সিডনী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


আষাঢ়ে গল্প : রহমান তৌহিদ


প্রকাশিত:
২৫ জুন ২০২০ ২২:৪৯

আপডেট:
৮ জুলাই ২০২০ ২২:৪৯

 

অফিসের লিফটে উঠতেই যান্ত্রিক নারীকন্ঠ বললঃ “ডর ইজ ক্লোজিং।” মফিজ প্রথমে ভাবলেন, হয়ত ভুল শুনেছেন। তিনতলায় খুলে আবার বন্ধ হওয়ার আগে আবারও : “ডর... ।” এবার মফিজের সত্যিই ডর লাগলো। যাহোক পরের তলায় দ্রুত লিফট থেকে বের হয়ে করিডোরে ফেস ডিটেকটরের সামনে দাঁড়াতেই শুনতে পেলেন : “থ্যাংকয়্যু।” অন্যদিন সময় নেয়, আজ দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই! ব্যাপার কি? মফিজ লক্ষ্য করলেন, ন’টা বাজে নাই।
ফাঁকা করিডোর পেরিয়ে নিজের রুমের দরজা নিজেই খুললেন। দু’দিন বন্ধের পর রুমে ঢুকে দেখলেন এসি চালু। মনে করার চেষ্টা করলেন, বৃহষ্পতিবার বিকেলে এসি বন্ধ করেছিলেন কিনা? তার অফিস সহায়ক বৃহষ্পতিবার দুপুরের পর গ্রামের বাড়িতে গেছে, আসবে আজ দুপুরের আগে। রুম খুলল কে?
চেয়ারে হেলান দেওয়ার আগেই শুনতে পেলেন :“ বড্ড দম বন্ধ লাগছিল, তাই এসিটা আমিই চালিয়েছি।”
ইংরেজিও নয়, চাইনিজও নয় দিব্যি বাংলা ভাষায় বলে উঠল ফ্রিজটা।
“ওমা বলে কি?”
নিজ মনে বলে উঠল মফিজ।
“কি বিবেক আপনার, আপনার খাবার পানীয় আমি নিজে গরম হয়ে ঠা-া রাখি, অথচ আমাকে আপনি বদ্ধ গরম ঘরে তালাবদ্ধ রেখে যান। তাই, বাধ্য হয়ে...”
কথায় যুক্তি আছে, তাই মফিজ আর কথা বাড়াল না। মানবাধিকার নিয়ে মানুষের মাথা ব্যথা না থাকতে পারে, যন্ত্রাধিকার নিয়ে মফিজের মত যন্ত্রবিদের মাথা ঘামাতেই হয়।
ল্যাপটপটি আলমারি থেকে বের করতেই মনে হল, একটু গরম। টেবিলে রেখে চালু করতেই দিব্যি বলে উঠল
“আপনার রুম তো তালা মারাই থাকে, তারপরও আলমারির মধ্যে রাখেন কেন? আমার দম বন্ধ হয়ে যায়।”
মফিজ এদের সাথে বৃথা বাক্য ব্যয় করল না। একটু পরে মিটিং। দরকারী ডকুমেন্টগুলো প্রিন্ট করতে হবে। প্রিন্ট কমান্ড দিতেই প্রিন্টার বলে উঠল, “থ্যাংকয়্যু স্যার। যঠেষ্ট ঠা-া আছি, যত ইচ্ছে প্রিন্ট দেন।”
এদিকে পিয়ন আসে নাই। মফিজ ভাবলো তাড়াতাড়ি মাইক্রোওয়েভ ওভেনে পানি গরম করে এককাপ কফি খেয়ে নেই।
মাইক্রোওয়েভ ওভেন চালু করতেই শুনতে পেলেন, “জন্ম থেকেই জ¦লছি মাগো।”
মফিজ কফির কাপ হাতে নিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে দেখলো, আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামছে।
ক্যালেন্ডারের পাতায় চোখ গেলে বুঝতে পারল, ইহা আষাঢ় মাস।
মিটিংএ যাওয়ার আগে ভাবল, ওখানে গিয়ে যে সব আষাঢ়ে গল্প শোনা লাগবে, তার চেয়ে এতক্ষণ যা ঘটেছে নিতান্তই শিশুতোষ ।
ফাইল হাতে সভাকক্ষের দিতে যেতে যেতে মফিজের মনের পর্দায় ভেসে উঠল, ঝুম বৃষ্টিতে কাঁদামাখা মাঠে ফুটবলের পিছনে ছুটছে বালক মফিজ। ছুটছে আর ছুটছে।

রহমান তৌহিদ
লেক সার্কাস , কলাবাগান ঢাকা
প্রকাশিত রম্যগ্রন্থ ১. নিরাপদ রসিকতা ২. রসিকতা ভয়ঙ্কর ৩. রসিকতা আর না। ৪. রসিকতা ফিওে এল ৫. বোধগম্য রম্য।

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top