সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

মূল্যবোধের অবক্ষয় ও আপোষকামিতার সংস্কৃতি : আলী রেজা


প্রকাশিত:
২৬ জুন ২০২১ ১৮:২৬

আপডেট:
২৬ জুন ২০২১ ২০:৪৭

 

সামাজিক পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক নিয়ম। এই পরিবর্তন ইতিবাচক হতে পারে। আবার নেতিবাচকও হতে পারে। ইতিবাচক পরিবর্তনও ঘটে দুইভাবে- বস্তুগত ও মনোজাগতিক। বস্তুগত পরিবর্তন ইতিবাচক হলে স্বাভাবিকভাবে সেটাকে উন্নয়ন বলা চলে। এই উন্নয়নকে টেকসই করার জন্য প্রয়োজন ইতিবাচক মনোজাগতিক পরিবর্তন। মনোজাগতিক পরিবর্তন আসলে মূল্যবোধের পরিবর্তন। পুরোনো মূল্যবোধের বদলে নতুন মূল্যবোধের প্রবর্তন বা প্রচলন। নতুন মূল্যবোধ বলতেই সেটা খারাপ কিছু নয়। কিন্তু যদি সেটা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রজীবনে অকল্যাণকর হয়, মানবিক মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করে তবে সেটাকে গ্রহণযোগ্য মনে করা ঠিক নয়। ঢালাওভাবে নতুন মূল্যবোধে আকৃষ্ট হওয়া ও পুরোনো মূল্যবোধকে বিসর্জন দেওয়া থেকেই মূল্যবোধের অবক্ষয় সূচিত হয়। প্রতিটি সামাজিক পরিবর্তনের সাথে মূল্যবোধের পরিবর্তন ঘটে। নতুন মূল্যবোধে বিশ্বাসী হওয়ার আগে তাই সেটার যথার্থতা যাচাই করা জরুরি।
বর্তমান সমাজে মূল্যবোধের পরিবর্তন যতটা ঘটেছে তার চেয়ে বেশি ঘটেছে মূল্যবোধের অবক্ষয়। সাধারণভাবে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে তখনই যখন পুরোনো মূল্যবোধকে অমর্যাদার চোখে দেখা হয় এবং এমন কিছু নতুন মূল্যবোধের চর্চা করা হয় যেগুলো মানুষের হৃদয়বৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি দুটোকেই আহত করে। মূল্যবোধের অবক্ষয় সমাজের জন্য অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়। নীতিবান লোক সর্বদাই সকলের মর্যাদা পাবেন। সৎ-শিক্ষিত মানুষ সম্মানিত হবেন। দুর্নীতিবাজ-অসৎ মানুষগুলোকে সাধারণ মানুষ প্রত্যাখ্যান করবে। সামাজিকভাবে তারা ধিকৃত হবে। মানুষকে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এই বোধ কাজে লাগাতে হবে। এই বোধ কাজে না লাগিয়ে যদি দুর্নীতিবাজ-অসৎ মানুষগুলোকে মর্যাদার আসনে বসানো হয় তখন মূল্যবোধের পরিবর্তন নয়, মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে। পরিবর্তন সবক্ষেত্রেই খারাপ নয়, কিন্তু অবক্ষয়কে সবক্ষেত্রেই খারাপ বলা চলে। যুগের পরিবর্তনে মানুষের মূল্যবোধের পরিবর্তন হতে পারে। পরিবর্তন হয়েও থাকে। কিন্তু সেই পরিবর্তন যদি মানবিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে তবে সেটা মেনে নেওয়া কষ্টকর। সমকালে পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের মধ্যে যে আচরণগত পরিবর্তন ঘটেছে তা মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার অনুকূল নয়। সন্তানের সাথে পিতা-মাতার সম্পর্ক, স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক, সামাজিক বন্ধন বা বন্ধুত্বের সম্পর্ক ইত্যাদি এখন ক্রমশ বৈষয়িক বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট হয়ে উঠছে। আত্মস্বার্থ কিংবা আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি বড় অন্তরায়। ব্যক্তি এখন নিজেকে নিয়ে এতো অধিক মাত্রায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে সম্পর্কগুলো এখন ক্রমশ মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে। এটা শুধু পারিবারিক নয়, এক ধরনের সামাজিক সংকট তৈরি করবে। ব্যক্তিচিন্তায় মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটলে ব্যক্তির নৈতিক অবস্থানও দুর্বল হয়ে পড়ে। ব্যক্তি তখন আপোষকামী হয়ে যায়। অন্যায়ের সাথে আপোষ করে চলাই তখন হয়ে ওঠে বুদ্ধিমানের কাজ। এই আপোষকামী মনোভাব বর্তমান সমাজের মেরুদণ্ড ভেঙে দিচ্ছে। চারিদিকে মেরুদণ্ডহীন মানুষের নিরন্তর ছুটাছুটি। হঠাৎ কেউ স্রোতের বিপরীতে দাঁড়ালে তাকে শক্তি জোগানোর জন্য পাশে দাঁড়াবে- এমন মানুষের অভাব সর্বত্র। কেউ কারো পাশে নেই। সবাই একা। শারীরীকভাবে সংগঠিত মানুষগুলো মানসিকভাবে চরম বিচ্ছিন্ন। তাই বাইরের টান দেখা যায় বটে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে ক্রমশ ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে বন্ধন। মানুষ এখন আত্মস্বার্থে নিজেকে সমর্পিত করছে যে কোন অন্যায়ের কাছে।
ব্যক্তিজীবনে যতগুলো মূল্যবোধ আছে তার মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ অন্যতম। এই ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় অনেকাংশে ব্যক্তির নৈতিক অবস্থানকেও দুর্বল করে তোলে। ধর্মের ইহজাগতিক গুরুত্বের মধ্যে অন্যতম হলো সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা। ধর্ম নির্দেশিত পাপের শাস্তি ও পূণ্যের পুরস্কারের বিষয়টি ব্যক্তিকে অনেক অসৎ ও অনৈতিক কাজ থেকে বিরত রাখে এবং সৎকাজে নিয়োজিত রাখে। ব্যক্তির ধর্মীয় অনুভূতি মানেই হলো পরকালে শাস্তির ভয় ও শান্তির আশা। ধর্মের এই বিধানদাতা এক অদৃশ্য শক্তি। তাই এটা প্রমাণ বা অপ্রমাণের বিষয় নয়। দৃশ্যমান শক্তিকে কুপোকাত করা যায় জাগতিক উপায়ে। কিন্তু অদৃশ্য শক্তিকে জাগতিক উপায়ে মোকাবিলা করা কঠিন। দৃঢ় মনোবল ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষ সাধনকারী ব্যক্তির পক্ষে অদৃশ্য শক্তিকে এড়িয়ে চলা অনেকাংশে সম্ভব হলেও জড়বুদ্ধির অন্ধবিশ্বাসী ব্যক্তিগণ খুব সহজেই অদৃশ্য শক্তির কাছে সমর্পিত হয়। ফলে যুগে যুগে দেখা গেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অনগ্রসর অঞ্চলে অদৃশ্য শক্তিতে বিশ্বাসভিত্তিক ধর্ম সহজেই প্রচার, প্রসার ও প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের একটি বিপরীতমুখী সম্পর্ক আছে। সম্পর্কটি হলো বিজ্ঞান এগিয়ে গেলে ধর্ম পিছিয়ে পড়ে। আবার ধর্ম এগিয়ে গেলে বিজ্ঞান পিছিয়ে পড়ে। বর্তমানে বিজ্ঞান এগিয়ে যাচ্ছে। মহাসাগরের গভীর অঞ্চল থেকে মহাকাশ পর্যন্ত বিজ্ঞান পৌঁছে গেছে। বিজ্ঞানের গবেষণার আওতা যতই বাড়ছে প্রকৃতির রহস্য ততই উন্মোচিত হচ্ছে। ফলে শাস্ত্রীয় ধর্মের অনেক কিছুই এখন মানুষের কাছে অবশ্য পালনীয় বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে না। অপ্রয়োজনীয় ও অকল্যাণকর অনেক প্রথা যেগুলো বিভিন্ন সময়ে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা লাভ করেছিল সেগুলোর অনেক কিছুই এখন সাধারণ মানুষের কাছেও মূল্যহীন হয়ে পড়েছে।
ধর্মীয় মূল্যবোধের এই পরিবর্তন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও মুক্তচিন্তাকে এগিয়ে নিয়েছে। কিন্তু মানবাচরণের ক্ষেত্রে তেমন সুফল বয়ে আনেনি। ধর্মীয় অনুভূতি মানুষকে ভেতর থেকে শাসন করে বলে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি নিজেই মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকে। রাষ্ট্র প্রবর্তিত আইনের শাসন কিংবা সমাজ নির্ধারিত সামাজিক বিধানের ভয় দেখিয়ে তাকে মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখতে হয় না। ধর্মীয় অনুভূতিই তাকে মানবিক ও সৎস্বভাবী করে তোলে। ধর্মীয় অনুভূতির এই অসীম শক্তিকে অস্বীকার করা যায় না। তবে অনেক ক্ষেত্রে ধর্মাচারের সাথে ধর্মীয় অনুভূতির মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। ধর্মাচারী ব্যক্তিরা যখন নানাবিধ মন্দ কাজে জড়িত হন তখন ধর্মের শক্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। মানুষ তখন ধর্মাচারকে বাঁকা চোখে দেখে। এমন বাস্তবতায় ব্যক্তির মধ্যে জন্ম নেয় আর এক নতুন ধর্মীয় মূল্যবোধ যা ধর্মাচারকে মূল্যহীন করে তোলে। সেক্ষেত্রে ধর্মাচারের আধিক্য বা প্রদর্শনবাদিতা বেড়ে যায় কিন্তু ধর্মীয় অনুভূতি দুর্বল হয়ে পড়ে। ধর্মাচারীদের দুর্নীতি ও অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ার বিভিন্ন ঘটনা থেকে এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, বর্তমানের আচরিত ধর্ম ব্যক্তিকে প্রকৃত ধর্মপ্রাণ করে তুলতে পারছে না। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও মুক্তচিন্তার ক্ষেত্রে মানুষ ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। মানুষ নিজেকে সৎ, মহৎ ও সাধু হিসেবে প্রদর্শিত করতে চায়। এ ক্ষেত্রে ধর্মাচার সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে। তাই প্রকৃতপক্ষে ধর্মপ্রাণ হওয়ার প্রচেষ্টার চেয়ে ধর্মাচারী হওয়ার দিকেই মানুষের ঝোঁক বেড়ে যাচ্ছে। ধর্মীয় মূল্যবোধের এই পরিবর্তন সামাজিক মূল্যবোধকেও বদলে দিয়েছে।
সামাজিক মূল্যবোধ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শুধু ধর্মচিন্তা নয়; শিক্ষার উন্নয়ন ও মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনও অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। চিরায়ত সামাজিক মূল্যবোধগুলোর ভাল-মন্দ বিচার করার মানসিক শক্তি অর্জিত হয় শিক্ষার মাধ্যমে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে ব্যক্তির ভেতর একটি নতুন চিন্তাকাঠামো তৈরি হয়। তখন সে নিজেকে বদলাতে চায়; পাশাপাশি সমাজকেও বদলাতে চায়। শিক্ষার মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যক্তি পেশা পরিবর্তন করে। ফলে ব্যক্তির সংঘসমাজ পূর্বের ন্যায় থাকে না। পুরাতন মূল্যবোধগুলো তখন ব্যক্তির কাছে গুরুত্বপূর্ণ থাকে না। অনেকক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়। শিক্ষা এভাবে মানুষকে নতুন মূল্যবোধ নির্মাণে সহায়ক হয়। অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন মানুষের মূল্যবোধ পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। ধনীর মূল্যবোধ দরিদ্রের মূল্যবোধ থেকে ভিন্ন। মধ্যবিত্ত আবার স্বতন্ত্র মূল্যবোধ লালন করে যা ধনী বা দরিদ্র কারো সাথে মেলে না। মধ্যবিত্ত চায় দ্রুত পরিবর্তন। নিজের পরিবর্তনের সাথে সাথে সমাজের পরিবর্তন প্রত্যাশা করে। ধনীরা সাধারণত রক্ষণশীল হয়। কারণ বিদ্যমান সমাজকাঠামোতে ধনীরা সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করে। দরিদ্ররা অক্ষম বলে তাদের মাধ্যমে তেমন কোন পরিবর্তন ঘটে না। সমাজকাঠামো পরিবর্তন ও নতুন মূল্যবোধের প্রবর্তনের ক্ষেত্রে তাই মধ্যবিত্তের ভূমিকাই প্রধান। প্রতিষ্ঠান হিসেবে সমাজ সব সময়ই পুরাতন তথা বিদ্যমান মূল্যবোধ অক্ষুণ্ণ রাখতে চায়। আর ব্যক্তি চায় পরিবর্তন। তাই ব্যক্তির সাথে সমাজের দ্ব›দ্ব চিরকালের। ব্যক্তি নতুন মূল্যবোধে বিশ্বাসী হয়ে তা চর্চা করা শুরু করলে সমাজ সেটা ভালো চোখে দেখে না। প্রাচীনপন্থীরাও বাঁকাচোখে তাকায়। সেকালের মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়েছে একালের যুবসমাজ- একথা বলে হতাশা প্রকাশ করে। আমাদের সময় কী দেখেছি আর এখন কী দেখছি- এ কথা হামেশাই শোনা যায় বয়সী ব্যক্তিদের মুখে। তারা মূল্যবোধের পরিবর্তনকে মূল্যবোধের অবক্ষয় হিসেবে চিহ্নিত করেন। তবে এ কথাও ঠিক যে, সব পরিবর্তনই সুফল বয়ে আনে না। অনেক পরির্তন নীতি-আদর্শ ও ধর্মীয় অনুভূতিকে এতোটাই দুর্বল করে দেয় যে তাতে সামাজিক বন্ধন ও সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে যায়। এক পর্যায়ে দেখা দেয় সামাজিক বিপর্যয়।
সামাজিক বিপর্যয় রোধ করার জন্য রাষ্ট্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রাষ্ট্রের হাতে আছে আইন ও একই সাথে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। কিন্তু রাষ্ট্রের আইন কার্যকর হবে তখনই যখন সে আইন বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য কল্যাণকর হবে। রাষ্ট্র সব সময় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করতে পারে না। কারণ রাষ্ট্র পরিচালিত হয় সরকার নামক একটি সংগঠন দ্বারা। রাষ্ট্রনীতি জনকল্যাণকর হলেও সরকার যদি সে নীতি বাস্তবায়ন না করে তাহলে সেই কাগুজে রাষ্ট্রনীতি জনগণের জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনবে না। তবু রাষ্ট্রনীতি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রাষ্ট্রনীতির মাধ্যমেই প্রকাশিত হয় রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধ। রাষ্ট্রের সাথে জনগণের সম্পর্ক নির্ধারিত হয় যে নীতির মাধ্যমে সেটাই নির্দেশ করে রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের প্রকৃতি। রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হলে জনগণের সাথে তার আচরণ এক ধরনের। রাষ্ট্র স্বৈরতান্ত্রিক হলে জনগণের সাথে তার আচরণ আর এক রকম। আবার রাষ্ট্র সমাজতান্ত্রিক হলে জনগণের সাথে তার আচরণ ভিন্ন রকম। রাষ্ট্রনীতির এই ভিন্নতা রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের ভিন্নতা নির্দেশ করে। রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধ কী হবে বা কী হওয়া উচিৎ- সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। তবে রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটলেই তার বিরূপ প্রভাব ব্যক্তি ও সমাজের ওপর পড়বেই। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সরকার যদি তার জনগণের সাথে স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের ন্যায় আচরণ করে কিংবা একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সরকার যদি তার জনগণের সাথে একনায়কতান্ত্রিক সরকারের ন্যায় আচরণ করে তবে সেখানে রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা দেয়। রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় রাষ্টের জনগণকে নীতিবর্জিত করে তোলে। ব্যক্তি যেহেতু একটি রাষ্ট্র ও সমাজকাঠামোর মধ্যে বসবাস করে। তাই রাষ্ট্রনীতি ও সমাজনীতির প্রভাব ব্যক্তির ওপর সরাসরি পড়ে। ব্যক্তির মূল্যবোধ নির্ধারিত হয় রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের পরিপ্রেক্ষিতে। রাষ্ট্র ও সমাজকাঠামোর ভেতরে থেকেও কিছু মানুষ রাষ্ট্র ও সমাজনীতির তোয়াক্কা না করে ব্যক্তিগত মূল্যবোধ চর্চায় মেতে ওঠে। এদের অনেকে ধর্মীয় মূল্যবোধকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আবার অনেকে ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চাই করেন না। ব্যক্তির মূল্যবোধ চর্চার এই ভিন্নতা সর্বকালেই ছিল ও থাকবে। এই ভিন্নতা মেনে নিয়েও ব্যক্তির মধ্যে আর একটি অভিন্ন মূল্যবোধের চর্চা সবচেয়ে জরুরি। আর সেটা হলো মানবিক মূল্যবোধ।
মানবিক মূল্যবোধ রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের মতো বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া বিষয় নয়। মানবিক মূল্যবোধ ব্যক্তির ভেতরেই জন্ম নেয়। ব্যক্তি সাধারণভাবেই এই মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী হয়ে ওঠে। নেতিবাচক পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রভাবে অনেক সময় এই মানবিক মূল্যবোধের অবনতি ঘটে থাতে। তখন মানুষ অমানবিক হয়ে উঠতে পারে। যদিও এটা তার মনোজাগতিক প্রবণতা নয়। মনোজাগতিকভাবে মানুষ সবসময়ই মানবিক। কিন্তু জাগতিক সমস্যা, সংকট কিংবা অন্যায়-অত্যাচার-উৎপীড়ন মানুষকে অমানবিক করে তোলে। কল্যাণকর রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থায় মানুষ মানবিক মূল্যবোধ সযত্নে লালন করে। এই মানবিক মূল্যবোধ মানুষকে জাতিভেদ, ধর্মভেদ ও শ্রেণিভেদের উর্ধ্বে উঠতে সহায়তা করে। সমাজে মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হলে সর্বস্তরে মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। সামাজিক শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ব্যক্তি মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হওয়া জরুরি। রাষ্ট্র অনেক সময় ব্যক্তির অন্তর্গত মূল্যবোধ বিকাশে অন্তরায় সৃষ্ট করে। সামাজিক বিধি-বিধানও ব্যক্তিগত মূল্যবোধ দমনের হাতিয়ার হতে পারে। ধর্ম সব সময়ই গোষ্ঠীকেন্দ্রিক। কোন বিশেষ ধর্মের অনুসারীগণ অন্যান্য ধর্মাবলম্বিদের ধর্মবিশ্বাসের কোন মূল্যই দেন না। সুতরাং রাষ্ট্র, ধর্ম ও সমাজ সব সময়ই ব্যক্তি স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান করে। একইভাবে রাষ্ট্র, ধর্ম ও সমাজ মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করে। তাই মানবতাবাদ কখনো কখনো দাঁড়িয়ে যায় রাষ্ট্র, ধর্ম ও সমাজের বিরুদ্ধে।
মূল্যবোধের অবক্ষয় ব্যক্তিচিন্তায় আপোষকামিতার জন্ম দেয়। আপোষকামিতা ব্যক্তির এমন একটি বৈশিষ্ট্য যার মাধ্যমে ব্যক্তি তার নিজের নৈতিক ও আদর্শিক অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়। ব্যক্তিচিন্তা বাধাগ্রস্ত হয়। ব্যক্তি নিজেই তার ব্যক্তিচিন্তাকে দমিয়ে রেখে বিশেষ স্বার্থে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়। আপোষকামিতা ব্যক্তির নীতি-আদর্শকে দুর্বল করে দেয়। আপোষকামিতার সংস্কৃতি তাই কখনো কখনো ব্যক্তিস্বার্থের অনুকূল হলেও মানবসমাজে তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি ও ধর্মনীতির ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ আপোষহীন হতে পারে না। কারণ সাধারণ মানুষের ওপর কর্তৃপক্ষীয় নীতি আরোপ করা হয় দমনমূলকভাবে। অসাধারণ ব্যক্তিরা সাধারণত দমনমূলক কর্তৃপক্ষীয় নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। এঁদের অসাধারণ নেতৃত্বে তাই পাল্টে যায় অনেক কিছু। কিন্তু এই বিশেষ কিছু মানুষের বাইরে সাধারণ মানুষের যাপিত জীবনে যদি আপোষকামিতার চর্চা বেড়ে যায় তাতে মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে।
উভয়পক্ষ সম্মত হয়ে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বা তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতিতে বিবদমান একটি বিষয়ে যে মীমাংসায় উপনীত হয় সেটিও একটি আপোষক্রিয়া। কিন্তু আলোচ্যক্ষেত্রে যে আপোষকামিতার কথা বলা হচ্ছে সেটি ঐ ধরনের সামাজিক আপোষক্রিয়া নয়। এই আপোষক্রিয়া নিজ স্বার্থে হয়ে থাকে এবং এটা মানুষকে অনেকটা লেজুড়বৃত্ত্রি দিকে নিয়ে যায়। তাই এই আপোষকামিতা নেতিবাচক। আপোষকামিতা ব্যক্তির নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করে দেয়। অবক্ষয়িত মূল্যবোধের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মানসিক শক্তিকে ধ্বংস করে দেয়। আপোষকামী ব্যক্তি দুর্নীতি, অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে না। নিজে কোন প্রতিকূলতার সম্মুখীন না হলে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন না। মানুষের বঞ্চনা কিংবা ব্যক্তির বিরুদ্ধে সমাজ বা রাষ্ট্রের আগ্রাসন দেখে ক্ষুব্ধ হন না। এই আপোষকামিতার সংস্কৃতি প্রচলিত হয়েছে মানুষের মূল্যবোধের অবক্ষয় থেকে। মানুষের মূল্যবোধ ক্রমশ আত্মস্বার্থকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। তাই চারপাশের অনিয়ম ও অবমূল্যায়ন বেশিরভাগ মানুষকেই বিচলিত করে না। জ্ঞাতিসম্পর্কের মানুষগুলো এখন পরস্পর থেকে বিমুখ। কেউ কারো থেকে যথার্থ, যুক্তিসঙ্গত, কাক্সিক্ষত কিংবা বিধিবদ্ধ মূল্যটুকু পাচ্ছে না। সম্পর্কের এই নিম্নমুখিতা ব্যক্তির আত্মকেন্দ্রিক ভাবনার ফসল। মানুষ আপোষকামী হলে আত্মস্বার্থ রক্ষা হয়। প্রতিবাদী হলে সামাজিক স্বার্থ রক্ষা হয়। সামাজিক স্বার্থের মধ্যে নিজের স্বার্থও জড়িত থাকে। কিন্তু সেটা প্রচ্ছন্ন ও অন্যের স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত বলে আপোষকামী ব্যক্তি সামাজিক স্বার্থ নিয়ে মাথা ঘামায় না। এভাবেই সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে। কারো সন্তান বিপথগামী হয়ে যাচ্ছে দেখেও কেউ দায়িত্ব নিয়ে সেই সন্তানকে সুপথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে না। অন্যেরা তার সন্তানের ভাল-মন্দের ব্যাপারে সোচ্চার হোক- এটাও অনেক বাবা-মা চান না। এভাবে সামাজিক দায় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মানুষ। অথচ সমাজে একটি সন্তানও বিপথগামী হলে তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে থাকে প্রত্যেকের ওপর। তাই মানুষকে আত্মস্বার্থকেন্দ্রিক হওয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ব্যক্তির আপোষকামী মনোভাব যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
ব্যক্তির আপোষকামিতা প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতিকে চলমান রাখতে সহায়ক হয়। কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ ব্যক্তির স্বার্থ হিসেবেই বিবেচিত। ফলে প্রতিষ্ঠান এগিয়ে গেলে উক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিও এগিয়ে যান। প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি পেলে কর্মরত ব্যক্তির সুনামও বৃদ্ধি পায়। এই স্বাভাবিক অবস্থা ব্যাহত হয় যদি প্রতিষ্ঠানের কেউ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে এবং অন্যেরা সেই প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির ব্যাপারে আপোষকামী হন। এই আপোষকামিতা দুইভাবে ঘটে থাকে। কখনো সংঘটিত দুর্নীতির সুবিধাপ্রাপ্তরা আপোষকামী হন। কখনো সুবিধাবঞ্চিতরা নিজেদের ব্যক্তিগত কোন লাভ নেই বলে প্রতিবাদী না হয়ে আপোষকামী হন কিংবা নিরপেক্ষ মনোভাব পোষণ করেন। উভয় ক্ষেত্রেই মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে। সব ক্ষেত্রেই ‘আমার কী লাভ’ কিংবা ‘এতে আমার কোন লাভ নেই’- এই মনোভাব পোষণ করাও এক ধরনের আপোষকামিতা। সামষ্টিক স্বার্থ প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজের সকলেই সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন- এই মনোভাব পোষণ না করে ব্যক্তিস্বার্থে সামষ্টিক স্বার্থের ব্যাপারে নীরব ও নিরপেক্ষ থাকার মাধ্যমে ব্যক্তির মধ্যে যে আপোষকামী মনোভাব তৈরি হয় সেটি একদিকে যেমন মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটায়, অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতিকে পরোক্ষভাবে সমর্থনপুষ্ট করে তোলে। ‘আমার কী লাভ’ কিংবা ‘এতে আমার কোন লাভ নেই’- এই বাক্য দুটি আত্মবাদী চিন্তার বহির্প্রকাশ ঘটায় এবং পরার্থবাদী বা সর্ববাদী চেতনার মূলে গভীর আঘাত হানে। এই চেতনা থেকেই সৃষ্টি হয় নতুন মূল্যবোধ। এই নতুন মূল্যবোধে মানুষ ভোগবাদী হয়ে ওঠে। নিজে বেশি ভোগ করতে চাইলে অন্যকে বঞ্চিত করতে হয়। অন্যকে বঞ্চিত করতে চাইলে তাকে দূরে সরিয়ে রাখতে হয়। মানুষ এখন দুরত্বের পুজারী। মানুষের সাথে যত দুরত্ব তত একা ভোগ করার সুযোগ। ভোগলিপ্সা মানুষকে মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে তুলেছে। মানুষের জীবনে এখন প্রতিবেশি বলতে কিছু নেই। এই ঘরে বসবাস করেও এখন আর প্রতিবেশি হতে পারছে না কেউ। যেখানে আত্মস্বার্থ সেখানেই সবার পদচারণা। স্বার্থমগ্ন মানুষগুলো স্বভাবতই তোষামোদপ্রিয় হয়ে থাকে। তোষামোদের মাধ্যমে স্বার্থ হাসিল করা মানুষগুলোও নতুন মূল্যবোধে কাজের মানুষই বটে। আবার জোর করে কিংবা বিভিন্ন কৌশলে স্বার্থ হাসিল করা নতুন সামাজিক মূল্যবোধে সম্মানীয় মানুষ হিসেবে চিহ্নিত। আর এটাকে মূল্যবোধের অবক্ষয়ই বলা চলে।
মূলত তোষামোদের কথাই বলবো। তোষামোদ কোথায় নেই? পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে- সর্বত্র তোষামোদের সংস্কৃতি। রাজনীতির বৃহৎ পরিমন্ডল থেকে তৃণমূল পর্যন্ত শুধু তোষামোদের ভাষা। অনেক দিন আগে প্রাজ্ঞ রাজনীতিক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমেদ রাজনীতি ও তোষামোদের ভাষা নামক একটি বই লিখেছিলেন। রাজনীতিতে সেই তোষামোদী আজও কমেনি। বরং দিন দিন বেড়েছে। আজকাল তোষামোদের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো মঞ্চবন্দনা। যে যত মঞ্চবন্দনা করতে পারে সে তত তৃপ্ত হয় এবং অন্যকেউ তৃপ্ত করতে পারে। বক্তার পর বক্তা আসছে, অনর্গল মঞ্চবন্দনা করে যাচ্ছে। মঞ্চবন্দনা শেষ হলেই শুরু হচ্ছে নেতার বন্দনা। আজকাল রাজনৈতিক মঞ্চে যে কোন নেতাই মহামানব। কর্মীদের বন্দনায় মুখরিত এই নেতাদের মঞ্চের বাইরের চরিত্র কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। এই মহামানবদের কারো কারো ব্যবহারিক জীবন এতোটাই কদর্য যে, জাত্যর্থ বিবেচনায় তাদেরকে মানুষ বলাও চলে না। ধর্ম মানুষের একটি প্রধান আশ্রয়। কোথাও আশ্রয় না পেলে মানুষ ধর্মের আশ্রয় গ্রহণ করে। ধর্ম মানুষকে শান্ত করে। ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়ে পূর্বে সামান্য বলা হয়েছে। ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে মানুষ এখন শেষ আশ্রয় থেকেও বঞ্চিত। ধর্মব্যবসাই ধর্মকে মূল্যহীন করে তুলেছে। এখন কোথাও ধর্ম নেই। চারদিকে শুধু ধর্মাচার। হাদিস শরীফে আছে, উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এখানে উপরের শ্রেষ্ঠ হাতটিকেই ধর্মের হাত বলা হয়েছে। উপরের হাত দাতার হাত। নিচের হাত গ্রহীতার হাত। কিন্তু এখন ধর্মের হাত আর দাতার হাত নেই। ধর্ম এখন নির্লজ্জভাবে গ্রহীতার হাতে পরিণত হয়েছে। আর এই গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কোন নীতি মেনে চলছে না তথাকথিত ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ। অসৎ উপায়ে অর্জিত অর্থ দান হিসেবে গ্রহণ করে মসজিদ, মাদরাসা, মক্তবজাতীয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার হিড়িক পড়ে গেছে। আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও দান গ্রহণের ব্যাপারে পিছিয়ে নেই। রিজার্ভ ফান্ড বাড়ানোর জন্য দান গ্রহণ করার ধর্মীয় ব্যাখ্যা যা-ই থাকুক, নীতিগতভাবে বিষয়টি আপত্তিকর। এতে ধর্মের অমর্যাদা হয়।
তোষামোদের সংস্কৃতি চর্চার পেছনে ব্যক্তির অযোগ্যতা বিশেষভাবে দায়ী [একাডেমিক ডিগ্রি এখানে যোগ্যতার মাপকাঠি নয়]। একজন অযোগ্য, অদক্ষ ব্যক্তি খুব সহজেই তোষামোদে চরিত্রের হয়ে ওঠে। আর তোষামোদে ব্যক্তি সহজেই আপোষকামী হতে পারে। আপোষকামিতা ব্যক্তির নৈতিক অবস্থানকে যেমন দুর্বল করে তেমনি মূল্যবোধে ফাটল ধরায়। মূল্যবোধের অবক্ষয়ের পেছনে আপোষকামিতার প্রভাবকে তাই অস্বীকার করা যায় না।


আলী রেজা
প্রাবন্ধিক ও সাহিত্যচিন্তক
টাঙ্গাইল, বাংলাদেশ

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা


বিষয়: আলী রেজা


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top