দাস ও গুরু : শাকিলা নাছরিন পাপিয়া
প্রকাশিত:
১৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:৩২
আপডেট:
৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৬:৫৯
অমলকান্তি যখন রোদ্দুর হতে চেয়েছিল
আমি তখন শিক্ষক হবার স্বপ্নে।
আমার শিক্ষক পিতা রোদে পুড়ে, ঘামে নেয়ে
ভেজা পাঞ্জাবিটা খুলতে খুলতে
অফিসের বড়বাবু তার ছাত্রের গল্পে বিভোর।
পা ছুঁয়ে সালাম
বিস্ময়ে বিস্ফোরিত অসংখ্য চোখ
চেয়ার ছেড়ে বসতে দিয়ে দাঁড়ানো অবনত।
সারা অবয়বে দ্যুতি ছড়িয়ে যখন বলতেন
তখন অন্য এক জগতের বাসিন্দা তিনি।
পিতার সে আনন্দ, তৃপ্তি আর সৃষ্টির ভূবণে
ঘরের চাল বাড়ন্ত
ছোট বোনের পথ্য, ঔষধ
ভাইয়ের কলেজের বেতন
মায়ের ছেঁড়া শাড়ি
আমার আইবুড়ো অপবাদ
কিছুই স্পর্শ করতো না তাকে।
আমার স্কুল শিক্ষক পিতা
"সামান্য শিক্ষক" বিশেষণ ললাটে এঁকে
'একদিন আমরাও----' এ প্রত্যাশয়
ক্ষমতা আর অর্থের কাছে পরাজিত
গোটা একটা জীবন।
শিক্ষার্থীদের সফলতায় গৌরবের আলো মেখে
অহংকারে ফুলে ওঠা বক্ষ
আর নিজেকে স্রস্টা ভেবে
অপার আনন্দলোকে ভেসে বেড়ানো পিতাকে দেখে
আমি বিসর্জন দেই ---
ওপরে ওঠার সিঁড়ি
অট্টালিকার সুখ
বিত্ত, বৈভব আর ক্ষমতার লিপ্সা।
শুধুই শিক্ষক হবার দূরন্ত বাসনায়
উঠে দাঁড়াই নির্ভীক।
হায়! কে জানতো?
শিক্ষক হতে গিয়ে ক্রমশই
তলিয়ে যাচ্ছি, বদলে যাচ্ছি অনুগত দাসে,
সরীসৃপের মতো মেরুদন্ডহীন আমি
মেরুদন্ড গড়ার নিষ্ফল দায় নিয়ে কাঁধে।
অপেক্ষায় কাটে প্রহর
একজন একলব্যের গুরুদক্ষিণার লোভে
একজন অর্জুন সৃষ্টির স্বপ্নে
সেই কবে থেকে দাঁড়িয়ে
দাস থেকে গুরু হবার বাসনায়।
শাকিলা নাছরিন পাপিয়া
শিক্ষক ও কলামিস্ট
বিষয়: শাকিলা নাছরিন পাপিয়া
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: