সিডনী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

করোনা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ র্কাযক্রম

করোনায় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম : ড. মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম খান


প্রকাশিত:
৬ জুলাই ২০২০ ২৩:০৫

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:৩৩

 

১৭ মার্চ থেকে বাংলাদেশে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। এ বছরের সেপ্টেম্বর/অক্টোবর ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। বিশ্বব্যাপী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একই অবস্থা এখন। এমতাবস্থায় দুই বিলিয়নেরও বেশি শিক্ষার্থী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে আজ। এ ধরনের পরিস্থিতিতে শিক্ষার চেহারা কেমন হবে তা পৃথিবীর কোন কারিকুলামে বলা নেই। শিক্ষা বিশেষজ্ঞগণ নানাভাবে এইপথ উত্তরণের পরিকল্পনা বান্তবায়নের চেষ্টা করেছেন। ফেস টু ফেস কারিকুলামের পরিবর্তে দূরশিক্ষণ পদ্ধতি কার্যকর করার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। ডিজিটাল দুনিয়ায় এই মুহূর্তে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের প্রতি যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এটা উন্নত দেশের জন্য কার্যকর করা যতোটা সহজ কিন্তু অনুন্নত দেশের জন্য ততোটাই শ্রমসাধ্য প্রয়াস।

বাংলাদেশের যেখানে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী গ্রামে বসবাস করে সেই প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীর কাছে অনলাইন শিক্ষা পৌঁছানো অনেকটা চ্যালেঞ্জের বিষয়। এদেশে প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীর জীবনমান বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এখনো অনেক জায়গায় ডিজিটালের ছোঁয়া লাগেনি। অনলাইন সুবিধা ব্যবহারের কথা বিবেচনা করলেও গ্রামীণ জনপদে বসবাসরত শিক্ষার্থীরা এখনো পিছিয়ে আছে। শহর নগরের পার্থক্য এখনো সুস্পষ্ট। মেধা-মনন আর চিন্তা শক্তির উৎকর্ষ বিকাশে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোনো তুলনাই হয় না। সেখানে দীর্ঘদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা আসলেই দুর্ভাগ্যজনক। করোনা ভাইরাস যেমন শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে, তেমন লগডাউনে যাওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের মেধা-মননে এক ধরনের অশুভ ছায়া বিরাজ করার যথেষ্ট কারণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। মেধাকে শানিত করার কোনো কার্যক্রমের সাথেই শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিন সংযোগ ঘটেনি। মূল্যায়নসহ শ্রেণি কার্যক্রমের নানাবিধ উপাদান থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকার ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অবিভাবকেদের মধ্যে এক ধরনের উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। সম্প্রতি এসএসসি’র রেজাল্ট বিলম্বে হলেও প্রকাশ হয়েছে কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করার তেমন কোনো লক্ষণ দৃশ্যমান হচ্ছে না। চলমান শিষাবর্ষের কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন এখন চরম উৎকণ্ঠায় আছে। আশু পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হলে বিঘিœত হবে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনের গতিপথ। থেমে যাবে মাথা ্উঁচু করে দাঁড়ানোর চলন্ত সিঁড়ি।

করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সাথে হাজার হাজার শিক্ষকের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও স্থবির হয়ে আছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি বেসরকারি মিলে প্রায় শতাধিক টিচার্স ট্রেনিং কলেজ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের সাথে জড়িত। শিক্ষকগণ এখান থেকে পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের ট্রেনিং নিয়ে সরাসরি ক্লাসে পাঠদান করে থাকেন। কিন্তু কোভিড-১৯ এর কারণে বিগত ১৭ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু হয়নি। জুন মাসে ১ম সেমিস্টার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কলেজের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাই নেয়া সম্ভব হয়নি।
এছাড়াও বিএড কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষকগণ অনেকটা হাতে কলমে বাস্তবভিত্তিক জ্ঞানের সাথে পরিচিত হওয়ার কথা। সরাসরি বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রদর্শন পাঠের মাধ্যমে তাদের ভুল-ভ্রান্তি শুধরিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাওয়ার কথা। কিন্তু করোনার কারণে এ সুযোগ এখনও পায়নি। এমতাবস্থায় সারাদেশের বিএড কলেজগুলো প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নিয়ে চিন্তিত। বছরের ছয়মাস পাড় হলেও ১ম সেমিস্টারের সম্পূর্ণ সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হয়নি। আর বিএড প্রশিক্ষণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ টিচিং প্রাকটিসেও প্রেরণ করা যায়নি। টিচিং প্রাকটিসে পাঠানোর মুহূর্তেই বাংলাদেশে করোনার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়েছে। প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সাথে জড়িত সরকারি বেসরকারি বিষয় বিশেষজ্ঞগণ ইতোমধ্যে করণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনায় মিলিত হয়েছেন ভার্চ্যুয়াল জগতে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের দিক নির্দেশনার আলোকে কলেজগুলো ইতোমধ্যে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি কলেজের এক যৌথ সভায় এ বিষয়ে একটি সুচিন্তিত মতামত অনলাইন কার্যক্রমের পক্ষেই দেয়া হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সবুজ সংকেত পাওয়া গেলে বিএড প্রশিক্ষণের দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা পূরণ হতে পারে। কলেজগুলো স্ব-স্ব উদ্যোগে অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি ছাড়া মূল্যায়নে যেতে পারছে না। আর মূল্যায়ন কার্যক্রম না থাকায় প্রশিক্ষণার্থীরা গুরুত্ব দিয়ে অনলাইন ক্লাসে যোগ দিচ্ছে না। মাউশি থেকে সাদা-কালো একটি অফিস অর্ডার পাওয়া গেলে অনলাইন কার্যক্রমের সকল বাধা অতিক্রম করা সম্ভব হবে বলে আমার বিশ্বাস।
বিষয় বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের কাছে অনলাইনে প্রচার করার মতো সাবজেক্ট মেটার অনেকটা রেডি আছে। সরকারি অনুমতির বিষয়টা খোলাসা হলে অনলাইন শিক্ষায় প্রশিক্ষণ কলেজগুলো সবার চেয়ে এগিয়ে থাকবে। কারণ সারাদেশে ৩০% শিক্ষকদের ট্রেনিং দেয় ১৪টি সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ আর ৭০% ট্রেনিং দেয় ৭৮টি বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ। এ বছর প্রায় পনেরো হাজার শিক্ষক বিএড কোর্সের প্রশিক্ষণের সাথে যুক্ত আছে। সময়মতো ক্লাস পরীক্ষা না হলে নানাবিধ জটিলতা তৈরি হবে। টেপুটেশন প্রাপ্ত শিক্ষকদের ছুটি শেষ হয়ে যাবে, আবার অনেকের বয়সের ব্যাপার তো আছেই। প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির সাথে মেলবন্ধন না হলে হোঁচট খাবে বিএড প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। সরকারের নেয়া মুজিববর্ষের ও এসডিজি-৪ এর লক্ষ্যমাত্রাও বাধাগ্রস্ত হবে সন্দেহতীতভাবে। যা কারোই কাম্য হতে পারে না।

 

 ড. মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম খান
কবি ও লেখক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top