দুইটি কিপটে গল্প : নাসীমুল বারী


প্রকাশিত:
১১ মে ২০২০ ২১:০৬

আপডেট:
৬ জুলাই ২০২০ ২১:৩৫

 

[শব্দের কৃপণতায় ছোট্ট করে মৌলিক গল্পরসে লেখা গল্প। তাই নাম দিয়েছি ‘কিপটে গল্প’।]

১.

বিষের শিশি
আমি এখন মরব।
মরতে হবেই আমাকে। লাভ কী বেঁচে থেকে ওকে যখন পেলামই না।
বিষের শিশিটা হাতের কাছে। নাড়াচাড়া করছি। এখনই খাব? না, আরেকটু দেখে নেই পৃথিবীকে। আজ তো পূর্ণিমা- শেষ জ্যোৎস্নাটাও দেখে নেই একবার!
হঠাৎ পেছন থেকে আমার হাতটি ধরে ও। তারপর ভীতকণ্ঠে বলে, আরে করছ কী? তোমার না ডায়াবেটিক। মধুর শিশিটা হাতে কেন?
-এটা বিষ না?
চমকে জিজ্ঞেস করি। তারপর শান্তকণ্ঠে বলি, এমন একটা শিশিতেই তো বিষ এনেছিলাম।
কথাটা শুনে বিষ্ময় নিয়ে ও জিজ্ঞেস করে, বিষ! বিষ দিয়ে কী করবে!
-মরব। আমি মরব।
-কেন?
-তোমাকে চাইনি; ওকে পাইনি।
-'কাপুরুষ'-এর স্ত্রীলিঙ্গ হয় না, জানো তো? তোমাদের মতো অথর্বদের জন্যই ওই শব্দটার জন্ম। বুঝলে?

২.
শামুকের খোলস

শিমু পত্রিকাটা খুলে মাত্র। শেষ পৃষ্ঠায় একটা ছবি দেখে থমকে যায়। অমনি ভীতকণ্ঠে রিয়াজকে ডাকে- দেখো দেখো ছবিটা?
পাঁচ-ছয় বছরের রক্তাক্ত শিশুটি জঙ্গলে পড়ে আছে। অদূরে মৃত রোহিঙ্গা মা যেন হাত বাড়িয়ে বলছে, আমরাও তো মানুষ। তোমাদের মতোই মানুষ। আমাদের রক্ত দিয়ে এ বনে আলপনা এঁকো না। আজ আমাদের রক্তে মানবাধিকার রচনা করছো তোমরা। শান্তির নোবেল পুরস্কার পাচ্ছো। একটু থামো।
আজ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নেই এ সভ্য পৃথিবীতে। নেই মানবাধিকারও। খেয়াল খুশি মতো হত্যা করাই যেন আজকের সভ্যতায় মানবাধিকার! শামুকের খোলসের মতো বিশ্বমানবাধিকারের শক্ত আবরণে রোহিঙ্গারা ভেতরের নরোম শিকার মাত্র।
শিমু পত্রিকার ছবিটার দিকে তাকিয়েই থাকে। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে পানি। রিয়াজ কাছে এসে বলে, এ-ই...। এই শিমু! কাঁদছ?
-হাঁ! কাঁদছি, আরও কাঁদবো! ও ছবি তো আমার আর আমার সন্তানেরই!

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top