সিডনী সোমবার, ৬ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১


দাজ্জাল থেকে মুসলমানদের  রক্ষা করবেন ঈসা (আ.)


প্রকাশিত:
১৮ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৫৯

আপডেট:
৬ মে ২০২৪ ০০:৫৬

দাজ্জাল থেকে মুসলমানদের  রক্ষা করবেন ঈসা (আ.)

প্রভাত ফেরী, ধর্ম ডেস্ক: হজরত ঈসা (.) ছিলেন বনি ইসরাঈল বংশের সর্বশেষ নবী রাসুল। তার ওপর অবতীর্ণ হয়েছিল আসমানি কিতাব ইনজিল। হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ৫৫০ বছর পূর্বে তিনি পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন। আল্লাহর আদেশে তাকে জীবিত অবস্থায় আসমানে তুলে নেওয়া হয়। কেয়ামতের পূর্বে তিনি পুনরায় পৃথিবীতে আগমন করবেন।



হজরত ঈসা (.)-এর জীবনধারা বিস্ময়কর অলৌকিকতায় ভরপুর। তার মা মারয়ামকে (.) আল্লাহর পক্ষ থেকে অলৌকিকভাবে প্রতিপালন, গর্ভধারণ জন্মদান; জন্মলাভের পরপরই মানুষের সঙ্গে ঈসা (.)-এর কথোপকথন, নবুওত লাভের পর অলৌকিক মুজেজা, ইহুদিদের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা পেতে অলৌকিকভাবে আসমানে আরোহণ, কেয়ামতের পূর্বে আসমান থেকে পৃথিবীতে পুনর্বার আগমন ইত্যাদি। ঈসা (.) সম্পর্কে কোরআনের ১৫টি সুরার ৯৮টি আয়াতে এবং অসংখ্য হাদিসে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে সংক্ষেপে তার সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।



ঈসা (.)-এর  অলৌকিক মুজেজা



ঈসা (.) ফিলিস্তিন শাম অঞ্চলের মানুষকে আল্লাহর পয়গাম পৌঁছাতেন। তাওহিদ রিসালাতের দাওয়াত দেওয়ার পাশাপাশি নবুওতের প্রমাণস্বরূপ আল্লাহ প্রদত্ত পাঁচটি মুজেজা প্রদর্শন করেন তিনি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ঈসা (.) তার কওমকে বলেন, ‘আমি তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে কিছু নিদর্শন নিয়ে এসেছি। যেমন আমি মাটি দিয়ে পাখির আকৃতি তৈরি করে তাতে যখন ফুঁক দেই, তখন তা আল্লাহর হুকুমে উড়ন্ত পাখিতে পরিণত হয়ে যায়। আল্লাহর হুকুমে আমি সুস্থ করে তুলি জন্মান্ধকে কুষ্ঠ রোগীকে এবং জীবিত করে দেই মৃতকে। আমি তোমাদের বলে দেই যা তোমরা খেয়ে আস এবং যা তোমরা ঘরে রেখে আস। এতে প্রকৃষ্ট নিদর্শন রয়েছে যদি তোমরা বিশ্বাসী হয়ে থাক।’ (সুরা আলে ইমরান : ৪৯)



ঈসা (.)-এর এসব অলৌকিক মুজেজা দেখে এবং তার মুখনিঃসৃত তাওহিদের বাণী শুনে তার অনুসারী বাড়তে থাকে। তবে আগে থেকেই তার প্রতি বিরূপ ইহুদিরা আরও বিরূপ হতে থাকে। বনি ইসরাঈলের ইহুদিরা ঈসা (.)-এর বিরোধিতায় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং তাকে জাদুকর বলে আখ্যায়িত করে।



হত্যার ষড়যন্ত্র ঊর্ধ্বারোহণ



সে সময় ফিলিস্তিন শাম অঞ্চল রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। ঈসা (.)-এর তাওহিদের দাওয়াত ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তায় শাসকশ্রেণি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে সে সময়ের রোমান সম্রাট দাউদ ইবনে নুরের নির্দেশে ঈসাকে (.) গ্রেফতারের জন্য সরকারি সেনারা বাইতুল মুকাদ্দাসে ঈসা (.)-এর হুজরা (কামরা) ঘেরাও করে। সেদিন ছিল শনিবার। রাতে খাবারের পরে ১২ ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলোচনার পর একজনের বিশ্বাস ঘাতকতায় ইহুদিরা তার অবস্থানের সন্ধান পেয়ে যায়। তখন আল্লাহ তায়ালা বাড়ির ওপরের ছাদ উন্মোচিত করে ফেরেশতার মাধ্যমে আসমানে তুলে নেন তাকে। সৈন্যরা বাড়ি ঘেরাও করে ঈসাকে (.) ধরে আনার জন্য একজনকে ভেতরে পাঠায়। ভেতরে সে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই তার চেহারা পরিবর্তন করে ঈসা (.)-এর মতো করে দেওয়া হয়। আর তাকে শূলে বিদ্ধ করে হত্যা করে ষড়যন্ত্রকারীরা। তারপর তারা ঈসাকে (.) হত্যার মিথ্যা দাবি প্রচার করতে থাকে। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া : /১৮১-৮৬)



আল্লাহ বলেন, তারা বলে যে, ‘আমরা মাসিহ ঈসা ইবনে মারয়ামকে হত্যা করেছি। তাদের কথা ভুল। আসলে তারা তাকে হত্যাও করেনি, শূলেও চড়ায়নি। বরং তাদের কাছে ঈসা (.)-এর সাদৃশ্যপূর্ণ অন্য একজনকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। তারা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে যে বিষয়ে মতভেদে লিপ্ত সে বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। তারা শুধুই সন্দেহের মধ্যে পড়ে আছে। এটা নিশ্চিত যে, তারা আসলে নিশ্চিতভাবে ঈসাকে হত্যা করতে পারেনি। বরং আল্লাহ তাকে আসমানে তুলে নিয়েছেন।’ (সুরা নিসা : ৫৭-৫৮)



পুনর্বার আগমন দাজ্জালকে হত্যা



কেয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে পৃথিবীতে ঈসা (.)-এর পুনর্বার আগমন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ঈসার পুনরায় দুনিয়ায় আগমন কেয়ামতের একটি নিশ্চিত নিদর্শন।’ (সুরা জুখরুফ : ৬১) হজরত নাওয়াস ইবনে সামআন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) দাজ্জালের আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘দাজ্জাল যখন মুসলমানদের ঈমান ধ্বংসের কাজে লিপ্ত থাকবে আল্লাহ তায়ালা তখন ঈসা ইবনে মারিয়ামকে (.) পাঠাবেন। জাফরানের রঙ্গে রঙ্গিত এক জোড়া পোশাক পরিহিত হয়ে এবং দুজন ফেরেশতার পাখার ওপর হাত রেখে দামেস্ক শহরের পূর্বে অবস্থিত সাদা মিনারের ওপর তিনি অবতরণ করবেন।



তিনি যখন মাথা নিচু করবেন তখন সদ্য গোসলখানা থেকে বেরিয়ে আসা ব্যক্তির মাথা থেকে যেভাবে পানি ঝরতে থাকে সেভাবে তার মাথা থেকে পানির ফোঁটা ঝরতে থাকবে এবং যখন মাথা উঁচু করবেন তখন অনুরূপভাবে তার মাথা থেকে মণি-মুক্তার মতো চকচকে পানির ফোটা ঝরতে থাকবে। কাফেরের শরীরে তার নিশ্বাস পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাফের মৃত্যুবরণ করবে। চোখের দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত গিয়ে তার নিশ্বাস শেষ হবে। তিনি দাজ্জালকে খুঁজবেন এবং ফিলিস্তিনের লুদ শহরের ফটকে তাকে ধরে ফেলবেন। অতঃপর তাকে সেখানে হত্যা করবেন। তারপর তার নিকট এমন কিছু লোক আসবেন যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা দাজ্জালের ফেতনা থেকে হেফাজত করেছেন। তিনি তাদের চেহারায় হাত বুলাবেন এবং জান্নাতে তাদের উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে সংবাদ দেবেন।’ (মুসলিম : ২৯৩৭; আবু দাউদ : /২৩৭; ইবনে মাজা : ৩০৬


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top