সিডনী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


করোনার ঝুঁকি ও  সাংবাদিকতা : ওসমান গনি


প্রকাশিত:
২৮ মে ২০২০ ২৩:৪৭

আপডেট:
২৯ মে ২০২০ ০১:১৭

 

বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব জুড়ে একটি গোষ্ঠী সকল শ্রেণী-পেশার  মানুষের সুখ ও দুঃখের কথা অবলীলায় প্রকাশ করে যাচ্ছে। সে গোষ্ঠীর লোকজন হলো গণমাধ্যম কর্মী। যারা সব সময় পরের উপকারের জন্য নিজেদের কে বিলিয়ে দেন। ফুল যেমন স্বগৌরবে ফুটে নিজের স্নিগ্ধ সুবাস মানুষের জন্য বিলিয়ে দিনের শেষাংশে নিজে শুকিয়ে যায়, সংবাদকর্মীরাও ঠিক তেমনি একটি। তারা দেশ বিদেশ ও মানুষের কথা বলতে ও লিখতে গিয়ে আস্তে আস্ত নিভু নিভু হয়ে একদিন নিভে যায় তাদের প্রাণ প্রদীপ। তারা যে মহৎ কর্ম করে তা যদি একটু কঠিনভাবে হিসাব করা যায়, তাহলো দেখা যাবে তাদের কর্মের মূল্য শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের কোন দেশই দিতে পারে নাই বা দেয়নি। হয়ত আমাদের দেশে অনেকেই সাংবাদিকদের দেখলে সাংঘাতিক বলে তিরস্কার করে থাকে, অনেকে আবার হলুদ সাংবাদিক বলে, আবার অনেক লোক সাংবাদিকদের দালাল বলে থাকে। যার মনে যা চায় তাই বলে। এসমস্ত লোকদের কথাবার্তা শুনলেই বোঝা যায় এরা সমাজের কোন স্তরের লোক। আমি বলতে চাই, কোন সভ্য মায়ের সভ্য সন্তান ও সুশিক্ষিত মানুষ কখন ও সংবাদকর্মীদের তিরস্কার করে না। তিরস্কার করে সমাজ ও দেশের ছোটবড় কতিপয় কীট। তারা চেহারারুপী মানুষ আসলে তারা মানুষ নয়, বলতে চাই এরা অন্যকিছু। এ পৃথিবীতে যত শ্রেনিপেশার মানুষ আছে সবারই কর্ম করতে গেলে ছোটবড় দোষ ও ভূলভ্রান্তি হতে পারে। এ জন্য কাউকে তিরস্কার করা বা অপমান করা মোটেও উচিত নয়। গণমাধ্যম তো হলো একটা দর্পণ।  যেটাকে আমরা আয়না বলে থাকি। যার মাধ্যমে কোন দেশের বা জাতির সত্য জিনিস টা সত্য হয়ে ফুটে উঠে দেশের জনগন ও বিশ্ববাসীর কাছে। 

যেমন টি ধরা যাক, বর্তমানে বাংলাদেশ সহ সারাবিশ্বে চলমান মহামারি আতংক করোনাভাইরাস। যার উৎপত্তি প্রথম চীনদেশে হয়েছে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে বিশ্বজয় করে বাংলাদেশে হাজির হয়েছে। আমরা এখানেও যদি একটু চিন্তা করি তাহলে দেখতে পাব, চীনদেশে যে করোনাভাইরাস টি আক্রমন করছে সে কথাটা কে আমাদের কে বলল? বা আমরা কি করে জানলাম? এটাও বাদ দিলাম, ধরি আমাদের বাংলাদেশের কথা, যেটা দূরদেশ নয়, যেখানে আমার ও আপনার বসবাস। দেশে প্রতিদিন করোনাভাইরাসের আপডেট নিউজ প্রকাশ হয়ে থাকে। বর্তমানে শুধু বাংলাদেশ নয় সারাবিশ্ব স্ব স্ব অবস্থান থেকে অধিক আগ্রহ  বসে থাকে করোনাভাইরাসের আপডেট নিউজ জানার জন্য। এখন আমি বলতে চাই, বাংলাদেশ সহ সারাবিশ্বের করোনাভাইরাসের যে আপডেট নিউজ জানলাম সেটা আমাদেরকে  কে জানাল?  সে কথাটা এক বাক্যে সকল শ্রেনিপেশার মানুষই বলবে টিভির নিউজ, খবরের কাগজ, অনলাইন পত্রিকা, যে য়েভাবেই বলুক না কেন দেখা যাবে কথা একটাই সেটা হলো মিডিয়া,গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মী। যাদের কে সাংবাদিক বলা হয়ে থাকে। এ থেকেও কি আমাদের প্রতীয়মান হয় না যে, সংবাদমাধ্যম দেশের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়। তাদের মূল্যায়ন টা কেমন হওয়া উচিচ।

আমাদের দেশে সংবাদমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের তেমন কোন মূল্যায়ন নেই। কাগজে কলমে বলা হয়ে থাকে, আমাদের দেশে গণমাধ্যম মুক্ত। আসলে কি গণমাধ্যম মুক্ত। মনে হয় না, মুক্ত হলে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল হকের এমন হতো না। যাক সেদিক যাচ্ছি না। 

বলতে চাচ্ছি, বর্তমান সময়ে দেশের করোনাভাইরাসের দুর্যোগ মুহুর্তে সরকারের লকডাউন ও দেশের সচেনতন মানুষ অনেকেই ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় অনেকেই বাসাবাড়িতে নিরাপদে চলে গেছেন নিজের জান ও প্রাণ রক্ষার্থে। এদের মধ্যে অনেকেই সরকারী চাকরিজীবি। দেশের দুর্যোগ মুহুর্তে দেশের জন্য কাজ করা তাদেরও একটা দায়িত্ব ও কর্তব্য। যেহেতু তাদের বেতন ভাতার টাকায় দেশের সকল শ্রেনিপেশার মানুষের ঘাম জড়ানো অর্থ রয়েছে। সে হিসাবে তাদের দায়িত্ব একটু বেশীই হওয়ার কথা।

কিন্তু তারা নাই। কিন্তু দেশের ও জাতির সুখেদুঃখে সবসময় পাশে থেকে কাজ করছেন গণমাধ্যম কর্মীরা। 

করোনাভাইরাসের দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। কিন্তু প্রতিদিনই সংবাদকর্মীদের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন তিন সাংবাদিক। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কমপক্ষে ১০০ সংবাদকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কয়েকটি পত্রিকা অফিসও লকডাউন করা হয়েছে। দেশ ও দেশেের মানুষের স্বার্থে কাজ করার জন্য নিজেদের জীবনবাজি রেখে কাজ করে তারা কি পান বা পেলেন? তাদের কে কতটুকু মর্যাদা দেয়া হলো।

এদিকে সাংবাদিকদের কয়েকটি সংগঠন তাদের সদস্যদের করোনা টেস্টের ব্যবস্থা করেছে। 

সম্প্রতি সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্রের (বিজেসি) উদ্যোগে গণমাধ্যমকর্মীদের করোনার নমুনা সংগ্রহের বুথ চালু করা হয়েছে। কিন্তু সার্বিকভাবে আক্রান্ত সাংবাদিকদের চিকিৎসার বিশেষ কোনো ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত করা হয়নি বলে সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়। এছাড়া অন্যান্য পেশার যারা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন, তারা ঝুঁকিভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেলেও সাংবাদিকরা এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো সুবিধা পাননি।

 

ওসমান গনি
সাংবাদিক ও কলামিস্ট



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top