সিডনী মঙ্গলবার, ১৪ই মে ২০২৪, ৩১শে বৈশাখ ১৪৩১


ঘুড়ি সব উড়তে চায় : রাম কৃষ্ণ সাহা


প্রকাশিত:
৪ জুন ২০২০ ২২:২৪

আপডেট:
৩০ জুন ২০২০ ২১:০৫

ফাইল ছবি : ইনসেটে লেখক

 

পুরাণ ঢাকার আকাশে রোজ বিকালে রঙ বেরঙের ঘুড়ি ওড়ে। এ অঞ্চলে অনেক উৎসবেও ঘুড়ি ওড়ানোর রীতি প্রচলিত আছে। মন্টু-শেফালীর বর্তমান নিবাস পুরান ঢাকার বংশালে। প্রায় বিকালেই তারা ছাঁদে বসে ঘুড়ি ওড়ানো দেখতো। মন্টু-শেফালী ঘুড়ি ওড়াতে জানে না তবে ইচ্ছা ছিলো শেখার। তখন নানাবিধ ব্যস্ততায় হয়ে ওঠে নি। আড়াই মাস হলো তারা ঘরবন্দি, তেমন ব্যস্ততাও নেই। তাই দুজনেই সিদ্ধান্ত নেয়, এই সময়ের মধ্যে যেমন করে হোক ঘুড়ি ওড়ানো শিখে নেবে। শেফালীর ঘুড়ি বানানোর ব্যাসিক সায়েন্সটা জানা ছিল। মন্টু বাজারে গিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করে কাঁচামাল সংগ্রহ করে আনে। শেফালীও অঢেল শ্রম দিয়ে ও ইউটিউব ঘেঁটেঘুঁটে দুইটা ঘুড়ি যেমন তেমন করে বানায় ফেলে। মন্টু-শেফালী সবুজ আর হলুদ রঙের দুইটা ঘুড়ি নিয়ে ছুটতে ছুটতে ছাঁদে যায়।

বিকেলের মিষ্টি রোদে, কড়া নীলভ আকাশে এক ঝাঁক রঙিন ঘুড়ি উড়ছে। মন্টু-শেফালীর চোখ জুড়িয়ে যায়। মন্টুই প্রথম আগ্রহী হয়ে তার হাতের সবুজ ঘুড়িটা আকাশের দিয়ে উড়িয়ে দেয়। নানাবিধ শারীরিক কসরত ও ইউটিউব টিউটোরিয়াল লব্ধ টেকনিক ফলো করে ঘুড়িটা নিয়ে যাচ্ছেতাই করা শুরু করলো। প্রথম চেষ্টাতেই ঘুড়ি উড়িয়ে ফেলবে, শেফালীও বেশ ইম্প্রেসড হবে, এগুলোই মন্টুর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। নির্মম বাস্তবতা হলো, চার-পাচ মিনিটের পন্ডশ্রম শেষে মন্টু ভূপাতিত হয় এবং ছাঁদে গড়াগড়ি খায়। ছাঁদের আশপাশের লোকজন ব্যঙ্গ বিদ্রুপে মেতে ওঠে, শেফালীও এই সুযোগে তাকে পর্যাপ্ত তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। অপমানিত মন্টু ঘুড়িটা দিয়ে মুখ ঢাকে এবং লজ্জা নিবারণ করে।

এপর্যায়ে সকলের চক্ষু যায় শেফালীর দিকে আর ইঁচড়ে পাঁকা পোলাপাইন শেফালী! শেফালী! হর্ষধ্বনি করে শেফালীকে আরো উত্তেজিত করে তোলে। শেফালীর এখন পিছ পা হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু শেফালীর যাও একটু কনফিডেন্স ছিলো, মন্টুর হাল দেখে সেটুকুও গেছে। তবে শেফালীর তাৎক্ষনিক বুদ্ধিমত্তা প্রখর, বিজ্ঞানের জ্ঞানও বেশ ভালোই আছে। খুব বেশি কিছু না ভেবে শেফালী তার হাতের হলুদ ঘুড়িটা উড়িয়ে দেয়। বাতাসের গতির সাথে নাটাইয়ের ঘূর্ণ্নগতির পারস্পরিক ব্যালেন্সটা শেফালী বেশ সামলে নেয়। শেফালীর ঘুড়ির উড্ডয়মান গতি আর মন্টুর ভাবাবেগের গতি সমানুপাতিক হারে বাড়তে থাকে। ঘুড়ি যখন উড়তে উড়তে দিগন্তের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছায় মন্টুর বাঁধ ভাঙ্গা কান্নার শব্দ তখন শেফালীর কান অব্দি পৌঁছায় না।

সে বিকেলের পরে কোনদিন মন্টুকে কেউ ঘুড়ি হাতে দেখে নি।

 

রাম কৃষ্ণ সাহা
চলচ্চিত্র নির্মাতা, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top