো. করিম হোসেন। তাকে সমুদ্রপথে টলারে লিবিয়া থেকে ইতালি নেওয়ার কথা বলে এক মরুভূমিতে ২৬ দিন আটকে রাখার পর পুলিশের হাতে তুলে দেয় দালালরা। জেল খেটে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) সহায়তায় গত ১৭ আগস্ট দেশে ফিরেছেন।
একইভাবে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে দালালদের সাড়ে তিন লাখ টাকা দেন সুনামগঞ্জের জগন্নাতপুরের বাসিন্দা সিএনজি অটোরিকশা ড্রাইভার এনামুল হক। কিন্তু তাকে লিবিয়া নিয়ে আটকে রেখে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে পরিবারের কাছে আরও টাকা দাবি করা হয়। পরে দালালদের কাছ থেকে পালিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন এনামুল। তাকেও সম্প্রতি দেশে পাঠিয়েছে আইওএম।
শুধু করিম হোসেন ও এনামুল হক নয়, এমন হাজার হাজার বাংলাদেশি ভুক্তভোগী লিবিয়াতে আটকে আছেন। যাদের স্বপ্ন ছিল ইতালি বা ইউরোপের কোনো দেশে যাওয়া। পরিবারের সচ্ছলতা আনার সেই স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। এর আগে ২০২০ সালের মে মাসে লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করে দালালরা। আইওএম গত দুই বছরে পাচার হওয়া যেসব বাংলাদেশিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে উদ্ধার করে প্রত্যাবর্তন করেছে, তাদের ৯৬ দশমিক ৮৭ ভাগই লিবিয়া থেকে উদ্ধার হওয়া। এখনো কয়েক হাজার বাংলাদেশি লিবিয়াতে আইওএমের তত্ত্বাবধানে দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন।
ভুক্তভোগী করিম হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০২২ সালের শুরুর দিকে স্থানীয় দালাল আলী হোসেনকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছি ইতালিতে যাওয়ার জন্য। সে লিবিয়া পর্যন্ত নিয়ে সেখানে এক মরুভূমিতে ২৬ দিন আটকে রাখে। বলা হয় টলারে করে ইতালি পাঠানো হবে। আমার মতো আরও প্রায় ৪০০ বাংলাদেশি ওই মরুভূমিতে ছিল। কিন্তু দালালরা পরে আমাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
আরেক ভুক্তভোগী এনামুল হক বলেন, স্থানীয় এনাম তালুকদারের সঙ্গে চুক্তি হয় সাত লাখ টাকার বিনিময়ে ইতালি নিয়ে যাবে। সম্পূর্ণ টাকা ইতালি যাওয়ার পর পরিশোধ করতে হবে। এই শর্তে আমার সিএনজি অটোরিকশাটি বিক্রি করে ইতালি যাওয়ার উদ্যোগ নিই। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার বিমানবন্দর থেকে প্রথমে নেয় কাতারে। সেখান থেকে দুবাই হয়ে নেওয়া হয় লিবিয়াতে। কিন্তু লিবিয়াতে নেওয়ার পরই দালালরা সম্পূর্ণ টাকা দাবি করে। সাড়ে তিন লাখ টাকা পরিশোধ করি। কিন্তু লিবিয়া থেকে ইতালিতে না নিয়েই আরও সাড়ে চার লাখ টাকা দাবি করে। আমি টাকা না দেওয়ায় আমার ওপর নির্যাতন শুরু করে। পরে কৌশলে দালালদের হাত থেকে পালালেও পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হই।
মানব পাচারসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজ করা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ট্রাফিকিং হিউম্যান বিং (টিএইচবি) সূত্রে জানা গেছে, মাইগ্রেশন নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা আইওএম ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ২০ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে উদ্ধার করে ১৮ হাজার ২৩ জনকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। এদের মধ্যে শুধু লিবিয়া থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে ১৭ হাজার ৫৬ জনকে। লিবিয়া ছাড়াও গত দুই বছরে গ্রিস, তিউনিসিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে (ইউএসএ) পাচার হওয়া ৫৭ বাংলাদেশিকে আইওএম উদ্ধার করে দেশে পাঠিয়েছে।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: