সিডনী বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৪, ১০ই বৈশাখ ১৪৩১

একা এবং একা (পর্ব সতের) : আহসান হাবীব


প্রকাশিত:
৬ অক্টোবর ২০২০ ২০:৪৯

আপডেট:
৭ অক্টোবর ২০২০ ২১:৪৮

 

(আহসান হাবীব মূলত একজন প্রফেশনাল কার্টুনিস্ট। তিনি পেশাগত কারণে সাধারনত কমিকস, গ্রাফিক নভেল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করেন। তিনি যখন লিখেন তখন তার মাথায় থাকে কমিকস বা গ্রাফিক নভেলের কনটেন্ট। তার গল্পের পিছনে থাকে স্টোরি বোর্ডের মত ছবির চিত্রকল্প। এই কারণেই তার লেখায় একটা সিনেমাটিক ড্রামা থাকে প্রায়শই। তিনি মনে করেন যেকোনো গ্যাজেটেই/ফরম্যাটেই হোক, স্ক্রিনে যে গল্প পাঠক পড়ছে, সেখানে তার সাব-কনসান্স মাইন্ড ছবি খুঁজে। আর তাই ‘প্রভাত-ফেরী’র পাঠকদের জন্য তার এই ধারাবাহিক ইন্ডি নভেল ‘একা এবং একা ’ )

 

পর্ব - সতের

সন্ধ্যার দিকে নিউ হানিমুন কটেজের  সামনে একটা রং উঠা সাদা রঙের পুরোনো মডেলের টয়োটা এক্সিও গাড়ী এসে থামল।

-এই হোটেল? শান্ত গলায় প্রশ্নটা করলেন গাড়ীর ভিতর পিছনের সীটে বসে থাকা প্রফেসর। তার পাশেই বরুণ বসে আছে, নার্ভাস ভঙ্গিতে একটু পর পর ঠোট চাটছে!

মাথা নাড়ল বরুণ। চোখের ইশারা দিলেন প্রফেসর, মারুফ নামল। কাউন্টারে গিয়েদেখে শুটকা মত দেখতে ম্যানেজার ভুস ভুস করে সিগারেট টানছে। সামনে চায়ের কাপে ধোঁয়া উঠছে, কাপটা দেখে বোঝা যাচ্ছে এই মাত্র কেউ রেখে গেছে। এখনো চুমুক দেয়া হয় নি।

-২০১ নম্বর রুমের মেয়েটা কই?
-ঐ রুমে কোন মেয়েছেলে ছিল না।
-ছিল। একটা ছেলে ছিল নাম বরুণ। তার সঙ্গের মেয়েটার নাম সাবিনা। ওরা গত পর্শু ২০১ নম্বর রুমে উঠেছিল।
-বললামতো ঐ নামে কোন রুম বুকিং ছিল না। এবার বেশ কড়া সুরে বলল শুটকা ম্যানেজার।

মারুফ ঝট করে লোকটার কলার ধরল। তারপর ডান হাতে মাথাটা ধরে সামনের সেগুন কাঠের শক্ত ডেস্কে প্রচন্ড জোড়ে ঠুকে দিল। মূহুর্তেই নাকের ব্রিজ ভেঙে রক্ত ঝড়তে শুরু করল মানেজারের। লোকটা এবার আতঙ্কিত চোখে তাকাল মারুফের দিকে‘ স্যার আমি কিছু জানি না’।

-জান না?
-জি না।

মারুফ গরম ধোয়া ওঠা চা’টা ওর মুখে ছুড়ে দিল। ‘ও মাগো মাগো’ বলে হাস-ফাঁস করে উঠল ম্যানেজার।  

মারুফ এবার পেন্টের পিছনে গোজা, একটু আগে বার্মিজ মার্কেট থেকে কেনা নকল ভারী পিস্তলটা চেপে ধরল লোকটার থুতনির নিচে। পিস্তলটা যেন হুবহু জার্মানীর তৈরী একটা অরিজিন্যাল ল্যুগার পিস্তল!

-এক মিনিট সময় দিলাম তোকে।
-স্যা- স্যার মফিজ ধইরা নিয়া গেছে।
-মফিজ কে?
-স্যার মফিজ মেয়েলোক পাচার করে, মাইয়ালোকের দালাল
-কই নিছে?
-স্যার আমি কইতে পারুম না।

দ্বিতীয়বার ম্যানেজারের মাথাটা ঠুকে দিল ডেস্কে। এবার কথা বলল ম্যনেজার ভাঙা গলায় ‘ স্যা- স্যার নিরিবিলি হোটেলের পিছে একটা প্যাগোডা আছে, তার পিছে মফিজের ঘর।’

-চল আমার সাথে। হিড় হিড় করে ওকে টেনে নিয়ে এল বাইরে, গাড়ির কাছে।
-প্রফেসর আপনি সামনে বসুন। আমি এই দুজনকে নিয়ে পিছে বসি।
-বেশ। প্রফেসর সামনে বসলেন।
-চল হোটেল নিরিবিলি...

হোটেল নিরিবিলির পিছের প্যাগোডার সামনে গাড়ী থামল। জায়গাটা নিরিবিলিই বটে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে বলে লোকজন কম, তাছাড়া এখন অফ সিজন; এমনিতেও টুরিস্ট নেই। বিশাল প্যাগোডার চুড়ো যেন আকাশ স্পর্শ করেছে। প্যাগোডার পিছনে আধখানা চাঁদ ঝুলে আছে। দৃশ্যটা অপার্থিব , সুন্দর।

-এই প্যাগোডার পিছনে? মারুফ তাকালো নাক ভাঙা ম্যানেজারের দিকে। সে তখন রুমাল দিয়ে তার রক্তাক্ত ভাঙা নাক সামলাতে ব্যস্ত
-।জি স্যার। লাল একতলা বাড়ী।
-আচ্ছা, যদি মিথ্যা কথা বলে থাক তাহলে কিন্তু তোমার ভাঙা নাকটা আর তোমারঐ নাকের জায়গায় থাকবে না। প্রফেসর
-বল
-আপনি গাড়িতে থাকেন। আমি আসতেছি
-যাও আমি এদের দেখছি।

ভাড়া করা গাড়ীর তরুণ ড্রাইভার ততক্ষনে এ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ পেয়ে গেছে। বলল ‘স্যার  আপনি যান, আমি আছি চিন্তা করিয়েন না।’

প্রফেসরের দুই পাশে দুজন, নাক ভাঙা  ম্যানেজার আর বরুণ দুজন দু’জনের দিকে রক্ত চক্ষু মেলে তাকিয়ে আছে। মাঝখানে প্রফেসর না থাকলে হয়ত একজন আরেকজনের উপর ঝাপিয়ে পড়ত কিনা কে জানে। মারুফের ভয় হচ্ছে মফিজের দল নিশ্চয়ই এতক্ষনে সাবিনাকে পাচার করে দিয়েছে। তাহলে ওকে উদ্ধার করা ঝামেলা হয়ে যাবে হয়ত। সঙ্গত কারণেই পুলিশের কাছে যাওয়া যাবে না; যা করার আপাতত নিজেদেরই করতে হবে। প্যাগোডার পিছনে সত্যি সত্যি লাল একটা এক তলা বাড়ির সামনে এসে দাড়াল মারুফ। বাড়ীর কোনো নাম ফলক নেই। দরজা ভিতর থেকে লাগানো; ভিতরে টিমটিমে একটা লাইট জ্বলছে। বাড়ীর সামনে অনেক গুলো চ্যালাকাঠ পড়ে আছে এলোমেলো ভঙ্গিতে। তার থেকে পছন্দসই একটা তুলে নিল মারুফ। পেন্টের পিছনে গোজা নকল ল্যুগার পিস্তলের উপর খুব ভরসা করা যাচ্ছে না, ভিতরে কয়জন আছে কে জানে। লম্বা করে দম নিয়ে দরজায় টোকা দিল মারুফ! 

 

১১টার উপরে বাজে। মনিকার ঘরের দরজা বন্ধ! শর্মি টোকা দিল

-এই আপু?

কোন সাড়া নেই মনিকার।

-এই আপু??
-উ
-স্কুলে যাবি না?
-না 
-স্কুল বন্ধ নাকি?
-না
-তাহলে?

ওপাশে চুপ।

-কি হল? উঠবি না মা টেনশন করছে। শরীর খারাপ?
-হু
-প্লিজ দরজা খোল
-খুলছি।

একটু পরই দরজা খুললো মনিকা। শর্মি তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল। ‘কি হয়েছে আপু?’

-আহ কি হবে? কিছু হয়নি। আমি দুদিনের ছুটি নিয়েছি স্কুল থেকে। যাতো আমার জন্য এক কাপ চা নিয়ে আয়।
-লাল চা না দুধ চা?
-যেটা ইচ্ছে।

শর্মি চা আনতে ছুটলো। মনিকা গত রাতে অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখেছে। এরকম স্বপ্ন কেন দেখল!...  দেখে সে একটা উঁচু পাহাড়ে উঠার চেষ্টা করছে। পাহাড়টার এক সাইড  দিয়ে সিড়ি আছে। হঠাৎ পা হড়কে সর সর করে পড়ে যাচ্ছে, মনিকা চিৎকার করল বাঁচার জন্য। তখনই কে একজন খপ করে তার ডান হাতটা ধরে ফেলল। তাকিয়ে দেখে মারুফ স্যার।

-স্যার আপনি না মারা গেছেন?
-মারা গেলে তোমার হাত ধরলাম কি ভাবে?
-আমাকে তুমি করে বলছেন কেন?
-বাহ আমি তোমার চেয়ে বয়সে পাঁচ বছরের বড়।
-তাতে কি?
-আচ্ছা ঠিক আছে, সর‍্যি। ম্যাডাম আপনাকে টেনে তুলব না ছেড়ে দিব?

স্বপ্নের ভিতরই লোকটার উপর ভিষন রাগ উঠে গেল মনিকার, নাকি অভিমান? ‘আমাকে ছেড়ে দিন’ চেচিয়ে বলল মনিকা। মারুফ অবশ্য ছাড়ল না, হ্যাচকা টানে উঠিয়ে আনল মনিকাকে। লোকটার অনেক শক্তি। তারপর লোকটা যে কাজ করল ওটা চিন্তা করে কান গরম হয়ে উঠল মনিকার... আর তখনই ঘুমটা ভেঙে গেল!

-এই যে তোর চা।

হাত বাড়িয়ে চা নিতে গিয়ে চমকে গেল মনিকা। তার ডান হাতের কব্জির গোড়ায় টক টকে লাল হয়ে আছে। এই হাতটা ধরেই স্বপ্নের ভিতর মারুফ টেনে তুলেছিল মনিকাকে। হাতটা সত্যি সত্যি এখনো টন টন করছে। শর্মিও বিষয়টা খেয়াল করল!

-আপু তোর হাত এত লাল কেন?
-কি জানি, মনে হয়... ঘুমের মধ্যে বালিশের নিচে চাপা টাপা পরেছিল।
-আচ্ছা এবার বল
-কি বলব?
-হটাৎ স্কুল থেকে ছুটি নিলি কেন?
-ছুটি নিয়েছি আমার ইচ্ছে। তোর কি?
-আমি জানি
-কি জানিস?
-বলব না।

বলে শর্মি মুখ বাকিয়ে উঠে চলে গেল। চায়ে চুমুক দিয়ে মনিকার মনে হল সে নিজেকে ঠিক চিনতে পারছে না। তার কি হয়েছে আসলে?  মারুফ কি তাহলে সত্যিই মারা যায় নি? স্বপ্নে যেমনটা বলল। ‘তাই যেন হয়...’ মনিকা ফিস ফিস করে নিজেকেই বলে। কোন কারণ ছাড়াই তার চোখ দুটো ভিজে উঠছে কেন কে জানে ?

 

সাবিনা একটা চেয়ারে বসে আছে। তার হাত দুটো পিছন মোড় করে দড়ি দিয়ে বাধা। সে আপ্রাণ চেষ্টা করছে বাধা দড়িটার গিট্টু খুলতে। শীত কালে মা যখন উল বুনতো তখন উলের সব ধরনের জট পাকানো গিট্টু সে নিখুত ভাবে খুলতে পারত। মনে হচ্ছে এটাও উলের গিট্টুর মত খুলে ফেলতে পারবে। কিন্তু তারপর? খুলে কি সামনে বসে থাকা লোক দুটির উপর ঝাপিয়ে পড়বে? ওরা কি ওকে ছেড়ে দিবে? সে কি কিছু করতে পারবে আদৌ? লোকগুলো তিনজন ছিল। এখন দুজন,দুজনই সামনে বসে মদ খাচ্ছে। ছোট্ট টেবিলটার উপর একটা মদের বোতল দুটো গ্লাস আর একটা পিস্তল। একটা লোক মনে হচ্ছে পাড় মাতাল হয়ে গেছে, এলোমেলো কথা বলছে। আর দল নেতা লম্বা লোকটা যার নাম মফিজ। সে একটু রয়ে সয়ে খাচ্ছে আর মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে সাবিনার দিকে, মুখে মৃদু শয়তানি হাসি। তার একটা ভয়ঙ্কর কোনো মতলব আছে মনে হচ্ছে। সাবিনা ভিতরে ভিতরে শিউরে উঠল। হঠাৎ লম্বা লোকটা উঠে দাড়াল; এগিয়ে আসছে সাবিনার দিকে। সাবিনা ততক্ষনে তার হাতের গিট্টুটা খুলে ফেলেছে। কিন্তু লাভ কি? সে খালি হাতে এই বিশাল লোকটাকে ঠেকাবে কিভাবে? ঠিক তখনই দর জায় নক করল কেউ। লম্বা লোকটা ভ্রু কুচকে তাকাল পাড় মাতালটার দিকে বিরক্ত হয়ে বলল

-দরজা খোল, মইন্যা আর আওয়ার সময় পাইল না।

পাড়মাতাল কোন মতে উঠে দাড়াল। টলতে টলতে গিয়ে দরজা খুললো। তারপরই এক কান্ড হল। আচমকা পাড়মাতাল লোকটা দরজা থেকে ছিটকে এসে পড়ল মদের টেবিলটার উপরে, চিৎ হয়ে! আর উঠে দাড়াল না। টেবিল মদের বোতল সব  ভেঙে চুরমার! পরিস্থিতি বুঝতে মফিজের একটু সময় লাগল, তারপর পাগলের মত পিস্তলটা খুঁজতে লাগল; ওটা ছিটকে পড়েছে কোথাও! সাবিনা ততক্ষনে দড়ির গিট্টু খুলে উঠে দাড়িয়ে সরে গেছে ঘরের কোনায়,  দেখল লম্বা একটা লোক এসে দাড়িয়েছে ঘরের ভিতর, পঁচিশ ওয়াট বাল্বের অল্প আলোয়  লোকটার চেহারা বোঝা যাচ্ছে না, তবে হাতে ধরা লম্বা চ্যালাকাঠটা বোঝা যাচ্ছে। লোকটা মুহুর্তে শূণ্যে চ্যালাকাটটা ঘুড়িয়ে মফিজের মাথায় নামিয়ে আনল। ‘বাপরে’ বলে দুই হাতে মাথা চেপে ধরল মফিজ, পড়েই যাচ্ছিল। চট করে কলার ধরে তাকে দাড় করাল নতুন লোকটা। তারপর পিস্তল ধরল লোকটার থুতনীর নিচে বলল ‘সাবিনা মেয়েটা কই?’ তখনই ধুপ করে একটা গুলির শব্দ হল! মারুফের নকল পিস্তল থেকে গুলি বের হওয়ার কোনো কারণ নেই! গুলিটা কে করল?!

-স্যার আমি গুলি করছি।

মারুফ অবাক হয়ে দেখে সুন্দর ছিপছিপে বেশ লম্বা একটা মেয়ে পিস্তল হাতে দাড়িয়ে আছে, দু হাতে পিস্তলটা ধরে আছে সে। অন্ধকারে ক্যামোফ্লেজ হয়ে ছিল বলে বোঝা যাচ্ছিল না।  এখন তাকে দিব্যি দেখা যাচ্ছে। গুলিটা সম্ভবত লেগেছে মফিজের পেটে,  সে মুখ হা করে খাবি খাচ্ছে। মারুফ কলার ছেড়ে দিল ধুপ করে মাটিতে পড়ে গেল মফিজ মিয়া, তার চোখে মুখে বিস্ময়। 

-তুমি সাবিনা? মাথা নাড়ল সাবিনা।
-পিস্তলটা আমার হাতে দাও।

সাবিনা পিস্তলটা দিল শান্ত মেয়ের মত। ‘চল’ দুজনে বের হতে যাচ্ছে তখন দ্বিতীয় লোকটার জ্ঞান ফিরেছে, কোনমতে উঠে বসেছে সে। সাবিনা ফিরে গিয়ে একটা লাথি দিল, লোকটা ‘বাপরে’ বলে ফের শুয়ে পড়ল।

নিউ হানিমুন কটেজের ম্যানেজারকে ছেড়ে দেয়া হল। তার নাক দিয়ে তখনো রক্ত ঝড়ছে। গাড়ীর অতি উৎসাহী তরুণ ড্রাইভারের ধারনা হয়েছে মারুফ আর প্রফেসর নিশ্চয়ই সিভিল ড্রেসে পুলিশের লোক। সে ম্যানেজারকে দু এক ঘা বসিয়ে দিল বলল ‘তোর কপাল ভাল পালা...’। ছাড়া পেয়ে নাক ভাঙা ম্যানেজার পড়ি মড়ি করে দৌড়ে পালাল। সাবিনা গাড়ির ভিতর বসে থাকা বরুণের দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে আছে, তার চোখে মুখে প্রবল ঘৃণা। বরুণ ফ্যাকাশে মুখে বসে আছে, সাবিনাকে কি বলবে বুঝতে পারছে না। প্রফেসর বের হয়ে এলেন গাড়ীর ভিতর থেকে।

-সাবিনা তোমার টাকা উদ্ধার করেছি আমরা। আর একেও ধরে এনেছি। এখন একে কি শাস্তি দিতে চাও তুমি? 

সাবিনা কোনা কথা বলল না। হঠাৎ পায়ের স্যান্ডেল খুলে ছুটে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে বসে থাকা বরুণকে পাগলের মত মারতে লাগল। ছিপছিপে লম্বা মেয়েটার গায়ে শক্তি আছে, ভাবল মারুফ। কিন্তু এখান থেকে সরে পড়া দরকার। অল্প সময়ে অনেক কিছু ঘটে গেছে এখানে। আরো কিছুক্ষন থাকলে লোকজন জমে যাবে। দু একজন উঁকি ঝুকি মারা শুরু করেছে ইতোমধ্যে। মারুফ সাবিনাকে থামাল। শান্ত স্বরে বলল  ‘সাবিনা তুমি গাড়ীর সামনের সীটে বস, আমাদের এখান থেকে সরে পড়তে হবে।’ সাবিনা কথা শুনলো। অতি উৎসাহী ড্রাইভার বলল ‘আপু আমি দুই এক ঘা বহামু?’ মারুফ চোখের ইশারায় না করল।

সাদা টয়োটা এক্সিওটা ছুটছে সী-বীচের দিকে। বাকি নাটক বীচেই সমাপ্ত হোক, প্রফেসর এমনটাই ভাবছেন। বীচে পৌঁছে গাড়ী ছেড়ে দেওয়া হল, ড্রাইভারকে ভাল টাকাই দেয়া হয়েছে। টাকা পয়সা খরচ হচ্ছে সব সাবিনার উদ্ধার পাওয়া ঐ ব্যাগ থেকেই  আপাতত, এছাড়া উপায়ই বা কি। তরুণ ড্রাইভার অবশ্য এখনই যেতে চাচ্ছে না; সে নাটকের শেষ অঙ্ক পর্যন্ত থাকতে চাচ্ছে। সে বুঝে গেছে সিভিল ড্রেসের পুলিশ ভাইয়েরা (!) নিশ্চয়ই এখন একে ক্রশ ফায়ারে দিবে। ক্রশ ফায়ার বিষয়টা তার দেখার শখ, কিভাবে ঘটে। 

-স্যার আমি থাকি?
-না, তুমি এবার যাও। তবে সাবধান মুখ খুলবে না।
-না স্যার, চিন্তা করিয়েন না আমার জবান বন্ধ থাকবে। তবে স্যার একটা অনুরোধ
-কি?
-যাওয়ার আগে এই মাদারচোতকে আপুর সেন্ডেল দিয়ে দুইটা বারি দিয়া যাই।

মারুফ আর প্রফেসর হেসে ফেললেন। তবে সাবিনা হাসল না। সে তার ডান পায়ের সেন্ডেলটা খুলে দিল। ড্রাইভার বলল ‘আপু ডান পায়েরটা দিয়া আপনি মারছেন আমারে বাম পায়েরটা দেন।’ সাবিনা বাম পায়ের সেন্ডেলটা খুলে দিল। তরুণ ড্রাইভার কথা রাখল সাবিনার বাম পায়ের সেন্ডেল দিয়ে বরুণের গালে গুনে গুনে দুইটা বাড়ি দিল। প্রফেসর হাসি মুখে তাকালেন মারুফের দিকে; গলা নামিয়ে ফিস ফিস করে বললেন - ‘বুজলে মারুফ, মনে হচ্ছে ঘৃনা জিনিষটা হাসির মতই একটা সংক্রামক ব্যাপার। তোমার কি ধারনা?’

-হয়ত, এখন কি করবেন?
-চল সমুদ্রের কাছাকাছি যাই। বরুণের বিচার করবে সাবিনা। আর সমুদ্র হবে আমাদের এই বিচারের স্বাক্ষী। কি বল সাবিনা?

সাবিনা কথা বলল না থম থমে মুখে সমুদ্রের দিকে হাঁটতে থাকল সবার আগে আগে। তার পিছে মাথা নিচু করে হাঁটছে বরুণ, মানুষ হিসেবে সে একদম ভেঙে চুড়ে গেছে।  হু হু গর্জন শোনা যাচ্ছে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের, সমুদ্র যেন বলছে... আমি বার বার ফিরে আসি মানুষের কাছে; কিন্তু যাকে একবার নেই তাকে কখনও ফিরিয়ে দেই না,সমুদ্র কখন কাকে নেয় কেউ জানে না!

-স্যার বন্দুকটা দেন, সমুদ্রের খুব কাছে গিয়ে সাবিনা ফিস ফিস করে মারুফকে বললো।

মারুফ প্রফেসরের দিকে তাকায়। প্রফেসর মাথা ঝাকালেন। ভাবটা এমন দেখা যাক না হটাৎ সাহসী হয়ে উঠা মেয়েটা কি করে, নকল পিস্তল দিয়েতো আর গুলি বের হবে না।  মারুফ বার্মিজ মার্কেট থেকে কেনা ভারী নকল পিস্তলটা এগিয়ে দিল সাবিনার দিকে। ট্রিগারে টান দিলে এই পিস্তলে কট করে একটা শব্দ হয়, তখন অনুভুতিটা হয় ঠিক সত্যি পিস্তলের মতই। সাবিনা দু হাতে পিস্তল ধরে তাক করে আছে বরুণের দিকে!

হটাৎ ধ্বক করে উঠল মারুফের বুকটা। একটা বিরাট ভুল হয়েছে, সে ভুল করে সত্যি পিস্তলটা দিয়ে ফেলেছে সাবিনাকে!!

(চলবে)

একা এবং একা - পর্ব এক
একা এবং একা - পর্ব দুই
একা এবং একা - পর্ব তিন
একা এবং একা - পর্ব চার
একা এবং একা - পর্ব পাঁচ
একা এবং একা - পর্ব ছয়
একা এবং একা - পর্ব সাত
একা এবং একা - পর্ব আট
একা এবং একা পর্ব- নয়

একা এবং একা - পর্ব দশ
একা এবং একা - পর্ব এগারো
একা এবং একা - পর্ব বারো
একা এবং একা - পর্ব তের
একা এবং একা - পর্ব চৌদ্দ
একা এবং একা- পর্ব পনের)
একা এবং একা- পর্ব ষোল

 
লেখক: আহসান হাবীব
কার্টুনিস্ট/ সম্পাদক
উম্মাদ, স্যাটায়ার কার্টুন পত্রিকা
 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top