সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

একা এবং একা (পর্ব ১৮) : আহসান হাবীব


প্রকাশিত:
১২ অক্টোবর ২০২০ ২২:১৫

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:০০

 

(আহসান হাবীব মূলত একজন প্রফেশনাল কার্টুনিস্ট। তিনি পেশাগত কারণে সাধারনত কমিকস, গ্রাফিক নভেল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করেন। তিনি যখন লিখেন তখন তার মাথায় থাকে কমিকস বা গ্রাফিক নভেলের কনটেন্ট। তার গল্পের পিছনে থাকে স্টোরি বোর্ডের মত ছবির চিত্রকল্প। এই কারণেই তার লেখায় একটা সিনেমাটিক ড্রামা থাকে প্রায়শই। তিনি মনে করেন যেকোনো গ্যাজেটেই/ফরম্যাটেই হোক, স্ক্রিনে যে গল্প পাঠক পড়ছে, সেখানে তার সাব-কনসান্স মাইন্ড ছবি খুঁজে। আর তাই ‘প্রভাত-ফেরী’র পাঠকদের জন্য তার এই ধারাবাহিক ইন্ডি নভেল ‘একা এবং একা ’ )

  

পর্ব - ১৮
সাবিনার হাতের ১২০ মিলি ব্যারেলের সেমি অটোমেটিক ল্যুগার পিস্তলটা সমুদ্রের অবিশ্রান্ত শো শো শব্দ ছাপিয়ে হঠাৎ গর্জে উঠল। আর সঙ্গে সঙ্গে বরুণকে দেখা গেল হাটু মুড়ে আছরে পড়ল ভেজা বালিতে। প্রফেসর হতভম্ব হয়ে তাকালেন মারুফের দিকে। নকল পিস্তল থেকে গুলি বেরুলো কিভাবে? মারুফ ছুটে গিয়ে সাবিনার হাত থেকে পিস্তলটা ছিনিয়ে নিল। তারপর ঝুকে পড়ল বরুণের উপর। গুলিটা ঠিক কোথায় লেগেছে জানা দরকার। একটু পর হাসি মুখে উঠে দাড়াল মারুফ।

-হাউ কাম? প্রফেসর চেচালেন

হেসে উঠল মারুফ। ‘প্রফেসর একটা ভুল হয়েছে, ভুলটা আমিই করেছি’। সাবিনা তখন স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে যেন একজন দুইজন মানুষের জীবন-মৃত্যু তার কাছে  কিছুই যায় আসে না।

প্রফেসর আসল নকল দুটো পিস্তলই চেয়ে নিলেন মারুফের কাছ থেকে তারপর দুটোই ছুড়ে দিলেন সমুদ্রের ঢেউয়ে। চেচিয়ে উঠলেন ‘লেটস স্টার্ট এ নিউ লাইফ...’

-বুঝলে মারুফ জীবন থেকে সত্য আর মিথ্যা চলে গেলে বাকি কি থাকে বলতো?
-কিছুই থাকে না
-রাইট... জিরো; সেই জিরো থেকেই আমরা তিনজন না হয় শুরু করতে পারি কি বল?

 

তারা তিনজনই তাকাল বরুণের দিকে। বরুণ তখন উঠে দাড়িয়েছে। তার গায়ে আসলে গুলি লাগে নি। সে কি ভাবল কে জানে। তারপর হঠাৎ পড়ি মরি করে ছুটতে লাগল বীচের ধার ধরে। পালাচ্ছে! মানুষ তখনই পালায় যখন আর তার কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। তিনজনই দৃষ্টি ফিরিয়ে এনে সমুদ্রের দিকে তাকাল। জোয়ারের তখন চরম অবস্থা। উত্তাল ডেউগুলো বার বার আছড়ে পড়ছে ওদের পায়ের কাছে, যেন মানুষের সব কালিমা একবারে ধুয়ে মুছে নিবে সে এ যাত্রায়।  নিরবতা ভঙ্গ করলেন প্রফেসর

 

-এখান থেকেই আমরা যার যার পথ বেছে নিব। আমি ঢাকা যাব। দুদিন থাকব। তারপর যাব নরওয়ে আমার মেয়ের কাছে, ওয়ান ওয়ে জার্নি। নিজের সম্পর্ক এর বেশী কিছু আর বলতে চাচ্ছি না। আসলে আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই কিছু রহস্য আছে, থাকুক না হয়; তোমরা কি বল? তোমাদের কি পরিকল্পনা?
-আমি যাব নবীনগর ওখানে সরযুবালা স্কুলের এক ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করব...মনিকা ম্যাডামের সাথে? এই প্রথম স্বতস্ফূর্ত কথা বলল সাবিনা। আশ্চর্য হল মারুফ!
-তুমি কি করে জানলে?
-জানি কুদ্দুস স্কুলের সব খবর বলত
কুদ্দুস কে?

সাবিনা সব খুলে বলল। এত টাকা কিভাবে এল তার হাতে, বরুণের হাত ধরে তার পলায়ন পর্ব। পরে পত্রিকা পড়ে জানতে পারে কুদ্দুস স্কুলের হেড স্যারকে খুন করে টাকা নিয়ে পালিয়েছে।

-আচ্ছা স্যার কুদ্দুসের মত আমিওতো এখন খুনি তাই না?
-না তুমি প্রথম যে লোকটাকে গুলি করেছ সে মরবে না। আর বরুণকে তো দেখলে কি ভাবে দৌড়ে পালালো। ওর গায়ে গুলি লাগেনি।
-স্যার আমিও আপনার সঙ্গে নবীনগর যাব। স্কুলের টাকা স্কুলে ফিরিয়ে দিব।
-ভেরি গুড। বললেন প্রফেসর। ‘তাহলেতো হয়েই গেল। চল আজ আমরা কোনো ভাল রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করি ফ্রেশ হই তারপর না হয় আবার ভাবা যাবে, যদিও নতুন করে আর ভাবাভাবির কিছু নেই।’

নবীনগরে ডিরেক্ট কোনো বাস যায় না। আগে যেতে হবে সিলেট, সেখান থেকে লোকাল বাসে নবীনগর। সিলেটের বাসে বসে আছে তারা দুজন। সাবিনা বেশ ঘুমুচ্ছে, মাঝে মাঝে ঢুলে পড়ছে মারুফের গায়ে। বাচ্চা মেয়েটার উপর দিয়ে ধকল খুব কম যায় নি। মারুফ ভাবছিল প্রফেসরের কথা, লোকটা আগাগোড়াই খুব রহস্যময়। তবে মানুষ হিসেবে ভাল এবং বুদ্ধিমান, এবং জ্ঞানীতো বটেই। জ্ঞানীরা যে সবসময় বুদ্ধিমানের মত আচরন করে তা কিন্তু নয়। কিন্তু প্রফেসর লোকটা আগাগোড়াই বুদ্ধিমান। এই জন্যই বোধহয় বলে বোকা বন্ধুর চেয়ে জ্ঞানী শত্রু উত্তম;  প্রফেসরের সঙ্গে আর কখনো দেখা হবে না হয়ত। না হওয়াই ভাল। মুগ্ধতা নিয়েই মানুষের সাথে সম্পর্ক শেষ হওয়াই বরং সুখের।

চারটা নাগাদ তারা দুজন নবীনগর পৌঁছালো।

পাঁচটায়... সরযুবালা বিদ্যা নিকেতন স্কুল তখন ছুটি হয়ে গেছে। ছাত্রছাত্রীরা বেরিয়ে গেছে অনেকক্ষন। শিক্ষক-শিক্ষিকারা  তখনও আছেন কারণ হেড মিস্ট্রেসের সঙ্গে তাদের একটা ছোটো খাট মিটিং আছে। শরতের তেজী রোদ মরে গিয়ে বিকেলের ফুরফুরে দখিনা হাওয়া শুরু হয়েছে, একেই বোধহয় ইংরেজীতে বলে সাউদার্ন ব্রিজ। সরযুবালা স্কুলটা এখন অনেকই সুন্দর, বড় লোহার গেটের চারদিকে জড়িয়ে আছে সবুজ সন্ধ্যা মালতি গাছ, এই আশ্চর্য গাছটিতে একই সঙ্গে ফুটে আছে ছোট ছোট হলুদ আর লাল ফুল। এই সময় স্কুলের গেটে সবুজ কামিজ পড়া দির্ঘাঙ্গী ছিপ ছিপে একটা মেয়ে এসে দাড়ালো। তার হাতে একটা ব্যাগ। গেটের বয়স্ক দারোয়ান তৈয়ব আলী টুলে বসে বিড়ি টানছিল। বিড়ি ফেলে উঠে দাঁড়াল-

-আপা কারে চান?
-হেড মিসট্রেস আপার সাথে একটু দেখা করব।
-যান ঐ যে ডান দিকের লাল বিল্ডিং এর নিচের কোনার ঘরটা বড় আপার ঘর।
-আপনি আমাকে একটু নিয়ে চলুন, খুব জরুরী...
-আচ্ছা চলেন

হেড মিসট্রেস নিরুবালা আচার্যের রুমেই  মিটিং চলছিল। সব শিক্ষক-শিক্ষিকাই উপস্থিত। ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছিল বেশ গুরু গম্ভীর মিটিং। সাধারনত একটু জটিল এক্সক্লুসিভ মিটিংগুলো হেড মিসট্রেস ম্যাডামের রুমেই হয়ে থাকে। কথা বলছিলেন নিরুবালা আচার্য একাই।

-আপনারা খেয়াল করেছেন বোধ হয়। বেশ কয়েকমাস ধরে আপনাদের বেতন টেন পার্সেন্ট কম দিতে হচ্ছে। কারণ উপায় নেই। স্কুল ফান্ডের বেশ বড় অঙ্কের একটা টাকা খোয়া গেছে। সেই চাপ আমি এখনো সামলে উঠতে পারছি না। অবশ্য পুলিশ বলেছে উদ্ধার করবে। কিন্তু আমার মনে হয় না এটা আদৌ উদ্ধার করা সম্ভব। তবে আমি আশা করি একটু সামলে উঠলে আপনাদের বকেয়া টাকা এক সময় ফিরিয়ে দিতে পারব।
-এটা নিয়ে আমরা ভাবছি না ম্যাডাম। আপনার উপর আমাদের ভরসা আছে, কি বলেন আপনারা? ড্রইং স্যার ঢালি সরকার সবার দিকে তাকালেন সমর্থনের আশায়। অন্যরা মাথা ঝাকালেন কম বেশী।
-আরেকটা ব্যাপার আমি আশা করছি, এই স্কুল খুব শিগ্রী এমপিও ভুক্ত হবে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দু একজনের সঙ্গে আমার...

এ সময় দরজায় দারোয়ান তৈয়বের মাথা দেখা গেল।

-ম্যাডাম?
-কি ব্যাপার?
-এক আপা আসছে আপনার সাথে দেখা করতে চায়
-বল অপেক্ষা করতে, মিটিংয়ে আছি দেখতে পাচ্ছ না
-ম্যাডাম উনি বলছেন খুব জরুরী
-আহ বললাম না অপেক্ষা করতে বল।

সবাইকে অবাক করে দিয়ে তৈয়ব আলী ভিতরে ঢুকে গলা নামিয়ে ফিস ফিস করল। ‘ম্যাডাম ঐ আপার ব্যাগ ভর্তি টাকা... আমি দেইখা ফেলছি!’ এবার সবাই চমকে তৈয়বের দিকে তাকাল। বাইরে দাঁড়িয়ে তখন সাবিনা ভিতরে ভিতরে নিজেকে গোছাচ্ছে। কিভাবে বলবে বিষয়টা, কতটুকু বলবে বা কতটুকু বলা উচিৎ। এ ক’দিনে সে যথেষ্ট সাহসী আর অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছে। অন্তত তার তাই মনে হচ্ছে। জীবন এরকমই, হঠাৎ হঠাৎ কাউকে কাউকে প্রস্তুত করে দেয় যেন তার কানে কানে বলে ‘হ্যাঁ তুমি এখন তৈরী, এগিয়ে যাও; পিছু হটার আর উপায় নেই তোমার...।’ 

সরযুবালা আচার্যের টেবিলের উপর টাকার ব্যাগটা। মাথা নিচু করে বসে আছে সাবিনা। সবাই অবাক হয়ে দেখছে আশ্চর্য এই মেয়েটিকে।

-তুমি কিছু খাবে? নরম গলায় নিরুবালা আচার্য বললেন। ‘তোমাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে’
-জি না

মেয়েটি হঠাৎ তাকাল মনিকা ম্যাডামের দিকে। তারপর বলল- ‘আপনিতো মনিকা ম্যাডাম, আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে পারি?’ আশ্চর্য হলেন মনিকা ম্যাডাম। আশ্চর্য হল সাবিনা নিজেও। সে কি করে বুঝলো এটাই মনিকা ম্যাডাম? আগেতো কখনো দেখেনি এই ম্যাডামকে!

-হ্যাঁ বলতে পার
-ম্যাডাম একটু একা বলতে চাই।
-বেশতো তুমি ওকে নিয়ে টিচার্স রুমে চলে যাও। বললেন নিরুবালা আচার্য।

 

টিচার্স রুমে বসে সাবিনা এদিক ওদিক তাকাল তারপর বলল ‘ম্যাডাম মারুফ স্যার আপনাকে কাল ডিসি পার্কে যেতে বলেছে পাঁচটার দিকে, বলেছেন যদি আপনার কোনো সমস্যা না হয়...!’

-মানে? এর মধ্যে মারুফ স্যার কোত্থেকে এল? উনি না মারা গেছেন??
-জি না। উনারাই আমাকে এখানে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছেন। সে অনেক কথা ম্যাডাম, সব বলতে গেলে অনেক সময় লাগবে, তা ছাড়া সব আমি বলতেও চাই না। আর ম্যাডাম, মারুফ স্যারের বিষয়টা গোপন রাখলেই ভাল।

মনিকা ম্যাডাম হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে  রইলেন সাবিনার দিকে। এ মেয়ে এসব কি বলছে!!

 

শর্মি অবাক হয়ে দেখছে তার বড় বোন মনিকাকে। এত সাজগোজ কেন? আর এত খুশি, গুন গুন করে গানও গাইছে মনে হচ্ছে। গানের কলিটা ধরার চেষ্টা করল, কিন্তু পারল না। শর্মি বলেই ফেলল

-কিরে আপু কোথায় যাচ্ছিস?
-তোকে বলব কেন?
-আহা বল না?
-অভিসারে যাচ্ছি। ঠোটে লিপস্টিক ঘষতে ঘষতে বলে মনিকা।
-তা অভিসারে গিয়ে ফিরে আসবিতো? নাকি অভিসারিকার সাথে ফেরারী হয়ে যাবি?
-দিন দিন ফাজিল হচ্ছিস তুই? ভাগ এখান থেকে...

শর্মি অবশ্য ঠিক ভাগল না, একটু আড়াল থেকে তার মিস্টি বোনটাকে খেয়াল করতে লাগল। সত্যি সে কোথায় যাবে? কে তার জন্য অপেক্ষা করছে?  কোথায় অপেক্ষা করছে?  মনিকা অবশ্য মনে মনে কল্পনায় একটা খসড়া আলাপে নিজেকে প্রস্তুত করতে লাগল। সে কি বলবে লোকটাই বা কি বলবে?

-আপনি তাহলে বেঁচে আছেন?
-মরব কেন?
-পেপারেতো লিখেছে আপনি মারা গেছেন
-আপনার সঙ্গে দেখা না করে মরি কিভাবে?
-আচ্ছা? এখন বলুন তাহলে কেন ডেকেছেন

-আসলে ঐদিন আপনি ডেকেছিলেন আমাকে, আসতে পারিনি। তখন কি বলতে চেয়েছিলেন আপনি সেটা আজ শুনতে এসেছি
-সে কথার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। এখন আপনি আমাকে কি বলবেন বলুন...

তারপর মনিকাদের বাসার দেয়ালের পুরোনো পেন্ডুলাম ঘড়ির কাটায় চারটা বাজল পাঁচটা বাজল... একসময় ছটাও বাজল। কিন্তু মনিকা  কোথাও গেল না। শর্মি  অবাক হয়ে আবিস্কার করল, তার সাজগোজ করা বোনটা তার ঘরে উপুর হয়ে শুয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। মেয়েদের ভিতর এত রহস্য কেন? ভাবে শর্মি।  

ডিসি পার্কের গেটের কাছে একটা বেঞ্চে দু ঘন্টার উপর বসে আছে মারুফ। কেউতো এল না। সন্ধ্যা নেমে আসছে ক্লান্ত পাখির ডানায়।  মারুফের নিজেরও অবসন্ন বোধ হচ্ছে। সব যখন হারিয়ে যায় তখন মানুষের আর কি থাকে? তারপরও যেটা থাকে সেটা ভবিষ্যৎ... মারুফ তার ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর চেষ্টা করে, কিছুতো নেই সেখানে!   

এ সময় পার্কের সামনের খালটা দিয়ে একটা ছোট স্পিডবোট এসে থামল। একটা লোক নেমে এল; ভাব-ভঙ্গিতে মনে হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কেউ। কারণ সঙ্গে আরো দুজন মানুষ তাকে অনুসরন করছে বংশবদের মত। তারা তিনজনই গেট দিয়ে বের হয়ে গেল। 

একটু পরেই তিনজনের একজন এসে সামনে দাড়ালো মারুফের।

-স্যার আপনি এখানে?
-কে?
-স্যার চিনতে পারলেন না? আমি মবিন

মারুফ আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করল সরযুবালা বিদ্যানিকেতনের সেই কিশোর পিয়নই বটে। তবে সেই কিশোর সুলভ গড়ন আর তার নেই, সে এখন পুরোদস্তুর একজন শক্ত সমর্থ পুরুষ।

-স্যার আমি এখন এলাকার সিটি কর্পোরেশনের একজন কাউন্সিলর হইছি।
-বল কি? এত দারুন ব্যাপার। মবিন মারুফের পাশে বসে।
-জি স্যার আপনাদের দোয়া।
-কই আমিতো তোমার জন্য দোয়া করিনি... বলে হাসতে লাগলেন মারুফ।
-করছেন স্যার করছেন...
-আচ্ছা মবিন মনে আছে কোল্ট ২২ রিভলভার ছিল আমার কাছে যেটা পরে তুমি...
-জি স্যার ওটা এখনো আমার কাছেই আছে। স্মৃতি হিসাবে রাখছি স্যার। ঐটা দিয়াইতো শুরু
-ওটা আমার লাগবে, আর একজন মানুষের একটা ঠিকানা...
-স্যার ইন্সপেক্টর সারোয়ার খানের ঠিকানাতো?
-ঠিক তাই... তার সাথে আমার একটা হিসাব নিকাষ আছে, মনে হয় এই বেলা ওটা সেরে ফেলি না কেন?
-স্যার, ঐ হিসাব আমি অনেক আগেই শেষ করছি
-মানে?
-মানে স্যার পরিস্কার। যেই লোক আপনেরে বিনা বিচারে জোড়া খুনের মামলায় ফাঁসাইছে তারে ছারুম আপনি কি কন? চার্জশীট দেওয়ার আগে এই এলাকায় আসছিল একদিন। তখনই ঠুস কইরা দিছি।

 

মারুফ হতভম্ব হয়ে তাকাল মবিনের দিকে। খাড়া নাকের নিচে সরু এক জোড়া গোফ, দু পাশে শক্ত চোয়াল, চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ; মারুফের মনে হল এ ছেলে আরো বহুদূর যাবে...  মানুষের সাফল্য আসলে অপরাধ, দুর্ভাগ্য আর বঞ্চনার একটা রেজিস্টার খাতা ছাড়া আর কিছুই নয়। সেই খাতা এখন সরযুবালা বিদ্যানিকেতনের  এক সময়ের পিয়ন মবিনের হাতে!

 

(চলবে, আর মাত্র দুই পর্ব!)

একা এবং একা - পর্ব এক
একা এবং একা - পর্ব দুই
একা এবং একা - পর্ব তিন
একা এবং একা - পর্ব চার
একা এবং একা - পর্ব পাঁচ
একা এবং একা - পর্ব ছয়
একা এবং একা - পর্ব সাত
একা এবং একা - পর্ব আট
একা এবং একা পর্ব- নয়

একা এবং একা - পর্ব দশ
একা এবং একা - পর্ব এগারো
একা এবং একা - পর্ব বারো
একা এবং একা - পর্ব তের
একা এবং একা - পর্ব চৌদ্দ
একা এবং একা- পর্ব পনের)
একা এবং একা- পর্ব ষোল
একা এবং একা -পর্ব সতের

 
লেখক: আহসান হাবীব
কার্টুনিস্ট/ সম্পাদক
উম্মাদ, স্যাটায়ার কার্টুন পত্রিকা
 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top