সিডনী রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১


হিজরি সালের উৎপত্তি ও আরবি ১২ মাসের নামকরণ


প্রকাশিত:
৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:০০

আপডেট:
৫ মে ২০২৪ ১৮:৪২

হিজরি সালের উৎপত্তি ও আরবি ১২ মাসের নামকরণ

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: ১৪৪০ হিজরি শেষ হয়ে শুরু হলো ১৪৪১ হিজরি। হিজরি সাল চালু হওয়ার আগে আরবরা তাদের বিভিন্ন স্মরণীয় ঘটনার ওপর নির্ভর করে দিন গণনা করতেন। দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.)-এর যুগে একটি নির্দিষ্ট তারিখ হিসাব করার দরকার হলে হজরত আলী (রা.)-সহ কয়েকজন সাহাবির পরামর্শে একটি নির্দিষ্ট সাল গণনার পরামর্শ করা হয়। এতে কেউ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্ম থেকে, কেউ তার ওপর ওহি নাজিলের দিন থেকে, কেউ তার ইন্তেকালের দিন থেকে সাল গণনার অভিমত দেন। কিন্তু উমর (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) এর হিজরতের ঘটনা থেকে সাল গণনার প্রস্তাব করেন, এতে সাহাবিরা ঐক্যমত পোষণ করেন।



হজরত উমর (রা.)-এর শাসনামলে তার কাছে একটি চুক্তিপত্র আনা হয়। সেখানে শাবান মাসের কথা উল্লেখ ছিল। তখন উমর (রা.) বললেন, এটা কি গত শাবান না আগামী শাবান মাস? এরপর তিনি তারিখ গণনার নির্দেশ দিলেন এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মদিনায় হিজরতকে কেন্দ্র করে হিজরি সাল গণনার সূচনা করেন।



এ সময় মহরমকে প্রথম মাস হিসেবে গণ্য করা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জুলাই হিজরত করেন। সেই দিনকে মহরম মাসের শুক্রবার হিসেবে ধরে হিজরি সাল গণনা শুরু হয়। হিজরি হিসাবের প্রথম প্রয়োগ ঘটে উমর (রা.)-এর শাসনামলে ১৭ হিজরির ৩০ জুমাদাল উখরা অর্থাৎ ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দের ১২ জুলাই থেকে।



এর ধারাবাহিকতায় আজও হিজরি সাল প্রচলিত রয়েছে। (আল-উকদুদ দিরায়া)।



হিজরি সাল গণনার আগে থেকেই আরবি মাসের ব্যবহার ছিল। আরবরা মাসগুলো ব্যবহার করতেন। অন্য সব সালের মতো হিজরি সালেও ১২টি মাস রয়েছে। আল্লাহ তায়ালার কাছেও ১২ মাসে এক বছর। যেমন তিনি ঘোষণা করেন, নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর কাছে গণনার মাস বারোটি, এর মধ্যে চারটি সম্মানিত। (সুরা তাওবা : ৩৬)। এ আয়াতের চারটি সম্মানিত মাসকে চিহ্নিত করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজের সময় মিনা প্রান্তরে দাঁড়িয়ে বলেন, তিনটি মাস হলো জিলকদ, জিলহজ ও মহরম এবং অপরটি হলো রজব। (তাফসিরে ইবনে কাসির)।



হিজরি ১২ মাসের নামকরণের কারণ হলো। মহরম : এর অর্থ হারামকৃত, মর্যাদাপূর্ণ। যেহেতু এ মাসের মর্যাদার কথা বিবেচনা করে যুদ্ধবিগ্রহ হারাম বা নিষিদ্ধ মনে করা হতো, এ জন্য এ মাসকে মহরম বলা হয়। (গিয়াসুল লোগাত : ৪৫৭)।



২। সফর : অর্থ খালি, শূন্য। মহরম মাসে যুদ্ধ বন্ধ থাকায় আরবরা এ মাসে দলে দলে যুদ্ধে যেত। ফলে তাদের ঘর খালি হয়ে যেত। এ জন্য এ মাসের নামকরণ করা হয় ‘সফর’।



৩। রবিউল আউয়াল : শাব্দিক অর্থ বসন্তের শুরু। এ মাসের নামকরণ করা হয় বসন্তকালের শুরু লগ্ন হওয়ার কারণে। (রেসালায়ে নুজুম : ২২৯)।



৪। রবিউল আখের বা সানি : ‘আখের’ অর্থ শেষ। বসন্তকালের শেষ পর্যায়ে হওয়ায় এ মাসের নামকরণ করা হয় রবিউল আখের। (রেসালায়ে নুজুম : ২২৯)।



৫। জুমাদাল উলা : আরবি শব্দ ‘জুমুদ’ থেকে এর উৎপত্তি। অর্থ জমে যাওয়া, স্থবির হওয়া। আর ‘উলা’ অর্থ শুরু বা প্রথম। যখন এ মাসের নাম রাখা হয়, তখন ছিল শীতের শুরুলগ্ন। যখন ঠান্ডায় সবকিছু জমে যেত। পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে মিল রেখে এ মাসের নাম রাখা হয় ‘জুমাদাল উলা’।



৬। জুমাদাল উখরা : ‘উখরা’ অর্থ শেষ। শীতকালের শেষ লগ্নে গিয়ে এ মাসের নামকরণ করা হয় বলে এ মাসের নাম রাখা হয়েছে ‘জুমাদাল উখরা’।



৭। রজব : শাব্দিক অর্থ সম্মান করা। আরবরা এ মাসকে ‘শাহরুল্লাহ’ বা আল্লাহর মাস বলত এবং যথেষ্ট সম্মান করত। এ জন্য এ মাসের নাম রাখা হয়েছে ‘রজব’। (রেসালায়ে নুজুম : ২৩০)।



৮। শাবান : শাব্দিক অর্থ ছড়িয়ে দেওয়া, বিচ্ছিন্ন হওয়া। যেহেতু এ মাসে অসংখ্য কল্যাণ আর রহমতের বৃষ্টি বর্ষিত হয় এবং হায়াত, মওত, রিজিক এবং তাকদিরের নানা বিষয় ফেরেশতাদের হাতে ন্যস্ত করা হয়, এ জন্য এ মাসের নাম রাখা হয়েছে ‘শাবান’। অথবা আরবরা রজব মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ থাকার পর এ মাসে যুদ্ধ করতে ছড়িয়ে পড়ত। তাই এ মাসের নাম ‘শাবান’ রাখা হয়েছে।



৯। রমজান : অর্থ জ্বালিয়ে দেওয়া। যেহেতু এ মাসে বান্দার গুনাহ জ্বলে-পুড়ে পরিষ্কার হয়ে যায়, অথবা গরমকালে এ মাসের নামকরণ করা হয়, এজন্য এ মাসকে ‘রমজান’ বলা হয়। (ইবনে কাসির, খÐ ২, পৃষ্ঠা ২৩৬)।



১০। শাওয়াল : অর্থ তোলা, উঠানো। আরবরা এ মাসে শিকার করার জন্য কাঁধে অস্ত্র উঠাত, এজন্য এর নামকরণ করা হয়েছে ‘শাওয়াল’। (ইবনে কাসির, খÐ ২, পৃষ্ঠা ৩০০)।



১১। জিলকদ : অর্থ বসে থাকা। আরবরা এ মাসে যুদ্ধ না করে বসে থাকত, এজন্য এর নামকরণ করা হয়েছে ‘জিলকদ’। (ইবনে কাসির, খÐ ২, পৃষ্ঠা ২২৬)।



১২। জিলহজ : হজের মাস বলে এ মাসকে জিলহজ বলা হয়। (ইবনে কাসির, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২২৬)।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top