সিডনী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১


যুদ্ধশিশু : অজিত কুমার রায়


প্রকাশিত:
২৩ জুলাই ২০২০ ২৩:১৭

আপডেট:
২৩ আগস্ট ২০২০ ২১:১৬

 

এমন উচ্ছ্বসিত পরিবেশনা কমই দেখেছি জীবনে। বলছিলাম টাঙ্গাইলের কবিতা উৎসবের কথা। বহু কবি এসেছেন ভারতবর্ষ থেকে। এসেছেন আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ থেকে। পৃথিবীটা আজ একটা গ্রামের মতো হয়ে গেছে। তারই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যেন আসা এই সব সৃজনশীল সাহিত্যসেবকদের। একটা অপূর্ব সম্মিলন। বিশাল মঞ্চ করা হয়েছে পৌর উদ্যানে। দৃষ্টিনন্দন মঞ্চসজ্জা। আকর্ষণীয় ব্যবস্থাপনা। আড়াই হাজার আসনের ব্যবস্থা। আপ্যায়ন অনুরূপ। হোটেল প্রিন্সের কক্ষসমূহে থাকার সুব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য ব্যবস্থাও ছিল অতিথিদের থাকার জন্য। টাঙ্গাইল সাধারণ গ্রন্থাগারের উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী কবিতা উৎসবটি বড়ই তাৎপর্যব্যঞ্জক। মানুষের মাঝে মহামিলনের এও একটি বড় মাধ্যম। ভারতের প্রায় ৫০ জন কবিসহ তিন শতাধিক কবি-সাহিত্যিকের বিশাল সমাবেশ। প্রকৃত অর্থে ভেদহীন সমাজব্যবস্থা গঠনের প্রয়াস বলা যেতে পারে। এমন অন্তরকে বাইরে আনা সাহিত্য ছাড়া আর কোনো কিছুর পক্ষেই সম্ভব নয়। সমস্ত খোলসের বাইরে আসতে হয় যখন একজন কবি বা সাহিত্যিক লেখেন। এই ত বাস্তব জীবনবোধের চর্চা, জীবনমুখী হতে পারা, অনুভূতি নিয়ে নাড়াচাড়া করা।

দেখলাম এক দম্পতি আবৃত্তি করলেন প্রেমের কবিতা। অপূর্ব তাদের বাচনভঙ্গি, অপূর্ব উপস্থাপন ভঙ্গি। জুটিটিও অসাধারণ। আবৃত্তি শেষ হতেই কাছে গেলাম তাদের। ভারতের কেরালা থেকে এসেছেন। সেখানেও বাংলা সাহিত্যচর্চা করছেন। শুনে গর্বে বুকটা ভরে গেল। শ্রদ্ধাপূর্ণ হয়ে গেল হৃদয় ওদের জন্য। কবি অনিন্দ্য সেন ও তার সহধর্মিণী কবি সর্বজয়া সেন।

জিজ্ঞেস করলাম, কেরালায় অবস্থান কেন?

চাকরির সুবাদে। ওখানে বেসরকারি একটি কোম্পানিতে আছি।

মি. সেন মিতভাষী ও সুকণ্ঠ।

কবি সর্বজয়াকে দ্বিতীয় প্রশ্নটি করলাম, আপনিও কি চাকরি করেন ওখানে?

না, আমি কবিতা নিয়েই থাকি। কবিতার ভেতরেই আমাদের বিচরণ। বললেন, ইতোমধ্যে তিনি বেশ কয়েকটি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার স্বামীও একজন গুণী কবি।

সন্তান ?

একজন, কন্যা। সেও কবি। অবশ্য কেরালা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। খ্যাতনামা সংগীতশিল্পী।

তাহলে পুরো পরিবারটাই এই সাহিত্য, সংগীত ও সৃজনশীলতার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন।

এবারের প্রশ্নটি ছিল একটু ব্যাপক। জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা কি পশ্চিমবঙ্গের?

হ্যাঁ হ্যাঁ। নিশ্চয়ই। আমি কলকাতার ছেলে। ওখানেই জন্ম। ওখানেই বড় হয়েছি।

যদি কিছু মনে না করেন একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে পারি?

না না, আপত্তির কি আছে। করুন না।

জয়া দেবীরও কি জন্মস্থান কলকাতা?

অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন অনিন্দ্যবাবু কিছুটা।

বললেন, ভালো বলতে পারব না। ওর সাথে আমার পরিচয় বিশ্বভারতীতে। নব্বইয়ে। ওখানেই আমাদের ভাব, ভালোবাসা ও বিবাহ।

সাহস সঞ্চয় করে বললাম, বিয়ে করলেন ভালোবেসে। বেশ সময়ের ব্যাপার, অথচ জানেন না তার জন্ম কোথায়!

তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষের মতো বললেন, আসলে জানতে চাইনি। জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো। আমি কিন্তু এই বিষয়ে সম্পূর্ণ আস্থাবান।

জয়া বিশ্বভারতীতে মিউজিক পড়তে এসেছিল। ওর প্রতিভাতে আকৃষ্ট হই। ভীষণ ভালো কণ্ঠ ওর। আমি গোড়া থেকে সংগীতপিপাসু ছিলাম, যদিও কাব্যচর্চা আমার নেশা বা শখ ছিল। কথায় কথায় ওর সাথে বন্ধুত্ব হলো। জানলাম জয়া ভালো কবিও বটে। ইতোমধ্যে তার দু’চারটি কবিতাগ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছিল। বিশ্বভারতীতে পিএইচডি করছিলাম বাংলায়। ইতোমধ্যে বাবা-মা গত হয়েছিলেন। তখন একজন জীবনসঙ্গিনীরও ভীষণ প্রয়োজন অনুভব করছিলাম। জয়া সুন্দরী, গুণবতী। এর চেয়ে বেশি কিছুর প্রয়োজনও আমার ছিল না। আমাদের বিয়ে হলো। বোলপুর-কলকাতা করতে করতে কয়েক বছর কাটল। তারপর চাকরির সুবাদে কেরালা। দুজনই আছি সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার ভেতর। তার মধ্য দিয়ে আমাদের একমাত্র সন্তান মৈত্রী। সে এখন ২৭। সেও গায়িকা, কবি। ভালোই আছি।

একটা আত্মপ্রসাদের ভাব ফুটে উঠল অনিন্দ্যবাবুর চোখে-মুখে। এ এক অদ্ভুত জীবনযাপন। জন্মূভূমি, আঞ্চলিকতা, আঞ্চলিক লোকাচার কোনো কিছু আঁকড়ে না ধরেও জীবনটাকে গুছিয়ে নেওয়া যেতে পারে অনিন্দ্যবাবু ও সর্বজয়া সেনের কাছে সে শিক্ষা পেলাম। খুব ভালো লাগল। এভাবেও পৃথিবীতে বেঁচে থাকা সম্ভব। জাতি-বর্ণ-ধর্ম-লোকাচারের কঠোর বেষ্টনীই বরং মানুষকে সংকীর্ণ করে তুলতে পারে। সমস্ত মানুষ আমার, সমস্ত দেশ আমার, জগৎ আমার, এই ভাবনাই তো বিশ্বায়নের ভাবনা। এটি মঙ্গলজনক।

কুপন দিয়ে কফি খেলাম গরম গরম। অনিন্দ্য সেন আলাপ করছিলেন অন্য একজন কবির সঙ্গে, আমেরিকাপ্রবাসী বাঙালি কবি। এই ফাঁকে জয়া দেবীকে প্রশ্ন করে বসলাম, দিদি, আপনার জন্ম কলকাতায়?

না, বাংলাদেশে। কিন্তু, কোথায় ভালো বলতে পারব না। আসলে আমি ছিলাম অনাথ। আমাকে জন্ম দিয়েই মারা যায় আমার মা।

সর্বজয়া দেবীর কণ্ঠ আবেগাপ্লুত হয়ে উঠল। চোখের কোণ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল। টিস্যু পেপার দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, আমার বাবা তারও আগে গত হয়েছিলেন। বোধশক্তি হওয়ার পরে দেখেছি আমি এক অধ্যাপক দম্পতির সন্তান। তারাই আামকে বড় করেছেন, কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছেন। স্নেহ-মমতা দিয়েছেন। তারা ছিলেন নিঃসন্তান। আমি একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করি ইডেন কলেজে। ধানমণ্ডিতে আমাদের বাড়ি ছিল।

বাবার নামটা বলবেন দয়া করে?

গণনাথ সেন, মা জয়তী সেন। পৃথিবীতে এত মমতাময় বাবা ও মমতাময়ী মা ক’জনের ভাগ্যে জোটে! কোনো দিনও ঘূণাক্ষরে তারা আমাকে বুঝতে দেননি যে, আমি ওদের পালিতা। এমনকি প্রতিবেশীদেরকেও হয়তো তারা বিষয়টি সম্পর্কে চুপ থাকতে অনুরোধ করে থাকবেন। তা ছাড়া আপনি তো জানেন ধানমণ্ডি অত্যন্ত আধুনিক এলাকা। অনেকটা পাশ্চাত্যের মতো জীবনযাত্রা। ওখানে গ্রামের মতো কেউ কারো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় না। সেই কারণে কোনো দিন জানতেও পারিনি যে, আমি ওদের পালিতা কন্যা।

মনের মধ্যে কৌতূহল ঘনীভূত হয়ে উঠল। জিজ্ঞেস করে বসলাম, জানলেন কীভাবে তাহলে যে আপনি পালিতা?

বাবা-মা একবার অস্ট্রেলিয়াতে গেলেন একটা শর্ট ট্রেনিংয়ে। আমাকে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তখন বাড়িতে আমাকে একা থাকতে হলো। সঙ্গে ছিলেন একজন গভার্নেস। তার কাছ থেকে কথায় কথায় জানতে পারলাম আমি তাদের পালিতা কন্যা। ভীষণ কেঁদেছিলাম সেদিন। এত ঐশ্বর্য, আরাম-আয়েশ সব যেন গুরুত্বহীন হয়ে গেল এক নিমেষে। নিজেকে অত্যন্ত মূল্যহীন মনে হতে লাগল। মনে হলো, আমি একজন অভাগী, একজন অনার্য শিশু, মানুষের করুণার পাত্রী!

গভার্নেস এর বেশি কোনো তথ্য আমাকে দেননি বা এর বেশি তথ্য হয়তো জানা ছিল না তার। আমাকে শপথ করিয়ে নিলেন যেন আমার মা-বাবা এ কথা জানতে না পারেন। তাহলে তার নিস্তার থাকবে না। তিনি শুধু বলেছিলেন, আমার মা আমার জন্মের সময়ই মৃত্যুবরণ করেন। বাবার মৃত্যু হয় আমার জন্মের পূর্বেই। জীবনটা এত দিন ফুলে ফুলে ভরা ছিল। গতিময় ছিল। কত স্বপ্ন দেখেছি জীবনকে নিয়ে, লেখাপড়া শিখব, বাবা-মার ইচ্ছে অনুযায়ী ডাক্তার হব, আরো কত কী! মনে হতো, আমার মতো সুখী আর কেউ নেই। আমি রাজকন্যা। ধানমণ্ডিতে বাড়ি। কিন্তু সব কিছু শেষ হয়ে গেল মুহূর্তেই।

বাবা-মা ফিরলেন ১৫ দিন পরে। আমার জন্য অস্ট্রেলিয়াটাই যেন নিয়ে এসেছেন সাথে করে। বাবা-মা আমায় জড়িয়ে ধরে স্নেহে চুমু খেলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। এত ভালোবাসতেন তারা আমাকে। কিন্তু মনের ভেতর শূন্যতা ক্রমেই বাড়তে থাকল এবং আস্তে আস্তে মহাশূন্যে পরিণত হলো তা। মনে হতে লাগলো ওরা আমার কেউ নয়। নেহাৎ বোঝা হয়ে আছি তাঁদের মাথার উপর। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম, অনেক দূরে চলে যেতে হবে ওঁদের কাছ থেকে। সাহস সঞ্চয় করে বাবাকে বললাম, বাবা, আমি বিশ্বভারতীতে মিউজিক পড়তে চাই। বাবা আমার প্রস্তাবে আকাশ থেকে পড়লেন।

কেন? হঠাৎ এ সিদ্ধান্ত কেন মা?

জানি না বাবা, তবে আমার সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চা ভালো লাগে। বিজ্ঞানে কোনো আনন্দ পাই না।

মা পাশেই বসে ছিলেন। তিনি তাকালেন বাবার দিকে। অর্থপূর্ণ ছিল সে দৃষ্টি। কয়েক মিনিট নীরব থেকে বললেন, আচ্ছা তোর যদি ভালো লাগে তাই পড়বি। তবে তোকে ডাক্তারি পড়ানোর বড় সাধ ছিল মা। তুই আমাদের একমাত্র সন্তান!

কিছুদিনের মধ্যে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে আসি বিশ্বভারতীতে। বাবা-মা দুজনই এসেছিলেন আমার সাথে। সেই শেষ দেখা তাদের সাথে। বাড়ি ফেরার কয়েক দিন পরেই কার অ্যাকসিডেন্টে দুজনেরই মৃত্যু হয়। খুব কেঁদেছিলাম কয়েক দিন। নিজেকে মনে হয়েছিল অন্তহীন সমুদ্রে ভাসমান এক অসহায় মানুষ। এর কয়েক দিন পরেই অনিন্দ্যর সাথে আলাপ। বড় ভালো ছেলে। সুদর্শন, সদালাপী। আমার অকূলের কূল হিসেবেই তার আবির্ভাব। তার সাথে বন্ধুত্ব, তারপর বিয়ে। সেও পিতৃ-মাতৃহীন। দু’জন হয়ে গেলাম দু’জনার। দু’জনেই পরিপূর্ণ হলাম। পেছনের দিকে আর ফিরে তাকানো হয়নি। এখন শুধু আমাদের বর্তমান আর ভবিষ্যৎ।

ফিরে এলাম অনুষ্ঠানে। আবার আবৃত্তি ভারত-বাংলাদেশের খ্যাতিমান কবিদের। এরপর অনুষ্ঠানের সমাপনী পর্ব। আর দেরি করতে পারলাম। ঢাকা ফিরতে হবে। আগামিকাল একটা সেমিনার আছে শিল্পকলা একাডেমিতে। নতুন বাস টার্মিনালের দিকে ছুটলাম সিএনজিতে। সোনিয়া পরিবহনের টিকিট কিনলাম। একটায় বাস ছেড়ে দিল। খুবই আরামদায়ক বাসটি। এয়ারকন্ডিশনড। কিছুক্ষণ চলার পর বারবার জ্যামে পড়তে লাগল গাড়িটি।

কবি সর্বজয়া দেবীর ছবিটা ভাসছে মনের পর্দায়। কী সুন্দর দেবী দেবী মুখখানা। অথচ কত দুঃখ তার জীবনে। পিতৃ-মাতৃহীনা, তবু জীবনযুদ্ধে তার জয়জয়কার। তিনি সাহসী সৈনিকের মতো এগিয়ে চলেছেন যুদ্ধের ময়দানে। তরবারি কোষমুক্ত, ঝাঁসীর রানি লক্ষ্মী বাঈয়ের মতো।

মনের মধ্যে কৌতূহল পুঞ্জীভূত হতে থাকল। ঢাকাতে গিয়ে একবার ধানমণ্ডিতে শ্রী গণনাথ সেনের বাড়িতে যেতে হবে অবশ্যই।

বিকেলে সেমিনার। তার আগে সকালেই বেরিয়ে পড়লাম সিএনজিতে ধানমণ্ডির উদ্দেশ্যে। খোঁজখবর নিলাম কাউন্সিলার অফিসে। ধানমণ্ডি-১০ নম্বরে গণনাথ সেনের বাড়ি। বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াই। পুলিশ প্রহরা। জিজ্ঞেস করলাম অনেক কথা। একজন বৃদ্ধ কেয়ারটেকার এসে বলল, স্যারেরা তো আর নেই। তার একমাত্র কন্যাও ভারতে পড়তে গিয়ে আর ফেরেনি। সরকারি হেফাজতে আছে বাড়ি। তার কন্যা সম্পর্কে কিছু বলবেন কি? জিজ্ঞেস করলাম।

দ্যাহেন স্যার। এই স্যারের বাড়িতে কাজ করছি হেই ছোট বয়স থেইকা। আমি অনেক কিছু জানি তার কন্যার ব্যাপারে। কিন্তু মানা আছিল স্যারের। কিছু কওন যাইব না। তাই কোনো দিন কই নাই। এ্যাহন আর কোনো বাধা নাই। তেনারা নিঃসন্তান আছিলেন। জয়া আপায় আছিলেন যুদ্ধশিশু। মাদার তেরেসা শিশু ভবন থেইক্যা হ্যারে আনছেলেন স্যারে বায়াত্তুর সনে। মনে মনে ভাবলাম, অনিন্দ্য সেন যথার্থই বলেছিলেন, জন্ম হোক যথাতথা, কর্ম হোক ভাল।

 

অজিত কুমার রায়
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, সরকারি কলেজ, কবি, ছড়াকার, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top