সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল ২০২৪, ৫ই বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষার জয়জয়কার, কিন্তু বাংলায় উপেক্ষিত : বটু কৃষ্ণ হালদার


প্রকাশিত:
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৮:৪৭

আপডেট:
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২১:৫৯

 

আ_মরি প্রাণের বাংলা ভাষা, অমি তোমায় বড় ভালবাসি। আমার গর্ব এই ভাষাতেই আমি মা বলে ডাকি। বাঙ্গালীর অতি প্রিয় বাংলা ভাষা বর্তমানে শুধু ভারত বর্ষ নয়, সমগ্র বিশ্বে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। উনিশ শতকের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের রেনেসাঁ শুরু হয় এই বাংলায়। এরপর বাংলা ভাষাকে নিয়ে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর মত মনীষীরা কাঁধে করে বাংলা ভাষা সাহিত্যকে বয়ে নিয়ে গেছে বিশ্বের দরবারে। ধীরে ধীরে বাংলা ভাষার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে সমগ্র বিশ্বে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে বাঙ্গালী জাতির মুন্সিয়ানা।এই বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির টানে বিদেশীরা পাড়ি দেন এই বাংলায়। কিন্তু লজ্জাজনক বিষয় হলো এই বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে অনেকেই শহীদ হয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম হলো ১৯৫২ সালে অবিভক্ত বাংলাদেশ, ১৯৬১ সালে আসামের শিলচরে বরাক উপত্যকায় ভাষা আন্দোলন অন্যতম। সালটা ছিল ১৯৫২, বাংলাদেশ ছিল পাকিস্তানের অধীনে, উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা ঘোষণা করেন।আপামর জনসাধারণ মনে প্রাণে সেই ঘোষণা মন থেকে মেনে নিতে পারেনি, ভুলতে পারেনি যে উর্দু নয়, বাংলা তাদের প্রাণের প্রিয় ভাষা। শুরু হয় বাংলা ভাষার তরে আন্দোলন। 

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি এক অমর রঞ্জিত রক্তে রাঙা ইতিহাস হয়ে আছে। স্বাধীন ভারতের রাষ্ট্র ভাষা হবে বাংলা সে সিদ্ধান্ত জাতীয় কংগ্রেস আগে থেকে নিয়ে ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা কি হবে সে সম্পর্কে মুসলিম লীগ কোনো অনুষ্ঠানিক প্রস্তাব গ্রহণের আগে পাকিস্তানে ঠিক হয়ে যায়। পাকিস্তানি প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভাইস চান্সলর জিয়াউদ্দিন আহমদ এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা উর্দু হওয়া উচিত মনে করেন।কিন্তু শাহীদুল্লা সহ ভাষা বিদগণ ও জনগণ মেনে নেন নি সেই প্রস্তাব, কারণ তাদের শিরায় শিরায় তখন বাংলা ভাষা একমাত্র অবলম্বন বলে মনে করেন। কারণ জন্মের পর এই ভাষায় তারা প্রথম মা বলে ডেকেছে তাই তারা তীব্র প্রতিবাদ জানান। কিন্তু রাষ্ট্র ভাষা প্রশ্ন তে মুসলিম লীগ এর পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাব গৃহীত না হলে ও রাষ্ট্রের প্রশাসনে অবাঙালি উচ্চ পদস্থ আমলাদের আধিক্যর কারণে ভিতরে ভিতরে উর্দু কে একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা করার চক্রান্ত চালাতে থাকে।

এ চক্রান্ত ধরা পড়ে যায় নতুন রাষ্ট্রে পোস্টকার্ড, এনভেলাপ, প্রভৃতিতে ইংলিশ শব্দ এর সঙ্গে উর্দু ভাষার ব্যবহার দেখে তমদ্দুন মজলি্স, ১৯৪৭ সালের ১৫ ই সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা না উর্দু শীর্ষক পুস্তক লিখে ভাষা আন্দোলনের সূচনা করেন। এর পর তমদ্দুন মজলিশ বসে থাকেনি, ছাত্র শিক্ষক কর্মী সংযোগ এ বৈঠক করেন। এই সব কাজের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন এই মজলিশের প্রতিষ্ঠাতা আবুল কাশেম। ওই বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক নুরুল হক ভুঁইয়া কে আহবায়ক করে রাষ্ট্র ভাষা সংগ্রামের পরিষদ গঠন করেন। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে বাংলা ভাষা আন্দোলন এর আগুন। ২৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি পূর্ব বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্র লীগের একটি অংশ পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম ছাত্র লীগ নামে একটি সংগঠন আত্ম প্রকাশ করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ সংগঠন ভাষা আন্দোলনের প্রশ্নে তমুদ্দুন মজলিশের অবস্থান কে সমর্থন করেন। লীগ এর নাম করন করা হয় সংগ্রাম পরিষদ। এই লীগ এর পক্ষ থেকে ১১ই মার্চ থেকে ১৯মার্চ পর্যন্ত ঢাকা শহরের সর্বত্র বাংলা ভাষার দাবিতে বিক্ষোভ চলতে থাকে। ১৯ শে মার্চ কায়েদে আজম জিন্নাহর ঢাকা সফর করার কথা ঘোষণা করা হয়। 

এই সফরের আগে তৎকালীন চিফ মিনিস্টার খাজা নাজিম উদ্দিন পরিস্থিতি সামাল দিতে সকল দাবি দাওয়া মেনে নিয়ে সংগ্রাম পরিষদ এর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর পর জিন্নাহ ঢাকা শহরের রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় ও কার্জন হলের বিশেষ সমার্তন অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন উর্দুতে, এবং সেই সঙ্গে উর্দু কে রাষ্ট্র ভাষারমর্যাদা দান করেন।কিন্তু সেই ভাষণে ব্যপক প্রতিবাদ হয়।বিশাল জনসভায় এ প্রতিবাদ টের না পেলে ও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত কিছু তরুণ যখন ভাষা সম্পর্কে তার বক্তব্যর প্রতিবাদ জানায় তখন তিনি থমকে যান এবং বক্তব্য শেষ না করে ফিরে আসেন। পরদিন তিনি বাংলা ভাষা সমর্থকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু উভয়েই নিজ নিজ বক্তব্য তে অবিচল থাকায় বৈঠক ভেঙে যায়। এই ভাবে চলতে থাকে আন্দোলন, অবশেষে সাল টা ছিল ১৯৫২, খাজা নাজিম উদ্দিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ঢাকায় এসে ২৭ শে জানুয়ারি পল্টন ময়দানে এক জন সভায় ভাষণ দেন উর্দু ভাষায় এবং সেই সঙ্গে ঘোষণা করেন উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা, যে নাজিম উদ্দিন ১৯৪৮ সালে বাংলা রাষ্ট্র ভাষা র দাবি মেনে নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন, তাঁর এ হেন ঘোষণায় বিশ্বাসঘাতক তার প্রতিবাদ এ ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে মিছিল শুরু করেন। মিছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি আসতেই পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের উপর গুলি বর্ষণ করেন, নিহত হন বাংলা ভাষা বুকের মাঝে রাখতে চাওয়া বীর সন্তানেরা রফিক, সালাম, বরকত সহ বহু বীর সন্তানেরা। শহীদ দের রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেলো রাজপথ, আবার ও লেখা হলো প্রতিবাদী দের রক্তে রঞ্জিত অভিশপ্ত ইতিহাস। 

শোকবহ এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, তখন থেকে প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে শোক দিবস হিসাবে পালন করা হয়। অবশেষে ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৯ ইমে অনুষ্ঠিত গণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। আবারো প্রমাণ হয়ে গেলো যে আন্দোলন যদি সঠিক পথে হয় জয় লাভ হবেই হবে, প্রতিপক্ষ একদিন ঠিক পরাজয় মানবে।

১৯৫২ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারী ঢাকার ইতিহাসে ঘটে যাওয়া ভাষা আন্দোলনের মর্যাদা রক্ষার দ্বিতীয় আন্দোলন হোল ১৯৬১ সালে ১৯ শে মে আসামের বরাক উপত্যকায় ঘটে যাওয়া ভাষা আন্দোলন। ১৯ শে মে শিলচর ভাষা দিবস হিসাবে পালিত হয় কারণ এই উপত্যকায় বসবাস কারি সংখ্যা গরিষ্ট বাঙালি তাদের বাংলা ভাষা কে স্বীকৃতি দিতে পথে নেমেছিল আর তাতে চলেছিল গুলি বর্ষণ, যাতে কমলা ভট্টাচার্য সহ শহীদ হয়েছিলেন এগারো জন ভাষা সৈনিক।স্বাধীনতার পর উত্তর ভারত বর্ষের প্রথম ভাষা আন্দোলনের ভাষা শহীদ, এর পর দক্ষিণ ভারতে ব্যপক হিন্দি আধিপত্য বিরোধী ভাষা আন্দোলনের প্রকাশ পায়। এই দেশের ভাষা আন্দোলনের প্রথম হলেন শহীদ ষোড়শী কমলা ভট্টাচার্য। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল বাংলা ভাষার প্রাণ পুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম শতবর্ষ উদযাপনের মাত্র কয়েক দিন পরেই এই আন্দোলন তথা শহীদ বরণ দিবস। আগে থেকেই চলমান আসামের বাঙ্গাল খেলা, দাঙ্গার সাথে শুধুমাত্র অসমিয়া ভাষা কে আসাম রাজ্যের একমাত্র সরকারী ভাষা ঘোষণা করায়। এই আন্দোলনের সূচনা হয় বরাক উপত্যকায় সত্যlগ্রহ আন্দোলন শিলচর শহরের রেল স্টেশন চত্বরে ঢুকে পড়ে গোটা স্টেশন দখল করে নেয়, অফিস কর্মচারীদের চেয়ারে বসে পড়ে। কর্মকর্তারা বসবার জায়গা না পেয়ে ফিরে যান, প্রশাসনকে অচল করে দেয়, ওই বছর ২৬শে মে ঈদ উৎসবের দিন সকল ধর্ম প্রাণ বাঙালি মুসলমান রা বুকে কালো ব্যাজ পরে হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদে সামিল হন। সাম্প্রদায়িক ঊর্ধ্বে এক গৌরব উজ্জ্বল অধ্যায় এটি।ইতিহাসে অবশেষে বাংলা ভাষা সরকারী স্বীকৃতি লাভ করে।

মহান শিলচর এর ভাষা আন্দোলন আমাদের মতো বহু ধার্মিকদের এক বিশেষ বার্তা বহন করে, নিজ ভাষা ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মের ভাষার প্রতি দেওয়া দরকার। ফেডারেল রাষ্ট্র নীতি হাওয়া দরকার।স্বাধীনতার আগে থেকে যে সমস্ত বাংলা ভাষা পরিচালিত স্কুল গুলি কে বাঁচিয়ে রাখা।তাই এগারোটি স্বীকৃতি ভাষা ছাড়া ভারত বর্ষে অন্যান্য ভাষার সার্বজনীন অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

বুকের রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছিল বাংলা ভাষার মান। সেই বাংলা ভাষা বর্তমানে বিশ্বের দরবারে জয়জয়কার। ইউনেস্কোর তত্ত্বাবধানে বাংলা ভাষাকে_"sweetest language in the word" হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। স্পানিশ ও ডাচ ভাষাকে যথাক্রমে দ্বিতীয় তৃতীয় স্থান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। আবার মার্কিন ব্যালট পেপার এ বাংলা ভাষার ব্যাবহার করা হয়েছে। এর আগে অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকার সংসদ ভবনে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবেস্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় বাঙালি কন্যা বিদিশা মৈত্র র রাষ্ট্রপুঞ্জ সদস্য লাভ। ভাবলেশহীন মুখে আবেগের চিহ্ন নেই। সাদামাটা শাড়িপরা আর পাঁচজন ভারতীয় নারীর মতোই বাঙ্গালী আনা ছাপ চোখে মুখে। কিন্তু মাইক্রোফোনের সামনে যখন তাঁর শাণিত যুক্তির ফলা ছিন্নভিন্ন করছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বক্তব্যকে, তখনই সোশ্যাল মিডিয়ায় একটু একটু করে হইচই। কে ইনি? তার অল্পক্ষণেই অবশ্য দুনিয়া জেনে গিয়েছে তিনি বঙ্গসন্তান, বিদিশা মৈত্র। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি। আপাতত কর্মসূত্রে নিউ ইয়র্কবাসিনী হলেও যখন ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিস পাশ করেছিলেন, তখন তাঁর ঠিকানা ছিল দিল্লি। বর্তমানে রাষ্ট্রপুঞ্জের সভায় এক গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন। আর এক বঙ্গসন্তান সৌরভ গাঙ্গুলীর বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট পদ লাভ।বঙ্গের অন্যতম সন্তান অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্ব শ্রেষ্ঠ শিরোপা নোবেল পদক লাভ, যা বাংলা ভাষা ও বাঙালির মানকে উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। বাঙালি হিসেবে আজ গর্ব করার দিন। সেই বাংলা ভাষায় এই বাংলায় আজ উপেক্ষিত। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের দাম এই বাংলা না দিলেও বিশ্ব দরবারে তার প্রাপ্য মর্যাদা লাভ করেছে। একি কম গৌরবের কথা।

আজ বাঙালি ভুলে গেছে আপন পথে চলতে/
আজ বাঙালি ভুলে গেছে বাংলা কথা বলতে/আজ বাঙালি হয়ে গেছে অন্য ভাষার দাস/বাংলা ভাষায় বললে কথা পড়বে তোমার লাশ।

বর্তমানে বাংলা ভাষার পরম্পরাগত মান আজ তলানিতে এসে ঠেকে গেছে তার সন্দেহের অবকাশ রাখে না। সবথেকে লজ্জাজনক বিষয় হলো বাংলা ভাষায় শিক্ষক নিয়োগ চেয়ে কত শত তরুণ, অরুণ, রাজেশদের গুলি খেতে হচ্ছে। সম্প্রীতি ও শিল্প-সংস্কৃতির বাংলায় হিন্দি ও ইংরেজি ভাষার আগ্রাসন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এক শ্রেণীর রাজনৈতিক দলগুলো। তারা মুখে বাংলা ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা বললেও হিন্দি ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গুলোকে ব্যবসা করতে সাহায্য করছে। বাংলার মানুষ প্রতিযোগিতার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে সেই প্রতিযোগিতায় মুখ থুবড়ে পড়ছে। এই স্কুলগুলোতে নেই পর্যাপ্ত পরিকাঠামো ও শিক্ষক। স্কুল ছুট ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার আওতায় আনতে সরকার মিড ডে মিলের ব্যবস্থা করেছে। মনে রাখা দরকার মিড ডে মিল খেলে শুধুমাত্র পেট ভরে,শিক্ষার ভান্ডার রয়ে যাচ্ছে অপূর্ণ। এই বাংলার বুকে অফিস, আদালত, কোট, প্ল্যাটফর্ম সহ বহু জায়গায় বাংলা ভাষা বাদ দিয়ে হিন্দি আর ইংরেজি ভাষা দিয়ে কাজ চালাচ্ছে। দেশের অন্যান্য রাজ্যে তাদের নিজস্ব ভাষার বিশেষ দরজা থাকলেও বাংলা ভাষার আঁতুড়ঘর এই পশ্চিমবাংলায় বাংলা ভাষাকে কফিনে বন্দি করছি আমরাই।এসবই চলছে আমাদের চোখের সামনে। সরকার রাজনৈতিক স্বার্থেই নিরুত্তর। আর আমরা বাঙালি হয়ে এসব দেখেশুনে হাত গুটিয়ে বসে আছি। কারণ আমরা নিজেরাই আমাদের নিজেদের কফিনের গর্ত করে চলেছি। আপনি বিহারে গিয়ে বিহারী ভাষা কে অপমান করুন, আসামে কি অসমীয়া ভাষা কে অপমান করুন তাহলে বুঝতে পারবেন পার্থক্যটা কোথায়। আর আমরা নিজেদের স্বার্থে বাংলা ভাষা কে অবমাননা করতেও পিছপা হইনা। বাঙালি হয়ে নিজের ভাষা চলে অন্য ভাষায় নির্দ্বিধায় কথা বলে যাই, অথচ আমরা বাঙালিরা কখনই এটা প্রয়োজন বোধ করি না,বাংলায় অন্য ভাষার মানুষ বাংলায় কথা বলুক। বর্তমানে বাঙালির বাংলা ভাষা হল বিশ্বের অলংকার। বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ গৌরব। সেই বাঙালি বাংলা ভাষা ছেড়ে অন্য ভাষার দাস হয়ে পড়ছে।ময়ূরকে কাক সাজালে ভালো লাগে কারো? বাঙালি আজ ময়ূর হয়ে কাক সাজতে ব্যস্ত।যে বাংলা ভাষার ধ্বজা আজ বিশ্বের দরবারে উড়ছে, গর্বের সাথে সেই ভাষায় কথা বলুন। অফিস, আদালত, কোট, কাচারি, স্কুল কলেজ, বিশেষ করে চাকরির পরীক্ষা বাংলা ভাষা ব্যবহার করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করুন। প্রশ্ন করুন নিজেকে,যদি এই ভাষা আমেরিকার ব্যালট এ ব্যবহার হয় তবে এই পশ্চিমবাংলায় বাংলা ভাষা স্বীকৃতি লাভ করবে না কেন? এখন থেকে যদি প্রতিরোধ না করে তুলতে পারেন, তাহলে আপনার এই প্রাণের ভাষা শুধু আপনার পাড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে অন্য কোথাও কাজে লাগবে না।

 

বটু কৃষ্ণ হালদার
কবরডাঙ্গা,কলকাতা

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top