চাকুরিদাতা কোম্পানীর বিলুপ্তির ফলে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে কর্মরত শ্রমিকদের অভিবাসন


প্রকাশিত:
৮ মে ২০১৯ ০৬:৩৮

আপডেট:
১৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৩৫

চাকুরিদাতা কোম্পানীর বিলুপ্তির ফলে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে কর্মরত শ্রমিকদের অভিবাসন

স্কিলড ওয়ার্কার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় যারা কাজ করতে আসেন তাদের সবারই স্বপ্ন থাকে কর্মজীবনের এক পর্যায়ে তারা এদেশের স্থায়ী বাসিন্দা বা পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির সুযোগ পাবেন। স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার এ সুযোগটি হলো অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব পাওয়ার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সুতরাং সকল শর্ত পূরণ হলে অভিবাসনে ইচ্ছুক প্রবাসীরা সাধারণত স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার আবেদন করতে আর দেরী করেন না।



কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি ভিসার জন্য আবেদন করে আগের তুলনায় বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে, যার কারণে অনেক সময় অভিবাসীরা ঝুঁকির মুখে পড়ছেন। দীর্ঘ অপেক্ষার সময়ের সুযোগে অনেক সময় তাদের কাছ থেকে কর্মদাতারা অন্যায় সুযোগ নিচ্ছে, আবার কখনো হয়তো তাদেরকে কপালের ফেরে এদেশ ছেড়ে চলেও যেতে হচ্ছে।



যখন কোন অভিবাসী একজন স্পন্সর বা চাকুরিদাতার অধীনে কাজের শর্তে আসছেন, তখন তাদের পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির ভিসার প্রক্রিয়া শেষ হতে অনেক সময় দুই বছর সময়ও লেগে যাচ্ছে।



এ দুই বছর সময়কাল ক্ষেত্রবিশেষে অনেকের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনছে। দুই বছর সময়ের ভেতরে অনেক ব্যবসাই বিলুপ্ত হতে পারে। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার কর্মপরিবেশে নির্দিস্ট কিছু সেক্টরে ব্যবসায়িক উদ্যোগের বিলুপ্তি খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। যখন এমন কোন ঘটনা ঘটে তখন দেখা যায় ঐ ব্যবসায় কর্মরত অভিবাসী শ্রমিকদেরকে নতুন করে আবার স্পন্সরশিপ খুঁজতে হয় এবং পুরো আবেদনপ্রক্রিয়া আবার নতুন করে শুরু করতে হয়। যার খরচও অনেক বেশি।



এমন সময়ে যদি তারা নতুন কোন স্পন্সর খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়, অথবা নিয়মের কোন পরিবর্তন ঘটে তখন তাদেরকে নিরুপায় হয়ে নিজের দেশে ফিরে যেতে হয়।



চায়নার নাগরিক মিরা চ্যান এর জীবনে ঠিক এমনটাই ঘটেছে। তিনি পাঁচ বছর যাবত অস্ট্রেলিয়ায় তার স্বামীর সাথে বসবাস করছেন, এর ভেতরে তিনি দুইবার স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার খুব কাছাকাছি পৌছে গিয়েছিলেন। কিন্তু দুইবারই তার চাকরিদাতা কোম্পানীর বিলুপ্তির ফলে তাকে ব্যর্থ হতে হয়েছে। ত্রিশ বছর বয়সী এই শেফ গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা মনে করেছিলাম এ দেশে আমাদের ভবিষ্যত জীবন কাটাবো কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আর সে সুযোগ নেই।



তিনি যখন পার্থের জেমি’স ইটালিয়ান নামক রেস্টুরেন্টে জুনিয়র শেফ হিসেবে কাজ করতেন তখন সেই রেস্টুরেন্টের স্পন্সরশিপে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার জন্য আবেদন জমা দেন। বিখ্যাত বৃটিশ শেফ জেমি অলিভার এই চেইন রেস্টুরেন্টটি প্রতিষ্ঠা করেন।



পার্থে এ রেস্টুরেন্টের মালিক ছিলো কীস্টোন গ্রুপ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি আর্থিক দেউলিয়াত্ব ঘোষণা করলে তখন একই জেমি’স ইটালিয়ান রেস্টুরেন্টের ক্যানবেরা শাখা তাকে চাকুরি এবং স্পন্সরশিপের প্রস্তাব দেয়। এ কাজ পেয়ে মিরা সপরিবারে পার্থ থেকে ক্যানবেরায় চলে আসেন এবং ক্যানবেরায় জেমি’স ইটালিয়ানে কাজ শুরু করেন। নতুন করে ভিসার আবেদন করতে তাকে পুনরায় ৩,৫০০ ডলার সরকারী ফি জমা দিতে হয়।



কিন্তু গত বছর এপ্রিলে এক ছুটির দিনে তিনি তার হেড শেফের একটি ফোন পান। ফোনে তাকে জানানো হয় দ্রুত রেস্টুরেন্টে আসার জন্য, তাকে বলা হয় কাজের পোষাক আনার প্রয়োজন নেই। তখনই তিনি বুঝতে পারেন কোন একটি সমস্যা হয়েছে। তিনি শুধু ভাবছিলেন, দুই বছরের ভেতরে একই ঘটনা আবার আমার সাথেই কেন ঘটলো?



সেদিন রেস্টুরেন্টে পৌছার পর তাকে জানানো হয়, আজ থেকে রেস্টুরেন্টটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।



ডিপার্টমেন্ট অফ হোম এফেয়ার্স এখনো মীরার আবেদনের কোন ফলাফল যদিও জানায়নি, কিন্তু চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলশ্রতিতে এ আবেদন প্রত্যাখ্যান এবং প্রত্যাখ্যানের ২৮ দিনের ভেতর অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হওয়ার বিষয়টি প্রায় সুনিশ্চিত হয়ে আছে। কারণ তার শেষবার আবেদনের পর ভিসার নিয়ম পরিবর্তন হয়েছে, যে নতুন নিয়মের ফলে এখন মীরা যদি অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে চাকুরি পায় তবুও এদেশে থাকার জন্য ভিসার আবেদন করার সুযোগ পাবেন না। কারণ নতুন নিয়মে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে অন্তত তিন বছরের, যেখানে তার এক বছরের অভিজ্ঞতা কম আছে।



অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসার আবেদন প্রক্রিয়াতে দীর্ঘসুত্রিতার একজন শিকার হলেন মীরা চ্যাং। তারা জানাচ্ছেন, একই ভাবে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে যারা স্বামী-স্ত্রী বা পিতামাতা হিসেবে ভিসার আবেদন করেছেন তাদেরকেও। এ দীর্ঘসূত্রিতার ফলে অনেক সময় চাকুরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও অভিবাসনে ইচ্ছুক শ্রমিকদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিতে কার্পন্য করে। এমন সময়ে শ্রমিকরাও কোন অভিযোগ করতে ভয় পায়, কারণ যদি তাদেরকে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা হয় তাহলে তাদেরকে হয়তো এদেশ ছেড়ে চলেও যেতে হতে পারে।



 



 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top