স্থায়ী শান্তি চুক্তির দাবি ইউক্রেনের
প্রকাশিত:
৩১ মার্চ ২০২২ ০০:৪৯
আপডেট:
৩১ মার্চ ২০২২ ০০:৫০

প্রভাত ফেরী: ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে পুতিন ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করছেন। ইউক্রেনকে ‘বেসামরিকীকরণ’ ও ‘নাৎসিমুক্ত’ করার জন্যই তিনি এই অভিযান চালিয়েছেন বলে দাবি করছেন।
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে রাশিয়ার সাথে চলমান আলোচনায় যুদ্ধবিরতি ও শান্তিরক্ষায় স্থায়ী চুক্তির দাবি করেছে ইউক্রেন। এর আগে মঙ্গলবার ইস্তাম্বুলের দোলমাবাহচে প্রাসাদে দুই দিনের এই আলোচনা শুরু হয়।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে আলোচকরা জানান, ইউক্রেনের নিরপেক্ষ থাকার বিষয়ে তারা রাশিয়ার দাবি মেনে নিতে প্রস্তুত। তবে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ও স্থায়ী শান্তিরক্ষায় তৃতীয় কোনো দেশের জামিন নেয়ার সাপেক্ষে আন্তর্জাতিকভাবে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে হবে।
ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দলের প্রধান ডেভিড আরাখামিয়া আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চাই নিরাপত্তা নিশ্চয়তার আন্তর্জাতিক কর্মকৌশল যেখানে জামিন নেয়া দেশটি ন্যাটোর আর্টিকেল নম্বর পাঁচের অনুসারেই পদক্ষেপ নেবে এবং তা পালন করবে আরো জোরালোভাবে।’
সংবাদ সম্মেলনে ভবিষ্যতে রাশিয়ার সাথে চুক্তির জেরে ইউক্রেনের নিরাপত্তার জামিন থাকার জন্য তুরস্ক, জার্মানি, কানাডা, ইতালি, পোল্যান্ড ও ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আরাখামিয়া বলেন, ইউক্রেনীয় ও রুশ প্রেসিডেন্টের মধ্যে বৈঠক সম্ভব। রাশিয়ার সাথে চূড়ান্ত কোনো চুক্তিতে যাওয়ার আগে ইউক্রেনে পূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
রুশ প্রতিনিধি দলের প্রধান ভ্লাদিমির মেদিনস্কি বলেছেন, দুই পক্ষের মধ্যে ‘অর্থপূর্ণ আলোচনা’ হয়েছে এবং ইউক্রেনের প্রস্তাব রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে পাঠানো হবে।
তিনি আরো বলেন, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে পুতিন বৈঠকও করতে পারেন।
এদিকে আলোচনায় ‘বিশ্বাস বাড়াতে’ সামরিক তৎপরতা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া।
রাশিয়ার উপ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলেকজান্ডার ফোমিন বলেন, ‘মৌলিকভাবে কিয়েভ ও চেরেনিহিভ থেকে সামরিক তৎপরতা বন্ধ করা হচ্ছে।’
ইস্তাম্বুলে ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের মধ্যে আলোচনার প্রথম দিনে ‘অর্থপূর্ণ অগ্রগতি’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মওলুদ চাভুশওলু।
প্রথমদিনের আলোচনা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, যুদ্ধ বন্ধে শান্তি আলোচনা শুরু হওয়ার পর ইস্তাম্বুলের এই বৈঠকের মাধ্যমে দুইপক্ষের মধ্যে সর্বাধিক অর্থপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আলোচনার ক্ষেত্রে এখন অগ্রাধিকারের বিষয় হলো যত শিগগির সম্ভব যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি অর্জন করা এবং স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের বিষয়ে পথ তৈরি করা।’
এদিকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে এই বৈঠকের শুরুতে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান অংশ নেন।
আলোচনার শুরুতে বক্তব্যে তিনি দুই দেশের প্রতি যুদ্ধবিরতি স্থাপনের আহ্বান জানান।
এরদোগান বলেন, ‘‘আমরা বিশ্বাস করি, ন্যায়পূর্ণ শান্তিতে কেউ হেরে যায় না এবং যুদ্ধের বিস্তারে কারোরই স্বার্থ রক্ষা হয় না।’
এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর থেকে কয়েক দফায় দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মধ্যে একবার তুরস্কের আনতালিয়াতেও মুখোমুখি হয় দুই পক্ষের প্রতিনিধি দল। কিন্তু যুদ্ধ বন্ধে চূড়ান্ত কোনো লক্ষ্যে এখনো পৌঁছাতে পারেনি দুই পক্ষ।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জেরে ২১ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহীদের দুই রাষ্ট্র ‘দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’ ও ‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’কে স্বীকৃতি দিয়ে শান্তি রক্ষায় ওই অঞ্চলে সৈন্য পাঠায় রাশিয়া।
পরে ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সহায়তার লক্ষ্যে রুশ স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীকে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার অভিযানের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে পুতিন ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করছেন। ইউক্রেনকে ‘বেসামরিকীকরণ’ ও ‘নাৎসিমুক্ত’ করার জন্যই তিনি এই অভিযান চালিয়েছেন বলে দাবি করছেন।
জাতিসঙ্ঘের তথ্য অনুসারে, ইউক্রেনে যুদ্ধে অন্তত এক হাজার এক শ’ ৫১ বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করা গেছে। তবে মৃত্যুর সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে বলে জানানো হয়।
জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার তথ্য অনুসারে, যুদ্ধ থেকে বাঁচতে ৩৮ লাখ ৭০ হাজার ইউক্রেনীয় নাগরিক দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
তথ্যসূত্র : আলজাজিরা, টিআরটি ওয়ার্ল্ড ও আনাদোলু এজেন্সি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: