সিডনী মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৪, ১৭ই বৈশাখ ১৪৩১


অযাচিত প্রেম : রেজাউল করিম রোমেল


প্রকাশিত:
২৭ জুন ২০২০ ২১:২১

আপডেট:
৩০ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৪৩

 

বেশি দিন আগের কথা নয়।চার পাঁচ বছর হবে।তখন আমি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র।সে সময় একটা মেয়ের সাথে আমার প্রায়ই কথা হত।মেয়েটার বয়স কতইবা হবে,ষোল কি সতের।মেয়েটার গায়ের রঙ ছিল শ্যামলা।না ঠিক শ্যামলা নয় তার গায়ের রঙ ছিল কালো।কোকড়া কোকড়া চুল।মেয়েটি যখন আমার সাথে কথা বলতো তখন বেশির ভাগ সময় আমার চোখ তার দাঁতের দিকে চলে যেত। চোখে থাকত সবসময় হাই পাওয়ারের চশমা।আমার সাথে দেখা হলে হেসে হেসে কথা বলতো।আমি পাত্তাই দিতাম না।আমার আবার গায়ে পড়া মেয়ে একদম ভাললাগে না।আমি কখনো সেধে সেধে কথা বলতে যায় নি।ও-য়ি আমার সাথে সেধে সেধে কথা বলতে আসতো।দেখা হলেই Ñভাইয়া কেমন আছেন?কথাটি বলার পর কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতো।তারপর আমি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সাথে কথা বলতাম।আমাদের ভেতরে অবশ্য পড়াশোনার বিষয় নিয়েই বেশি কথা হত।বাড়ির সবাই কেমন আছে,মা কেমন আছে,তুমি কেমন আছ।আমি আবার মাঝে মাঝে বলতাম অংক,ইংরেজি বুঝতে কোনো সমস্যা হলে আমার কাছে নিয়ে এসো।আমি দেখিয়ে দেব।মেয়েটা ছিল অনেক লম্বা।মাঝে মাঝে আমি চুপি চুপি ওর পাশে গিয়ে মাপ দিতাম।কিন্তুু দেখতাম যে না মেয়েটা আমার চেয়ে লম্বা নয়।তবে হাই-হিল পড়লে নিশ্চিত আমার চেয়ে লম্বা দেখাবে।মেয়েটাকে আমার তেমন একটা ভাললাগতো না।এমনিতে দেখতে-টেকতে সেরকম একটা ভাল-না,তারপরে আবার গায়ে পড়া মেয়ে।এসব মেয়ে আমার আবার একদম ভাললাগে না।মেয়েটা এস.এস.সি-তে গোল্ডেন প্লাস পেয়েছিল।ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়তো।হটাৎ একদিন শুনি সুমির বিয়ে।হ্যাঁ মেয়েটির নাম সুমি।ছেলের বাড়ি বরিশাল,সরকারি চাকরি করে।ছেলে পক্ষ অনেক বড়লোক।দেখতে এসে বিয়ে হয়ে গ্যাছে,পরে অনুষ্ঠান করে বউ তুলে নিয়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
তারপর একদিন দেখি সুমি খুব সেজেগুজে কোথায় যেন যাচ্ছে।সাথে কোট-টাই পড়া সুদর্শন একটা ছেলে।যাওয়ার পথে আমার সাথে দেখা হল।সুমি আমাকে দেখেই জিঞ্জেস করল-“ভাল আছেন ভাইয়া?
আমি ইতস্তত বোধ করে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম-“হ্যাঁ হ্যাঁ তো.. তো.. তোমরা কোথায় যাচ্ছো?
“মার্কেটিং করতে যাচ্ছি ভাইয়া।কিছু কেনাকাটা কোরবো।ও আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়নি।”
সুদর্শন ছেলেটি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো-
“হ্যালো,আমি নাহিদ হাসান।”
আমি বললাম-
“হ্যাঁ হ্যাঁ আমি সুজয়।”
আমি কোনো ভাবেই মাথা উচু করে তাদের সাথে কথা বলতে পারছিলাম না।চোখ উঠিয়ে তাদের দিকে তাকাতে পারছিলাম না।আমি কোনো কথা বললাম না।কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
সুদর্শন ছেলেটি সুমি-কে বললো-
“সুমি,চলো আমরা যাই।দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
সুমি বললো-
“খোদা হাফেজ ভাইয়া।”
সে দিনই ছিল সুমির সাথে আমার শেষ কথা।তারপর বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে কিন্তুু কোনো কথা হয়নি।এখনও দেখা হয় কিন্তুু কথা হয় না।সেই স্মৃতিময় দিনগুলো আমি এখনো ভুলতে পারিনি।সেই অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা,হাস্যজ্জ্বল চেহারা।আমি আজও ভুলতে পারি না।আমার অনেক বন্ধু আছে,বান্ধবিও আছে।তাছাড়া অনেক মেয়ের সাথেই আমার কম বেশি ভাল সম্পর্ক।কিন্তুু কোনো মেয়েই সুমির মতো কোরে আমার মনে দাগ কাটে না,নাড়া দেয় না।কারণ সে ছিল আমার অযাচিত প্রেম।

রেজাউল করিম রোমেল



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top