সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

একা এবং একা (পর্ব এগারো) : আহসান হাবীব


প্রকাশিত:
২৪ আগস্ট ২০২০ ২৩:০৪

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ০৭:৩১

 

(আহসান হাবীব মূলত একজন প্রফেশনাল কার্টুনিস্ট। তিনি পেশাগত কারণে সাধারনত কমিকস, গ্রাফিক নভেল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করেন। তিনি যখন লিখেন তখন তার মাথায় থাকে কমিকস বা গ্রাফিক নভেলের কনটেন্ট। তার গল্পের পিছনে থাকে স্টোরি বোর্ডের মত ছবির চিত্রকল্প। এই কারণেই তার লেখায় একটা সিনেমাটিক ড্রামা থাকে প্রায়শই। তিনি মনে করেন যেকোনো গ্যাজেটেই/ফরম্যাটেই হোক, স্ক্রিনে যে গল্প পাঠক পড়ছে, সেখানে তার সাব-কনসান্স মাইন্ড ছবি খুঁজে। আর তাই ‘প্রভাত-ফেরী’র পাঠকদের জন্য তার এই ধারাবাহিক ইন্ডি নভেল ‘একা এবং একা ’ )

ইন্সপেক্টর সারোয়ার খানের মার্লবোরোর প্যাকেটে দুটো সিগারেট আছে। আর আছে একটা ছোট্ট চিরকুট। এটার জন্যই কি ইন্সপেক্টর সারোয়ার ইচ্ছে করে প্যাকেটটা ফেলে গেছে? চিরকুটে বল পয়েন্টে লেখা ছোট্ট একটা চিঠি। কোনো সম্বোধন নেই চিঠিতে, কে লিখেছে তা বোঝারও কোনো বুদ্ধি নেই। চিঠিটা এরকম -

‘ধরে নিন জোড়া খুনের জন্য আপনার ফাঁসির হুকুম হয়ে গেছে। খুব ভাগ্যবান হলে যাবজ্জীবন। কিন্তু এই জেল থেকে আর আপনার বের হওয়া হচ্ছে না। তবে জেল থেকে আপনাকে বের হতে হবে। এটাই আপনার সাথে আমার খেলা। বের হয়ে আমাকে খুঁজে বের করবেন।  আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করতে পারেন। যে লোক আপনাকে জোড়া খুনের দায়ে  বিনা বিচারে ফাঁসিয়েছে তার প্রতি ক্ষোভ থাকা উচিৎ যদি আপনি সুস্থ্য মানুষ হয়ে থাকেন। কি পারবেন না আমাকে হত্যা করতে? আসুন না খেলি...

পুনঃ- এই চিঠি আপনার উকিলকে দেখাতে পারেন, অবশ্য শেষ পর্যন্ত আপনার পক্ষে কোনো উকিল যদি দাঁড়ায়। কোর্টে এক্সেসরিজ টু এভিডেন্স হিসেবে দাখিল করলে যদি কিছু হয়! তবে লাভ নেই। আমি কিন্তু আট-ঘাট বেঁধেই নেমেছি। এরকম খেলা আমি বছরে একটা খেলি। এখন পর্যন্ত কেউ জেল থেকে বের হয়ে আমাকে মারতে পারেনি। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আপনি হয়ত পারবেন। কি পারবেন না??’

চিঠিটা ভাঁজ করে প্যান্টের ফোল্ডারে লুকিয়ে ফেলল মারুফ। দু ঘন্টার উপরে সে বসে আছে একট ঘরে। আরো তিনজন আছে, এরা সবাই দাগী আসামী। এই মুহুর্তে কাগজে পত্রে মারুফও দাগী আসামী।

-চাচা বাস থাইকা নামেন, আপনের সাথে কথা আছে। বেশ হুকুমের সুরে বলে কুদ্দুস। মজিদ স্যার ঢোক গিলে ঠোট চাটেন
-কুদ্দুস ঝামেলা কইরো না, এটা রাখ। এদিক ওদিক তাকিয়ে ৫০০ টাকার একটা বান্ডিল এগিয়ে দেন। ‘এখানে দশ হাজার আছে’

বান্ডিলটা কুদ্দুস নিল না। বেশ দৃঢ় স্বরে বলল-

-নামেন কইতাছি বাস থাইকা, নাইলে কইলাম আপনার বিপদ হইব। তারপর সে চিৎকার করল ‘কন্ডাক্টর বাস রাখো এই খানে। আমরা নামব’।

বাস থামল বিরান একটা এলাকায়। পাশ দিয়ে নদী বয়ে চলেছে। আশে পাশে ঝোপ-জঙ্গল। প্রকৃতি এখানে এসে তার ধরন বদলে ফেলেছে। শহরের বাইরে প্রকৃতি সবসময় এমনই, বন্য খেয়ালী...। দুজনেই নামল বাস থেকে। মজিদ স্যার বোগলের নিচে ব্যাগটাকে শক্ত করে ধরে রেখেছেন, অবশ্য চাদরে ঢাকা। তিনি ফ্যাকাসে গলায় বললেন- 

-কুদ্দুস কথা শোনো আমার
আপনে স্যারগো বেতনের টাকা নিয়া কই যান আগে বলেন

-কুদ্দুস আমার কথাটা শোন। আমার অনেক বিপদ। ঝামেলা কইর না। অনেক টাকার দরকার আমার। আচ্ছা নেও এখানে বিশ আছে তুমি রাখ। আমারে যাইতে দাও। কাউরে কিছু বইল না। তুমিতো আমার ভাইস্তার মত...
-আপনি স্যার-ম্যাডামগো স্যালারী শীটে সাইন করায়া বেতন না দিয়া ট্যাকা নিয়া কই যান আগে বলেন
-কুদ্দুস কথা বললেই কথা বাড়বে। আচ্ছা ৫০ রাখ। ৫০ হাজার আছে এইখানে। এই যে নেও ধর...। বেশ বড় সর একটা বান্ডিল এগিয়ে দিল কুদ্দুসের দিকে, ব্যাগ থেকে বের করে।

কুদ্দুসের মাথায় তখন অন্য চিন্তা চলছে। এই বিরান ভুমিতে কেউ নেই। এখানে একটা দুটা মার্ডার করে লাশ নদীতে  ভাসিয়ে দিলে কেউ দেখতেও আসবে না। আর এই লোকটার ব্যাগে আছে তিন লক্ষ টাকা। এই জীবনে কুদ্দুসকে আর কিছু করে খেতে হবে না। কুদ্দুসের বুকের ভিতর হৃৎপিন্ডটা এখন গলার কাছে এসে ধ্বক ধ্বক করছে। কেউ যেন কুদ্দুসের ভিতরে কথা বলতে শুরু করেছে ‘কুদ্দুস জীবনে সুযোগ সব সময় আসে না। তুমি পারবা । তোমার এক চাচা মার্ডার কেসের আসামী তারে পুলিশ এখনও ধরতে পারে নাই। তোমারেও পারবে না, তোমার রক্তে এই জিনিষ আছে ... জলদি করো সময় কিন্তু কম ...’

কুদ্দুস চারদিকে তাকায়, আশে পাশে কোথাও কেউ নেই। একটা প্রমান সাইজের পাথর তুলে নেয় ডান হাতে। যা করার জলদি জলদি করতে হবে। মজিদ স্যার ফ্যাস ফ্যাসে গলায় বলেন ‘এই কুদ্দুস কি করো? ভাই না আমার ... কথা শোন... আমার কথাডা একটু শোন...’

কুদ্দুস অবশ্য কথা শোনে না, সে এগিয়ে যায়। 

 

মজিদ স্যারের লাশ যখন বিরুন্দা নদীতে ভাসছিল, তখন টিচার্স রুমে মনিকা ম্যাডামের চায়ের কাপে একটা লাল পিপড়া ভাসছিল। তিনি চামচ দিয়ে পিপড়েটাকে তোলার চেষ্টা করছিলেন, পারছিলেন না। বাসায় হলে এতক্ষনে তিনি চেচামেচি শুরু করে দিতেন। চায়ে পিপড়ে ভাসা ব্যাপারটা তার অসহ্য। ছোট বোন শর্মি থাকলে হয়ত বলে বসত আপা খেয়ে ফেল, পিপড়া হচ্ছে প্রোটিন আর পিপড়া খেলে ফ্রি ফ্রি সাঁতার শিখে যাবি, তুইতো আবার সাতার জানিস না, শর্মিটা সবসময় ফাজিল টাইপের কথাবার্তা বলে। মনিকা ম্যাডাম শেষ পর্যন্ত পিপড়েটা তুলতে পারলেন চামচে।

কুদ্দুসটা কোথায় গেল কে জানে। মজিদ স্যারও আজ এখনো আসেন নি। এই সময় রহমান স্যারের মুন্ডুটা দেখা গেল দরজায়। এই লোকটা ছোক ছোক টাইপ

-ম্যাডাম একা না কি?
-হু
-ক্লাশ নেই?
-আছে
-খবর শুনছেন?
-কি?
-মারুফ স্যারের চার্জশীটতো পুলিশ খুব শিগ্রী দিয়ে ফেলবে। ইন্সপেক্টর সারোয়ার খান দারুন এক অফিসার দু’বার বেস্ট অফিসার পদক পাওয়া পুলিশ। সব কাহিনী এখন পরিস্কার, শুনবেন? পড়ব?
-নাহ বাদ দেন এসব আর ভাল লাগে না
-এটা ঠিক বলছেন, খুন খারাবী পুলিশ কোর্ট এসব খবর যত কম পড়া যায়।
-আরেকটা খবর আছে
-কি
-আগের হেড স্যারতো মর মর অবস্থা। আর বোধ হয় বেশীক্ষন নাই। আজকালের মধ্যেই টেশে যাবে। আর ডাক্তার আফজল সেও পটল তুলল বলে, তার অবস্থাও নাকি খুব খারাপ। আচ্ছা ঘটনা কি বলেনতো দুজন দুজন করে সব বিদায় হচ্ছে নবী নগর থেকে। অবশ্য এগুলো নর্মাল ডেথ হবে আশা করি।
-আচ্ছা রফিক স্যারের কোনো খবর আছে?
-ও হ্যাঁ সে তো মনে হয় বেকসুর খালাস পেয়ে যাবে। এক নম্বর পাগল, দুই নম্বর তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি।

-তাই নাকি?
-আহা বেচারা।
-বেচারা কেন? উনি ছাড়া পেয়ে মানহানীর মামলা করলে কোটিপতি হয়ে যাবে। বিদেশ হলে উনার পাশে চার-পাঁচ জন উকিল চলে আসত এতক্ষনে

-এখন কি অবস্থা উনার কে জানে

মনিকার মনে হল সে আসলে কোনো খোঁজ খবরই রাখে না। না স্কুলের না বাইরের। মারুফ স্যারের ঘটনাটা এখনও নিতে পারছে না মনিক্যা ম্যাডাম। তার বিশ্বাস হয় না ঐ লোকটা দুটো খুন করতে পারে। অবশ্য কে জানে কার ভিতর কি আছে। ঐদিন শর্মি বলছিল ‘আপু তোর কপাল ভাল যে মারুফ স্যার ঐদিন তোকে কোলে করে নিয়ে নদীতে ফেলে দেয় নি... কি ভয়ঙ্কর লোকরে বাবা!’ তার বলার ভঙ্গিতে হেসে ফেলেছিল মনিকা ম্যাডাম।

-ম্যাডাম হাসেন কেন?
-কই হাসলাম?
-আপনার মুখটা হাসি হাসি

মনিকা বুঝতে পারছে লোকটা আস্তে আস্তে কথাবার্তার মোড় ঘোড়াচ্ছে। মনিকা উঠে দাড়ায়। ক্লাশে যাওয়ার সময় হয়েছে। আকেটু পরে গেলেও হত। কিন্তু এই লোকটার জন্য আর বসা ঠিক হবে না।  

দুপুরের পর পর স্কুলে কুদ্দুস এসে হাজির হল। রহমান স্যার কড়া গলায় বলল

-কই ছিলা তুমি সারাদিন?
-শরীরটা খারাপ করছিল স্যার, জ্বর উইঠা গেছিল একশ দুই-তিন। অষুধ খায়া জ্বর কমায়া এই আইলাম। চা আনুম?
-হ্যাঁ সবার জন্য চা আন। মজিদ স্যার কই? সেওতো আসে নাই
-মজিদ স্যার আসে নাই? কুদ্দুস নিরিহ ভঙ্গিতে তাকাল সবার দিকে। মনে হল না কেউ তাকে সন্দেহ করছে। সবার চোখ পত্রিকায়, আজকের সব কাগজেও মারুফ স্যারের ছবি বের হয়েছে। সে ছুটলো স্যার-ম্যাডামদের জন্য চা-সিঙ্গারা আনতে। কিছুদিন চাকরী করতে হবে। নইলে সবাই সন্দেহ করতে পারে। এক সাথে দুজন নাই হলেতো চলবে না। তারপর যখন বেতন হবে না এ মাসে... হবে কোত্থেকে? টাকাতো সব তার কাছে। তখন চাকরী ছেড়ে দে চম্পট...। কুদ্দুসের মাথা এখন বেশ পরিস্কার।

 

সাতদিন পর আবার সারোয়ার খানের মুখোমুখি মারুফ। সেই একই ঘর। একই চা। তবে চা এল এক কাপ। শুধু সারোয়ার খানের জন্য।  একই মার্লবোরার প্যাকেট। সিগারেটও  অফার করা হল না আজ মারুফকে। আজকের সারোয়ার খান যেন অন্য মানুষ

-আপনার চিরকুটটা পড়েছি। বলল মারুফ

সারোয়ার খান মারুফের কথা যেন শুনতেই পেল না। মার্লবোরোর ধূয়া ছেড়ে বলল

-কিসের চিরকুট?
-মার্লবোরোর প্যাকেটের ভিতর যেটা ছিল
-তাই? কই দেখি?

মারুফ পেন্টের গোপন ফোল্ডারে হাত দিয়ে অবাক হল। ওখানে কিছু নেই। সারোয়ার খান হাসল।

-মারুফ সাহেব নতুন কোন গল্প তৈরীর চেষ্টা করবেন না। গল্প তৈরী করব আমি। আজ আপনাকে একটা গল্প শোনাই, মনোযোগ দিয়ে শুনুন-

 

...মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটা এনজিওতে কাজ করেন এক ভদ্রলোক। একদিন সকালে হাঁটতে বেরিয়েছেন তিনি।  হাঁটতে হাঁটতে শহরের শেষ প্রান্তে চলে এসেছেন প্রায়। এখানে একটা প্রসটিটিউশনের মত আছে বলে শোনা যায়। সেই এলাকায় হঠাৎ ডাস্টবিন থেকে একটা বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পাওয়া গেল। ভদ্রলোক এগিয়ে গিয়ে দেখেন একটা জুতার বাক্সে একটা সদ্য জন্মানো বাচ্চা কাঁদছে।  তিনি বাচ্চাটাকে তুলে নিয়ে গেলেন তার এনজিওতে। এই এনজিওতে প্রস্টিটিউটদের বাচ্চাই লালন পালন করা হয়। অনেক বাবা-মাই এখান থেকে বাচ্চা দত্তক নিয়ে থাকেন। একদিন এক দম্পতি এসে আপনাকে দত্তক নিয়ে গেলেন। বুঝতে পারছেন আপনার পরিচয়?  ইউ আর এ বাস্টার্ড... বেজন্মা বেশ্যার ছেলে...!!

 

মারুফের মাথার ভিতরে একটা বিস্ফোরন হল যেন! তার ইচ্ছে হল স্টিলের হ্যান্ডকাফ ছিড়ে ঝাপিয়ে পড়ে লোকটার উপর। লোকটা কি এটাই চাচ্ছে?  ... লোকটা আরো কি সব বলে গেল মেশিনের মত, একটা কথাও মারুফের কানে ঢুকলো না। একসময় দেখে সামনের টেবিলে লোকটা নেই যথারীতি মার্লবোরো প্যাকেটটা পড়ে আছে। আজকেও কি কোন চিরকুট দিয়ে গেল ইন্সপেক্টর সারোয়ার খান? মারুফের মাথাটা তখনও দপ দপ করছে।

 

দ্বিতীয় চিরকুটটা আগের থেকে একটু বড়। এবারো কোন সম্বোধন নেই। এবং আশ্চর্যের ব্যাপার লোকটা আগাগোড়া আজ খারাপ ব্যবহার করেছে যেমনটা আগের বার করেনি, হয়ত ইচ্ছে করেই করেছে।

তবে চিরকুটটা একটু বড় আগেরটার থেকে এবং অনেক ডিটেইলড-

‘...ইংরেজীতে ‘এন্টিসিপেশন’ বলে একটা শব্দ আছে। যার অর্থ ঘটনা ঘটার আগের প্রস্তুতি বা সিচ্যুয়েশন। সেটা কিন্তু আমাদের হয়ে গেছে। আজ কালের মধ্যে আমি চার্জশীট দিয়ে দিব।  ফাঁসি হলেতো হয়েই গেল... আর যাবজ্জীবন হলে কিন্তু আমরা খেলব। মানুষের জীবন বড্ড এক ঘেয়ে। এক জরিপে দেখা গেছে মাত্র তিন হাজার মানব জীবনের গ্রাফিকস পৃথিবীর ৭০০ কোটি মানুষের জীবনে পারমুটশন কম্বিনেশন করে ঘটে চলেছে। তাই আমি মাঝে মাঝে নিজের মত করে গল্প তৈরী করি। এবং বেছে বেছে মানুষের সঙ্গে গল্প তৈরী করি। যেমন আপনার সঙ্গে করলাম।

ও ভাল কথা আপনার পালক মা মারা গেছে মাস তিনেক হল। আর আপনার বোন মানে পালক মায়ের ঘরের বোন, স্বামী সহ চলে গেছে টেক্সাসে, ওরা ওখানে সেটল করবে বলে জানতে পেরেছি। তার মানে বুঝতে পারছেন আপনি আসলে এই মুহুর্তে পৃথিবীতে একা... আমিও একা; যুদ্ধ হবে একা এবং একা...

পুনঃ আমি নিজেকে একা কেন বললাম সেই ব্যাখ্যায় একটু যাওয়া দরকার। একটা গল্প বলি শুনেন। এটা আসলে একটা বিখ্যাত সাইকিক টেস্ট। এক বাসায় থাকে দুই বোন আর মা। একদিন মা মারা গেলেন। বাসায় কান্না-কাটি শুরু হল। আত্মীয় স্বজন আসল। মরা বাড়ি যেমনটা হয় আর কি। ছোট বোনটি হঠাৎ দেখল অসম্ভব রুপবান একটা তরুণ বসে আছে ড্রইং রুমে, তার পাশেই বসে আছে কুৎসিত দর্শন একটা ছেলে। একই বয়সের তারা। নিশ্চয়ই তাদের কোন আত্মীয় এরা দুজন। ছোট বোন সঙ্গে সঙ্গে প্রেমে পড়ে গেল রুপবান ছেলেটির। কিন্তু  এইরকম সিচুয়েশনে এগিয়ে গিয়ে কথা বলা যায়? যায় না। মেয়েটি কথা বলল না। দূর থেকে দেখল ছেলেটিকে বার বার। তারপর এক মাসের মাথায় বড় বোনটি খুন হল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বড় বোনের খুনী কে?

মারুফ সাহেব, এই প্রশ্নের উত্তর যে তিন সেকেন্ডের মধ্যে দেয় সে ভয়ঙ্কর সাইকো পেশেন্ট, তারা ভয়াবহ রকমের  নিঃসঙ্গ এবং একা। আমি এর উত্তর দিয়েছি এক সেকেন্ডে। আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন। আমার ধারণা আপনিও তিন সেকেন্ডের মধ্যে বলতে পারবেন খুনি কে! এই জন্যই বলছিলাম খেলা হবে একা এবং একা...’

 

এই চিরকুট প্রাপ্তির দু মাস পর রায় হল মারুফের। দ্রুত বিচার আইনে জোড়া খুনের জন্য ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ। তবে তার উকিল ভ্রু নাচিয়ে বলল ‘ভয় নেই। সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে যাবজ্জীবন হবে নিশ্চিত থাকেন।’ উকিলের চেহারাটা দেখতে অনেকটাই আব্রাহাম লিঙ্কনের মত। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন প্রথম জীবনে ল’ইয়ার ছিলেন। তিনি নাকি কোনো ক্রিমিনাল কেস লড়তেন না। কথাটা হঠাৎ করেই কেন মনে হল মারুফের, কে জানে!

 

(চলবে

একা এবং একা - পর্ব এক
একা এবং একা - পর্ব দুই
একা এবং একা - পর্ব তিন
একা এবং একা - পর্ব চার
একা এবং একা - পর্ব পাঁচ
একা এবং একা - পর্ব ছয়
একা এবং একা - পর্ব সাত
একা এবং একা - পর্ব আট
একা এবং একা (পর্ব নয়)
একা এবং একা (পর্ব দশ)

লেখক: আহসান হাবীব
কার্টুনিস্ট/ সম্পাদক
উম্মাদ, স্যাটায়ার কার্টুন পত্রিকা
 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top