সিডনী মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল ২০২৪, ৩রা বৈশাখ ১৪৩১


প্রেম ও সংঘাতের ইতিকথা : শিবব্রত গুহ


প্রকাশিত:
১৫ জুন ২০২০ ২৩:০৯

আপডেট:
১৬ জুন ২০২০ ২০:৫৩


আমি এখানে যে ইতিকথা আপনাদেরকে বলবো, তা এককথায় রোমাঞ্চকর। এর একদিকে আছে প্রেম আর অন্যদিকে রয়েছে প্রেমকে কেন্দ্র করে এক বিরাট সংঘাত। এই ইতিকথা আবর্তিত হয়েছে এক নারীকে কেন্দ্র করে। এবার সেই নারীর নামটা বলি। সেই বিখ্যাত নারীর নাম ছিল হেলেন।
গ্রীক পুরাণের মতে, এই হেলেন ছিলেন জিউস ও লেডার কন্যা। অন্য একটি কাহিনীতে বলা আছে, যে, তিনি নাকি ছিলেন স্পার্টার রাজা টিন্ডারিউস ও রানী লিডার সন্তান। তাঁর অন্যান্য ভাইবোনও ছিল। এবার তাদের নামগুলো বলে ফেলি- ক্লাইটেমেনেস্ট্রা, ক্যাস্টর ও পলিডিউসিস।
হেলেন কিন্তু প্রধানত " ট্রয়ের হেলেন " নামে বিখ্যাত ছিলেন। রাজজ্যোতিষী তাঁর নাম রেখেছিল হেলেন। তখনই রাজজ্যোতিষী এক ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন। তা হল যে, এই মেয়ে একদিন ভবিষ্যতে সারা পৃথিবীতে খুব বিখ্যাত হবে। তাঁর এই ভবিষ্যৎ বাণী কিন্তু অক্ষরে অক্ষরে মিলে গিয়েছিল।
মহাকবি হোমারের রচিত গ্রীক দুই মহাকাব্য " ইলিয়ড ও অডিসি " ও ইউরিপিডিসের "হেলেন" - এর বর্ণনা অনুযায়ী, হেলেন ছিলেন এক অসাধারণ সুন্দরী রূপসী নারী। তাঁর রূপ ছিল চোখ ঝলসানো। হেলেনের যখন বিয়ের বয়স হয়েছিল, তখন গ্রীসের নানা জায়গা থেকে, রাজা ও রাজকুমারেরা তাঁকে চাইছিল বিবাহ করতে।
এই অবস্থায়, রাজা টিন্ডারিউস পেলেন প্রচন্ড ভয়। কারণ, হেলেনকে যারা পাবে না, তারা কিন্তু রেগে গিয়ে রাজা টিন্ডারিউসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারেন। তাই অনেক ভেবেচিন্তে, অবশেষে, মাইসিনির রাজপুত্র মেনেলাউসের সাথে হেলেনের বিবাহ দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য, এক্ষেত্রে, হেলেনও মেনেলাউসকে পছন্দ করেন।
বিবাহের পরে, হেলেনের এক কন্যা সন্তান হয়েছিল। তাঁর নাম ছিল হারমিওন। মেনেলাউস বয়সে হেলেনের চেয়ে বড় ছিলেন। তাও ব্যবধানটাও কম ছিল না, ৪০ বছরের। তিনি, কিন্তু, নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন হেলেনকে।
মেনেলাউস হেলেনের জন্য প্রহরী রাখেন প্রায় ৮০ জন। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সুদর্শন পুরুষ ছিলেন ট্রয়ের রাজপুত্র প্যারিস। সেই প্যারিস একবার স্পার্টায় এসেছিলেন। সেখানে এসে, তিনি গ্রহণ করেছিলেন মেনেলাউসের আতিথ্য।
এখানেই হেলেনের সাথে তাঁর পরিচয় ঘটে। প্যারিস পড়ে যান হেলেনের প্রেমে। হেলেনও নাকি পড়ে গিয়েছিলেন প্যারিসের প্রেমে। মেনেলাউসের অনুপস্থিতিতে, প্যারিস হেলেনকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন ট্রয় নগরীতে।
তবে, হেলেন কেন পালিয়ে গিয়েছিলেন তা নিয়ে অন্যান্য মতও আছে। অনেক পুরাণকার বলেন, হেলনকে বলপ্রয়োগ করে প্যারিস নিয়ে গিয়েছিলেন অপহরণ করে। তবে, এনিয়ে, এখনো রহস্য রয়েই গেছে।

এই ঘটনা পরবর্তীকালে, জন্ম দেয় এক মহাযুদ্ধের। যা "ট্র‍য়ের যুদ্ধ" নামে পরিচিত। গ্রীক বীর একিলিস হেলেনকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। তিনি কোনভাবেই হেলনকে লাভ করতে না পেরে, তাঁর মা সাগর পরী থেটিসকে অনুরোধ করেছিলেন, যে, তিনি যেন অন্তত একবার হেলেনের সাথে মিলিত হওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।
থেটিস তাই, স্বপ্নে, একিলিসের সাথে হেলেনের মিলনের করে দিয়েছিলেন ব্যবস্থা। হেলনকে উদ্ধার করার জন্য শুরু হয়েছিল ট্রয়ের যুদ্ধ। মেনেলাউসের ভাই আগামেমননের নেতৃত্বে পুরো গ্রীসের বাহিনী হাজির হয়ে যায় ট্রয়ে। ট্র‍য় নগরী ছিল প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। এই যুদ্ধ স্থায়ী হয়েছিল ১০ বছর। এই সময়কালে, হেলেন প্যারিসের সাথে সুখে দিন কাটিয়েছিল ট্রয় নগরীতে।
তবে, এই যুদ্ধের জন্য, ট্রয়ের জনগণ প্রচন্ড ঘৃণা করতো সুন্দরী হেলেনকে। এই যুদ্ধের ফলাফল কিন্তু ভয়ংকর হয়েছিল। এই যুদ্ধের একেবারে শেষ দিকে, প্যারিস মারা যায়। তারপরে, প্যারিসের ছোট ভাই ডাইফোবাসের সাথে বিবাহ করে নেয় হেলেন। ডাইফোবাসের মৃত্যুর পরে, মেনেলাউসের সাথে হেলেন পুনরায় ফিরে
এসেছিলেন স্পার্টায়।
আমাদের ভারতীয় মহাকাব্য মহাভারতের দ্রৌপদীর মতো হেলেনেরও ছিল পাঁচজন স্বামী।
এনারা হলেন: ১. মেনেলাউস। ২. প্যারিস। ৩. ডাইফোবাস। ৪. একিলিস। ৫. থিসিউস।

ট্রয়ের যুদ্ধ - এর পরিণতি হয়েছিল ভয়ংকর। হেলেনের জন্য ট্রয়ের প্রচুর ক্ষতি হয়। ১০ বছর ধরে, এই ভয়ানক যুদ্ধে, ট্রয়ের অসংখ্য বীর হয়েছিল নিহত। ধ্বংস হয়ে গেছিল ট্রয় নগরী। প্রেম ও সংঘাতের ইতিকথার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সুন্দরী হেলেন আজো, আজো সৃষ্টি করে অপার বিস্ময়ের।

( তথ্যসূত্র সংগৃহীত)

শিবব্রত গুহ
কলকাতা

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top