সিডনী বুধবার, ১৭ই এপ্রিল ২০২৪, ৩রা বৈশাখ ১৪৩১

ভেজাল বনাম আধুনিক সভ্যতা, বাড়ছে বন্ধাত্বের সংখ্যা : বটু কৃষ্ণ হালদার


প্রকাশিত:
৫ জুলাই ২০২০ ২২:৫১

আপডেট:
৭ জুলাই ২০২০ ২০:৪৯

 

ভারত বর্ষের সভ্য সমাজের আড়ালে মুখোশ পরে নাটক করছি আমরা সবাই। আজ যা খাই তা সবটুকু বিষ। চলছে ভেজালের উলগুলান। কেনো এই সভ্যতার বুকে এত ভেজালের সমাহার? প্রশাসন বা কেনো নির্বিকার ?

মানব জীবনে মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে( খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা স্বাস্থ্য) খাদ্য একটি প্রধান ও মৌলিক চাহিদা । জীবনধারণের জন্য খাদ্যের কোন বিকল্প নেই। সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিটি মানুষের প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য। বিশুদ্ধ খাদ্য সুস্থ ও সমৃদ্ধ শীল জাতি গঠনে একান্ত অপরিহার্য। শারীরিক ও মানসিক বিকাশে একমাত্র অবলম্বন হল বিশুদ্ধ খাদ্য। কিন্তু বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় বিশুদ্ধ খাবার প্রাপ্তি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে । চারিদিকে আজ ভেজালের সমাহার। কিছু মুষ্টিমেয় বিবেকহীন মুখোশধারী পাষণ্ড ব্যবসায়ী আড়তদার বেশি মুনাফা লাভের আশায় প্রতিনিয়ত মানব জীবনের দৈনন্দিন চাহিদা( চাল,ডাল,শাকসবজি দুধ, ঘি, মাখন, ছানা ,ফলমূল, মিষ্টি) গুলিতে বিষক্রিয়া মিশিয়ে বাজারে বিক্রি করছে। প্রশ্ন যারা এমন অমানবিক কর্মকাণ্ড করছে তারা কিংবা তাদের পরিবার কি এই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য গুলি ব্যবহার করেন না?তবে এটা নিশ্চিত যারা, এমন কর্ম করছে তারা জেনেশুনেই নিজেদের কফিনের গর্ত নিজেরাই খুলছেন। জেনে শুনে ঠকিয়ে যাচ্ছে এবং নিজেরাই ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে ঠকে যান ।

১৯৯৪ সালে "environment protection agency"র প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। সেখানে এক ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে আসে, ফরমালিন ফুসফুস ও গলবিল এলাকায় ক্যান্সার সৃষ্টি করতে সাহায্য করে।২০০৪ সালের ১লা অক্টোবর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গলবিল এলাকায় ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য ফরমালিন কে দায়ী করেন। টেক্সটাইল কালার গুলো খাদ্য এবং পানীয় সঙ্গে মিশে শরীরে প্রবেশের পর ধীরে ধীরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঙ্গে ক্রিয়া বিক্রিয়া শুরু করে। অথচ এই সমস্ত মারণ কীটনাশক গুলি প্রয়োগ করা হয় সমস্ত সুষম আহার গুলিতে। এতে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের শরীরের লিভার, কিডনি,হৃদপিন্ড ,অস্থিমজ্জা গুলি। বাচ্চা শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব দ্রুত কার্যকারী হয়  এবং তরুন তরুন দের ক্ষেত্রে কিছুটা দেরিতে ।

বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় ভেজাল খাদ্য একটি মরণ ব্যাধি হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ভেজাল ভেজাল দ্বন্দ্বে ঝালাপালা কান। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো কারা ভেজাল দিচ্ছে আর কাদের প্রাণহানি ঘটছে? বর্তমানে বিভিন্ন সংবাদপত্রে দূরদর্শনের শিরোনামে শুরুতেই একটা সংবাদ বারবার জনতার দরবারে মাথা যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হল ভেজাল কান্ড। বেশ কয়েক মাস আগে সুন্দরবনের বাসন্তী নামক স্থানে ভেজাল নিয়ে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আসে। ছানার সঙ্গে প্লাস্টিক মিশিয়ে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। আবার জীবন দায়ী ঔষধ ও ভেজাল বাদ যায় নি। কিছু স্বার্থান্বেষী, নির্বোধ, সমাজের নিয়ম লংঘন করে প্রশাসনকে রক্তচক্ষু দেখিয়ে প্রতিনিয়ত জনমানবকে ঠকিয়ে যাওয়ার প্রয়াস করে চলেছে নিরন্তর। আরে সমস্ত জেনেশুনেও প্রশাসন কেন নির্বিকার? এর উত্তর আজও অধরা। তবে কি এটা ধরে নিতে হবে যে সর্ষের মধ্যে ভূত লুকিয়ে আছে? কি হবে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ?

ভেজাল খাদ্য মানে মানব শরীরে ধীরে ধীরে বিষ প্রবেশ করছে। এইভাবে অবাধ ভেজাল কারবার চলতে থাকলে হয়তো আগামী ৫০ বছরের মধ্যে সাধারণ মানব পরিণত হবে পঙ্গুতে বা মানসিক রোগী। দিনে দিনে হাসপাতালে ও ক্লিনিকগুলোতে লম্বা রোগীদের লাইন বেড়ে চলেছে। যে সময়ে সমাজ ব্যবস্থায় সুসভ্যতার বিকাশ ক্ষেত্র গড়ে ওঠেনি, ছিল না আধুনিকতার ছোঁয়া, সেই সমাজ ব্যবস্থায় মানুষজন শাকসবজি গাছের ফলমূল খেয়ে ও সুস্থ স্বাভাবিক ছিলেন এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। বেঁচে থাকতেন বহু বছর সুস্থ স্বাভাবিক ভাবেই। এখন মৃত্যু শীয়রে দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রতি মুহূর্তে । দিনে দিনে বেড়ে চলেছে বিকলাঙ্গ শিশুদের সংখ্যা। প্রশ্ন কিন্তু কেন?এর জন্য ভেজাল খাদ্য বস্তু কি দায়ী করতে পারি না? মহিলাদের সন্তান সম্ভবা না হওয়াটা এখন প্রতিবন্ধকতায় দাঁড়িয়েছে। সন্তানের জন্ম দিতে সাহায্য নিতে হচ্ছে ক্লিনিকের। প্রকৃতির আশ্চর্যতম বরদান গুলো আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হতে চলেছে। জনসমাজ কৃত্রিম ব্যবস্থার প্রতি নির্ভর হয়ে পড়ছে।এই ভেজাল খাদ্য গুলো থেকে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলো সন্তানসম্ভবা মহিলা ও গর্ভের ভ্রূণটি। এমনি ভাবে চলতে থাকলে একদিন থমকে যাবে উন্নত বিকাশের ধারা । পৃথিবী পরিণত হবে বন্ধ্যা তে।আগামীতে আমরা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে চলেছি এমনই বার্তা  গুঞ্জরিত। তার উপর অধিক লাভের আশায় যে সমস্ত বিষ ক্রিয়া ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে দূষিত হচ্ছে মাটি জলবায়ু। আমরা ধীরে ধীরে সামাজিক ও মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ছি। পৃথিবীর মানুষ অল্প বয়স থেকে সমস্যার শিকার গ্রস্ত হয়ে পড়ছে মাথার চুল পেকে যাচ্ছে, মৃত্যুর হার দিন দিন বেড়েই চলেছে, এ কথা কি কেউ অস্বীকার করতে পারবেন? বন্ধ হোক এমন মরন খেলা। আসুন আমরা সবাই মিলে এই পৃথিবী কে বাসযোগ্য গড়ে তোলার অঙ্গীকারে আবদ্ধ হই।যত দ্রুত সম্ভব এই বিষয়টিকে নিয়ে সরকার ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য অনুরোধ করছি তা না হলে এ পৃথিবী একদিন অনুর্বর ও মরুভূমিতে পরিণত হবে।

 

বটু কৃষ্ণ হালদার
কবর ডাঙ্গা

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top