সিডনী রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১


নাটক: চর (পর্ব ২) : ইমন শেখ   


প্রকাশিত:
৯ আগস্ট ২০২০ ২১:১৪

আপডেট:
৯ আগস্ট ২০২০ ২১:২০

 

দৃশ্য-৪

[মজনুর চায়েরদোকান। কবির, কাসেম, মজনুসহ কয়েকজন চরে মসজিদ তৈরীর আলোচনায় ব্যস্ত থাকবে।]

কবির : হুনলাম চরে নাকি বিরাট মজসিদ ঘর বানাইবো?

কাসেম : হ, কদম মিঞা তো সেইরহম কলো। জুম্মোর নামাজ, ঈদির নামাজ সব ঐহানেই পড়া যাবি। 

কবির : এইডা একটা কাজের কাজ হবি। জুম্মোর নামাজে মজসিদি লোক ধরেনা। বাইরে আরো তিন চার কাতার করা লাগে। বড়সড় একটা মজসিদ হলি খারাপ হয় না।

[এমন সময় কদম চায়ের দোকানে প্রবেশ করে ওদের আলোচনায় যোগ দেবে। কদমের বেশভূষা বেশ পরিবর্তন হবে। তার পরনে থাকবে লম্বা সাদা পাঞ্জাবি আর মাথায় থাকবে  গোল টুপি থাকবে।]

কদম : কবিইরা বড়সড় মজসিদ না - এমন একখান মজসিদ বানাবো যে আশেপাশের সাত গেরাম চাইয়া দেখবো। এক্কেবারে পাকা কইরা  টাইলস বসাইয়া  রাজমহলের নাহান বানামু। শহর থিকা ইঞ্জিনিয়ার আইনা কাজ করামু। ওজুখানা, টয়লেট সব হবি আলাদা আলাদা। এক্কেবারে নিউ ডিজাইন।

[কবির, কাসেমসহ দোকানে বসা সকলে শুনতে শুনতে তন্ময় হয়ে যাবে। তাদের কল্পনায় নতুন মসজিদ যেন জীবন্ত হয়ে ধরা দেবে। কবির, কাসেম কারোরই চায়ের কাপ মুখে উঠবে না। হাতে থেকেই ঠান্ডা হবে।]

বসির : সেতো বুঝলাম যে বিরাট মজসিদ হবি। তা এতে তো মেলা টিহা লাগবো।  টিহাগুলান (শেষ করতে পারবে না)

কদম : আরে মিঞা টিহার লাইগা ট্যানশন করো ক্যান? আল্লাহর ঘরের কাজ কি আর টিহার জন্যি বাইদা থাকবো? হগ্গোলে হাতে ফিতে দিলি হয়ে যাইবোগা। আর এই কামে আমি যহন  মাথা দিছি তহন তুমাগো এত্তো ট্যানশন কিহের? যে যা পারো আল্লার ঘরে দান করবা। বাকীডা আমি দেখবানি।   

বসির :  হ কদম ভাই যিহানে আছে সেইহানে আমাগো কুনো ট্যানশন নাই। কি কও তুমরা? (কাসেম আর কবিরের দিকে তাকিয়ে।)

[কাসেম ও কবির সমস্বরে বসিরের কথায় সম্মতি জানাবে। দোকানদার মজনু তখন কদমের দিকে এগিয়ে আসবে।]

মজনু : মিঞা ভাই,  (৫০০ টাকার নোট এগিয়ে দিয়ে) আমার  এই টাহাডা রাহেন।  আল্লার ঘরের জন্যি আরো বেশি দেওন লাগে। তয় আমি গরীব মানুষ সবতো আপনে বোঝেন। পরে আরো কিছু গুছাইয়া আল্লার ঘরে দান করুম।

কদম : মাশআল্লাহ! মাশাআল্লাহ! তুমার দান আল্লাহ কবুল করবে। আল্লাহ তুমার নেক নিয়েত পূরণের তৌফিক দিক। আমিন। আমিন। মাশাআল্লা!  সুবহানাল্লা! (ভক্তিতে গদগদ হওয়ার ভাব)                    

বসির : (পকেট হাতড়ে কিছু টাকা বের করবে  )  এইডা আমি দিলাম কদম ভাই। 

কদম : সুবহানাল্লাহ। মাশাল্লাহ।

কাসেম : (কিছু টাকা কদমের হাতে গুজে দিবে) আল্লার ঘরে শরীক হতি পারা ভাগ্যির ব্যাপার।    

কবির : (মাথা চুলকে) কদম ভাই, অহন কাছে  টিহা নাইক্কা। আমিনুদ্দির ঘর বাইন্দা দিলাম। অহনও টিহা দেয় নায়। বিকেলবেলা দেওনের কথা। হ্যায় টিহা দিলে রাত্তির বেলায় আপনেরে দিয়া আমু।

কদম : মাশাআল্লাহ। হোন মিঞারা আল্লার ঘরের কাম। জোর জবরদস্তির বিষয় তো না। যে যেভাবে পারো শরীক থাকবা। যা পারো দিবা। যে পারবা না হ্যায় মজসিদের কামে গতর খাটাবা। আল্লার ঘরে শরীক থাকলি বহুত ফায়দা। আর আগেই কইলাম আমি তো আছিই। তয় অহন উঠা লাগে। জোহরে হগ্গোলে মজসিদে আসো। ইমাম সাব আছে, মসজিদ কমিটি আছে। হগ্গোলে আরো আলাপ আলোচনা কইরা কাইল থিক্কা কাজে হাত দিমু। ইনশাল্লাহ।

[সকলে সমস্বরে ইনশাল্লাহ বলবে। কদম দোকান থেকে বেরিয়ে যাবে। তখন মাস্টার একটা লম্বা খাতা হাতে দোকানে ঢুকবে।]

মাস্টার : কই মজনু। দাও তোমার চাঁদা। আরে কাসেম, কবির, বসির তোমরাও আছো। যাক ভালোই হলো। 

মজনু : মাস্টার সাব, চাঁদা? কিয়ের চাঁদা?

মাস্টার : এর মধ্যে ভুইলা গেলা। সেদিন না তোমাদের বললাম বাজারে একটা পাকা পায়খানা তৈরি করতে হবে আর গ্রামবাসীর জন্য একটা ডিপ টিউবওয়েল বসাতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদে অনেক তো দৌড়াদৌড়ি করলাম। কাজ হলো না। নিজেদের ভালোর জন্য সব নিজেদেরই করতে হবে। এই যে সেদিন তোমার ছেলেটা মারা গেল কলেরায়। এসব রোগ বালাই দূষিত পানির জন্যই হচ্ছে। আর যেখানে সেখানে প্রসাব পায়খানা  স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়।                                  

মজনু : ছেলেডা গেল। আল্লার মাল আল্লায় নিছে। তয় মাস্টার সাব অহন টিহা পয়সার টানাটানি। বেচাকেনার যা অবস্থা হইছে। মানে মানে (তোতলাতে তোতলাতে বলবে)

মাস্টার : গ্রামের সবাই আমরা গরীব। খেটেখুটে কোনরকম সংসার চলে। সেজন্যই তো মাত্র একশ টাকা চাঁদা ধরা হয়েছে। যাদের অবস্থা ভালো তারা একটু বেশি দিবে এরকমই না কথা হলো সেদিন?

কাসেম : আমাগো মতন মরা মাইনষের কাছে একশ টিহা কি কম কথা? 

কবির : টিহার অভাবে আল্লার ঘরে শরীক হতি পারলাম না। আর আপনে আছেন পায়খানা পেচ্ছাবখানা নিয়ে!  

মাস্টার : আল্লার ঘরে শরীক হবা মানে?

বসির : আপনে জানেন না চরে মজসিদ ঘর হবি? বিরাট মজসিদ। আশেপাশের দশ গেরাম চাইয়া দেখবো সেই মজসিদ। শহর থিকা ইঞ্জিনিয়ার আইবো। কদম ভাই কইয়া গেলো কাইল থিকা কাম শুরু হবি। আমরা যে যা পারি তাই দিয়া শরীক থাকুম। দরকার হইলে  মজসিদের কামে গতর খাটামু। 

মাস্টার : বিরাট মসজিদ। কদম উদ্যোগ নিছে। কদম ( বিড়বিড় করে বলবে)

কাসেম : মজসিদ ঘরের কামডা ভালোই ভালো উইঠা যাক। তারপর পায়খানা পেচ্ছাপখানা দেহা যাবে।          

 [সকলে এই কথায় সুর মিলাবে। মাস্টারের কপালে ভাজ পড়ব। মর্মাহত হয়ে সে দোকান থেকে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হবে।]

মজনু : উঠলেন নাকি মাস্টার সাব? এক কাপ চা খাইয়া যান।

মাস্টার : চা - না থাক। এখন আর চায়ের দরকার নাই।         

[মাস্টার চিন্তিত ভঙ্গিতে বের হয়ে যাবে। যেতে যেতে স্বগতোক্তি করবে - চরে মসজিদ হবে। কদম ই বা  হঠাৎ এই মসজিদ নিয়ে মাতামাতি করছে কেন? অন্য কোনো ধান্ধা নেইতো এর পেছনে? সরল সোজা ধর্মপ্রাণ মানুষগুলারে ভুলিয়ে ভালিয়ে কি মতলব আটছে  কে জানে।]

দৃশ্য - ৫

[কালিগঙ্গার চর বেশ সরগরম। জায়গায় জায়গায় ইটের সারি আর বালুর স্তূপ। একপাশে মাপজোখ চলবে। কদমের নেতৃত্বে বসির, কাসেম, মজনু, কবিরসহ আরো অনেকে নানারকম কাজে নিয়োজিত থাকবে। সবাই বেশ পুলকিত মেজাজে কাজ করতে থাকবে।]

কদম : অ কবিইরা, ঐ ইটগুলান ইটটু সাইড কইরা থোও । আর বসির মিঞা তুমি ইটটু জিরায় নেও। অনেকক্ষণ ধইরা কাম করতাছো। আরে আক্কাস যে।

আক্কাস : চাচাজান, চইলা আলাম। আল্লার ঘরে কামের সুযোগ তো হগ্গোল সুময় মেলে না।

কদম :  খুউব ভালা করছো।  তা বাপজান  ঐহানে কাসেমের লগে ইটটু হাত লাগাও। সিমেন্টের বস্তাগুলান নামাইয়া ফালাও এক এক কইরা।

আক্কাস : জি চাচাজান।

[এমন সময় হারানের নেতৃত্বে একদল লোক এসে হাজির হবে।  হারান চরের ওপর বসে পড়ে দু'হাতে বালু সরাতে আরম্ভ করবে। আরো দুয়েকজন তাকে সাহায্য করবে। খুড়তে খুড়তে হটাৎ একটি কালো শিবলিঙ্গ উঠে আসবে। হারান মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে শিবলিঙ্গের উদ্দেশ্যে প্রণাম করবে। তার দেখাদেখি অন্যরাও তাই করবে। মুহুর্তের মধ্যে ' জয় বাবা ভোলানাথ  '  ধ্বনিতে চর সরগরম হবে।]

কেষ্ট : কলিকালেও তাইলে স্বপন সত্যি হয়। সত্যি ভগবান শিব জ্যান্ত। হর হর মহাদেব। (মাথায় হাত ঠেকিয়ে প্রণামের ভঙ্গিতে বলবে)   

নারান : হারান দা বহুত পূণ্য করিছো জীবনে। তাই ভগবান শিব তুমারে দেহা দিছে। হর হর মহাদেব।

পরান : আমাগো কপাল বিরাট ভালা। ভগবান শিব আমাগো গেরামে  উঠিছে। তুমরা তারে বয়রে নাও। শঙ্খ বাজাও। দুধ ঢালার ব্যবস্থা করো।

হারান : দশজন তুমরা আছো। তুমাগো সামনেই কই - জন্ম আমার স্বার্থক। ভগবান শিব খালি স্বপনে আমারে দেহা দেন নাই। বাস্তবেও তিনি আমাগো গিরামে পা'র ধূলো দেছেন। তেনার অসম্মান করা যাবি না। আমার ইচ্ছা ভোলানাথ যহন এই কালিগঙ্গার চরে উঠিছে তহন এইহানেই একখান মন্দির হউক। কি কও তুমরা?

[সকলে এ প্রস্তাবে সম্মতি জানাবে। অন্যদিকে কদম ও মসজিদের কাজে নিয়োজিত সকলে ঘটনার আকস্মিকতায় এবং হারানের প্রস্তাবে বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠবে। এসময় কদম ছোটখাট একটা ভাষণ দিবে।]

কদম : ভাইসব, এইডা হইলো গিয়ে শ্যাষ জামানা। হাতে আগুন ধইরা রাহার চায়ে ঈমান ঠিক রাহা কডিন। আইজ সুময় আইছে।  ঈমানী তাগদ কার কত আইজ দেহা যাবি। মজসিদির জাগায় মন্দির হইবো আর আমরা চুপ কইরা বইসা থাকুম এইডা হইবার পারে না। আল্লার কসম জান দিয়া দিমু তবু এইহানে মজসিদ ঘরই হইবো।                                                                                         

   [মসজিদ এবং মন্দিরের দাবিতে দুই পক্ষই অনড় থাকবে। বাদ - প্রতিবাদ ও বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ধর্ম রক্ষায় দুই পক্ষই মারমুখী হয়ে উঠবে। দেখতে দেখতে বেধে যাবে তুমুল লড়াই। নারাই তাকবির, আল্লাহ হুআকবর এবং হর হর মহাদেব ধ্বনিতে কম্পিত হবে কালিগঙ্গার চর। দূর থেকে আলতাফ মাস্টারকে ছুটে আসতে দেখা যাবে। তুমুল হট্টগোলের মধ্যে ঢুকে সে দুপক্ষকে থামানোর চেষ্টা করতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়ে চরে পড়ে থাকবে। রক্তাক্ত মাস্টারের গলার ক্ষীণ আওয়াজ শোনা যাবে। তোমারা সবাই থামো। মাথা ঠান্ডা করো। সবুর করো তোমরা। সবুর করো।] 

দৃশ্য - ৬

[বৈঠকখানায় চেয়ারম্যান তসবি হাতে বসে থাকবে। কদম ইমাম সাহেবসহ পাঁচ - ছয়জন গণ্যমান্য  বক্তিবর্গকে নিয়ে প্রবেশ করবে।]   

চেয়ারম্যান : আসসালামু আলাইকুম। আসেন আসেন।(উঠে দাড়িয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলবে।)  কী সৌভাগ্য আমার আপনেগো মতন মানী লোকের মেহমানদারির সুযোগ পালাম।

[মেহমানরা সালামের উত্তর দিয়ে  আসন গ্রহণ  করবে।]      

চেয়ারম্যান :  আপনাগো এত রাইতে  তকলিফ দিতি হইলো এর জন্যি আমি খুউব সরমিন্দা। এই বেয়াদবি মাফ কইরেন। চারিদিকে শত্রুর তো অভাব নাই। তাছাড়া চেয়ারম্যানের চেয়ারেও কিছু বিধিনিষেধ আছে। তাই এই গভীর রাইতে গোপন বৈঠকে আপনেগো ডাকতি হলো। (বেশ মোলায়েম সুরে কথাগুলো বলবে)

 ইমাম : চেয়ারম্যান সাব আপনে ইয়াদ করছেন। আমরা হাজির হইছি। এইহানে  তকলিফের কথা আইবো ক্যান? আপনের সরমিন্দা হইবার দরকার নাই। আমাগো কুনো তকলিফ হয় নাই।

চেয়ারম্যান : বড়ই খুশি হলাম। রাত বাড়তাছে। আসল কথায় আসি। আপনাগো যে কি কইরা বুজাই ইসলামের এই দুর্দিনে মুসলমান ভাইগো লাইগা অন্তরডা আমার জ্বইলা পুইড়া যায়। সারা বিশ্বে মুসলমানরা আইজ  মাইর খায়। বিশ্বের কথা আর কি বলুম?  আমাগো দেশটা মুসলমানের দেশ। এই গেরামডাও মুসলমানের গেরাম। তবু দেহেন আমরা মুসলমানরা কত তকলিফে আছি। আল্লার ঘর মজসিদ বানানোরও উপায় নেই। এই দুঃখু কই রাহি। (কথার ফাকে চোখ মুছে নেবে)   

মেহমানদের একজন : ঠিক কইছেন চেয়ারম্যান সাব। আমি জিন্দিগিতিও ভাবি নাই যে মুসলমানের গেরামে মুসলমানগো মজসিদ ঘর বানতি বাধা দেওয়া হবি।

চেয়ারম্যান : বোঝেন তাইলে। বুকটাতো খালি খালি ফাইটা যায় না। তয় আপনেগো একখান কথা কই - এইডা ইহুদি নাসারাগো দেশ না। এইডা হইলো মুসলমানের দেশ। এইহানে মুসলমানগো সাথে নাইনসাফি বরদাস্ত করা হবি না। আমি আপনাগো কথা দিচ্ছি কালিগঙ্গার চরে মজসিদ ঘরই হইবো। কোনো মন্দির ফন্দির হইবো না। তয় আমার চেয়ারম্যানির মেয়াদতো এবারের মত শেষ হতি চললো। সামনের বার ইনশাআল্লাহ জিতা মাত্রই মজসিদের কামে হাত দিমু। আমি নিজে দাড়ায়ে থাইকা মজসিদ ঘর গাথামু। মুসলমানগো অপমান কিছুতিই সহ্য করুম না। আপনারা খালি ধৈর্য ধইরা আমার লগে থাকবেন। বাকীডা আমি দেখুম। এইডা আমার ওয়াদা। মালাউনগুলার দৌড় কতদূর আমি দেইখা ছাড়ুম। (হুঙ্কার দিবে)

ইমাম : সুবহানাল্লাহ। আল্লাহ আপনের নেক নিয়ত পূরন করবেই। আপনের কথা শুইনা দিলডা জুড়ায় গেলো।

মেহমানদের একজন : আপনের কথায় ভরসা পেলাম। এই পবিত্র দ্বীনি কামে  আমাগো আপনের লগেই পাবেন। ইনশাআল্লাহ।  

ইমাম : সবাই যদি আপনের মতন ইসলামের খেদমতের কথা চিন্তা করতো তাইলে আর এই দুর্দিন থাকতো না। মুসলমানগো এই দুর্দিনে আপনের মতন নেতাই চাই।

[এই পর্যায়ে কদম মেহমানদের খানাপিনার ব্যবস্থা করবে। খানাপিনা শেষে সালাম বিনিময় করে মেহমানরা বিদায় হবে এবং হারান বৈঠকখানায় প্রবেশ করবে।]

হারান : হুজুর, কাম পুরাই কমপিলিট। হগ্গোলরে বুঝাইয়া ফেলছি যে আপনে যদি পুণরায় চেয়ারম্যান  হইবার পারেন তাইলে চরে মন্দির গড়া সম্ভব না। আপনে মজসিদ ঘরই বানাইবেন। হুইনা হগ্গোলের সেকি গোস্বা। হম্বিতম্বি শুরু করছে সবগুলান। তয় দুঃখুর কথা হইলো হেরা আপনেরে গালি দেয়। যা-তা বলে। হুইনা বড় ব্যাথা লাগে।

চেয়ারম্যান : হাহাহ। হাহাহ।

হারান : আপনে হাসতাছেন? (বিস্মিত হয়ে)

চেয়ারম্যান : শোন হারান, নেতা হইতে গেলে তিনডা জিনিস তুমার লাগবোই। এক নাম্বার হচ্ছে টিহা। দুই নাম্বার জিনিসডা হইলো অভিনয়। খালি রাজনীতি করলেই হইবো না। অভিনয়ও জানা লাগবো। আর তিন নাম্বারডা হচ্ছে গন্ডারের চামড়া। নেতাগো চামড়া গন্ডারের চাইতেও মোটা হইতে হবো। সামান্য ইটটু খিস্তি খেউড় যদি সহ্য করতি না পারলাম তাইলে নেতা কিয়ের? এসব গায়ে লাগাতে অয় না। বুজলানা? হাহাহা। মন্দিরের পক্ষের লোকজন আমারে যত বেশি গালি দিবে মজসিদের পক্ষের কাছে আমি তত বেশি বিশ্বস্ত হবো। হাহাহা।      

হারান : বুজলাম, হুজুর। আসলেই আপনের বুদ্ধির পোরোশংসা করতেই হবো। কি খেলাডাই খেললেন!

চেয়ারম্যান : খেলা অহনো খতম অয় নাই  হারান। চরে কেবল বিচি পুতা হইলো। অহন চারা গজাবো। তারপর ফুল দিবো, ফল দিবো। বুজলানা? হাহাহা।                                                        

[হারান এবং কদমকে চেয়ারম্যানের বৈঠকখানা থেকে বের হতে দেখা যাবে। দুজনেরই বুক পকেট উঁচু থাকবে। পকেট থেকে একতাড়া নোটের বের হওয়া অংশ আবছা আলোয় দেখা যাবে। খুশি মনে হাটতে হাটতে  একজায়গায় এসে দুজনেই থেমে যাবে। কদম টর্চ লাইটটা জ্বালতেই ' আলতাফ মাস্টার ' নামফলক সম্বলিত কবর দেখা যাবে। টর্চের ফোকাস কিছুক্ষণ কবরের উপর থাকবে। এরপর কদম টর্চের ফোকাস কবর থেকে সরিয়ে সামনের মেঠোপথে রাখবে। এসময় দুজনেই  পকেটের টাকার দিকে তেরছা ও লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাবে। তারপর শব্দ করে  হাসতে হাসতে এগোতে থাকবে। হাসির আওয়াজ ক্রমশ ক্ষীণ হতে থাকবে।] 

=: সমাপ্ত :=

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা


বিষয়: ইমন শেখ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top