সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


উনত্রিশ সেকেন্ড : ছন্দা বিশ্বাস


প্রকাশিত:
৯ জুলাই ২০২০ ২২:৪৭

আপডেট:
১৬ জুলাই ২০২০ ২৩:৪২

 

জাতীয় সড়ক ধরে ছুটছে একটি চার চাকার যান। উত্তরবঙ্গ পরিবহনের বাস। স্টিয়ারিং এ হাত রেখে কুয়াশার অর্গল ভেদ করে সামনে দিকে এগিয়ে চলেছে তৌফিক।

কুয়াশায় মুড়ে গেছে চারিদিক। আজ যেন কুয়াশার মাত্রাটা বেশী বলেই মনে হচ্ছে তৌফিকের। আশপাশের কিছুই দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। সেই সাথে জাকিয়ে শীত পড়েছে।

তৌফিকের এই পথ হাতের তালুর মতো চেনা, তাই ও এমন ঘন কুয়াশার অর্গল ভেদ করে এগোতে পারছে। পাকা এবং পরিচিত ড্রাইভার না হলে আজ এমন দিনে এতো দ্রুত গাড়ি চালানো কারো কম্ম নয়।

প্রতিদিন ভোর চারটেয় মালদাগামী বাসটাকে নিয়ে সে যাত্রা শুরু করে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে পৌণে চারটের ভিতরে সে অফিসে এসে হাজিরা দেয়। ঘড়ির কাটা ধরে ঠিক চারটেয় বাস ছাড়ে। ও ছাড়া আজ বাসে আছে রিহান । ওর হেল্পার , সদ্য ঢুকেছে কন্ডাক্টারীতে।

চল্লিশ আসন বিশিষ্ট বাসে ত্রিশটা সীট এখন পূর্ণ। বাকী দশটা পরের তিনটি স্টপেজে ভরে যাবে ।

রহিমপুর টু মালদা আর তারপর মালদা টু রহিমপুর যাতায়াতের এই আট ঘন্টার পথ  জ্যাম থাকলে দশ ঘন্টা লেগে যায় কখনো সখনো।  মাঝে দুই ঘন্টা রেস্ট , মোট দশ -বারো ঘন্টা 'খেপ খেটে' সে বাড়িতে ফেরে। বাড়ি ফিরতে ফিরতে বিকেল পাঁচটা বেজে যায় তৌফিকের। দুপুরে সে মালদাতেই খেয়ে নেয়। বাস স্ট্যান্ডে ওদের পরিচিত একটা দোকান আছে সেখানে খেয়ে পিছনের দিকে খাটিয়া পাতা থাকে সেখানে একটু জিরিয়ে নেয়। বন্ধু বান্ধবদের সাথে আড্ডা দেয়। কিন্তু ওই সময়ে ভুলেও সে 'মাল' খায় না। ও কেন, কেউই খায় না লাইসেন্স বাতিল হওয়ার ভয়ে। বড়োজোর গুটখা কিম্বা খৈনী খায়। মাঝে সাঝে গাজা টানে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে। আবার সেই গন্ধ ঢাকতে সুগন্ধী মেশানো জর্দা দেওয়া বেনারসী পান খায়। আজকাল পানেরও দাম বেড়েছে। এক একটা পান দশ টাকা। তৌফিক হিসাব করে দেখেছে এতেই তার প্রায় তিনশ টাকা খরচা হয়ে যায় মাসে। একটু হিসাব না করে চালালে সংসার চালানো সত্যি কষ্টকর ব্যাপার।

তবে বাড়ি ফিরে সন্ধ্যার পরে একটু না খেলে চলে না। সারাদিন পরে বাড়ি ফিরে ডাফিয়ার সাথে গল্প করতে করতে একটা কল্যানী ব্ল্যাক ডগ সাবাড় করে বিছানায় আসে। ডাফিয়া সেই সময়টুকু পুরোটাই তৌফিকের।

ডাফিয়ার সাথে বিয়ে হয়েছে বছর খানেক হল। বাড়ির অমতেই সে ডাফিয়াকে শাদী করেছে। ডাফিয়া তার দুলহানিয়া। তার জান। তৌফিক তাকে তেজপাতাপুর থেকে নিয়ে এসে সম্পূর্ণ নতুন জায়গা রহিমপুরে বাসা নিয়েছে। তাতে ওর কাজের সুবিধা হয়েছে।

বাড়ি ফিরে তৌফিক ডাফিয়ার সাথে সারাদিনের কত গল্প করে।

ডাফিয়া তখন তৌফিকের কন্ঠলগ্না হয়ে বিভোর হয়ে শোনে সেসব কথা। সারাটাদিন তো তার একলাই কাটে। ও তীর্থের কাকের মতো তৌফিকের পথ চেয়ে বসে থাকে। বিকেলের ভিতরে রান্না বান্নার পাট চুকিয়ে নেয়। নিজে হাতে বাজার করে। তৌফিক যা যা খেতে ভালবাসে সেইসব কিনে এনে কুটে বেছে অপটু হাতে রান্না করে।

তৌফিক ডাফিয়ার রান্নার প্রশংসা করে এবং বলে আগামী দিনে সে খুব ভাল একজন শেফ হবে।

ডাফিয়ার চোখ দুটোতে তখন খুশীর ঝিলিক লাগে। 

সপ্তাহে একদিন ছুটি থাকে তৌফিকদের। আগে তৌফিক এই রুটেই লরি চালাত। কিন্তু বিয়ের পর লরি ছেড়ে এন বি এস টি সির ড্রাইভিং এর কাজ ধরেছে।

তৌফিকের বয়স বেশি নয়, মেরে কেটে ছাব্বিশ। কিন্তু এই বয়সেই সে বেশ দক্ষ চালক হয়ে উঠেছে। প্রথম দিকে হাসপাতালের য়্যাম্বুলেন্স চালাত। পঞ্চায়েত থেকে দেওয়া হয়েছিল য়্যাম্বুলেন্সটা। তখন তৌফিকের তাগদ ছিল কত। হাইওয়ে দিয়ে এতো জোরে গাড়ী ছোটাত যা দেখে রুগীর লোকজন ভিরমি খেত। বলত,“বাছাধন সামলে, অসুস্থ পেশেন্ট হাসপাতালে নিতে গিয়ে আমরাই না পেশেন্ট হয়ে যাই। "

তৌফিক মৃদু হাসত। গভীর আত্মবিশ্বাসের হাসি।

ডাফিয়াকে নিয়ে যে তৌফিক রহিমপুরে এসেছে তার অন্য একটা কারণ হল আশাবুল।

আশাবুল ডাফিয়ার এক দাদার সাথে জাল নোট পাচার কান্ডে গ্রেফতার হয়েও ছাড়া পেয়ে গেছে। কেননা লোকাল পঞ্চায়েত প্রধানের সাথে আশাবুলের বেশ দস্তি। একেবারে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগয়া তেজপাতাপুর গ্রাম। মুম্বাই শহরের মতোই দিনে আর রাতে বিস্তর ফারাক এইসব সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর। সন্ধ্যার পর পরেই গাঁয়ের ছেলে, জোয়ান,মরদ বেরিয়ে পড়ে। মাঠের ভিতরে সরু পথ দিয়ে গরু থেকে শুরু করে চাল, শাড়ী, বিস্কুট, চকোলেট , খেলনা, বাসনপত্র, মশলা ইত্যাদি সব পাচার হয়। বি এস এফ এবং  বি ডি আরের সাথে রফা থাকে। সকলেই জানে।

আশাবুলের চোখ যে ডাফিয়ার দিকে পড়েছিল সেটা তৌফিক ভালই জানে। মাদ্রাসায় যাতায়াতের সময়ে রাস্তায় বাইক থামিয়ে ঠোটের কোণে সিগারেট ঝুলিয়ে সে মাঝে মধ্যেই ডাফিয়ার সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করত। কারণে অকারণে ওদের বাড়িতে যেত। কিন্তু এর বেশী কিছু করার সাহস সে পেত না।

কারণ ডাফিয়ার এক দাদা মাদ্রাসার শিক্ষক। খুব রাশভারী।

তবু তৌফিকের গলায় সব সময়ের জন্যে একটা কাটা বিঁধে আছে । আশাবুল কাটা। সময়ে সময়তে বড্ড খচখচ করে। ডাফিয়াকে সে অবিশ্বাস করে তা নয়, কিন্তু আশাবুলকে সে একবিন্দু বিশ্বাস করতে পারে না। বিয়ের পরে অনেক বার আশাবুল গায়ে পড়ে তৌফিকের সাথে খাতির জমানোর চেষ্টা করেছে। তৌফিক বিশেষ পাত্তা দেয়নি।

আশাবুল কথায় কথায় জানতে চেয়েছে এখন তারা কোথায় থাকে।

তৌফিক মিথ্যা বলতে পারে না। সত্যিটাই বলে দিয়েছে। বলার পরে বুঝতে পেরেছে না বললেই বুঝি ভালো হতো।

নেকড়ের হিংস্রতা বোঝা দুষ্কর। আশাবুলের নামে বেশ কিছু কেস ঝুলছে। মাদকদ্রব্য পাচার, অস্ত্র পাচার ছাড়াও তার নামে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছিল। এক বন্ধুকে নাকি খুন করে নৌকা থেকে ফেলে দিয়েছে । বাংলাদেশের এক নদী থেকে তার লাশ পাওয়া গেছে। গায়ের বেশ কিছু মেয়ের শ্লীলতা হানি করেছে। ওদের বাড়িতেই কাজ করত সেই কাজের মেয়েটিকে নাকি ধর্ষণ করে তার গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন দিয়েছে।

সকলে জেনেছে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। ময়না তদন্ত হওয়ার আগেই তাকে কবর দেওয়া হয়েছে। কেসটা এর বেশী আর এগোয়নি। আশাবুল নিজেকে বাঁচাতে একের পর এক দল বদল করে যাচ্ছে। এখনকার দাপটশালী, পয়সাওয়ালাদের একজন  বলে সকলেই তাকে খাতির করে, তাকে শেল্টার দিচ্ছে।

তৌফিকের এই নতুন বাসায় অনেক ঘর ভাড়াটে থাকে। ডাফিয়ার মতো অনেকেই থাকে তাদের স্বামী, ছেলেমেয়ে নিয়ে। তাই সারাদিন তৌফিক না থাকলেও ডাফিয়ার একা মনে হয় না। তা ছাড়া বাড়ীওয়ালা বেশ ভালো মানুষ। রেশন দোকান আছে তার। সামনে দোতলা বাড়ি। বাড়ির নীচেয় মুদি দোকান। পিছনে দশ ঘর ভাড়াটে। প্রত্যেকের জন্যে দশ ফুট বাই বারো ফুটের একটাই ঘর, মুলি বাশের বেড়া আর টিনের ছাউনি , সংলগ্ন এক চিলতে বারান্দার সঙ্গে রান্নার জায়গা, পাঁচটি কমন পায়খানা, তিনটি কল, বাথরুম। ভাড়া হাজার টাকা করে।

রাস্তার ওপারে প্রতিদিন বাজার বসে। বুধ, শুক্রবার করে হাট বসে। শুক্রবার তৌফিকের অফ ডে। তাই সে মস্তি করে বাজার করে। সারা সপ্তাহের বাজার করাই থাকে। টুকটাক যা লাগে ডাফিয়া কিনে আনে।

 

কুয়াশার ব্যূহ ভেদ করে বাস ছুটছে। এদিকে ফোর লেনের কাজ হচ্ছে। তাই মাঝে মাঝে গতি কমাতে বাধ্য হচ্ছে তৌফিক।

এই ভোর রাতে লোক চলাচল থাকে না। শুধু হুশ হাশ করে তীব্র গতিতে পাশ কেটে চলে যাচ্ছে মাল বোঝাই ট্রাকগুলো।  কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর এন বি এস টি সি এবং কিছু ভলবো এবং অন্যান্য বেসরকারী যাত্রী পরিবহণকারী বাস আসছে।

কুয়াশার কারণে বেশ ধীরে চালাতে হচ্ছে । ফগ লাইট জ্বালিয়ে নিয়েছে তৌফিক। তাতেও যেন অপরিষ্কার ধোওয়া ধোওয়া লাগছে। এতো কুয়াশা তৌফিক এ জীবনে দেখেনি। রাতে আর ডাফিয়াকে বিরক্ত করে না। নিজেই ঘুম থেকে উঠে গোছগাছ করে দরজায় তালা লাগিয়ে বেরিয়ে পড়ে। একটা চাবি ডাফিয়ার কাছে থাকে। তৌফিক যে ঘরটা ভাড়া নিয়েছে তার বেড রুমের দুটো দরজা। একটা বাড়ির ভিতরের দিকে রান্নাঘর সংলগ্ন, অন্যটা রাস্তার দিকে। তৌফিক রান্নাঘর সংলগ্ন ছোটো দরজা দিয়ে বেরিয়ে এসে বাইরে থেকে তালা দেয়। এই শীতে আর ডাফিয়াকে টেনে তুলতে মন চায় না। সারাটাদিন তো বেচারি একাই সংসারের যাবতীয় ঝামেলা সামাল দেয়। ডাফিয়া সকালে ঘুম থেকে উঠে রাস্তার দিকের  দরজা খুলে বাইরে এসে রান্নাঘরের দরজার তালা খুলে প্রাত্যহিক কাজকর্ম সারে।

ততক্ষণে পাশের ঘরের অনেকেই উঠে পড়ে। দশ ঘরের এক উঠান। এ ঘরে হাঁচলে পাশের ঘর থেকে সব টের পাওয়া যায়। তৌফিক তাই এখানে ডাফিয়াকে রেখে অনেকটা নিশ্চিন্ত বোধ করে।

কয়েকদিন হল একটা ব্যাপারে তৌফিকের খটকা লাগে। ওদের দাওয়াতে সিগারেটের টুকরো দেখে। তৌফিক সিগারেট খায় না। অন্য ঘরের কেউ তাদের দাওয়াতে সিগারেট ফেলবে সেরকম আহাম্মক কাউকে মনে হয় না। সকলেই ঘর সংসার আছে। আপাত ভদ্র বলেই মনে তাদেরকে।

তৌফিক কাউকে কিছু না বলে সিগারেটের টুকরোটাকে হাতে নিয়ে দেখে, গোল্ড ফ্লেক। ও সিগারেটের খন্ডিত অংশটা পকেটে ঢুকিয়ে রাখে। সেদিন শাহিনের কাছ থেকে নিয়ে  কয়েকবার টান দিয়ে সিগারেটের গন্ধটা শুকেছিল ।

শাহিন বলেছিল, "কী গো, তৌফিকদা, তোমার আবার সিগারেটে আসক্তি জন্মালো কবে থেকে?”

"নাহ, এমনি একটু দেখছিলাম। তোরা সবাই খাস কিনা তাই ভাবছিলাম শাদা ধূপকাঠির কি মাহাত্ম্য আছে। "

শাহিনের কাছ থেকে সেদিন সিগারেটের প্যাকেটটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখেছিল।

বাড়িওয়ালার গদিঘরে ঢুকে টাকা দেওয়ার সময়ে এরকম একটা সিগারেটের প্যাকেট নজরে পড়েছিল। কিন্তু যতদূর জানে ওদের বাড়ীওয়ালা সিগারেট খায় না।

মনে ভেবেছিল হয়তো কেউ খেয়ে ফেলে রেখে গেছে । রেশন দোকানে কত লোকেরই তো আনাগোনা চলে।

দিনের বেলার চাইতে রেশন দোকানে রাতে মাল ঢোকে  শতশত বস্তা। আবার ভোর হোওয়ার আগেই সেই সব মাল চলে যায় অন্য জিম্মায়।

আজকাল হাইওয়ে দিয়ে গাড়ি চালাতেই ভয় করে। বেপরোয়া ভাবে গাড়ী চালায় কিছু চালক। বেহেড মাতাল না হলে এইভাবে চালানো যায় না। আসি থেকে একশ কিলোমিটার বেগে ছুটছে। দিনের বেলাতেই। সেদিন একটা অটো রিক্সাকে তো গুড়িয়ে দিল একটা ট্রাক। তিনজন স্কুল ছাত্রী স্পট ডেড।

বেপরোয়া গাড়ীর গতি, রাস্তা বেহাল দশা, চালকের দক্ষতার অভাব, প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও প্রাণহাণির কথা কানে আসছে।

খাটিয়ায় বসে শাহিনরা কত কথা বলে গেল। তৌফিক সেদিন কারো কথাতে সেই ভাবে মন দিতে পারছিল না।

একমনে সিগারেটের কথা ভাবছে।

 

আজ তৌফিকের হাতে স্টিয়ারিং। সামনের ঘড়িতে পাঁচটা বাজতে চলেছে। এখনও মনে হচ্ছে গভীর রাত। কুয়াশা যেন আরো বেশী করে ঘনীভূত হচ্ছে। সামনে কিম্বা আশেপাশের কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

তৌফিক গাড়ির গতি বাড়াচ্ছে ক্রমাগত। রিহান বুঝতে পারছে না, কিছুই। এতো বেগে তো কখনও তৌফিক  গাড়ি চালায় না। একনজর স্পীডোমেটারের কাঁটাটার দিকে চোখ রাখে। একশ ছুঁই ছুঁই করছে কাঁটা।

সকলে গভীর ঘুমে মগ্ন হয়ে আছে। জানালা বন্ধ। তবু শীতের কামড় টের পাচ্ছে রিহান। বাইরের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে এক কৃষ্ণ গহবরের ভিতর দিয়ে তারা চলেছে। বাসের ভিতরে মৃত্যুপুরীর শীতলতা বিরাজ করছে।

হঠাৎ তোফিকের মোবাইল বেজে ওঠে।

এতো সকালে কে ফোন করল?

ডাফিয়ার আবার কিছু হল না তো?

চিন্তিত মনে তৌফিক মোবাইলটাকে অন করে।

 একটা অপরিচিত নাম্বার । কানে লাগায় তৌফিক।

" হ্যালো? কে? কে? আ-শা-বুল! কী বলবি বল?

ডাফিয়া কোথায়? কী বললি? ত-তো -তোর বুকের মাঝে? শালা বাঞ্চোৎ কোথাকার!”

কথাগুলো কানে আসে রিহানের।

মাত্র উনত্রিশ সেকেন্ড!

আশাবুল লাইনটা কেটে দিল কিনা বুঝতে পারে না। তার আগেই ঘটে গেল ভংকর সেই ঘটনা! 

সামনেই কালিদহ। তার উপরে কংক্রীটের সেতু। তবে বেশ পুরনো । জায়গায় জায়গায় রেলিং এ ফাটল ধরেছে। বাসটার গতি কমাল না তৌফিক।

রিহান লক্ষ্য করে সেতুর উপরে উঠেছে বাসটা। তৌফিকের চোখ তখনো মোবাইলের স্ক্রীণের দিকে।

কী সর্বনাশ!

রিহান কুয়াশার ভিতরেদেখতে পেল বাসটা রুট ছেড়ে সজোরে ধাক্কা মারল সেতুর বা' পাশের রেলিংটাতে ।

প্রচন্ড একটা শব্দ হল!

যাত্রীরা সকলে ঘুমের ভিতরে চীৎকার করে উঠল।

কিছু বোঝার আগেই চল্লিশ জন যাত্রী এবং চালক সহ বাসটা তলিয়ে গেল কালিদহের কালো জলে।

এই ঘটনার একমাত্র সাক্ষী রিহান শেষ মুহূর্ত্যে দরজা খুলে ঝাঁপ দিয়েছিল জলে । সেই কেবল বেঁচে আছে।

 

ছন্দা বিশ্বাস
শিলিগুড়ি, দার্জিলিং

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top