সিডনী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ২৯) : সেলিনা হোসেন


প্রকাশিত:
১৮ জানুয়ারী ২০২৩ ০১:৩৫

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৪৮

 


লুৎফা উৎফুল্ল হয়ে বলে, এই যাত্রা আমাদের স্বাধীনতাকে মাথায় নেয়ার যাত্রা। মুজাফফর কোনো কিছু না বলে লুৎফার হাত ধরে দ্রæতপায়ে এগোতে থাকে। লুৎফাও মুজাফফরের সঙ্গে পা মিলিয়ে এগোতে চেষ্টা করে, যেন ওর পিছিয়ে পড়া নিয়ে মুজাফফর মেজাজ খারাপ না করে। দুজনে এগিয়ে যেতে যেতে বোঝে যে যুদ্ধ প্রবল হয়ে উঠেছে। চৌগাছা মুক্তিবাহিনী প্রবল শক্তি নিয়ে ঘায়েল করে ফেলছে পাকিস্তানি সেনাদের। দুজনে এমন চিন্তায় উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে। লুৎফা বলে, চল দৌড়াই।
- না, দৌড়াব না। আমি চারপাশ দেখতে দেখতে যাব। আমাদের মুক্তিবাহিনীর শক্তি আমার বুকের ভেতর ভরে রাখব, যেন নিজেও এই শক্তিকে কাজে লাগাতে পারি।
- তাহলে তুমি মুক্তিবাহিনীতে যোগ দাও। তুমিও ওদের মতো যুদ্ধ কর।
- হ্যাঁ, করব। আমরা বসে থাকবনা। তুমি যত ধরণের সহযোগিতা করা দরকার তার সব করবে।
- আমি সবকিছুর জন্য তৈরি আছি। যত কাজ করা দরকার তার সব করব। এক মুহূর্ত বসে থাকবনা। আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্নকে আমরা ভরিয়ে দেব।
মুজাফফর আর কথা বলেনা। দুজনে দূর থেকে দেখতে পায় পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটছে। ওরা দ্রæতপায়ে এগিয়ে যায়। মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধারা বিপুল বিক্রমে আক্রমণ চালাচ্ছে। তাদের দিকে তাকিয়ে দুজনে প্রবলভাবে অনুপ্রাণিত হয়। লুৎফা চিৎকার করে বলে, বীর বাঙালি বুকে স্বাধীনতার স্বপ্ন ধরে রেখেছে। স্বাধীনতার যুদ্ধ না হলে আমি আমার চারপাশের ছেলেদের এমন বীর সন্তান হিসেবে দেখতে পেতাম না। আল্লাহ আমার ইচ্ছা পূরণ করেছেন।
- চলো দেখি ওদের কারো গায়ে গোলাগুলি লেগেছে কিনা। সেবা করে সুস্থ করে তুলব।
- চলো দেখি, কতটা পারা সম্ভব হবে।
দুজনে মুক্তিবাহিনীর দিকে এগোতে থাকলে হঠাৎ করে আকস্মিকভাবে ওদের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যায় রহমত।
- হায় আল্লাহ, হায় আল্লাহ করতে করতে দুজনে বসে পড়ে রহমতের পাশে। বুকে গুলি লেগেছে। ঝরঝরিয়ে রক্ত পড়ছে। পুরনো শাড়ি ছিঁড়ে ছোট ছোট টুকরো করে আনায় সেগুলো দিয়ে রক্ত মুছে দিচ্ছে। মুজফফর নিজের পকেট থেকে ডেটলের ছোট্ট শিশি বের করে ন্যাকড়া ডেটল দিয়ে ভিজিয়ে দেয়। লুৎফা খুব যতœ করে রক্তের ধারা মুছতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ পর রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়। দুজনেই দেখতে পায় চারদিক থেকে লোকজন এগিয়ে আসছে। সবাই মিলে বলে তাঁকে আমরা দূরে সরিয়ে নিয়ে যাব। নিরাপদ জায়গায় রাখা উচিত।
- হ্যাঁ, তা ঠিক। রক্ত মুছে শেষ করেছি। এখন আর রক্ত পড়ছেনা। কিন্তু রহমত ভাইয়ের জ্ঞান ফিরেনি। চলেন ওনাকে কাঁধে তুলে সবাই মিলে নিয়ে যাই। ডাক্তার অঞ্জন ভাই কোথায় আছে দেখব। এখন একজন ডাক্তার দরকার, খুব জরুরি।
মুজফফর বলে, আমি অঞ্জন ভাইকে খুঁজে দেখতে যাচ্ছি। দেখি কোথাও পাই কিনা। দ্রæত হেঁটে এগিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধা যারা এসে দাঁড়িয়েছিল তারা সবাই মিলে রহমতকে ঘাড়ে তুলে দূরে নিয়ে যায়। লুৎফা ওদের সঙ্গে থাকে। হেঁটে যেতে মনে হয় এ এক অন্যরকম হাঁটা। স্বাধীনতার স্বপ্ন নিয়ে এমন হাঁটা এতদম অন্যরকম। ওর অনেক শিক্ষা হচ্ছে। লুৎফা এই হাঁটার সঙ্গে যোগসূত্রে জড়িয়ে নিজেকে উৎফুল্ল করে। যুদ্ধের মাত্রায় নিজের অস্তিত্ত¡ ঢুকিয়ে রাখে। নিজেকে বিড়বিড়িয়ে বলে, আমিও একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি কেন নিজেকে যুদ্ধ থেকে আলাদা করে রাখব। যুদ্ধের সময়ে যে কোন কাজ প্রয়োজন হবে আমি তার জন্য নিজেকে যুক্ত রাখব। কখনো অন্যদিকে চোখ ফেরাব না। যুক্ত রাখাই হবে আমার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত। আমরা যুদ্ধের জন্য বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি। এখন যুদ্ধ আমার সামনে নতুন বাড়ি। নতুন বাড়ির সবকিছু আমি বুঝে নেব। ও চারদিকে তাকিয়ে মুজফফরকে খোঁজে। একসময় দেখতে পায় মুজফফর অঞ্জনকে সঙ্গে নিয়ে হেঁটে আসছে। লুৎফা উৎফুল্ল হয়ে সবাইকে বলে, ডাক্তার অঞ্জন দাদাকে পাওয়া গেছে। আমার স্বামী নিয়ে আসছে তাঁকে। যাঁরা রহমতকে ঘাড়ে নিয়ে এগুচ্ছিলো তাঁরা দাঁড়িয়ে পড়ে। বলে, আমরা এখানে অপেক্ষা করব ডাক্তারের জন্য। সামনে স্কুলঘর। চলো সবাই সেখানকার বারান্দায় বসব। স্কুলতো বন্ধ। রহমত অসুস্থ পরিস্থিতিতেও নিশ্চিত হয়ে ভাবে, ডাক্তারের চিকিৎসায় সুস্থ হলে আবার যুদ্ধে নামবে। একবার যুদ্ধ করেছে, এটা শেষ কথা হতে পারে না। মাথার উপর স্বাধনীনতা না আসা পর্যন্ত বার বার যুদ্ধে নামতে হবে। একবার যুদ্ধ করেছে এটা শেষ কথা নয়।
সবাই যখন রহমতকে স্কুলের বারান্দায় নামায় তখন ও উৎফুল্ল হয়ে উঠে বসে। মাটিতে পড়ে থাকতে চায় না। শারীরিক ক্ষত উপেক্ষা করে উঠে বসে। অনুভব করে শরীরে প্রচন্ড কষ্ট। কিন্তু উপেক্ষা করার সাহস বুকের ভেতর ধারণ করে ফেলে। উঠে দাঁড়ানোর শারীরিক শক্তি ছিলনা। গুলিবিদ্ধ শরীর নিয়ে এতকিছু ভাবা যাবে কিন্তু কাজে লাগবেনা। অঞ্জন এসে ওকে গভীর মনোযোগে শুশ্রƒুষা করে। কিন্তু গুলিবিদ্ধ শরীর এত দ্রæত ¯িœগ্ধ হওয়ার কথা না। রহমত স্বাধীনতার স্বপ্ন বুকে রেখে শরীরের কষ্ট উপেক্ষা করে, কিন্তু ক্ষত-বিক্ষত শরীর তাড়াতাড়ি স্বস্তি দেয়ার সুযোগ পায়না। প্রবল যন্ত্রণা আস্থির করে রাখে ওকে। কিন্তু ও মুখে তা প্রকাশ করে না। স্বাধীনতার স্বপ্ন নিয়ে নিঃসাড় পড়ে থাকে। অঞ্জন ডাক্তার ওকে নানাভাবে পরীক্ষা করে ওষুধ দেয়। নিজের হাতে ওষুধ খাওয়ায়। হাসতে হাসতে বলে, তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন।
- হ্যাঁ, আমিও তাই মনে করি। যুদ্ধ সামনে রেখে পড়ে থাকবনা। সুস্থ হয়ে আবার ছুটব অস্ত্র নিয়ে।
ওর কথা শুনে আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা সবাই হাততালি দেয়। রহমত দু’হাত উপরে তুলে বলে, স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখি। আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীনতা আনব। বেশি সময় নষ্ট করবনা। স্বাধীন দেশ মানে স্বপ্নের দেশ।
ওর কথা শুনে সবাই আবার হাততালি দেয়। ও নিজেও উৎফুল্ল হয়ে হাততালি দিতে থাকে। হাততালির শব্দ চারদিকে ছড়িয়ে যায়। দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন নিজের মধ্যে হাততালির শব্দ ধারণ করে রাখে। ভাবে এই শব্দ বুকে নিয়ে স্বাধীন দেশে ঢুকবে। দেশের সীমান্ত পার হয়ে তালি বাজাতে বাজাতে পথে চলবে। প্রবল উচ্ছাস আলোড়িত করে সবাইকে। অনেকক্ষণ হাততালি বাজিয়ে সবাই থেকে যায় একসময়। বুকের ভেতর গভীর আনন্দ ধরে রাখে রহমত। সবাই ওর কথা শুনে মেতে উঠেছে। এই মেতে ওঠা আছে বলেইতো স্বাধীনতার জন্য প্রাণ নিয়ে টানাটানি নেই। সবাই প্রাণ উৎসর্গ করার জন্য এক হয়ে আছে। সবাই যুদ্ধের পক্ষে নিজেকে তৈরি করে রাখে। দূরে কোথাও সরে যায়না। অঞ্জন সবাইকে শান্ত করার জন্য বলে, রহমতকে বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে। ওকে এখানে ফেলে রেখে আমাদের চলে যাওয়া উচিত না।
রহমত নিজে বলে, আমার বাড়িতো অনেক দূরে। আমি হেঁটে যেতে পারব না। আমাকে আশেপাশের কোনো বাড়িতে রাখা যাবে কিনা?
মুজাফফর বলে, খুব কাছেতো কোনো বাড়িঘর নাই। চারদিকের বাড়িঘর বেশ দূরে। আমি আপনাকে দেখাশোনা করব। তারপর কোথায় নিয়ে রাখা যায় দেখব।
- আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমাদেরকে গাছতলায় থাকতে হবে।
- হ্যাঁ, এক-দুই রাত গাছতলায় থাকব। তারপর ব্যবস্থা করব।
- খাওয়াদাওয়ার কি হবে?
লুৎফা জোরে জোরে বলে, আমি কোনো ঘরে গিয়ে ব্যবস্থা করব। ভাত-তরকারী রেঁধে আনব।
মুজফফর হাসতে হাসতে বলে, তুমি অনেক সাহস দেখালে বউ।
- এটা কোনো সাহস না। এটা স্বাধীনতার স্বপ্নের কথা।
- ওরে বাব্বা, তোমরা কতভাবে স্বাধীনতা দেখ!
- দেখবইতো। দেখবনা কেন? রহমত ভাইতো স্বাধীনতার জন্য -
- হয়েছে থাক, আর কথা বলতে হবেনা। স্বাধীনতার জন্য যা কিছু করা দরকার আমরা তার সবকিছু করব।
- ঠিক বলেছ, লুৎফা স্বামীর কথায় সাড়া দেয়। সঙ্গে সঙ্গে বলে, কোনো ঘরে গিয়ে ভাতের ব্যবস্থা করে আনি।
মুজফফর কিছু বলার আগেই হাঁটতে শুরু করে লুৎফা। মুজফফর ওকে ডেকে থামায় না। ভাবে, যেতে চাচ্ছে, যাক। দেখা যাক কি হয়। কেউ ওকে নিজেদের ঘরে ভাত রান্নার সুযোগ দেবে কিনা কে জানে! ওকে চাল, সবজিও দিতে হবে। ওর কাছে তো রান্নার কিছুই নাই। কেন ও এমন খালি হাতের মানুষের ঘরে ঘরে যাবে! মুজফফর দেখতে পায় ও একটি ঘরে ঢুকে গেছে। ও বিরক্ত হয়ে নিজেকে দমিয়ে রাখে। কিছু করার উপায় নেই এখন। লুৎফা একটু পরে বেরিয়ে আসে। হাতে ছোট একটি মাটির বাটি। দ্রæতপায়ে ওর কাছে এসে বলে, তোর জন্য একটু পান্তা ভাত এনেছি। খেয়ে ফেল লবন আর কাঁচা মটির দিয়ে। নাও।
লুৎফা বাটিটা এগিয়ে দেয় মুজফফরকে। মুজফফর হাতে নিয়ে বাটিটা সামনে রেখে দেয়। বিকেল বেলা পান্তা ভাত খাওয়ার ইচ্ছা হয়না। লুৎফার দিকে তাকিয়ে বলে, আমার খাওয়ার ইচ্ছা নাই। তুমি খাও।
- আমি তো তোমার জন্য এনেছি।
- আমিতো খেতে চাইনা।
- ঠিক আছে তাহলে আমি খাব দাও আমাকে।
মুজফফর বাটিটা ওর দিকে এগিয়ে দেয়। লুৎফা বাটি নিয়ে কাঁচামটির লবন দিয়ে পান্তা ভাত খেতে শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে ভাবে, রাতে আর কিছু খাবেনা। রাতের খাবার কোথায় পাবে সেটাও একটি বড় বিষয়। ওকে খেতে দেখে মুজফফর একনজরে তাকিয়ে থাকে। দৃশ্যটি মুগ্ধ করে তাকে।
- তোমাকে দু’এক লোকমা দেব?
- না, তুমি খাও।
- তাহলে এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?
- আমার সামনে এটা একটি সুন্দর দৃশ্য।
লুৎফা মুখের ভাত গিয়ে ফেলে খিলখিলিয়ে হাসে। হাসতে হাসতে বলে, তুমি আমাকে অনেক ভালোবাস। সেজন্য আমার ভাত খাওয়া তোমার কাছে সুন্দর দৃশ্য।
- তোমার সব ধরণের অবস্থান আমার কাছে সুন্দর দৃশ্য। দেখে মন ভরে যায়। তোমার কি আমাকে দেখে এমন লাগে?
লুৎফা চুক করে থাকে। ওর কাছে কখনো এমন মনে হয়নি। ওর সামনে মুজফফর একজন সাধারণ মানুষ। তাকে দেখার মধ্যে কোনো অনুভব নেই। না দেখা হলে মন খারাপ হয়। ভাবে, মানুষটি কোথায় হারাল। কোথায় খুঁজে পাবে প্রেমের মানুষকে? এমন ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে বুকের ভেতর শূণ্যতা ছেয়ে যায়। ও আর মুজফফরের দিকে তাকায়না। থালার ওপর মাথা নিচু করে ভাত নাড়াচাড়া করে। তারপর এক লোকমা মুখে দেয়। চোখ তুললে দেখতে পায় মুজফফর ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখে চোখ রেখে লুৎফা বলে, আমরা কতদিন শরণার্থী থাকব?
- মনে হয় আর বেশি দিন না। আমাদের স্বাধীনতার সময় হয়ে এসেছে। আমাদের মুক্তিবাহিনী বীরদর্পে যুদ্ধ করছে।
- হ্যাঁ, এই যুদ্ধের খবর আমিও পাচ্ছি। ওরা পাকিস্তানি সেনােেদর তাড়িয়ে চাড়বে। পাকিস্তানি সেনারা ওদের সঙ্গে পারবে না।
- ঠিক বলেছো। আমিও তাই দেখছি। আমাদের শরণার্থী জীবন ওরা মর্যাদায় ভরে তুলবে। স্বাধীনতা মাথায় নিয়ে আমরা দেশে ফিরব।
লুৎফা হাততালি দিয়ে হাসতে হাসতে বলে, কি সুন্দর করে বললে। তোমার বলা শুনে আমার মন ভরে গেল। শরণার্থীর জীবন বাঁচিয়ে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণরেখায় স্বপ্নের বাতিঘর জ¦ালাব।
- বাহ, কত সুন্দর করে কথা বললে।
- স্বাধীন দেশে ঢোকার সময় আমরা সবাই মিলে গান গাইব - আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি, চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি -
সবাই হাসতে হাসতে বলে, আপনি কিন্তু খুব সুন্দর করে কথা বলেন।
লুৎফা মৃদু হেসে বলে, সব কথাইতো আমাদের সবার জানা।
ওর কথার উত্তর কেউ দেয় না। সবার মাঝে হাসাহাসির রেশ চলতে থাকে। লুৎফা চুপ করে থাকে। ওর হাসি পায় না। একসময় সবাই এদিক-ওদিক চলে যায়। লুৎফার বুকের ভেতর শরণার্থী জীবন আটকে থাকে। এই জীবনযাপন বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতার সঞ্চয়। এই বেঁচে থাকা প্রতিদিনের দিনযাপন না। স্বাধীনতার স্বপ্ন নিয়ে উত্তাল সময় কাটানো এই বেঁচে থাকা। লুৎফার মাথায় ঢং ঢং শব্দ হয়। ওর মনে হয় কোথাও ঘন্টাধ্বনি বাজছে। ও শুনতে পাচ্ছে। ও বুকের ভেতর শব্দ ধারণ করে চুপচাপ বসে থাকে।
মুক্তিবাহিনী বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধ করছে। লুৎফা তীব্র চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ ধারণ করে নিজেকে ওদের সহযোগী মনে করে। পরক্ষণে নিজেকে ধমকায়। এভাবে বসে থেকে কি সহযোগী হওয়া যায়। প্রবল ধমকে নিজের ভেতরে কাঁপুনি ওঠে। নিজেকে শাসন করে নিঃশব্দ বসে থাকে। মনে করে, এভাবে ভাবা উচিত না। এমন করে ভেবে নিজেকে ছোট করা হয়। সরাসরি বড় কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে। শুধু মনের ভাবনা দিয়ে বড় কাজ হয় না। প্রবলভাবে মন খারাপ করে নিজের ভেতর গুটিয়ে যায় লুৎফা। শুনতে পায় চারদিক থেকে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। যুদ্ধ কোথায় হচ্ছে জানে না। শুধু গোলাগুলির শব্দ ওকে যুদ্ধের ডামাডোলে উদ্বুদ্ধ করে। ও শব্দ ধরে হাঁটতে শুরু করে সেদিকে। কিন্তু বেশিদূর যাওয়ার সাহস পয়না। আবার ফিরে আসে। মুজাফফরের কাছে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। প্রবল গোলাগুলির শব্দ সময়কে ভরে দেয়। লুৎফা মুহূর্তে দাঁড়ায়। ভাবে, গোলাগুলির শব্দ বুকে নিয়ে ও দেশে ঢুকবে। স্বাধীন হলে দেশটা নতুন দেশ হয়ে যাবে।

 

চলবে

 

শরণার্থীর সুবর্ণরেখা (পর্ব- ১)
শরণার্থীর সুবর্ণরেখা (পর্ব- ২)
শরণার্থীর সুবর্ণরেখা (পর্ব- ৩)
শরণার্থীর সুবর্ণরেখা (পর্ব- ৪)
শরণার্থীর সুবর্ণরেখা (পর্ব- ৫)
শরণার্থীর সুবর্ণরেখা (পর্ব- ৬)
শরণার্থীর সুবর্ণরেখা (পর্ব- ৭)
শরণার্থীর সুবর্ণরেখা (পর্ব- ৮)
শরণার্থীর সুবর্ণরেখা (পর্ব- ৯)
শরণার্থীর সুবর্ণরেখা (পর্ব- ১০)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ১১)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ১২)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ১৩)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ১৪)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ১৫)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ১৬)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ১৭)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ১৮)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ১৯)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ২০)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ২১)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ২২)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ২৩)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ২৪)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ২৫)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ২৬)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ২৭)

শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ২৮)



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top