তুমি কি আমার পাপা? : চৈতন্য দাশ
প্রকাশিত:
৯ আগস্ট ২০২০ ২৩:১৯
আপডেট:
১৪ মার্চ ২০২৫ ১৪:০২
বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও অভি রামায়ণ-মহাভারত নিয়মিত পাঠ করে। সেটা খুবই ভালো লক্ষণ। কথায় বলে, ‘সমুদ্রের গভীরতা মানে মৃত্যুকল আর রামায়ণ-মহাভারতের জ্ঞানের গভীরতায় আছে আধ্যাত্মবল।’ তাই রামায়ণ-মহাভারতের মতো মহাকাব্যগ্রন্থ যে ছাত্র নিয়মিত পাঠ করবে তার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে বইকি। সে বিষয়ে কোনো চিন্তা বা টেনশন না থাকলেও অভির মায়ের দুশ্চিন্তা অন্য জায়গায়। ক’দিন আগে অভির দিদা তার ঠিকুজী করিয়ে এনেছে। গতকাল রাতে অভির মা ও দিদা দুজনে বসেছে অভির ঠিকুজী খুলে। এবারে দিদা তাঁর মেয়ের সামনে ঠিকুজী ও ঠিকুজী নির্মাতা পুরোহিতের বক্তব্যের ঝাঁপি উপড়ে দিচ্ছে- “বুঝলি রিতু( অভির মা’র নাম), বাইশ বছর বয়সের পর অভির মধ্যে বৈরাগ্যভাব দেখা দেবে। ধর্মীয় বই-পুস্তক নিয়ে বুঁদ হয়ে থাকবে। বিয়ে-থা, সংসার-ধম্মের দিকে মন দেবে না। যে কোনো সময় বাড়িঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে পারে।”
“সব কিছুই ঠিক ঠিক মিলে যাচ্ছে মা। অভি নেট-ফেস থেকে ধর্মীয় গান বের করে করে শোনে। রামায়ণ-মহাভারতের সঙ্গে, ‘যোগী কথামৃত’, ‘ভারতের সাধক-সাধিকা’ এমন সব বই কিনে কিনে আলমারি ভরতি করেছে। নিয়মিত সেগুলো পড়ে…”
অভির মায়ের মনে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। ছেলে বিয়ে-থা না করলে নাতিপুতির মুখ দেখা হবে না এ জীবনে।
এদিকে ব্রিলিয়ান্ট ছেলে এমএসসি কমপ্লিট করার সঙ্গে সঙ্গে কমপিটেটিভ পরীক্ষা দিয়ে পোস্টাল ডিপার্টমেন্টে চাকরিও পেয়ে গেল। উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা রাস্তা দিয়ে চলার সময় পরস্পর-পরস্পরের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। আর অভিটা পাশ দিয়ে রাজকন্যা হেঁটে গেলেও থোড়াই কেয়ার।
সেদিন রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর রিতু ছেলের ঘরে ঢুকে টলফিগার, স্বাস্থ্যবান ছেলের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল, “আমার রাজা বাবা, একটা রাজকন্যে কবে ঘরে আনবি, বাবা?”
“অভি মুখ তুলে লাজুক দৃষ্টিতে বলল, “কাউকে পছন্দ হয় না মা। আজকালকার মেয়েদের চলন-বলন কেমন যেন উগ্র।”
“সবাই কি আর উগ্র। ভালো মেয়ে খুঁজে নিতে হয়।”
“আমি বিয়ে-থা করব না মা। বাবাকে এসব কথা বলো না।”
“ওসব আমি শুনব না। আমি পনেরোদিনের মধ্যে তোর জন্য মেয়ে দেখছি।” এই বলে রিতু পেছন ফিরতেই অভি হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে পাশে বসায়।
মা গম্ভীর মুখে বলে, “কী বলছিস বল?”
অভি মুখ কাচুমাচু করে আমতা-আমতা করে বলল,
“মৌলি খুব ভালো মেয়ে মা।”
“সেটা আবার কে?”
“আমার অফিসে রেকারিং-এর কাজ করায়।”
“দেখতে-শুনতে সুন্দরী তো?”
“সব দিকেই সুন্দরী মা। খুব দুখী মেয়ে…”
“মানে?”
“সে তুমি ওকে দেখলেই বুঝতে পারবে।”
“আমি কী করে দেখব?”
“আমার অফিসে চল, তাহলে দেখতে পাবে।”
“আমি অফিস-টফিস যেতে পারব না। তুই ওকে রোববারে বাড়িতে আসতে বল।”
মায়ের মুখে একথা শুনে অভির মুখে খুশির ঝিলিক খেলে গেল। পরক্ষণেই দ্রুত মুড চেঞ্জ করে বলল,
“ঠিকে আছে, অফিসে গিয়ে বলে দেখি, যদি আসে।”
“যদি ফদি না, বলবি আমি আসতে বলেছি, অবশ্যই যেন আসে।”
“আচ্ছা তুমি এখন যাও তো।” রিতু ছেলের নাক টিপে দিয়ে চলে যায়।
পরের রবিবার সকাল দশটায় মৌলি তার বছর সাতেকের দুষ্টুমিষ্টি মেয়েটির হাত ধরে অভিদের বাড়ির উদ্দেশে বেরোয়। মৌলি অভিদের বাড়ির মেনগেট ঠেলে ভেতরে ঢুকে ঘরের দরজায় এসে ‘কাকিমা’ বলে গালভরা ডাক দেয়।
অভির মা সকালের ব্রেকফাস্ট তৈরি করছিল। মৌলির সাড়া পেয়ে ‘ভেতরে এসে বসো’ বলে হাতের কাজ ফেলে ছুটে আসে। অভিও নিজের ঘর থেকে দ্রুত ঘরে ঢোকে।
অভির মা সবে মৌলিকে জিগ্যেস করতে যাচ্ছিল, “তোমার সঙ্গে মিষ্টি মেয়েটি কে?” এর মধ্যে অভি মেয়েটিকে কোলে তুলে নিতেই সে বলে ওঠে, “তুমি কি আমার পাপা?”
“কেন তোমার পাপা নেই?”
“না তো। মা বলেছে, আমার পাপা খুব সুন্দর দেখতে। তুমি তো খুব সুন্দর হ্যান্ডসাম। তাহলে কি তুমিই আমার পাপা? বলো না, বলো…?”
“হ্যা, আমিই…।”
“কী মজা, কী মজা।”
রিতু চোখ ছানাবড়া করে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলো। অভি মায়ের দিকে হাতজোড় করে একে একে মৌলির অতীতের ডিভোর্সি ইতিহাস জানালো।
অভির মা দুচোখের জল মুছতে মুছতে মৌলিকে কাছে টেনে নিল।
চৈতন্য দাশ
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
বিষয়: চৈতন্য দাশ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: