সিডনী সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১


অর্থনীতি থমকে যাওয়া রোধে বিকল্প লকডাউন : আব্দুর রাজ্জাক বাবুল


প্রকাশিত:
৭ মে ২০২০ ২০:৫৮

আপডেট:
২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৪৭

 

করোনাভাইরাস আতঙ্কে আজ সমগ্র বিশ্বের প্রায় সবকটি দেশ লকডাউন করেছে নিজেদের। তবে ইউরোপের দেশ তুরস্ক হাঁটছে একটু ভিন্নপথে। তারা পুরো লকডাউনের আওতায় এনেছে ২০ বছরের কম এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের।২০- ৬৫ বছর বয়সীদের নিয়ম মেনে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।পদ্ধতিটির পজিটিভ রেজাল্টও পাচ্ছে দেশটি। অনেক বিশেষজ্ঞও এটিকে সমর্থন করেছেন।
বাস্তবতার নিরিখে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, পুরোপুরি লকডাউন অর্থনীতি থমকে দেয়ার হুমকি সৃষ্টি করেছে। অনেক বিশেষজ্ঞ ও পরিস্থিতি বিশ্লেষকগণ এ কারণে অদূরভবিষ্যতে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
এই করোনা দুর্যোগ যেমন আমাদের জন্য ভয়াবহ আতঙ্কের কারণ, তেমনি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ভিক্ষও আমাদের মারাত্মক অস্তিত্ব সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।বিশেষকরে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটা হতে পারে আরও ভয়াবহ। অতএব আমাদের এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে সময় থাকতেই।
এজন্য আমাদের ভাবতে হবে করোনাভাইরাস বিস্তৃতি রোধের পাশাপাশি অর্থনীতির চাকা সচল রাখার দিকটিও।
★বাংলাদেশের অর্থনীতির একটা বৃহৎ অংশ হচ্ছে গার্মেন্ট সেক্টর।আমরা যদি এই বৃহৎ সেক্টরটিকে বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে কিছুটা হলেও সচল রাখতে পারি, তাহলে হয়তো আমরা করোনা উদ্ভূত মারাত্মক অর্থনৈতিক ধ্বসের হাত হতে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবো। এই সেক্টরের একজন সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী (ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার) হিসেবে এই সেক্টরের পরিবেশ সম্বন্ধে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং গবেষণার আলোকে আমার কিছু পরামর্শ উপস্থাপিত হলো যা দেশের বৃহৎ এই সেক্টরটি কিছুটা হলেও সচল রাখতে সহায়ক হতে পারে।
(১) একটি ফ্যাক্টরির মোট ওয়ার্কারদের দুইভাগ করে অর্ধেক একদিন এবং পরের দিন বাকি অর্ধেক, এভাবে ডিউটি করাতে হবে।এতে নির্ধারিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ সম্পাদন সম্ভব হবে।
(২) প্রত্যেকেই পিপিই পরিহিত থাকবে।
(৩) প্রবেশ পথে অটো স্প্রে মেশিন থাকবে। লোকজন প্রবেশ এবং বের হওয়ার সময় ঐ মেশিন থেকে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হবে।
(৪) ভেতরে পর্যাপ্ত সাবান-পানির ব্যবস্থা থাকবে এবং প্রত্যেকে কিছু খাওয়ার আগে যাতে ভালভাবে হাত ধোয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
(৫) সবাইকে নিয়মিত হ্যান্ডস্যানিটাইজার ইউজ করাতে হবে।
(৬) ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের আপদকালীন সময়ে ছুটিতে রাখতে হবে।
(৭) আপদকালীন সময়ে দেশের সব ফ্যাক্টরি একসাথে খোলা বা বন্ধ ঘোষণা করা যাবেনা। অল্পকিছু সংখ্যক করে পর্যায়ক্রমে দিনে দিনে খোলা বা বন্ধ ঘোষণা করতে হবে।
(৮ )আপদকালীন সময়ে কোনো ফ্যাক্টরি খোলা বা বন্ধের সময় সংশ্লিষ্ট মালিকপক্ষের যানবাহন  ব্যবস্থাপনায় শ্রমিকদের কমপক্ষে নিজ জেলাশহর পর্যন্ত যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে।
(৯) এই বিপর্যয়ের পরেও বিপর্যয় আরও আসতে পারে।তাই সচেষ্ট থাকতে বিপর্যয় উত্তরণের পূর্বপ্রস্তুতির জন্য।এরই অংশ হিসেবে ব্যবস্থা করতে হবে ফ্যাক্টরির এরিয়ায় কর্মী আবাসনের।এটা হতে পারে কর্মী নিয়ন্ত্রণ, প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিপর্যয়ে উপকারী পন্থা।

এভাবে বিপর্যয় উত্তরণের কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।এই পদ্ধতি অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহেও প্রয়োগ করে অর্থনীতিকে সম্পূর্ণ থমকে যাওয়ার হাত হতে রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে।
★আর আমাদের সর্বোচ্চ প্রয়াস চালাতে হবে কৃষির ব্যাপারেও।সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং অন্যান্য সতর্কতা অবলম্বন করে কৃষি উৎপাদন সর্বোচ্চ রাখার সর্বাধিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
★আমাদের সর্বাধিক সতর্ক থাকতে হবে বাজারের ব্যাপারেও। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, বাজারে অধিকতর লোকসমাগম ভাইরাস বিস্তারের শঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এজন্য বাজার বিকেন্দ্রীকরণ পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। একজায়গায় অধিক লোকসমাগম হয় এমন বড় বাজারগুলি বন্ধ করে দিতে হবে। পরিবর্তে রাস্তাঘাটের ধারে নিরাপদ দূরত্বে ছোট ছোট দোকান বসবে এবং ভ্রাম্যমাণ দোকান থাকবে। এক দোকানে দুইতিন জনের বেশি গ্যাদারিং নিষিদ্ধ করতে হবে। এভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ভাইরাস বিস্তাররোধ সম্ভব।

আব্দুর রাজ্জাক বাবুল
ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার( গার্মেন্ট)




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top