সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

ধ্রুবপুত্র (পর্ব বাইশ) : অমর মিত্র


প্রকাশিত:
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৯:০২

আপডেট:
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২০:৩৫

ছবিঃ অমর মিত্র

 

সুভগ দত্ত বললেন, এই অলঙ্কার রাজার।
সে কী! হাতের মুঠি খুলে গেল প্রধান পুরোহিতের।
হ্যাঁ, রাজার গলা থেকে আপনার হাতে এসে পড়েছে।
আপনি ঠিক বলছেন?

হ্যাঁ। সুভগ দত্ত হাত বাড়িয়ে প্রধান পুরোহিতের মুঠি থেকে হারছড়া নিয়ে এহাত ওহাত করতে করেত বললেন, যখন রাজার অভিষেক হয়, তিনি যখন উজ্জয়িনীর সিংহাসনে বসেন এই মহালতা  দিয়েছিল নগরের শ্রেষ্ঠী, আমি দিয়েছিলাম, আমি চিনি, আপনার কাছে এল কী করে?

 

তখন প্রধান পুরোহিত ব্রহ্মদেব ধীরে ধীরে ললিতা, সুভদ্রার কথা বললেন। সুভদ্রা যে হারছড়া ছিনিয়ে নিয়েছিল ললিতার কাছ থেকে তাও বললেন, সুভগ দত্ত খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, প্রধান পুরোহিত জবাব দিতে লাগলেন। শুনতে শুনতে দুই দেবদাসীকে ডাকতে বললেন সুভগ দত্ত। ব্রহ্মদেব ঘন্টা বাজালেন। এল ললিতা। দরজায় পাগলিনী প্রায় লালিতাকে দেখে চমকে উঠলেন সুভগ দত্ত। বেশবাস অসম্বৃত, চুল আলুলায়িত, মুখখানিতে চোখের জলের দাগ। প্রধান পুরোহিত তাকে দিয়েই সুভদ্রাকে ডাকলেন। ললিতা চলে গেল।

সুভগ দত্ত এসেছেন। তাঁকে খবর পাঠিয়েছিলেন প্রধান পুরোহিত। তিনি যে আন্দাজ করেছিলেন তা সত্য হলো। ঠিক আন্দাজ নয়, তার চেনা মনে হয়েছিল এই কন্ঠলতাটিকে।  মহাকালের মন্দিরের প্রধান পুরোহিত নিজে তো জানেন মহাকাল আসতে পারে না। তিনি ললিতার একটি কথা বিশ্বাস করেননি, সুভদ্রার কথাও না। সুভদ্রা  অতি বুদ্ধিমতী, ধরা পড়ে গিয়ে বলেছে, এই অলঙ্কার দেবতারই দান। সে গর্ভগৃহে মহাকালেশ্বরের কন্ঠ থেকে শুনেছে তা। ললিতার কথা প্রতিটি অক্ষর সত্য। এছাড়া ললিতাকে এবং নিজেকে রক্ষা করার উপায় জানা ছিল না সুভদ্রার। সে কেঁদে বলেছে, মহাকাল অতি জাগ্রত, মহাকাল দিয়ে গেছেন ললিতাকে। সুভদ্রার কথায় ললিতা নিশ্চুপ। সে নিশ্চুপ, নিঃঝুম হয়ে আছে ক’দিন ধরে। প্রধান পুরোহিত বুঝতে পারছেন দুই দেবদাসী এক সঙ্গে অসত্য বলছে। তিনি নিজে জানেন দেবতা কতটা  জাগ্রত। দেবতা কীভাবে বেরিয়ে আসেন গর্ভগৃহ থেকে।

সুভদ্রাকে নিয়ে ললিতা ফিরে এল। সুভদ্রা দুয়ারে দাঁড়িয়ে, তার পিছনে অন্যজন। সুভগ দত্ত দেখলেন সুভদ্রাকে কাছ থেকে। এর আগে সেই যে দেখেছিলেন আগুনের শিখার মতো দুলছিল এই কন্যা মহাকালেশ্বরের সম্মুখে সন্ধ্যারতির সময়। সুভদ্রা দেখছে শ্রেষ্ঠীকে। বুক ঢিপঢিপ করছিল তার। ভয়  করছিল দেখতে। এই মানুষকে কি দেখেছিল সে ধূপের ধোঁয়ার ভিতর দিয়ে? ঘণ্টধ্বনির ভিতরে এই দেব্তাই কি জেগে উঠেছিল তার সত্তায়? ললিতার কাছে শুনেছে শ্ৰেষ্ঠী এসেছেন। শ্রেষ্ঠী তার মহাকাল। মহাকালের মতোই শ্রেষ্ঠী তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবেন। শ্ৰেষ্ঠীকে ভোলেনি সে। মনে মনে ভেবেছে অনেক দুর্লভ মুহূর্ত। এখন দেখছে শ্ৰেষ্ঠীর হাতে সেই অলঙ্কার। শ্রেষ্ঠীর মুখখনি ধূর্ত। তাঁর পাশে বৃদ্ধ  প্রধান পুরোহিত। দুটি মুখ পরস্পরের ভিতর মিশে গেছে যেন।

 

শ্রেষ্ঠী খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলেন সুভদ্রা দাসীকে। নবীন যৌবন। মুখখানি বড় সুন্দর। চোখ দুটি কী মায়াবী, মাথায় কত চুল! চুল এলিয়ে আছে পিঠে। স্নান সারা হয়েছে প্রত্যুষকালে। দেবদাসী সাজতে বসবে দ্বিপ্রহর গেলে। তার অভিসার সন্ধ্যায়, দিনমণি অস্ত  গেলে। এমন বেশে শ্রেষ্ঠী এই কন্যাদের দ্যাখেননি তেমন। শ্রেষ্ঠী বললেন, সত্য বলবে?

সুভদ্রা মাথা কাত করে। হায়, এই মানুষটি কেন প্রধান পুরোহিতের সংস্পর্শে এসে তাঁরই মতো হয়ে গেল। সুভদ্রার চোখে জল এসে যাচ্ছে। হায় মহাকাল! হে শ্রেষ্ঠ পুরুষ! তুমিই আমার  মহাকাল! কিন্তু তুমি যে ক্রমে জরাগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে প্রাণের দেবতা। তোমাকে সত্য বলতে পারি, কিন্তু তা এখানে নয়। এখানে প্রধান পুরোহিত আছেন। তাঁকে কিছুতেই সত্য বলা যাবে না। এখন সত্য বললে আগে মিথ্যা বলার দায়ে প্রধান পুরোহিত তাকে হেনস্থা করবেন। হিংসাপরায়ণ হয়ে উঠবেন।

সুভগ দত্ত খুব নরম গলায় জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কী করে পেয়েছ বলো দেখি।
মুখ তুলল সুভদ্রা, ললিতার কাছ থেকে।
নাকি তুমিই পেয়েছ, ললিতা পায়নি?
সত্য বলছি, ললিতা লুকিয়ে রেখেছিল, এ হার দেবতার দেওয়া।
সুভগ দত্ত বললেন, ভাল করে ভেবে দ্যাখো, এই দেবমন্দিরে অসত্য উচ্চারণ পাপ, সেই পাপে সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে।

সুভদ্রা বলল একই কথা। সুভগ দত্ত  আবার জিজ্ঞেস করলেন একই কথা। সুভদ্রা বারংবার একই উচ্চারণ করলে শ্রেষ্ঠী বোঝেন অসত্য বলছে না সে। কিন্তু তারপর সুভদ্রা বলল, দেবতা ওই হার ফিরিয়ে দিতে বলেছেন ললিতাকে। সে শুনেছে তা গর্ভগৃহ বসে সেই রাত্রেই। শুনে জ্ঞানহারা হয়ে গিয়েছিল। মহাকালই দিয়ে গেছেন ললিতাকে।

শ্রেষ্ঠী আবার জিজ্ঞেস করলেন, ভেবে দ্যাখো।
আমি যা শুনেছি তাইই বলছি।
এ জগতে ভগবান মহাকালের চেয়ে শক্তিমান আর কেউ নেই, এতবড় মন্দির আর কোথাও নেই, অবন্তী দেশ, বৎস দেশ, সৌরাষ্ট্র, কোশল, মগধ, যেখানে যাও কোথাও নেই।

সভদ্রা এসব নাম শোনেনি। চুপ করে থাকে। তার পায়ের পাতা শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছিল কর্কশ পাথুরে মেঝে। সে কান পেতে শ্রেষ্ঠীর কণ্ঠস্বর অন্তরে ধরে রাখছিল। মধুর লাগছে। হে শ্রেষ্ঠজন। দেবদাসী সুভদ্রা তোমার পথ চেয়ে বসেছিল যে। মনে মনে উচ্চারণ করে সুভদ্রা, দেবসেবা আমার সার্থক হবে  যদি তোমাকে পাই। কী নরম, বাতাসের মতো স্বরধ্বনি! কী মোলায়েম দু’চোখের চাহনি!

সুভগ দত্ত জিজ্ঞেস করলেন, স্বকর্ণে শুনেছো?
হ্যাঁ ভদ্র! মুখ তুলল সুভদ্রা, আয়ত চোখদুটি মেলে ধরল শ্রেষ্ঠীর চোখে। তার চোখে জল এসে যাচ্ছে। এই দেবমন্দির থেকে কবে তাকে নিয়ে যাবেন তার দেবতা? শ্রেষ্ঠী কি জানেন না সুভদ্রা কেন চেয়ে আছে তাঁর দিকে।
সুভগদত্ত জিজ্ঞেস করলেন, স্বপ্নে শুনেছিলে?
না প্রভু, জাগরণে।
প্রধান পুরোহিত গরগর করে উঠলেন, সব অসত্য বলছে, মাগীটা ভাল ছিল, কী যে হয়েছে ওর, একই কথা বলে যাচ্ছে, ওকে মন্দির থেকে দূর করে দেব যদি সত্যি কথা না বলে।

আহ! শ্রেষ্ঠী হাত তুলে থামালেন বৃদ্ধ পুরোহিতকে। শ্রেষ্ঠীর চোখদুটি জহুরির চোখ তো বটে। তার চোখে আসল নকলে মিলিয়ে দেওয়ার কোনো উপায় নেই। কোনটা সোনা কোনটা তামা তা তো খালি চোখেই ধরা যায়। কিন্তু শুধু সোনা? সোনা চিনতে হলে নিকষ পাষাণ দরকার হয় না শ্রেষ্ঠীর। শ্রেষ্ঠী মানুষ চেনেন। তিনি দেবদাসীর অভিভূত ভাবটা টের পাচ্ছেন যেন, বললেন, অনেক সময় স্বপ্ন আর জাগরণে তফাৎ করতে পারে না মানুষ, তেমন হয়নি তো, মনে হয় তেমন হয়েছে, সত্যি করে বলে দেখি।
সত্য উচ্চারণ করতে পারে সুভদ্রা। তা শুধু শ্ৰেষ্ঠী সুভগ দত্তর কাছেই। বৃদ্ধ পুরোহিতের সম্মুখে নয়। তবু সে বলল, হতে পারে, তবে জাগরণেই মনে হয়।

শ্ৰেষ্ঠী বললেন, স্বপ্ন আর জাগরণে কীই বা তফাৎ, মহাকাল যদি আদেশ করেন তা স্বপনে যেমন সত্য, জাগরণেও।

হ্যাঁ প্রভু! মুখ তুলল আবার দেবদাসী সুভদ্রা। তার প্রভুকে দেখল যেন প্রাণ ভরে। বুক দপদপ করছে। হে প্রভু যদি মনের বাসনা প্রকাশ করতে পারতাম! প্রভু কি জানেন না? শ্রেষ্ঠী এবার ডাকলেন ললিতাকে। ললিতা এগিয়ে এলে সুভদ্রা তার পিছনে তাকে ছুঁয়ে দাঁড়াল। সুভগ দত্ত বললেন, ভেবে দ্যাখো দেখি, এ হার কী করে এল তোমার হাতে?

ললিতা দাসী বলল সেই হিমেল রাত্রির কথা। সুভগ দত্ত জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, ললিতা জবাব দিতে লাগল। কিন্তু তার জবাবে সব উত্তর তো পেলেন না শ্ৰেষ্ঠী। গভীর অন্ধকারে দেবতার মুখ দেখতে পায়নি ললিতা, কাঁদতে কাঁদতে তা বলতে লাগল সে। শ্রেষ্ঠী অবাক হয়ে শুনতে লাগলেন। তাঁর চোখ পড়ছিল ললিতার পিছনে দাঁড়ান সুভদ্রার আকুল নয়নে। চেয়েই আছে সে। তারও দু’চোখ  দিয়ে জল ঝরে যাচ্ছে। শ্রেষ্ঠী শুনতে চাইছিলেন সেই হিম রাত্রির প্রতিটি মুহূর্তের  কথা। ললিতার গলা বুঁজে যাচ্ছিল। সে গুটিয়ে যাচ্ছিল লজ্জায়। কিন্তু শ্ৰেষ্ঠী তো ললিতার প্রতি মুহূর্তের বিবরণ নিয়ে নিশ্চিত হতে চাইছিলেন তার অনুমানে।

সুভগ দত্ত বললেন, সব বল, বাদ দিসনে কিছু।

প্রভু! গলা বুজে যায় ললিতার, কথা থেমে যায়। সেই পরম মিলনের মুহূর্ত তার একান্ত নিজস্ব। সেই কথা তো সুভদ্রাকেও বলতে পারেনি সে। আর একটি পুরুষ মানুষকে বলে কী করে? মরে গেলেও  বলতে পারবে না সে।

কী হলো চুপ করে আছিস যে। কর্কশ শোনালো সুভগ দত্তর কণ্ঠস্বর।
প্রভু সে কথা তো বলা যায় না। পিছন থেকে সুভদ্রা বলল।
আহ! বিরক্ত হলেন সভগ দত্ত। তুই কথা বলছিস কেন? বল কী হয়েছিল, কী করে সে তোকে ধরল, ঘুমিয়েছিলি না জেগে, আগে থেকে জানতিস যে সে আসবে? বল, সত্যি করে বল।
প্রভু সব ভগবানের লীলা। বলে ওঠে সুভদ্রা।
গর্জন করে ওঠেন শ্রেষ্ঠী, তোকে বলতে বলেছে কে, চোপ! মন্দিরে থেকে লীলা হবে আর তা  ভগবানের নামে চলে যাবে,  বল ভগবান আর মানুষ কি এক? এই ললিতা বল।
ললিতা টের পাচ্ছিল সুভগ দত্তর মুখ থেকে নরম আবরণটি খসে পড়ছে। সুভদ্রা কেমন গুটিয়ে যাচ্ছিল। এই প্রভুর কথা কি সে মনে মনে ভাবে? সেই মানুষ আর এই মানুষ কি এক?
কী হলো বললি না, ভগবান আর মানুষ এক কি না,  এই সুভদ্রা তুই বল।
না প্রভু।
ভগবান এসেছিল না পুরুষমানুষ?
পুরুষের বেশে ভগবান। সুভদ্রা বলল।
রক্তমাংসের পুরুষ, এই ললিতা তুই তো শুয়েছিলি তার সঙ্গে, বল সে কি পুরুষ মানুষের মতো পুরুষ ছিল, না ভগবানের মতো?
ললিতা কাঁপছিল, জবাব দিতে পারে না।
পুরুষমানুষ যা করে, তাই করেছিল?
মাথা নামায় ললিতা, অস্ফূটস্বরে বলে, হ্যাঁ প্রভু।
তবে ভগবান জানলি কী করে, সে কি তোকে বলেছিল যে সে ভগবান?
মাথা নাড়ে ললিতা।
তবে ভগবান বললি কেন? গর্জন করে ওঠেন শ্ৰেষ্ঠী, ফিরলেন প্রধান পুরোহিতের দিকে, ভগবান নয়, কোনো পাপী। মন্দির অপবিত্র করে গেছে, মেয়ে দুটোকে কোনো পাষন্ডের হাতে দিন। ঠিক বের করে আনবে কে এসেছিল রাত্রে। আমিও জানি কে এসেছিল? এ তো ভীষণ পাপ, মহাকালের মন্দিরে  এসে তার দেবদাসীকে তস্করের মতো ভোগ করে যাচ্ছে। দেবদাসী শঠতা করছে দেবতার নামে। মেয়ে দুটোকে উতঙ্কের হাতে দেব?

আর্তনাদ করে সুভদ্রা দেওয়ালে ঢলে পড়ে। তাকে ধরে ললিতা। সুভগ দত্ত গর্জে যাচ্ছিলেন। তাঁর  ভৃত্য উতঙ্কের হাতে পড়লে ঠিক শিক্ষা হবে মেয়েমানুষ দুটোর। ছেনালি ঘুচিয়ে দেবে সে।
প্রধান পুরোহিত বললেন, এখন কী কর্তব্য?
আচমকা শান্ত হলেন সুভগ দত্ত, বললেন,  এখন কিছু নয়, এরা যেমন আছে থাকুক, এই হারের মালিককে আমি চিনি,  এদের লাগবে তাঁকে অভিযুক্ত করার জন্য।
উতঙ্ক?
থাকুক এরা, পরে দেখব! খোঁজ নিতে হবে মহাকালের নামে ওসব বলতে কে শিখিয়েছিল ওদের। এই তোরা যা।
সুভদ্রাকে ধরে ললিতা চলে যেতেই সুভগ দত্ত দরজা বন্ধ করেন। উত্তেজনায় তার সর্ব অঙ্গ কাঁপছে। বললেন, রাজা এসে ধর্ষণ করে গেছেন দেবদাসীকে রাতের অন্ধকারে। ঘুমন্ত দেবদাসীকে ধর্ষণ করে গেছেন উজ্জয়িনীর রাজা। এমন পাপ অবন্তীদেশকে আর কখনো  স্পর্শ করেনি, ওহ! কী ভয়ানক, আকাশ ভেঙে পড়বে মাথায়।
আপনি নিশ্চিত?
হ্যাঁ, রাজাই। এ তো রাজারই গলায় ছিল, দেবদাসী যদি সত্য কথা বলে রাজা কী করে অস্বীকার করবেন?
তাহলে ? বিভ্রান্ত প্রধান পুরোহিত জিজ্ঞেস করলেন। 
সুভগ দত্ত বললেন, পরামর্শ করতে হবে। রাজার কোনো সন্তান নেই, অথচ তিনি কিনা তুচ্ছ দেবদাসীকে ঘুমন্ত অবস্থায়...।
কর্ণ কুহরে আঙুল দেওয়ার ভাণ করলেন বৃদ্ধ পুরোহিত, আবার জিজ্ঞেস করলেন, এবার তাহলে কী হবে?
দেবদত্তার কাছে একথা পৌঁছে দিতে হবে।
সে তো আপনার দাসী।
রাজার, মেয়েমানুষটা উজ্জয়িনীর রাজাকে ছাড়া আর কোনো পুরুষমানুষকে চেনে না, ওর গুমর ভাঙতে হবে। গরগর করছিলেন সুভগ দত্ত।
তাহলে কী হবে? আবার জিজ্ঞেস করলেন বৃদ্ধ পুরোহিত।
রাজার কীর্তি সবাই জেনে যাবে।
ঢোল সহরৎ হবে?
সুভগ দত্ত বললেন, ঢোলের শব্দের চেয়েও আরো জোরে কথা ছুটে যাবে এদিক-ওদিক, দ্বিজদেব। আমি কি এগোব?
আপনার ইচ্ছা।
আপনি তো পাশে আছেন?
আছি! আচমকা আর্তনাদ করে ওঠেন বৃদ্ধ পুরোহিত। কী ভয়ানক অপমান! কী ভীষণ পাপ! ঘুমন্ত নারীকে ধর্ষণ! নরকেও স্থান নেই অবন্তীর রাজার। মহাকাল মন্দিরের চুড়োর সোনার মুকুট কালো হয়ে যাবে যে এই পাপে। আমি যে এখন কী করি।

চলবে

 

ধ্রুবপুত্র (পর্ব এক)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব দুই)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তিন)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চার)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পাঁচ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ছয়)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সাত)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আট)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব নয়)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব দশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব এগার)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব বারো)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চৌদ্দ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পনের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ষোল)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সতের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আঠারো)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব উনিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব কুড়ি)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব একুশ)

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top