সিডনী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


নিমাই বাবু, মেমসাহেব আমারো ছিলো! : ইমরুল কায়েস


প্রকাশিত:
১ জুলাই ২০২০ ২১:৪০

আপডেট:
২২ জুলাই ২০২০ ২২:৩১

নিমাই ভট্টাচার্য

 

নিমাই বাবু ছিলেন ওপার বাংলায়, চলে গেলেন ওপারে! শুধু বেদনার ভাগটা দিয়ে গেলেন এপারে আমাকে! আপনার মেমসাহেবতো দুই মলাট হয়ে বেঁচে থাকবেন কালোতীর্ন হয়ে। আর আমার মেমসাহেব যে হারিয়ে গেল সময়ের শত্রুতায় কালের কৃষ্ণগহব্বরে...।
চলতি জুনের ২৫ তারিখ যখন শুনলাম নিমাই ভট্টাচার্য আর নেই! তখন মনে হলো আমাতে আমি নেই। অতি আবেগে আর দুঃখে এতটা হতবাক হয়েছিলাম যে টানা তিনদিন আর কোন কাজে মন বসাতে পারিনি। মনে মনে এতটাই ডুকরে কেঁদেছি যে তাঁকে নিয়ে কয়েক চরণ লিখে পোস্ট বা পত্রিকায় পাঠাবো সে শক্তিই পাইনি। কেননা তাঁর মেমসাহেবের সাথে আমারো একটি মেমসাহেবের নিখাদ গল্প আছে। শুধু গল্প না এ নিজের নিংড়ানো অনুভ‚তির কথা। এ নিছক লেখার ছলে লেখা না।
কেন জানি, এই তিনদিনে বার বার নিমাই বাবুকে প্রশ্ন করতে মন চেয়েছে আচ্ছা, নিমাই বাবু! মেমসাহেব কে অমন করে মেরে নাও ফেলতে পারতেন? সে জন্যই তো আমারো মেমসাহেবটা জীবিত থেকেও আমার জীবনে আর বেঁচে নেই।
পরিচয় পর্ব শেষে, পরিণয়ের শুরু থেকে আমি তাঁকে ‘মেমসাহেব’ ও ‘পাগলি মেমসাহেব’ বলে ডাকতাম। সেই মেমসাহেব একদিন সুদূর ৩৩৫ কিলোমিটার দূরের জেলা শহর থেকে আমার জন্মদিনের উপহার হিসেবে কুরিয়ারে একটি হলুদ খাম পাঠিয়েছিলো। শ্যামলী সুন্দরবন কুরিয়ার থেকে খামটি নিয়ে কৌতুহলের স্বাদ মেটাতে সোজা শ্যামলী শিশু পার্কের খোলা মাঠে কৃষ্ণচ‚ড়ার নিচে বসে খুলতেই সুন্দর মোড়কে বেড়িয়ে আসে সুন্দর প্রচ্ছদের মেমসাহেব, লেখক নিমাই ভট্টাচার্য!
মুগ্ধতার শেষ ছিলোনা তখন। আরে আমার পাগলি মেমসাহেব! মেমসাহেব নামের একটি বই পাঠিয়েছে। ভেতরে একটা অন্যরকম শিহরণ খেলে গেল। বইয়ের পেছনের পাতায় লেখা ‘প্রিয় বুদ্ধরাম কে, তাঁর পাগলি মেমসাহেব’ তার পরেই লেখক নিমাই বাবুর বৃত্তান্ত। পরক্ষণে ভাবলাম বইতো অনেক পড়ি; এনার বই কেন পড়িনি? বা খোঁজ পাই নি! নিজেই নিজের কাছে লজ্জা পেলাম। লেখক বৃত্তান্ত পরে দেখি কত কত কথা সাহিত্যের মালা তিনি গেঁথেছেন। একজন সাধারণ সাংবাদিক মানুষ হয়ে কত অসাধারণ সব সৃষ্টির তালিকা দেখে চোখ ছানা বড়া। সেই শুরু আপনার মেমসাহেব দিয়ে নিমাই বাবুর মেমসাহেবের সাথে আমার উপনয়ন।
সেই থেকে আমার দ্বৈত মেমসাহেব পরিভ্রমণ। টানা একদিনেই মেমসাহেব শেষ করে এমন বিভোর হয়েছিলাম অমন করে আর দ্বিতীয় বইয়ে হয়নি। পড়ার সময় নতুন বই হিসেবে যে পাতাই পড়ি সেই পাতা যেন আমার গল্প বলে এমন মনে হতো লাগলো আরে এ তো আমি! এতো আমার কথা আমার প্রেম; আমারই মেমসাহেব! তারপরে নিমাই বাবুর অন্য বই গুলো একে একে সংগ্রহ করে পড়া শুরু করলাম। তখন থেকেই জীবন আমার নিমাইময়। পড়তাম আর ভাবতাম এমন করে কেমনে এতো সুন্দর বয়ানে নিঁখুত জীবন তুলে ধরে! মাঝে মাঝে নিমাই বাবুর মেমসাহেবকে বাস্তবে দেখতে ইচ্ছে করতো। তখন চলে যেতাম ঢাকা থেকে সেই ৩৩৫ কি.মি দূরে আমার পাগলি মেমসাহেবের নিড়ে। এমন হতো রাতের বাসে ঢাকা ছেড়েছি; সকালে দেখা করে, সন্ধ্যের বাসে ঢাকায় ফিরেছি।
নিমাই বাবু, আপনিও চলে গেলেন! আমার পাগলি মেমসাহেবও আজ স্মৃতির মরিচীকা। শুধু রয়ে গেল আপনার মেমসাহেব আমার টেবিলে।

 

ইমরুল কায়েস
গল্পকার ও সরকারি কর্মকর্তা

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top