সিডনী সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১


ইবাদতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখাই মূল ফজিলত


প্রকাশিত:
৬ জানুয়ারী ২০২০ ০৪:২৪

আপডেট:
২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০২:১৩

ফাইল ছবি

প্রভাত ফেরী: মুসলিমরা আল্লাহর ইবাদত করে। কেউ কম করে, কেউ বেশি করে। পুরো সপ্তাহ মসজিদে না এলেও জুমার নামাজ পড়তে অনেকেই মসজিদে আসে। তার ঈমান তাকে টেনে আনে। প্রভুর কথা একটু হলেও স্মরণ করিয়ে দেয়। এই যে সপ্তাহে একদিন মসজিদে আসা, মাঝে মাঝে দু’এক ওয়াক্ত নামাজ পড়া কিংবা একদিন বারো রাকাত নফল নামাজ পড়ে তিন দিন নামাজই না পড়া। খণ্ড খণ্ড এসব ইবাদতের নেকি তো সে অবশ্যই পাবে! কিন্তু আল্লাহ তায়ালার নিকট এমন ইবাদতের কতটুকু গ্রহণযোগ্য? আল্লাহ এমন ইবাদত কতটুকু পছন্দ করেন তাও ভাবার বিষয়।

এভাবে সপ্তাহে একদিন নামাজ পড়ায় কোনো ফজিলত নেই। আবার একদিনে কয়েক দিনের ইবাদত সেরে ফেলার মধ্যেও ফজিলত নেই। একদিন বারো রাকাত তাহাজ্জুদ পড়ে এক সাপ্তাহ ঘুমানোর মধ্যে ফজিলত নেই। বরং কম ইবাদত ধারাহিকভাবে আদায় করার মধ্যে হচ্ছে প্রকৃত ফজিলত। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তোমরা সে নারীর মতো হয়ো না, যে তার পাকানো সুতো শক্ত করে পাকানোর পর টুকরো টুকরো করে ফেলে।’ (সুরা নাহল : ৯২)। অর্থাৎ কোনো একটি কাজ করে তা বিনষ্ট করে দেয়া ঠিক নয়। এমনিভাবে কোনো নেক আমল শুরু করে তা পরিহার করাও অনুচিত। যে নেক আমলই শুরু করা হবে তা যেন ধরে রাখা হয়। ইবাদতটা যেন নিয়মতান্ত্রিক হয়। ধারাবাহিক হয়।

কোনো ইবাদত নিয়মতান্ত্রিকভাবে করার ফজিলত সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন ‘শ্রেষ্ঠ নেক আমল সেটাই, যা নিয়মিত করা হয়, যদিও তা সংখ্যায় অল্প হয়।’ (ইবনে মাজা : ৪২৪০)। অন্য এক সাহাবিকে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আব্দুল্লাহ! তুমি অমুক ব্যক্তির মতো হয়ো না, যে রাতে নামাজ পড়তো, কিন্তু পরে রাতে নামাজ পড়া ছেড়ে দিয়েছে।’ (বুখারি : ২৫২)

রাসুল (সা.) আমলে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে কখনো কখনো নফল নামাজেরও কাজা পড়েছেন। সুন্নত নামাজও ছুটে গেলে দ্বিতীয় বার আদায় করেছেন। আম্মাজান আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যদি অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে কোনো রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করতে না পারতেন, তখন তিনি পরদিন বারো রাকাত নামাজ আদায় করে নিতেন।’ (মুসলিম সূত্রে রিয়াদুস সালেহিন : ১১৮১)। অথচ তাহাজ্জুদ ফরজ ছিল না। ওয়াজিবও ছিলো না। তবুও পর দিন তা কাজা করে নিতেন। শুধু আমলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে। নিয়মানুবর্তিতা ধরে রাখতে।

নবীজি (সা.) নিজেই নিয়মিত আমলের প্রতি যত্নবান ছিলেন এমন নয়, সাহাবীদেরকেও উদ্বুদ্ধ করতেন, যেন তারা কোনো নফল ইবাদত ছুটে গেলে সেটা পরে আদায় করে নেন। হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে তার জিকির-পাঠ না করে ঘুমিয়েছে, অথবা আদায় করেছে তবে কিছু বাকি রয়েছে অতঃপর তা ফজর ও জোহরের মধ্যবর্তী সময়ে পড়ে নেয়, তার জন্য রাতে পাঠের সওয়াব দেয়া হয়।’ (মুসলিম)

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি (সা.) একদিন আমার কাছে এসে দেখেন, এক মহিলা আমার কাছে বসা। তারপর নবীজি (সা.) বললেন, সে কে আয়েশা? আয়েশা (রা.) বললেন, ‘অমুক মহিলা, যে প্রচুর নামাজ পড়ে।’ তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘থামো! তোমরা সাধ্যমত আমল করো। আল্লাহর কসম! আল্লাহ ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ো। আর আল্লাহর কাছে ওই আমল বেশি প্রিয়, যা আমলকারী ধারাবাহিকভাবে করে যেতে থাকে।’ (বুখারি : ১১২২; মুসলিম : ৭৪১; নাসায়ি : ৭৬২)। হাদিসে ‘আল্লাহ ক্লান্ত হন না’ এ কথার উদ্দেশ্য হচ্ছে, বান্দা যতক্ষণ আমল করতে থাকে আল্লাহও ততক্ষণ তার আমলনামায় সওয়াব দিতে থাকেন। ধারাবাহিক কোনো আমল করার কারণে বান্দার মধ্যে যদি কখনো অবসাদ চলেও আসে, তবু আল্লাহ সওয়াব দিতে থাকেন। তাই বান্দার কর্তব্য হচ্ছে কোনো আমল একবারে খুব বেশি না করে অল্প অল্প করে নিয়মতান্ত্রকভাবে করা।

সুতরাং, আমল কম হোক; কিন্তু নিয়মিত যেন হয়। ধারাবাহিক হয়। তবেই আমাদের ইবাদত আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় হবে। ইবাদতে স্বাদ আসবে। তৃপ্তি আসবে। আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top