সিডনী মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ ২০২৪, ৫ই চৈত্র ১৪৩০

সেদিনে আজো  : ড. ময়ূরী মিত্র


প্রকাশিত:
১৯ জুলাই ২০২১ ২০:০৫

আপডেট:
১৯ জুলাই ২০২১ ২৩:৩৩

 

বিডন স্ট্রিট। আমার শৈশব হাঁটে চলে বিডন স্ট্রিটে। ইলাস্টিক খসা মোজায় গার্ডার মেরে এ পথ ধরেই স্কুলে চলা শুরু। পথ বলতাম না। বলতাম- মা স্ট্রিট দিয়ে হাঁট।

চৌকোনা মোড়ের ঠিক মাথায় মিষ্টির দোকান। মা কিনতেন জোড়া কালাকাঁদ। আমার টিফিন। অপছন্দের টিফিন ব্যাগে পুরতে পুরতে ভিখিরী চোখে তাকাতাম কড়াইয়ে ভাজা লেডিগেনিতে। তেলাল চুলের দোকানি মিশি ছাঁচা দাঁতে হাসত। আমার লোভানি চোখ দেখত। আশ্বাস দিত, কাল একবারে ভাজার সাথে সাথেই আমার জন্য তুলে রাখবে "তেলাপোকা রসগোল্লা'। বলতে ভুলেছি, কড়া করে ভাজা লেডিগেনি আর ঘরের আনাচে বেড়ানো তেলাপোকার রঙ তখন এক লাগত আমার। তাই লেডিগেনি আমার কাছে আজো তেলাপোকা রসগোল্লা। আমার খোকাচোখে প্রতিদিন রসগোল্লা মাখত তেলাপোকা রঙ। 

মিষ্টির দোকান টপকালেই চন্দ্রমল্লিকা ব্লাউজের দোকান। সরস্বতী পুজোয় মা কিনে দিতেন এক জোড়া ব্লাউজ। বাচ্চাদের মতো ঘটিহাতা ব্লাউজ পছন্দ হত না। ভালোবাসতাম বড়দের বৌ কাট ব্লাউজ। সারা শরীরে তখন আমার হরিণঘাটা বোতল দুধের গন্ধ। সরস্বতী পুজোর আগের দিন স্কুলড্রেসের তলায় বৌ - ব্লাউজ পরে বাড়ি ফিরতাম। বাচ্চা শরীরে ঢলঢল করত বৌ কাট, সেফটিপিন লাগিয়েও। 

সেবার স্কুলের প্রাইজ ডিস্ট্রিবিউশনে একটাও প্রাইজ পেলাম না। হাউহাউ করে কাঁদতে লাগলাম। বাবা আমায় নিয়ে ঢুকলেন বিডন স্ট্রিটের এক পুতুলের দোকানে। কাঁচের শোকেসের পাল্লায় নাক সাঁটিয়ে দেখছি এক মেমপুতুল। একে মেম তায় রানীর সাজপোশাক। সাদা লালের চরকি কাটা গাউন! ওখানে দাঁড়িয়েই নাম দিলাম- মেমরানী। কাঁচের মধ্যে দিয়েই দেখছি আমার মেমরানীর দাম শুনে দুমড়ে যাচ্ছেন বাবা। হাসি কান্নায় কেমন চুরমার হয়ে যাচ্ছেন না? নিমেষে বাবার হাতটাকে বগলদাবা করে ছুটছবি বৌ ব্লাউজ পরা মেয়েটা। ঐ বিডন স্ট্রিট ধরেই। হেরে যাওয়া ধাতে ছিল না বাবার। সেরাতেই আমাকে উপহার দিয়েছিলেন একটি মেরুন রঙের মোটাসোটা কলম। সে কলম দিয়ে রাফ খাতায় গোল গোল অক্ষরে লিখলাম- লাল একটা পাখি হতে চাই আমি। 

পাখি বাড়ল শরীরে। ডগমগে কুমড়ো শাখার মত। সে শাখায় অনেক বাঁক। আবার একদিন আবার বিডন স্ট্রিট পেরিয়ে সে পড়তে এল বেথুন কলেজে। ফিটিং করা সালোয়ারটি সাপটে ধরেছে ময়ূরমেয়ের টাটকা গা পিঠ। এখন আর তার লাগে না সেফটিপিন। পিছু নিয়েছে স্কটিশ কলেজের ছোকরাগুলো। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল পিকক। - ও বাবা এ যে দেখি মুন্ডু গোটা ছয়েক! এক ডজনের আদ্দেক! ধাইছে তার দিকে! confused পিকক। ওড়ে সে কাহার সনে? আরেকটা লাল পাখি? মেলা ভার!

সমাপ্ত

ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে

 

ড. ময়ূরী মিত্র
কলকাতা, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top