আমি এই কার্টুন ওয়ার্ল্ড থেকে: খন্দকার জাহিদ হাসান
প্রকাশিত:
৪ মে ২০১৮ ০৫:১১
আপডেট:
১২ এপ্রিল ২০২০ ০১:২০
হে কার্টুনসম্রাজ্ঞী,
আপনার এই নাটবল্টুবিহীন সাম্রাজ্যে কখন যে কিভাবে ঢুকে পড়েছি,
কিচ্ছু মনে নেই ছাই।
এখানে, এই কার্টুনের জগতে, একটা তালগাছ
আদ্যিকালের একটা বটগাছের কাণ্ড ভেদ করে বেরিয়ে গিয়ে আকাশ ছুঁই ছুঁই করছে।
এখানে কিংকং সাইজের হোঁদল কুতকুত এক পলিটিশিয়ান
মাইক্রোফোন হাতে ক্রমাগত শিল্প-সাহিত্যের মহিমা কীর্তন করে চলেছে।
এখানে দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণ করতে গিয়ে ব্যাটা দুঃশাসন
‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ গোছের এক উট্কো ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিল বটে,
তবে ঘুষের বিনিময়ে শেষ পর্যন্ত সবকিছু ম্যানেজ করে নিয়েছে। এখানে টুইন প্যারাডক্স আর ল্যাডার প্যারাডক্সের ছাইপাঁশ কিছু বুঝতে না পেরে
থট এক্সপেরিমেন্টের মুন্ডুপাত করছে সুন্দরী মিস্ ক্লারা প্যাক্সটন।
জানি না কোন্ কুক্ষণে এই কার্টুনরাজ্যে আমার অনুপ্রবেশ ঘটেছিল।
এখানে একটা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কুকুর, একটা হাসিখুশি বেড়াল আর একটা লাজুক ইঁদুর
শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জ্বলন্ত নজীর স্থাপন করেছে।
এখানে অসাংস্কৃতিক গুবরেপোকা সাংস্কৃতিক জোনাকির রূপ নিয়ে
আলো ছড়ানোর ব্যর্থ প্রয়াস পাচ্ছে-
আর অপরিণত সাহিত্যিক বৃশ্চিক মনসা দেবীর কৃপা ভিক্ষা করছে।
এখানে কসমোপলিট্যান সব পরীরা
একজোড়া করে ডানার চাহিদা দিব্যি ডিজিটাল ওড়নাতেই মেটাচ্ছে।
হে কার্টুনদেবী,
আপনার এই স্ক্রু-ঢিল জগতে আকাংখিত প্রেয়সী কেবলি হাতছাড়া হয়ে যায়,
কেবলি সে নন্-ইন্টেলেকচুয়াল টেকোর বাগদত্তা থেকে বউ বনে যায়,
দু'বছর স্বামীকে নিয়ে কেবলি সে ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটায়,
তারপর আন্ডা-বাচ্চাদের নিয়ে দু'দশক সে আরও বেশী ব্যস্ত থাকে,
অবশেষে বেশভূষা পালটাতে পালটাতে
অতঃপর একদা কেবলি নাতিপুতি আর তসবী নিয়ে সময় কাটায় সে।
বিশ্বাস করুন, শেফালি লাইলি কিংবা ন্যাটালি
যখন ক্ষিপ্ত হয়ে প্রেমিকের মুন্ডু নিয়ে টেনিস খেলে,
তখন তাদের প্রতিটি স্ট্রাইকে যে পরিমাণ করে বল প্রযুক্ত হয়,
তার এক্স কম্পোনেন্ট ও ওয়াই কম্পোনেন্ট-
উভয়ের নরমাল ভ্যালুই হয়ে থাকে ইনফিনিটি।
হে কার্টুনসম্রাজ্ঞী,
মস্তিষ্কে বড়ে গোলাম আলী ও ছোটে গোলাম আলী খানের
অপূর্ব সব গানের স্মৃতি নিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই কার্টুন সাম্রাজ্যে ঢুকে পড়েছি বলে
আমি যারপরনাই দুঃখিত।
মুঝে ইয়ে মালুম নাহি থা এখানে গান গাওয়ার জন্য নিক্ষিপ্ত টমেটো
এবং না গাওয়ার জন্য রুপেয়া মিলতা হ্যায়।
আবার জানলে যে কি করতাম, তাও ঠিক মালুম নাহি।
জীবনের শেষভাগে এসে ছোটে-বড়ে আওর মাঝারী গোলাম আলীগণ
অ্যাস্ট্রাল ওয়ার্ল্ডে গমনের জন্য উদগ্রীব হয়ে বসে থাকেন,
কারণ ওখানে গানা গ্যাহেনে কে লিয়ে
টাকা-পয়সা বা পচা ডিম কোনোটিই জোটে না- কেবলি জোটে প্রতিশ্রুত অমিয়।
হ্যাঁ, আমি এই কার্টুন ওয়ার্ল্ড থেকে
কোনো ধরণের টেলিস্কোপ ছাড়াই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি-
অ্যাস্ট্রাল প্লেনে স্টিফেন হকিং তাঁর আগের সেই সুস্বাস্থ্য আর যৌবন
পুরোপুরিভাবে ফিরে পেয়েছেন,
আর সৈয়দ মুজতবা আলীর পাশেই তাঁর নৈশভোজের আসনটি পড়েছে।
এক নজর নিজের প্লেটের দিকে তাকিয়ে নিয়ে মিস্টার হকিং
বিস্ময়ভরে সৈয়দ সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন,
"একি, অ্যাস্ট্রাল ওয়ার্ল্ডের প্রথম ডিনারে আমাকে এটা ওরা কি খেতে দিয়েছে?"
মুজতবা আলী কিছু একটা বলার আগেই দু'ডানায় ভর করে ভেসে এলো
অ্যাস্ট্রাল কন্যা এক ওয়েট্রেস, তার হাতে ধরা ট্রেতে কিছু স্টিকি টফি পুডিং-
"স্যার, দ্যাটস্ আ ওয়ান্ডাফুল বেঙ্গলি ডিশ-
দ্য গ্রেট মাসটার্ড হিলশা কারি উইথ বয়েল্ড রাইস- ইউ'ড্ সিম্পলি লাভ ইট!
বিসাইডস্, উই আর সার্ভিং স্টিকি টফি পুডিং ফর ইউর ডিজার্ট।"
বিড়বিড় করলেন স্টিফেন হকিং,
"অ্যাস্ট্রাল প্লেনেও যে কালচারাল মামদোবাজি থাকতে পারে জানা ছিল না তো!"
"সরি স্যার, এখানে কোনো কালচারাল মামদোবাজি নেই,
থাকলে আমি এই স্কার্টের বদলে শাড়ীই পরতাম।
আর ডিজার্ট হিসেবে আপনার প্রিয় স্টিকি টফি পুডিং না এনে
গোটা কয়েক রাঘবসাই নিয়ে আসতাম।"
ভোজনপর্ব শেষ হলে সৈয়দ মুজতবা আলী স্টিফেন হকিংকে শুধালেন,
"কেমন লাগল ইলিশের সুরুয়া?"
দুই কাঁধ ঝাঁকালেন মিঃ হকিং, "ইট ওয়াজ নট ব্যাড, অলদো বিট বোনি।
তবে মুখে কোনো স্বাদ পাচ্ছি না, অতি সম্প্রতি লোকান্তরিত হয়েছি তো!"
"ইয়ে, কাল থেকে তো আপনার সাইকোথেরাপি শুরু হচ্ছে, না?"
"হুঁ, তবে তার আগেই সৃষ্টিতত্ত্বের
সেই বহুল আলোচিত ‘গ্র্যান্ড ডিজাইন'-টা একটু সংশোধন করা দরকার।"
খন্দকার জাহিদ হাসান
বিষয়: খন্দকার জাহিদ হাসান কবিতা
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: