সিডনী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

কুকুর কাহিনী


প্রকাশিত:
৩১ মে ২০১৯ ০৪:০২

আপডেট:
৫ এপ্রিল ২০২০ ২০:০২

আহসান হাবীব

এখানে আসার পর থেকে দাওয়াতের উপরেই আছি। প্রথম দাওয়াত শুরু প্রেসিডেন্ট ফারহানের বাসা থেকে, তারপর তিথিকা-জাদিদ, তারপর অনি-মামুন... তারপর... এখনো চলছে! প্রতিবারই খাওয়া দাওয়া আড্ডা শেষ করে বের হতে হতে রাত বারোটা একটা বেজে যায়।

দাওয়াতিরা তাদের গাড়ি দিয়ে পৌঁছে দিতে চায় বাসায়, আমরা রাজী হই না। নিঃশব্দ রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে বাসায় আসি, একটা দুটো গাড়ি পাশ দিয়ে ছুটে যায়। আকাশে থাকে বাংলাদেশের চাঁদ (এই চাঁদটাকে কিছুতেই আমেরিকান চাঁদ বলে মেনে নিতে পারছি না)।

আসলে ফিরে আসার পথতো একটাই...কবির ভাষায় বলতে হয়,

‘পথতো একটাই

তবে কেন এত দ্বিধা তোমাতে আমাতে...

ফিরে যাওয়া যদি অনির্বান সত্য হবে জানো...’  ইত্যাদী ইত্যাদী বাকিটা মনে নেই, কবির নামও মনে করতে পারছি না বলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। 

যাহোক দাওয়াত খেয়ে দেয়ে প্রতিবারই হেঁটে  হেঁটে  আমাদের ফিরে আসাটা খুবই কাব্যিক হচ্ছিল। কিন্তু একদিন কাব্যের মধ্যে একটু ঝামেলা হল। হেঁটে আসছি, বাসার কাছাকাছিই চলে এসেছি প্রায়। হঠাৎ ভয়ঙ্কর চিৎকার করে একটা বিশাল কান ঝোলা কুকুর ছুটে এল আমাদের দিকে। কিছু বুঝে উঠার আগেই ঝাঁপিয়ে পড়ল রীতার উপরে, সে ছিল সবার শেষে। আমরা তিনজনই হতস্তম্ভিতমুঢ় (হতভম্ব+স্তম্ভিত+কিংকর্তব্যবিমুঢ় ... তিনটা এক সাথে যুক্তসন্ধি)। এই সময় তীক্ষ্ণ কন্ঠে এক আমেরিকান নারীর চিৎকার। সব মিলিয়ে ম্যাথেমেটিক্সের থিওরী অফ ক্যাওয়াস লেগে গেল যেন।

তবে খুব শিগ্রী পুরো ব্যাপারটা সামলে উঠলাম আমরা। কুকুরের মালিক আমেরিকান মহিলার ডাকে কুকুর ফিরে গেছে সঙ্গে সঙ্গেই। মহিলাও ছুটে এসে সর‍্যি বলেছে এবং বলেছে তার কুকুর খুবই ফ্রেন্ডলি, কামড়ায় না। আমরা কোথায় যাচ্ছি, চাইলে আমাদের লিফট দিতে পারে... ইত্যাদী ইত্যাদী । আসলে ফ্রেন্ডলি (!) কুকুর ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাদের গন্ধ শুঁকে রীতার হাতে একটু চেটে দিয়েছে, এই পর্যন্ত!! কুকুর নাকি দশ হাজার রকমের গন্ধ আলাদা আলাদা করে মনে রাখতে পারে, কে জানে হয়ত তার দশ হাজার গন্ধের স্টকে আমাদের গন্ধও আজ থেকে মজুদ থাকল। মন্দ কি, দেশে গিয়ে বলতে পারব আমেরিকান এক কুকুরের গন্ধের গোডাউন স্টকে আমরাও আছি! 

এই কাহিনী ওহায়োতে থাকা আমার ভাগ্নি নীষা শুনে বলল ‘ উফ শাহীন মামা, যদি একটা কামড় দিত তাহলে কিন্তু তুমি কোটিপতি হয়ে যেতে!’ এটা চিন্তা করে আমার মাথা গরম হয়ে গেল... ওহ দারুন চান্স মিস করেছিতো তাহলে!

এর মধ্যে এক বিকেলে (নাকি দুপুর, সর‍্যি এখনো আমার ঘড়ি কেনা সম্ভব হয়ে উঠে নি) ফারহানের গাড়িতে (সাথে ভূত বিশেষজ্ঞ সাগর)করে আমরা গেলাম গ্রিনভিল সিটিতে। সেখানে একটা বিখ্যাত পার্ক আছে, নাম ফলস পার্ক। পার্কের ভিতর বিশাল জলপ্রপাত, আমাদের নাফাখুমের মত অনেকটা। তবে আশে পাশে উঁচু দালান কোঠা দেখা যাচ্ছে বলে বন্য ভাবটা নেই। তবে এখানে দেখলাম আমেরিকানরা সবাই অতি স্বাস্থ্য সচেতন! সবাই জগিং করছে, কেউ সাইকেল চালাচ্ছে, কেউ ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করছে। এক জোড়া তরুণ তরুণীকে দেখলাম ঘাসের উপর চাদর পেতে যোগাসন করছে বলে মনে হল। ওদিকে তাকিয়ে আছি দেখে রীতা ধমক দিল। পরে বুঝলাম ঠিক স্বাস্থ্য উদ্ধার বিষয়ক যোগাসন ওটা নয়!

ফলস পার্ক থেকে বের হয়ে গেলাম এখানকার ডাউন টাউনে। এ জায়গাটা আমার কাছে লাগল লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারের মত। অনেক ভাস্কর্য আছে জায়গায় জায়গায়। একজন অদ্ভুত এক যন্ত্র, সম্ভবত স্যাক্সোফোন বাজিয়ে চলেছে, তাকে ডলার দিচ্ছে কেউ কেউ। দু একজন হোমলেস মানুষকেও দেখলাম বেঞ্চে বেডিংপত্র নিয়ে বসে আছে। তারা খুবই হাসি মুখে সবাইকে পর্যবেক্ষন করছে, হাত নাড়ছে। আমরা একটা আর্ট গ্যলারীতে ঢুকলাম। লোকাল আর্টিস্টদের প্রদর্শনী চলছে। তার দিয়ে কিছু শিল্পকর্ম দেখলাম বেশ ভালই লাগলো। এই সময় ফারহানদের মেসেজ আসল। ওরা কি একটা কাজে গিয়েছিল, চলে এসেছে আমাদের নিতে। আমরাও বাইরে এসে গাড়ীতে করে রওনা দিলাম ক্লেমসনের দিকে। ৪৫ মিনিটের রাইড। পথে দেখলাম শত শত সুন্দর সুন্দর গাড়ি দাঁড়িয়ে। গায়ে দাম লেখা, পানির দরে বিক্রি হচ্ছে বলে মনে হল। একটা গাড়ি দেখি  উল্টে আছে। আমি ভাবলাম এরা বোধহয় উল্টো করেও গাড়ি শো করে। পরে বুঝলাম না এই মাত্র একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই দেশেও তাহলে দুর্ঘটনা ঘটে!

 

লেখকঃ কার্টুনিস্ট/ সম্পাদক
উম্মাদ, স্যাটায়ার কার্টুন পত্রিকা


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top