সিডনী সোমবার, ৬ই মে ২০২৪, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষণ কি আমাদের সমাজের মূল চরিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে? : বটু কৃষ্ণ হালদার


প্রকাশিত:
৩১ আগস্ট ২০২০ ২০:১৫

আপডেট:
৬ মে ২০২৪ ০৯:১৩

 

বিশ্বের সব থেকে জঘন্য তম অপরাধ হলো কোন নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন করা ও তাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা। কিন্তু নারী নির্যাতন ভারতের সমাজ ব্যাবস্থায় এক বিশেষ চরিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনে দিনে ধর্ষণ এই ভারতবর্ষে বুকে মহামারী আকার ধারণ করে চলেছে। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিধ্বস্ত মানব সভ্যতা। প্রতিনিয়ত মানুষ মৃত্যুর মিছিলে পা মেলাচ্ছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেও একশ্রেণীর হায়নারা অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে নারীদের। সেই তালিকা থেকে বাদ যায়নি ছোট্ট শিশুরা। বিহারের দ্বারভাঙ্গা জেলার এক মেয়ে জ্যোতিকে ধর্ষণ করে খুন করেন ব্রাহ্মণ অর্জুন মিশ্র ও তার দলবল। জ্যোতির বাবা অশোক বাবুর লোকাল মিডিয়ায় জানিয়েছে, পুলিশ ব্রাহ্মণ অর্জুন মিশ্রের কাছ থেকে ঘুষ খেয়ে তাদের পক্ষপাতিত্ব করছে এবং মৃত মেয়েটির পরিবারের লোকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। এ ব্যাপারে সমস্ত মিডিয়া নেতারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সভ্যতা মানব সভ্যতার মানবতা আজ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে কেউ বলতে পারবেন?

এই ভারতের বুকে ক্ষমতাবান, প্রভাবশালী, রাজনৈতিক দলের কিছু প্রভাবশালী নেতা মন্ত্রী, কিংবা উচ্চ বর্ণের মানুষের দ্বারা নিম্নবর্ণের নারীদের নির্যাতনের ঘটনা ভারতবর্ষের বুকে নতুন কিছু নয়। এসব দেখতে দেখতে আমরা অসভ্যতার দাসে পরিণত হয়ে গেছি। পয়সার জোরে ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা এমন জঘন্য অপরাধ করেও সমাজের বুকে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। দেশের আইন ব্যাবস্থা নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে চলেছে। যে নারীরা বর্তমানে পুরুষদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জল স্থল অন্তরীক্ষে নিজেদের অবস্থান প্রমাণ করে চলেছে, সেই নারীদের জীবন আজ সীতা ও দ্রৌপদীর মতো দাড়িপাল্লায় ওজন করা হচ্ছে। এর ফলে প্রতিনিয়ত প্রতিভাবান নারীরা হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর বুক থেকে। এই লক ডাউন এর মধ্যেও এমন এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে ভারতবর্ষের বিহারে, এমনকি খোদ পশ্চিমবাংলায়। কিন্তু একথা ভুলে গেলে চলবে কি করে, ভারতবর্ষের বুকে সব ফুল দেবতার পায়ে ঠাঁই পায় না। উচ্চবর্ণের এক ধর্ষক অর্জুন মিশ্রা ও তার বন্ধুরা মিলে তাকে গণধর্ষণ করে হত্যা করে মাঠে ছুড়ে ফেলে দেয়।এক উদীয়মান প্রতিভার অপমৃত্যু ঘটে গেল। এই ভারতবর্ষের বুকে নিম্নবর্ণের মানুষ ও গরিবদের স্বপ্ন দেখতে নেই। যুগের পর যুগ এমন ঘটনা ভারতবর্ষের বুকে ঘটে আসছে আমাদের চোখের সামনে। আইন ব্যবস্থার সাথে সাথে আমরাও নীরব দর্শক হয়ে পড়েছি।

এখনো মনে আছে দিল্লির নির্ভয়ার কথা, চোখেমুখে এক নারীর স্বপ্ন শেষ করে দিল দিল্লির রাজপথে চলন্ত বাসের মধ্যে ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক ধর্ষণ কান্ড। সেদিন ধর্ষিত হয়েছিল দিল্লির সায়েন্স কলেজের ছাত্রী নির্ভয়া। শুধুমাত্র ধর্ষণ নয়, যোনিতে রড ঢুকিয়ে দিয়ে যোনী ছিন্ন-ভিন্ন করে খুন করা হয়। এরপর পশ্চিমবাংলার কলকাতা লাগোয়া বারাসাতের কামদুনি। দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই বারাসাতে ঘটে যায় আরও এক মর্মান্তিক ধর্ষণকাণ্ড। কলেজ পড়ুয়া মেয়েটাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায় এক পরিতক্ত কারখানায়। গ্যাং রেপ করার পর পা দুটিকে চিরে নাভি পর্যন্ত টেনে দেয়। নৃশংসতার এক চরম মাত্রা প্রকাশ পেয়েছিল কামদুনি ধর্ষণ কাণ্ডে। কলকাতার বুকে ধর্ষণ কান্ড চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে কলকাতার বুকে অসভ্য জানোয়ারদের সংখ্যা কিন্তু নেহাত কম নয়। আমাদের দেশে শুধু মাঝবয়সী নয়, এমনকি আসিফার মত ফুলের কুঁড়ি কে অকালে ঝরে পড়তে হয়। মন্দিরের মধ্যে তুলে নিয়ে গিয়ে নাবালিকা আসিফাকে ধর্ষণ করে খুন করে পুলিশ অফিসার সহ কিছু দুষ্কৃতী। মনে আছে দিনাজপুরের পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশু পূজার কথা? ব্লেড দিয়ে কেটে যৌনাঙ্গের প্রবেশপথ বড় করেই সারারাত ধরে দুজন হিংস্র জানোয়ার সারারাত ধর্ষণ করে সকালে বাড়ির কাছে ফেলে রেখে যায় তাকে। বলতে পারেন ছোট্ট ফতেমার কি দোষ ছিল? একটা ফুলের কুড়ি কে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করলো। তার বাবা বিচার চাইতে গেলে থানার পুলিশরা হাজার টাকায় বিনিময়ে ফাতেমার হারানো ইজ্জত ফিরিয়ে দিতে চাইল। ছোট্ট ফাতেমার বাবা রমজান আলী তার মেয়ে ফাতেমাকে নিয়ে চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়েছিল। কারণ যে পুলিশের কাছে সে বিচার চাইতে গিয়েছিল সেই পুলিশ তার দুই দন পর এক মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রাতভর ধর্ষণ করেছে। রমজান আলী থানাতে বিচার না পেয়ে গিয়েছিল ক্ষমতাসীন দলের অফিসে বিচার চাইতে। কিন্তু তা ঠিক এক সপ্তাহ আগেই মুন্সীগঞ্জে এই ক্ষমতাসীন দলেরই এক মেম্বার VGF কার্ডের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে ফাতেমার বয়সী আরেকটি ছোট্ট শিশুকে। মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। এসব দেখার পর ফতেমার বাবা হয়তো দুইবার আত্মহত্যা করত। রাজধানী দিল্লির জুরাইনে ১১ বছরের একটি মেয়েকে স্কুল কক্ষে আটকে রেখে ৮ জন মিলে রাতভর ধর্ষণ করেছিল। মেয়েটির চিৎকার চার দেয়ালের বাইরে আসে নি সেদিন। ভালোই হয়েছে সেই চিৎকার বাইরে আসেনি,বাইরে এলে সেই চিৎকার শুনে একশ্রেণীর পশুরা হয়তো হাততালি দিত। বাসায় মা মেয়েকে একা পেয়ে কিছু হিংস্র হায়েনা বাসায় ঢুকে মাকে বেঁধে রেখে ৭ বছরের ছোট্ট মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছিল।নিরুপায় মা বারবার চিৎকার করে বলেছিল বাবারা ও ছোট এক এক জন করে যাও, ইতিহাস কি আমরা ভুলে গেছি? এরপরে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে এমন জঘন্য ও নৃশংস ঘটনা  ঘটানো কি কোন মানুষের দ্বারা সম্ভব? হ্যাঁ, এরাই এই সভ্য সমাজের জীব। সমাজের একশ্রেণীর হিংস হায়েনাদের দ্বারা এমনভাবে বহু ফুলের কুঁড়ি ক্ষত-বিক্ষত হয়। এমন বহু কেস ঝুলে রয়েছে আদালতের দরজায়। নয়তো পয়সার জোরে বহু কেস রফা হয়ে যায়। মুখোশধারী হিংস পশু রা অবাধে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় সমাজের বুকে। এর ফলে বারবার এমন জঘন্য ঘটনা ঘটে আমাদের দেশে। একের পর এক আমাদের চোখের সামনে এভাবে হারিয়ে যাচ্ছে শত শত ছোট পূজা ফাতেমা, আসিফারা। সমাজের বুকে প্রতিটা ক্ষেত্রে শুধু আকাশ আর সংবাদ শোনা যায়। রমজান আলীরা আত্মহত্যা করে বেঁচে যায়। কিন্তু আমাদের কেমন সব গা সওয়া হয়ে গেছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এখন স্বাভাবিক শব্দটির থেকেও বেশি অস্বাভাবিক হয়ে গেছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব সভ্যতা মেরুদণ্ডহীন জাতিতে পরিনত হয়ে উঠছে দিন দিন।

এসবের মাঝেও দেশের কান্ডারীরা শিশু নারীদের নিয়ে নানান স্বপ্ন দেখায়। কিন্তু যে সুন্দর পৃথিবীকে শিশুদের বাসযোগ্য করে তোলার অঙ্গীকার বদ্ধ হয়ে ছিলাম সেই  পৃথিবীতে আজ শুনি শুধু শিশুদের ক্রন্দন-রোল ও চিৎকার। এই পৃথিবী কে সুন্দর ও সুস্থ ও বাসযোগ্য রূপে গড়ে তোলার প্রয়াস বৃথা কারণ সেই পৃথিবীর বুকে  শিশুরা প্রতিনিয়ত ধর্ষিত, ও নির্যাতিত। এ সময় কি দায়িত্ব আমাদের, সমাজের শিশুদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য?

বনে বন্যরা সুন্দর, শিশু মাতৃ ক্রোড়ে এই কথা অর্থহীন হয়ে পড়ছে দিন দিন। অ্যামাজন থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার জঙ্গল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ৫০ হাজারের বেশি জীবজন্তু পুড়ে মারা গেছে। যেমন ভাবে অসহায় ও গৃহহীন হয়ে পড়েছে জঙ্গলের পশুরা, ঠিক তেমনি দিন দিন বেড়ে চলেছে শিশু নির্যাতনের মাত্রা। বিশ্বের বিশ্ব উষ্ণায়নের দিনের খুব নিকটতম দূরত্বের মধ্যে আমরা এসে গেছি। সবুজ সতেজ বনময় জঙ্গল যেমন ধ্বংসপ্রাপ্ত পৃথিবীর একমাত্র বাঁচিয়ে রাখার অবলম্বন, তেমনই আগামী ভবিষ্যতের স্বপ্ন শিশুরা আজ কোথাও নিরাপদ নয়। শিশু নির্যাতনের নজিরবিহীন ঘটনা গুলি আমাদের নজরে আসছে প্রতিনিয়ত প্রতি সময়ে। যে সমস্ত শিশুরা তখনো মায়ের স্তন ছাড়েনি, মুখে দুধের গন্ধ কাটেনি তারা ও রেহাই পায়নি লোভী হায়নার শিকার থেকে। ধর্ষণে ধর্ষণে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ছে সমাজ ব্যবস্থা। বুদ্ধিজীবীরা চারিদিকে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করছে। সমস্যার সমাধান হয়নি আজও তবে কি লেলিহান শিখার মাঝে ও লুকিয়ে আছে শিকারি নীল চোখ। এ পৃথিবী সম্পর্কে বুঝে ওঠার আগেই ধর্ষিত হয়ে যাচ্ছেন। কবে বন্ধ হবে শিশু নির্যাতন, প্রশ্নটা রেখে যাই সুসভ্য সমাজের বুকে?

নারী ছোট্ট একটা শব্দ। কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই শব্দের মধ্যে লুকিয়ে আছে অন্তর্নিহিত ভবিষ্যতের বীজ। বিশ্ব ব্রম্ভান্ড এ একটা নারী জীবের সৃষ্টি করে। যুগের পর যুগ বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রজননের মধ্য দিয়ে বংশানুক্রমে। দশ মাস দশ দিন নিজ গর্ভে জ্বলন্ত অগ্নি পিণ্ডকে লালন পালন করতে থাকে। আমরা অতি সামান্য আঘাতে কাতর হয়ে পড়ি, কিন্তু একটা মা হাজারো কষ্ট সহ্য করে ও হাসি মুখে একটা সম্ভাবনাময় জীবের জন্ম দেয়। এক নারির পক্ষে সম্ভব, একদিকে সংসার অন্যদিকে নিজের সন্তানকে সুস্থ ভাবে পরিচর্যা ও পরিচালনা করা। কিন্তু বিগত পরিসংখ্যান অনুযায়ী দিন দিন বেড়ে চলেছে কন্যা শিশু ধর্ষণ। এ সভ্য সমাজে রেহাই পায়নি ৮ মাসের দুধের শিশু। দিন দিন কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মানসিকতা, মানবিকতা। কবির ভাষায় আজ যারা শিশু আগামী তে তারা অবশ্যম্ভাবী ভবিষ্যত। আজ যারা চারা গাছ আগামী তে তারা বৃক্ষ। ফল, ফুল, ছায়া, বীজ, বিশেষ করে প্রাণীকুলের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অক্সিজেন দান করেন। ঠিক তেমনি এক কন্যা শিশু আগামী দিনে সে মা হয়ে ওঠেন। একটা মায়ের গুরুত্ব বা অবদান সমাজ বা পরিবেশে তা বোধ হয় কারোর অজানা নয়। শিশুরা ঈশ্বর, আল্লাহ কিংবা গড এর অন্য রূপ। অথচ সেই শিশুরা আজ সভ্য সমাজে নির্যাতিত ও ধর্ষিত। তার ওপর এ সময় শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ সামাজিক মারণ ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। বন্ধ হওয়া দরকার শিশুদের উপর এমন পাশবিক অত্যাচার। তা না হলে থমকে যাবে সভ্য সমাজের উন্নতি বিকাশের ধারা। এ পৃথিবী একদিন বন্ধ্যা তে পরিণত হবে। যারা এমন ফুলের নরম কোমল পাপড়িগুলোকে ক্ষতবিক্ষত করার চেষ্টা করে, প্রশ্ন করি তাদের ওরে পাশবিক অমানবিক হায়নার দল তোদের জন্ম কোন মায়ের প্রসবের দার দিয়ে, এ ধরা ধামে আগমন, কেমনে ভুলে যাস সে কথা? প্রায় প্রতিনিয়ত হচ্ছে শিশু কন্যা ধর্ষণ। সমাজের বুদ্ধিজীবী মহল রা মোমবাতি  জ্বালিয়ে মৌন মিছিল করে রামলীলা ময়দানে, মনুমেন্টের পাদদেশে কিংবা ধর্মতলার মোড়ে। কিন্তু ওই লেলিহান শিখার মাঝে লুকিয়ে থাকে শিকারি হায়নার নীল চোখ। সমস্যা গোড়া থেকে নির্মূল হওয়ার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা আছে। তাই আমন পাশবিক পিশাচদের কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি জন্য হোক আন্দোলন হোক মোমবাতি মিছিল।

নারীদের অবস্থান বর্তমান সমাজে যে কি তা আজ আর কারো অজানা নেই। সুবিচারের আশায় নারী প্রাচীন পৌরাণিক যুগের সময় হতে আজও। পৌরাণিক যুগে উপেক্ষিত দুই সতী সীতা ও দ্রৌপদী।প্রাচীন ইতিহাস থেকেও আমরা বহু মহীয়সী নারীর কথা জানতে পারি, তারা সে যুগেও স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিলেন। লোপা মুদ্রা মৈত্রী ও অপালা ঘোষা বিশ্ব বারার মতোনারীরা ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছিলেন তেমনি উনবিংশ শতকে বহু নারী তার আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন ।আবার এ। সময় মেরিকম, পিটি ঊষা, কল্পনা চাওলা, দীপা কর্মকার, আরতি সাহা, সাইনা নেহওয়াল, ঝুলন গোস্বামী, হিমা দাস এর মত নারীরা তারা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে চলেছেন বিশ্বের দরবারে। তবুও এ অত্যাধুনিক সু সভ্য যুগে নারীরা ভোগ্য,পণ্য, আমদানি, রপ্তানি, বিলাস বৈভবএর চিহ্ন মাত্র।ঘটা করে কুমারী পূজা বরণ করা হয়। তার সামনে মাথা নিচু করে মনস্কামনা পূরণের প্রার্থনা করে। এসব লোক চক্ষুর সম্মুখে ভ্রষ্টাচার, প্রহসন। কারণ সেই সমাজে দুধের শিশু মাঝবয়সী এমনও ষাটোর্ধ্ব নারী ও হয় বেআব্রু প্রতি পদে পদে। শিক্ষিত সমাজের অর্জুন রা আজ নির্বিকার অবিচল। আমাদের দেশে সাঁওতালরা ধর্ষিত হলে সিনেমা হয় পাহাড়ি মেয়েরা ধর্ষিত হলে আন্দোলন হয় সংখ্যালঘুরা ধর্ষিতা হলে ঝড় ওঠে মানবতা কর্মীদের ঠোঁটে। নায়ক নায়িকাদের কেলেঙ্কারিতে মিডিয়া তোলপাড় করে ফেলে। এরই মাঝে, ফাতেমা, পূজা, প্রতিভাবান জ্যোতির মত ফুলের কুঁড়িরা  ঝরে যায় অকালে। সমাজের সুশীল চেতনাধারী মানবতাবাদী প্রগতিশীল সভ্য মানুষরা সামান্য দুষ্টুমি বলে চালিয়ে দেয়।

ভারতবর্ষের পশ্চিমবাংলা এ সময়ে নারী নির্যাতনের দিক থেকে সবথেকে এগিয়ে। রাজনৈতিক দলের মদদপুষ্ট একশ্রেণীর হায়নারা এমন কাজ সবথেকে বেশি করছে। তার ওপর আমাদের দেশের আইন ব্যবস্থা তেমন কঠোর নয়। যার ফলে এমন ঘটনা ভারতবর্ষের বুকে বহু ঘটছে প্রতিনিয়ত। তবে বিশ্বের এমন কিছু দেশ আছে যেখানে এমন জঘন্যতম অপরাধ করলে যার বেশিরভাগ সাজা হয় মৃত্যুদণ্ড। রাশিয়ায় ধর্ষকের সাজা কুড়ি বছর সশ্রম কারাদণ্ড। পোল্যান্ডে হিংস্র বুনো শুয়োরের খাঁচায় ফেলে মৃত্যুদণ্ড, মধ্যপ্রাচ্য আরব দুনিয়াতে ধর্ষকের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ না করা পর্যন্ত পাথর ছুড়ে, ফাঁসি, হাত পা কেটে নেওয়া, নয় তো যৌনাঙ্গ কেটে অতি দ্রুততার সাথে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পোল্যান্ডে হিংস্র বুনো শুয়োরের খাঁচায় ফেলে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ধর্ষকের। চীনে কোন ট্রায়াল' নেই মেডিকেল পরীক্ষার পর মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। আফগানিস্তানে চার দিনের ভিতরে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং মালয়েশিয়ায় সরাসরি মৃত্যুদণ্ড। অথচ ভারতবর্ষে ধর্ষণের সাজা, প্রতিবাদ, ঘটনা তদন্ত, বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন,সমঝোতার চেষ্টা, ঘুষ দেওয়া, প্রভাবশালীদের লোক, মেয়েটির চরিত্র নিয়ে গবেষণা, সংবাদমাধ্যমের চুলচেরা বিশ্লেষণ, রাজনৈতিক প্রশ্রয়, জামিন, নয়তো তার পরিবারের লোকজন কে হুমকি দেওয়া, শেষমেষ বহু মেয়ে আত্মহত্যা করে। আর ধর্ষকরা ছাড়া পেয়ে সমাজের বুকে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়।

আসুন সবাই মিলে আমরা এই সামাজিক অপরাধ এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি, এই পৃথবীতে শিশুদের বাসযোগ্য করে তোলার অঙ্গীকার বদ্ধ হই। ধর্ষক জন্মদাতা সমাজকে ধ্বংস করে ফেলার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই জাত, ধর্ম নির্বিশেষে।

এ ভারতে আছে রাম রহিম, শিক্ষিত অথচ নির্বিকার অর্জুনরা। আছে মন্দির মসজিদ গির্জা।

নারীদের শিক্ষাব্যবস্থায় আছে স্কুল কলেজ। কন্যাশ্রী সাইকেল শ্রী, স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প, বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও প্রকল্প। কিন্তু নারীদের জন্য নেই কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা।

 

বটু কৃষ্ণ হালদার
পশ্চিম বঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top