সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১


বশির আলীর কুরবানি : রাজ


প্রকাশিত:
১০ জুন ২০২০ ২১:৩৬

আপডেট:
১২ নভেম্বর ২০২০ ০৭:১৭

 

বশির আলী নামের বাবার বয়সী এই মানুষটি রাজধানী ঢাকার শ্যামলীতে সিকিউরিটি গার্ডের চাকুরী  করেন। "রাজ ভিলা" নামের সেই বাসায় বহুদিন ধরে গার্ডের চাকুরী  করেন। কথা প্রসঙ্গে উনার সাথে আমার পরিচয়। বশির আলীর বাড়ি নোয়াখালী। তার  নিজের বলতে ভিটে মাটি ছাড়া কিছুই নেই। গত ঈদে ছুটি না পাওয়ায় তিনি বাসায় গিয়ে ঈদ করতে পারেনি। এরকম ঘটনা উনার  জীবনে বহুবার ঘটেছে। তবে সেজন্য তিনি বেতনের পাশাপাশি বাড়তি বিশেষ সুবিধা ও পেয়েছিলেন। উনার ছেলে নেই -তিন রাজকন্যা। তিনি তার মেয়েদেরকে রাজকন্যা বলে ডাকেন। তাই উনার উপমা ব্যবহার করলাম। উনি সাধারনত ঈদের ১০ দিন পরে ছুটি  পেয়ে থাকেন। উনার তিন রাজকন্যার প্রসঙ্গ আসতেই ওনার চোখে মুক্তোর মতো চিকচিক করা জল দেখতে পেলাম। কিন্তু তারপরেও নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে একটি মিষ্টি হাসি দিয়ে খুশি খুশি ভাব নিলেন। তারপর উনি আমাকে বললেন “স্যার আমার ছোট রাজকন্যা, যাকে আমি সবচেয়ে ভালোবাসি”। ওর নাম টুনটুনি।  এবারে  সে বায়না ধরেছে  কুরবানির ঈদ আমাকে তাদের সাথে কাটাতে হবে।  আমি ও বোকার মতো স্যার, ওয়াদা করে ফেলছি আসবো। তাই বেগম সাহেবা কে আগাম বলে রেখেছি - এবারে আমি আমার গরীবের ঘরে ঈদ কাটাবো। বেগম সাহেবা হ্যা বা না কোন কিছুই বলেনি। বেগম সাহেবা একটু কড়া টাইপের মানুষ। ছুটি দেয় কিনা?  -বলতে পারিনা।

গতবারের ঈদের ঘটনা - বেগম সাহেবাকে অনেক কাকুতি মিনতি করেও ওনার মন গলাতে পারিনি। হাত জোর করে বলেছিলাম - বেগম সাহেবা আমাকে ঈদের দিন ছুটি দিন। আমার ছোট রাজকন্যা টুনটুনি মা আমাকে ছাড়া ঈদের দিন কোনকিছু মুখে দিবেনা । তাই দয়া করে আমাকে ছুটি দিন। বেগম সাহেবা আমার কথা রাখেননি, স্যার। টুনটুনি মা - ঈদের পরে আমার নাকে টিপে ধরে বলেছিল - আববু তুমি ঈদে আসোনি কেন? আমি তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। স্যার-দেখুন  কতোটা ছেলে মানুষ আমি চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে। জানেন স্যার - আমি ঈদে খেতে পারিনা। আমার তিন রাজকন্যার জন্য। পেটের দায়ে চাকুরী করি স্যার। অভাব না হলে কী এই বুড়ো বয়সে এইসব চাকুরী করি? চাচা রুমাল বের করে চোখ মুছলেন। 

দিন - রাত বাসার গেটে ডিউটি করেন। শহরের সবাই ঘুমিয়ে পরেন। আনন্দের গভীর ঘুম। বশীর আলিরা ঘুমান না। সারারাত জেগে জেগে সৈনিকের মতো পাহারায় থাকেন। রাত শেষে সাহেবের বাসার কোন ছোট খুপরিতে ঘুমান।এমনই হয় বশীর আলী ও ওনার মতো যারা আছেন তাদের জীবন। 

তারপর বশীর চাচা বললেন - স্যার সামনে কুরবানির ঈদ। এবারে যেন ঈদে ছুটি পায়। দোয়া করবেন- স্যার, আমার জন্য। তাদের সাথে যেন ঈদ করতে পারি। 

ওনার চাওয়া যে বড়ো  তা কিন্তু না!

বশীর আলী চাচা কুরবানির ঈদে ছুটি পেয়েছিলেন , 

-না- কী? 

চাকুরী হারানোর ভয়ে বকশিস নিয়ে নিরানন্দ  ঈদ কেটেছেন.... তা আর জানা হয়নি। 

 


বিষয়: রাজ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top