সিডনী সোমবার, ৬ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১


কোরবানির ফজিলত, বিধান ও শর্তাবলি


প্রকাশিত:
৪ আগস্ট ২০১৯ ০০:৩৮

আপডেট:
৬ মে ২০২৪ ০১:৪১

কোরবানির ফজিলত, বিধান ও শর্তাবলি

কুরবানি শব্দের অর্থ হলো নৈকট্য লাভের উপায় হিসেবে শরীয়ত সম্মত যে কোনো বস্তু ব্যবহার করা। আর শরীয়তের পরিভাষায় কোরবানি বলা হয় ওই নির্দিষ্ট জন্তুকে যা একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে একমাত্র মহান আল্লাহর নামে জবাই করা হয়।



কোরবানির ফজিলত



কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস ও তাফসীরের গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। তারই আলোকে সংযোগে কিছু ফজিলতের কথা তুলে ধরা হলো। তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ শরীফে হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদিসে প্রিয় রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, আদম সন্তান কোরবানির দিন যেসব নেকীর কাজ করে থাকে তন্মধ্যে আল্লাহপাকের নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হলো কোরবানি করা। কাল কিয়ামতে কুরবানির পশু তার শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত হবে।



অর্থাৎ, এসব কুরবানি দাতার পাল্লায় দেয়া হবে যা নেকীর পাল্লা ভারী হয়ে যায় এবং কুরবানির পশুর রক্ত জমিনে পড়ার পূর্বেই তা আল্লাহ পাকের নিকট কবুল হয়ে যায়।



তাবরানী শরীফে হযরত ইমাম হাসান বিন আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, হযরত রাসূল পাক (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্ট চিত্তে খুশি হয়ে কুরবানি করবে এ কোরবানি তাকে জাহান্নামের আগুন হতে মুক্ত রাখবে।



হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, প্রিয় রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, কোরবানির উদ্দেশ্যে ওই দিনে যে অর্থ ব্যয় করা হয় তার তুলনায় অন্য কোনো ব্যয়ই উত্তম নয়।



একদা প্রিয় রাসূল (রাঃ) মা ফাতেমা (রাঃ)কে ডেকে এরশাদ করেন, হে ফাতেমা! তুমি তোমার কোরবানির জন্তুর নিকটে যাও কেননা কোরবানি জন্তু জবাই করার পর রক্তের প্রথম ফোঁটা মাটিতে পড়ার সাথে সাথে তোমার যাবতীয় গুণাহ মাফ হয়ে যাবে। মা ফাতেমা (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূল্লাহ (সাঃ) এটা কি শুধু আমার জন্যে? প্রিয় রাসূল জবাবে বললেন এটা আমাদের এবং সকল মুসলমানদের জন্যে।



কোরবানির বিধান



কোরবানির হুকুম কি ? ওয়াজিব না সুন্নত ? এ বিষয়ে ইমাম ও ফকীহদের মাঝে দুটো মত রয়েছে।

প্রথম মত : কোরবানি ওয়াজিব। ইমাম আওযায়ী, ইমাম লাইস, ইমাম আবু হানীফা রহ. প্রমুখের মত এটাই। আর ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ রহ. থেকে একটি মত বর্ণিত আছে যে তারাও ওয়াজিব বলেছেন।

দ্বিতীয় মত : কোরবানি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। এটা অধিকাংশ উলামাদের মত। এবং ইমাম মালেক ও শাফেয়ী রহ.-এর প্রসিদ্ধ মত। কিন্তু এ মতের প্রবক্তারা আবার বলেছেন : সামর্থ্য থাকা অবস্থায় কোরবানি পরিত্যাগ করা মাকরূহ। যদি কোন জনপদের লোকেরা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সম্মিলিতভাবে কোরবানি পরিত্যাগ করে তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে। কেননা, কোরবানি হল ইসলামের একটি শিয়ার বা মহান নিদর্শন। 

যারা কোরবানি ওয়াজিব বলেন তাদের দলিল :

(এক) আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন : ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কোরবানি কর।’  আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ পালন ওয়াজিব হয়ে থাকে।

(দুই) রাসূলে কারীম স. বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে।’

যারা কোরবানি পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদিস একটি সতর্ক-বাণী। তাই কোরবানি ওয়াজিব।



কোরবানির শর্তাবলি



এমন পশু দ্বারা কোরবানি দিতে হবে যা শরিয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেগুলো হল উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া,দুম্বা। এ গুলোকে কোরআনের ভাষায় বলা হয় ‘বাহীমাতুল আনআম।’ যেমন এরশাদ হয়েছে : ‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি , তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন,সেগুলোর উপর যেন তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’ 



হাদিসে এসেছে :তোমরা অবশ্যই নির্দিষ্ট বয়সের পশু কোরবানি করবে। তবে তা তোমাদের জন্য দুষ্কর হলে ছয় মাসের মেষ-শাবক কোরবানি করতে পার। আর আল্লাহর রাসূল সা. উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ছাড়া অন্য কোন জন্তু কোরবানি করেননি ও কোরবানি করতে বলেননি। তাই কোরবানি শুধু এগুলো দিয়েই করতে হবে।



ইমাম মালিক রহ.-এর মতে কোরবানির জন্য সর্বোত্তম জন্তু হল শিংওয়ালা সাদা-কালো দুম্বা। কারণ রাসূলে কারীম সা. এ ধরনের দুম্বা কোরবানি করেছেন বলে বোখারি ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে। উট ও গরু-মহিষে সাত ভাগে কোরবানি দেয়া যায়। যেমন হাদিসে এসেছে, আমরা হুদাইবিয়াতে রাসূলুল্লাহ স.-এর সাথে ছিলাম। তখন আমরা উট ও গরু দ্বারা সাত জনের পক্ষ থেকে কোরবানি দিয়েছি। 

 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top