সিডনী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


কাজু বাদাম: রহমান তৌহিদ


প্রকাশিত:
১৯ জুলাই ২০২০ ২২:২৩

আপডেট:
১৯ জুলাই ২০২০ ২২:২৭

 

পরিচিত ডাক্তার উপদেশ দিলেন , “প্রতিদিন দু’টাকার বাদাম খাবেন ”। দু ’টাকায় যে বাদাম পাওয়া যায় না তা’ বলতে পারেনা মফিজ। পাঁচ টাকার বাদাম চাইলে বাদামওয়ালা কেমন করে যেন তাকায়। তার বাঁকা চাহনি না দেখার জন্য দশ টাকার বাদাম কিনে দু’চারটি পঁচা বাদাম ফেলে বাকিগুলো খেয়ে বেশ চলে যাচ্ছিল দিনকাল। এরমধ্যে একদিন চাইনিজ খেতে গিয়ে কেসুনাট সালাদের অর্ডার দেওয়ার পর বুঝল, নতুন এক প্রকার বাদাম বাঙালির জীবনে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করতে যাচ্ছে। বাদাম বলতে মফিজ এতদিন বুঝত চীনা বাদাম আর ঈদের সময় সেমাই রান্নার জন্য কাঠ বাদাম। কেসুনাট যে কাজু বাদাম আর তার দাম যে এত বেশি একথা বুঝতে পারল যখন সে সুপার সপে রোস্টেড কেসুনাট এর প্যাকেটে দাম দেখল।

যাহোক, কাজু বাদাম তো আর কেজি কেজি কিনতে হয় না, আর পকেটের জোর না থাকলে কেউ তো  তাকে  কাজু বাদাম খেতে জোর করছে না। ডাক্তারও বলেনি, প্রতিদিন একশ’ টাকার কাজু বাদাম খান। মফিজ চাইনিজে গিয়ে কেসুনাট সালাদ স্যুপের  সাথে খায় আর বিল দেওয়ার সময় এই বলে নিজেকে স্বান্ত্বনা দেয় যে, গাজর আর পেপে দিয়ে তৈরি ভেজিটেবল যদি এই দাম হয় তো কেসুনাট সালাদ তো দাম হবেই।

মফিজ অফিসে আগত অতিথিদের গ্রীষ্মকালে গ্রিণ টি আর শীতকালে কফি দিয়ে আপ্যায়িত করে। সেদিন এক জুনিয়র বলল, “স্যার কাজু বাদাম না হলে ঠিক জমছে না। গ্রিন টি কফি এখন ব্যাকডেটেড আপ্যায়ন, কাজু বাদাম লেটেস্ট। ”

“তাই তো, সেদিন এক অফিসে গিয়ে দেখলাম কাঁচা বাদাম।”

“না স্যার । কাঁচা  বাদামে চলবে না, চাই রোস্টেড কাজু বাদাম।”

“কাজু বাদামের বিশেষত্ব কি?” সহজ প্রশ্ন মফিজের।

“কাজু বাদামে বিশেষত্ব হল এটা কপার, জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন ও ফসফরাস সমৃদ্ধ। এছাড়া এটা ক্ষতিকর এলডিএল কমাতে আর কাঙ্খিত এইচডিএল বাড়াতে সাহায্য করে। এসব হল জ্ঞানের কথা। আসল কথা হল, কাজু বাদাম এখন ট্রেন্ড। বড় অফিসাররা কাজু বাদাম ছাড়া স্ন্যাকস করেন না। অমুক স্যার তো বলেই দেন , আপ্যায়নে কাজু বাদাম অপরিহার্য।”

মফিজের মনে পড়ল, এক আলোচনা সভায় মঞ্চে উপবিষ্ট অতিথিবর্গ কি যেন চিবুচ্ছেন, কৌতুহলী দর্শক মফিজ বিশ্বস্ত সূত্রে জানত পারল, মঞ্চের প্লেটে সাজান মহার্ঘ বস্তু হল কাজু বাদাম।

আর একবার, এক অফিসারের রুমে গেছে মফিজ। নানা ধরনের হালকা নাস্তা। সিঙ্গারা, সমুচা, চানাচুর। কিন্তু সকলের আগ্রহ কাজু বাদামে। গ্যাসট্রিক আর ডায়বেটিকের অজুহাতে যারা নাস্তার দিকে উদাসীন ভঙ্গিতে তাকান, তারাও লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কাজু বাদামের দিকে। মফিজ লজ্জা পেয়ে চানাচুর খেতে খেতে বলে, বাসায় চানাচুর নিষেধ, তাই একটু চান্স নিই।

মফিজের স্বভাব হল কোথায়ও বেড়াতে গেলে সেখানকার স্থানীয় কিছু নিকটাত্মীয়, অফিসের বস ও কলিগদের জন্য সংগ্রহ করা। সেটা খাওয়ার বস্তু হোক আর সৌখিন দ্রব্যই হোক। রাঙামাটির খাদিপোশাকের পাশাপাশি এবার আসলো কাজু বাদাম। মফিজ লক্ষ্য করল, মানুষের আগ্রহ কাজু বাদামে বেশি। পরে আফসোস হল, পোশাক বাদ দিয়ে পুরোটাই কাজু বাদাম আনে নি কেন!

মফিজ ভাবছে, চা কফি বাদ, রোস্টেড কাজু বাদাম দিয়ে আপ্যায়ন চালু করবে।

পুনশ্চ: একটা সময় ছিল, চিঠিপত্র লেখার সময় এই পুনশ্চ খুব ব্যবহৃত হতো। চিঠি লেখা এখন সেকেলে হয়েছে, সেই স্মৃতি ধরে পুনশ্চ। লেখাটি এক বড় ভাইকে দিলাম সেন্সর করতে। ইদানীং সব কিছুতেই মানুষ সেন্টি খাচ্ছে। কে যে কিসে মাইন্ড করছে বলা যায় না। অনেক ধীরে  সুস্থে পড়ে বললেন, রস কম হয়েছে, পারলে একটু রস দেন। বললাম, কাজু বাদাম নিজেই শুকনো, রস পাব কোথায়? এবার তিনি যথার্থ বড় ভাইয়ের মত বললেন, কাজু বাদাম হল ফলের বীজ, ফলটি কিন্তু রসালো - অনেকটা টসটসে আপেলের মত। ফলটি আমাদের দেশে আসে না - বিচি চিবিয়েই এই অবস্থা।

বড় ভাইয়ের কথা শিরোধার্য। একটু রস দেওয়ার চেষ্টা করি।

প্রমোশনজনিত খানাপিনা। আয়োজক মফিজ। অফিসে গণখাওয়া হয়েছে - এটা এক্সক্লুসিভ। সপরিবারে বসের দাওয়াত। চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট। নিধারিত সময় রাত আটটা। মফিজ সপরিবারে পৌছে গেছে পৌনে আটটায়। বস এই আসেন এই আসেন। জ্যাম কতটা বাস্তবে আর কতটা কাল্পনিক তা জিজ্ঞাসা করা যায় না। অবশেষে রাত পৌনে এগারোটায় বসের আগমন। আগে থেকেই বলা ছিল। তারপরও বস বলে কথা, পছন্দ অপছন্দ জিজ্ঞাসা করতেই হয়। “কেসুনাট সালাদ - একটু ক্রিসপি। ওই একটাই তো একটু খাই ” বসের জ্ঞানগর্ভ উচ্চারণ। বসের স্ত্রী কটমট করে তাকালেন। “আরে অমন করে তাকাও কেন? মফিজ আমার আপন জন। ওর প্রমোশনে খাব না তো কার প্রমোশনে খাব। তাছাড়া এটা অফিস না, পার্টি। আর কেসুনাট সালাদ বলে কথা।”

স্যুপের সাথে অনথন, কেসুনাট সালাদের কথা আগেই বলা ছিল, যোগ হলো আর এক প্লেট কেসুনাট সালাদ - একটু ক্রিসপি।

“এই একটা খাবারই খাই ... ” স্যুপের সাথে কেসুনাট খাবার খাওয়ার সেই দৃশ্য মফিজ বহুদিন ভুলতে পারেনি।

 

রহমান তৌহিদ
লেক সার্কাস , কলাবাগান ঢাকা

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top