সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একি বললেন? : শিবব্রত গুহ


প্রকাশিত:
৩১ আগস্ট ২০২০ ২০:২৪

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৪২

ছবিঃ উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী


আমাদের দেশ ভারতবর্ষের এক অন্যতম প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হল বিশ্বভারতী। এর ঐতিহ্য
একদম আলাদা। দেশ বিদেশ থেকে অনেক ছাত্র ছাত্রী এখানে পড়তে আসে। সেই বিখ্যাত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একি বললেন? যা শুনলে নিজের কানকেও বিশ্বাস হয় না। শান্তিনিকেতনের মেলামাঠে, পাঁচিল দেওয়াকে কেন্দ্র করে, সম্প্রতি এক বিরাট বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। যা নিয়ে প্রবল চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী মেলামাঠে পাঁচিল দেওয়াকে সমর্থন করতে গিয়ে, শান্তিনিকেতনের প্রাণপুরুষ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেই বললেন, " বহিরাগত "। যা নিয়ে আবার তর্ক বির্তক শুরু হয়ে গিয়েছে।
শান্তিনিকেতনে পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত দাবি করেছেন, পরিবেশ আদালতের বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করেছে বিশ্বভারতী। রাবীন্দ্রিক হিসাবে, বহিরাগতদের কোনও স্থিতাধিকার নেই, এই অভিযোগ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উপাচার্য লিখেছেন, গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে বহিরাগত ছিলেন। তিনি যদি এই অঞ্চল পছন্দ না করতেন, তবে বিশ্বভারতী এখানে বিকশিত হতো না। এছাড়া, গুরুদেব ঠাকুর, তাঁর সহকর্মীরা, যাঁরা, বিশ্বভারতীকে জ্ঞান সৃষ্টি ও বিস্তারের কেন্দ্র হিসাবে, গড়ে তোলার পথ প্রশস্ত করেছিলেন, তাঁরা সকলেই, বোলপুরের বাইরে থেকে এসেছিলেন।

এব্যাপারে উপাচার্য আরও ব্যাখ্যা করেছেন, দুর্ভাগ্যক্রমে, বাইরে থেকে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের আনার ধারাবাহিকতা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কারণ, যাঁরা, প্রাথমিক ভাবে এসেছিলেন, তাঁদের সন্তানেরা, কেবল ভূমিপুত্র হওয়ার কারণেই, চাকরির দাবিদার হয়ে ওঠেন। বিশ্বভারতীর প্রাচীর নির্মাণের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে
উপাচার্য লিখেছেন, গুরুদেব বেঁচে থাকাকালীন, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য, চীনা ভবনটি, একটি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হয়েছিল। তাছাড়া, তিরিশ বছর আগে, পুরাতন মেলার মাঠে, বেড়া ও প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

তাতে কোনও আওয়াজ বা দাবি সংগঠিত হয়নি। এছাড়া, বিশ্বভারতীর আরও কয়েকটি এলাকায়, বেড়া দেওয়া হয়েছিল। বর্তমান পৌষমেলা মাঠটি,কোনও ঐতিহ্যকে উপস্থাপন করে না। ১০০ বছরের বেশি পুরানো হলে, তবেই তাকে ঐতিহ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়। বিশ্বভারতী আনুমানিক ৬০ বছর আগে, মাঠটি গ্রহণ করেছিল
বলে দাবি জানিয়েছেন তিনি।
মাঠের ৫০ মিটারের মধ্যে, বিশ্বভারতীর ২০ খানা বিভাগ আছে। শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও শিক্ষার প্রকৃত পরিবেশ নিশ্চিত করতে, প্রাচীর দেওয়া ভীষণ প্রয়োজন। এরফলে, কোন, ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর বিশেষ স্বার্থ ও দুষ্কৃতিকারীদের হুমকি সব কিছু থেকে বিশ্বভারতীকে করা যাবে রক্ষা।
পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত দাবি করেছেন, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ, পৌষমেলা ও বসন্ত উৎসব করতে অপারগ, হলে, রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে তা হোক। কিন্তু, কোনভাবেই, এর নিয়ন্ত্রণ যেন কোন রাজনৈতিক দলের হাতে না
যায়। তাহলে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হবে। এর নিয়ন্ত্রণ রাজনৈতিক দলের হাতে গেলে, একদিকে, যেমন, জনস্বার্থ রক্ষা হবেনা, অন্যদিকে, তেমনি ঐতিহ্য বজায়ও থাকবে না। তিনি এ-ব্যাপারে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন অতি শীঘ্র।
সুভাষবাবু, বিশ্বভারতীর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তিনি বলেন, পৌষমেলার মাঠের সীমানা নির্দেশ দিয়ে, পরিবেশ আদালতের রায়ের ভুল ব্যাখ্যা করেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তবে, ভাঙচুরের তীব্র প্রতিবাদ তিনি করেছেন। তিনি এব্যাপারে, তাঁর মতপ্রকাশ করে জানিয়েছেন, বিশ্বভারতী নিজের জায়গায় একটি নির্মাণকাজ করছে। তা কেউ ভেঙে ফেলতে পারে না।
তবে, এদিকে, এব্যাপার নিয়ে কম জলঘোলা হচ্ছে না এখনো। সম্প্রতি, বোলপুরে, এসএফআই ও ডিওয়াইএফের উদ্যোগে, এক নাগরিক কনভেনশন করা হয়। গোটা বীরভূম জেলা জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। তবে, ভাঙচুরের প্রতিবাদে, সিউড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায়, এক অবস্থান বিক্ষোভ করে এবিভিপি।

এখন এই নিয়ে উঠছে অনেক প্রশ্নঃ

১. কেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বহিরাগত বললেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য?
২. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কি বহিরাগত বলা যায়?
৩. এতে কি তাঁকে অসন্মান করা হল না?

সত্যিই, এ লজ্জা রাখবো কোথায়? রাখবো কোথায় এই লজ্জা?


শিবব্রত গুহ
কোলকাতা, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top