সিডনী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

ভ্রমণ কাহিনী: স্বপ্নের দেশ সুইজারল্যান্ড (পর্ব-০১)


প্রকাশিত:
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৫৫

আপডেট:
৪ এপ্রিল ২০২০ ১৭:২৯

শ্রাবন্তী কাজী আশরাফী

সুইজারল্যান্ড অনেকের মতো আমারও স্বপ্নের দেশ।

ছোটবেলায় প্রথম যখন বিভিন্ন দেশের নাম পড়তে শিখি, তখন কেন যেন নিজের দেশের নামের পর সুইজারল্যান্ড নামটাই আমাকে বেশি আকৃষ্ট করতো। দেশটি নিয়ে মনে মনে কত স্বপ্ন দেখেছি, বন্ধুমহলে অনেক চাপাবাজিও করেছি।

যাহোক, স্বামীর চাকরীর সুবাদে বিভিন্ন দেশ ঘুরবার সুযোগ আমার হয়েছে।

আমার স্বামী সোলায়মান আশরাফী দানী লন্ডনে একটি নামকরা Oil Company তে কাজ করে। সে আমার সুইজরল্যান্ড সম্পর্কিত স্বপ্নের কথা জানত। একদিন বিকেলে অফিস থেকে হঠাৎ করে বাড়ি ফিরেই সে আমাকে বলল, তাড়াতাড়ি ব্যাগ গোছাও, আমরা কাল ভোরে সুইজারল্যান্ড যাচ্ছি। প্রথমে আমি বেশ অবাক হই।

আশ্চর্য! বলা নেই কওয়া নেই সকাল বেলা সুইজারল্যান্ড যাচ্ছি, এটা নিশ্চয়ই সে আমার সাথে মজা করছে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝলাম-না, আমারা সত্যিই সুইজারল্যান্ড যাব এবং এটা ছিল আমার জন্য আমার স্বামীর পক্ষ থেকে একটা সারপ্রাইজ গিফ্ট।

আমি একটু ভাব দেখিয়ে চেঁচামেচি শুরু করে দিলাম। এত তাড়াতাড়ি কিভাবে আমি ব্যাগ  গুছাব! তাও আবার ভোর সাতটায় ফ্লাইট (যদিও মনে মনে আনন্দে আত্মহারা) যাহোক খুব তাড়াতাড়ি আমি ব্যাগ গুছিয়ে ফেললাম এবং অন্যান্য আনুসাঙ্গিক যাবতীয় হাতের কাজও সেরে নিলাম।

আমাদের বাড়ি লন্ডনে বার্কিং এ। তাই আমরা রওনা হব লন্ডন সিটি এয়ারপোর্ট থেকে। পরেরদিন ২১ নভেম্বর ২০০৮ইং ভোর পাঁচটায় বার্কিং হতে রুট ৫ বাসে করে Plasto এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

২০ মি. এ Plasto স্টেশনে পৌঁছালাম। ওখান থেকে ট্রেনে করে আমরা লন্ডন সিটি এয়ার পোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। একটা স্টেশন পরই লন্ডন সিটি এয়ারপোর্ট। অর্থাৎ ৫ মি: এই আমরা পৌঁছে গেলাম।

লন্ডন সিটি এয়ারপোর্ট ছিল আমার জন্য এক দারুন বিষ্ময়ের স্থান। আমরা ট্রেন থেকে নেমে সিটি এয়ারপোর্টটা কোনদিকে খুঁজছিলাম। কারণ বাইরে কোন এয়ারপোর্ট দেখতে পাচ্ছিলাম না। পরে একজনকে জিজ্ঞাসা করায়, সে বলল রেলস্টেশনের দুইতলায় যেতে। দোতলায় গিয়ে দেখি ওটা এয়ারপোর্ট।

এমন এয়ারপোর্ট আমি আগে কখনো দেখিনি। নিচতলায় রেলস্টেশন আর দোতলায় এয়ারপোর্ট। খুবই ছোট একটি এয়ারপোর্ট। আমরা এয়ারপোর্টের যাবতীয় Formalities শেষে সকাল সাতটায় এয়ার ফ্রান্সে করে জেনেভার উদ্দেশ্যে রওনা দেই।

এয়ার ফ্রান্স লেনটাও খুব ছোট (লোকাল প্লেনগুলো একটু ছোট হয়)। লন্ডন টাইম সকাল আটটায় এবং জেনেভা টাইম সকাল নয়টায় আমরা জেনেভা এয়ারপোর্ট পৌঁছি।

সেখানে আমাদের বন্ধু রীমা ও সুমন অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য। জেনেভা এয়ারপোর্টটাও খুব সুন্দর। এটাও অনেকটা লন্ডন সিটি এয়ারপোর্টেরই মত। একদিকে রেলস্টেশন আরেকদিকে এয়ারপোর্ট। তবে লন্ডন সিটি এয়ারপোর্টের তুলনায় বেশ বড়।

এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়েই আমরা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছিল, ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম আর ভাবছিলাম, আমি আমার স্বপ্নের দেশে দাঁড়িয়ে আছি। ভাবতেই খুব ভাল লাগছিল।

লন্ডন থেকে যাওয়াতে তেমন নতুন কিছুই লাগছিল না। সবকিছুই অনেকটা লন্ডনেরই মতো। তবে রাস্তাগুলো বেশ ছোট এবং চিপা লন্ডনের তুলনায়। কোনটা বাস লাইন, কোনটা ট্রেন লাইন আর কোনটা আইল্যান্ড বোঝা কঠিন। প্রথমেতো আমি আইল্যান্ড মনে করে ট্রেন লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম, আর রীমা তাড়াতাড়ি আমাকে সরিয়ে দেয়। তবে দেশটা খুবই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও সাজানো।

এখানকার লোকাল মানুষজনও বেশ আন্তরিক, ইংলিশের মত সব না। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে সমস্যা, তা হল এরা ইংলিশ বোঝে না বা বলতে চায় না। যার জন্য দেখা গেছে, আমাদের সাথে অনেকেই কথা বলতে এসেছে, কিন্তু আমাদের চুপ করে থাকতে হয়েছে। রিমা সুমন না থাকলে বিপদেই পড়তে হোত। দশ মি: অপেক্ষার পর ট্রেন আসল।

আমরা ট্রেনে চেপে প্রথমে রিমার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। দু’টা স্টেশন পরই রিমার বাসা। ট্রেনের মধ্যে কারও কোন কথা বুঝতে পারছিলাম না। বারবার একটা কথাই ঘোষণা হচ্ছিল “খোশীনা হো” আর ট্রেনের গেট খুলে যাচ্ছিল, আমরা বুঝলাম, এর অর্থ “Next Stopes”। দশ মি: এর মধ্যে আমরা রিনার বাসায় এসে পৌঁছলাম।

রিমা খাওয়া দাওয়ার এক বিশাল আয়োজন করে রেখেছিল। আমরা তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে নিয়ে  নাস্তার টেবিলে বসলাম। রিমার বাসা “লেক জেনেভার” খুব কাছে, পায়ে হাঁটা পথ। নাস্তা খেতে খেতে আমরা ঠিক করলাম প্রথমে আমরা আমাদের ভ্রমণ, লেক জেনেভা থেকে শুরু করব।

চলবে...

লেখক: প্রধান সম্পাদক, প্রভাত ফেরী ও

ডিরেক্টর, অস্ট্রেলিসিয়ান ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি (AIA), অস্ট্রেলিয়া



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top