সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০

ভারতীয় রাজনীতির সংস্কৃতি তবে কি অবক্ষয়ের পথে? : তন্ময় সিংহ রায়


প্রকাশিত:
১৭ জুন ২০২১ ২০:০০

আপডেট:
২৮ মার্চ ২০২৪ ২২:১৫

 

'মহেশতলার দাসবাড়িতে আর হয় না জামাইষষ্ঠী, শোভনের মতন জামাই না হলেই ভালো হত! ওঁর সাথে তো আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দিতে চাইনি, বরং ওঁর ভাইপোরা এসে হাতে-পায়ে ধরে রাজি করায়, কাকুতি-মিনতি করে!'

খানিক দুঃখ, খানিক হতাশা, কিঞ্চিৎ আফসোস ও কিছুটা রাগ-অভিমান যেন সামাজিক ও আইনসঙ্গতভাবে বৈধ শ্বশুরমশাই দুলাল দাস-এর এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে বেমালুম বেরিয়ে এসে সামনে দাঁড়িয়েছে অনড়।

এদিকে গত ১৫ জুন বৈশাখী নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে নাম পরিবর্তন করে লেখেন 'বৈশাখী শোভন ব্যানার্জি', আর এরই প্রতিক্রিয়াস্বরূপ শোভন-পত্নী রত্না চট্টোপাধ্যায় উষ্মা প্রকাশের মাধ্যমে বলেন, 'আমি আর ওঁদের নিয়ে কোনো কথাই বলতে চাইনা!

এদিকে নজর দিতে গিয়ে আমার সব কাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ওরা ওঁদের কাজ করুক , আর আমি যে দায়িত্ব পেয়েছি তা পালন করতে চাই। 

তবে শোভন কোনো বিপদে পড়লে আমি আর যাবনা, কারণ অপমানিত হওয়ার একটা সীমা আছে!'

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দোপাধ্যায়কে নিয়ে আন-প্লাগড্ শোভন নামক একটি ভিডিও প্রকাশ করে বলেন, 'নিজের কুকর্ম থেকে নজর ঘোরাতেই বারবার আমাকে ঢাল করতে চাইছেন রত্না। 

আমি আমার একান্ত প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে চলে এসেছিলাম বাড়ি ছেড়ে, কারণ সেখানে থাকা অবস্থায় আমি জানতে পেরে যাই রত্নার বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ সম্পর্কের ব্যাপারে, ব্যভিচারী জীবনের বিষয়ে! ২২ টা বছর আমি প্রতারিত হয়েছি, তাই আমি মামলা করেছি ডিভোর্সের!'

এমনকি ভিডিও শুরুতে শোভন চট্টোপাধ্যায় তো এও বলে বসেন, 'রত্না চট্টোপাধ্যায় ঠিক যেভাবে নোংরা ভাষায় বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে মিডিয়ায় সার্কুলেট করেছেন, এর সবকটির উত্তরই আমি দেব। বাস্তব সত্যগুলোকে সামনে আনবো।'

সর্বশেষ গোলপার্কের ফ্ল্যাটকে কেন্দ্র করে স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের সঙ্গে এই টানাপোড়েনের মধ্যেই আবার শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নিজের সব স্থাবর-অস্থাবর বান্ধবী বৈশাখীর নামে লিখে দেওয়ার মতন ঘটনার মধ্যে দিয়ে রীতিমতন বোমা ফাটানোয়, সেই রাজনৈতিক আঙিনায় স্বাভাবিকভাবেই আবার তা সমালোচিত হচ্ছে পূর্ব অপেক্ষা অনেকটাই বেশি।

এখন বিষয়টি হল, গুরুত্বপূর্ণ ও উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক দলীয় ব্যক্তিত্বের এই ব্যক্তিগত পারবারিক কুৎসা যখন জনসমক্ষে আগুনের মতন হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে খবর থেকে খবর, ছবি থেকে ছবি কিংবা ভিডিও থেকে ভিডিওতে, তখন আম পাবলিকের মধ্যে নিজেদের সম্মান বা মর্যাদা শুধু নয়, কলঙ্কিত হয় যে সেই রাজনৈতিক দলের ভাবমূর্তিও!  

এমনকি অত্যন্ত নেতিবাচক এই ধারণার চারাগাছগুলো ধীরে ধীরে মহীরুহ আকার ধারণ করে ভবিষ্যতে যে শিকড় গেঁড়ে এক গহীন প্রভাব বিস্তার করতে পারে সাধারণ জনগণের মনেও, ফাটল বা চিড় ধরতে পারে দলের স্তম্ভেও, তা কি আর এনারা সত্যিই বোঝেন না? 

তা তো নয়ই, বরং বোঝেন বোধ করি বিলক্ষণ! 

কিন্তু তা সত্ত্বেও বিষয়গুলি যেন ক্রমেই দাঁড়াচ্ছে হয়ে এমন যে, এগুলো বর্তমান স্মার্ট যুগে করা যায় খুব সহজেই ও নির্দ্বিধায়, আর এসব আজ খুব স্বাভাবিক এক একটি বিষয়। 

সেখানে এ সমস্ত পদ মর্যাদায় থেকেও ব্যক্তিগত বিদ্বেষের প্রাধান্য হোক আগে, ও আত্ম'মান-মর্যাদা বা দলীয় ভাবমূর্তি পরে হলেও ভবিষ্যতে তেমন বিশেষ কিছু ক্ষতির সম্ভাবনা একপ্রকার নেই বললেই হয়। 

কিংবা হয়তো ভাবছেন, মিডিয়ার মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত আরো বেশি বেশি জনপ্রিয় হওয়া যাচ্ছে এ সুযোগে, এবং বর্তমানের এই জনপ্রিয়তাকে হিমঘরে রেখে ভবিষ্যতে নির্ঘাত করে ফেলা যেতেই পারে আরো কিছু সুপারহিট।

এরকমই বিশেষত ভোটপূর্বে বর্তমানে বিরোধী দলের দু'একজন নেতার জনসমক্ষে বা মিডিয়ার মাধ্যমে সাবলীলভাবে মুখের অশালীন ভাষার প্রয়োগে তো বোধহয় অনেকেই হয়ে পড়েছিলেন বিস্ময়ে বাক্যহারা!

এবং এরকম ধরণেরই অন্যান্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের গুচ্ছখানেক ব্যক্তিগত দৃষ্টান্ত আজ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়ে গেছে এবং মুহুর্মুহু তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে, যা দুর্ঘটনাবশতঃ তো নয়'ই, বরং ইন্টেনশনালি নিজেরাই পর্যবসিত করেছে এবং করছে বিভিন্ন কেচ্ছায়!

জনপ্রতিনিধিদের চিন্তাধারা, আচরণ, ব্যবহার, কথাবার্তা, ন্যায়, নীতি, আদর্শ, সামাজিক বা রাজনৈতিক দক্ষতা, দূরদর্শিতা প্রভৃতি ঠিক কেমন হওয়া উচিৎ? 

ক্রমশ কি তাহলে এগুলো অবনতি, না রয়ে গেছে একইরকম, না উন্নতির পথে?

বর্তমানের দেশীয় ও কিছু রাজ্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতি কি প্রকৃত মন থেকে মানুষের মধ্যে আজ সত্যিই বরণযোগ্য হয়ে উঠেছে? 

না বাধ্য হয়ে আজ নিতে হচ্ছে সব মেনে? 

কারণ এ ক্ষেত্রটাকে আজ করা হয়েছে অত্যন্ত সংবেদনশীল! 

এখানে শুধু চুপচাপ দেখে, শুনে আর যেতে যেতে হবে অনুভব করে, কিন্তু কিছু বলা যাবে না।

ন্যায্য বললেই তো জোরপূর্বক আবার তা প্রমাণিত হবে অন্যায্য, বিরুদ্ধে ও ভুলভাল সব বকওয়াসে!

আমার তো মনে হয় নাগরিকত্ব জীবিত রাখার জন্যে শুধু ভোট দান আজ সংগোপনে সংখ্যায় ক্রমেই চলেছে বেড়ে। জনগণের প্রতিনিধিদের এ সব কিছুকেই, এমনকি ওঠা-বসা, হেঁটে চলে বেড়ানো থেকে খাওয়া-দাওয়া বা ঘুম ইত্যাদি সবকিছু কিন্তু যথাসম্ভব, প্রায় প্রত্যেক মুহূর্তে নজরবন্দী হয় সাধারণ মানুষের মগজের ক্লোজ সার্কিট বা মোশন ডিটেক্টর ক্যামেরায়!

বলাবাহুল্য এই ডব্লু ডব্লু ই রূপে ইন্টারনেট ও মিডিয়ার ভূমিকাতেই তো এতকিছু, আর এর দৌলতেই কিন্তু সাধারণ মানুষ আজ অসাধারণ, অপেক্ষাকৃত বেশি প্রতিভাবান, শিক্ষিত, ক্ষমতাসম্পন্ন এবং ইন্টেলেকচুয়াল।   

তবে তিলে তিলে বহু কিছু অবৈধ সহ্য করতে করতে অদূর ভবিষ্যতে একসময় কি মানুষ এ হেন গণতান্ত্রিক আবহাওয়ায় পারবে কি সুস্থ ও শান্তিপূর্ণভাবে বাঁচতে?

রাখতে পারবে কি আদৌ কোনো বিশ্বাস?  

না মন থেকে আর পারবে তাঁদের প্রতি হারিয়ে যাওয়া ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে?

 

তন্ময় সিংহ রায়
কলকাতা, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top