সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


একজন রাহান : পান্না বদরুল


প্রকাশিত:
৩ অক্টোবর ২০২০ ২১:৫০

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১৩:৪৯

 

শবনম দিনের পর দিন কেমন যেন খুব বেশি অসহিষ্ণু হয়ে যাচ্ছে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে রাস্তায় তাকিয়ে হরেক রকম মানুষের চলাচল দেখছে মুহিত, আর ভাবছে বয়স বাড়ছে আর কেমন যেন খিটমিটে স্বভাবও বাড়ছে শবনমের। প্রথম যখন শবনম সন্তান সম্ভবা হলো কি হাসিখুশিই না ছিলো বড় মেয়ে ভুমিস্ট হবার পর।

যত ঝামেলা হলো দ্বিতীয়বার যখন পুত্র সন্তানের মা হলো। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে গভীরভাবে ভাবতো আর মুহিত বলতো তুমি কি সব আজেবাজে চিন্তা করো। কিন্তু ছেলের বয়স বাড়ার সাথে সাথে শবনমের সেই দুশ্চিন্তা গুলোই সঠিক প্রমাণিত হলো। ছেলেটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়েই বেড়ে উঠতে লাগলো। শবনম নিজেকে দোষী ভাবতে আরম্ভ করলো আর ছেলেকে কেন যেন অসহ্য মনে করতে লাগলো। ঠিক উল্টোটাই হলো মুহিতের। মুহিতের সব ভালোবাসা জমা হতে লাগলো সেই অবুঝ পুত্র সন্তান রাহানের জন্য।তাই বলে সে কোন সময় শবনমের এই আচরণের জন্য রাগারাগি বা বিরক্ত হয়নি বরং নিজের সাধ্যমত শবনম কে বুঝিয়েছে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।শবনম ছেলে ও মেয়ের প্রতি বৈষম্য আচরণ করে জেনেও মুহিত একটি দিনের জন্যও রূঢ় আচরণ করেনি।

রাহানের সবই ঠিকঠাক আছে কিন্তু কথাবার্তায় ও মেধায় যে প্রতিবন্ধী সেটা স্পষ্ট বুঝা যায়।বৈষয়িক বিষয়ে বুঝার ক্ষমতা খুবই কম। অক্লান্ত পরিশ্রম করে মুহিত রাহানের জন্য।ছেলের ভবিষ্যত নিয়েও সে উদ্বিঘ্ন হয়ে পড়ে। সাথে শবনমের বিমাতা সুলভ আচরণ সেই কষ্ট বাড়িয়ে দেয় আরো অনেক বেশি। তবুও হাল ছেড়ে দেয়না মুহিত। সৌভাগ্যবশতঃ মেয়ের স্কুল আর রাহানের স্কুল পাশাপাশি আর শুরু ও শেষ একই সময় হওয়ায় রক্ষা পেয়েছে ওদের আনা নেয়া করতে হয়না বলে। দুই ভাই বোনের প্রচন্ড মিল। তাই এক সাথেই স্কুলে যায় আর ফেরে।

মুহিতের চিন্তায় ছেদ পড়লো রাস্তায় কয়েকটি বখাটে ছেলেকে দেখে। একটি স্কুল ড্রেস পড়া মেয়েকে উত্যক্ত করছে মানে ইভটিজিং করছে। মেয়েটি দ্রুত হেটে চলে যাওয়ায় বেশিক্ষণ আর দেখতে পেলো না মুহিত। নিজের মেয়ে ইভার জন্য চিন্তার ভাঁজ পড়লো কপালে।ক্লাস নাইনে পড়ে মেয়েটি আর রাহান থ্রি তে, যদিও ফাইভে ওঠায় কথা ছিলো। কিন্তু রাহান আর দশটা ছেলের মতো সম্পূর্ণ স্বাভাবিক যে নয়!

হঠাৎ একদিন এলাকার কয়েকজন লোক রাহান কে মাথায় পটি বাঁধা অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে এলো হৈচৈ করতে করতে, সাথে ইভার আতঙ্কিত মুখ। শবনম ছুটে এলো কি হয়েছে দেখতে।ছেলের মাথায় পটি দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো স্বভাবগত ভাবেই। কিন্তু লোকজনের কথা শুনে শবনম যেন ধীরে ধীরে অন্য মানুষ হয়ে গেলো।চোখে মুখে এক উজ্জ্বল আলোক দ্যুতি ঝিলিক দিতে লাগলো।চোখে অশ্রু দেখা দিতে লাগলো।

একজন লোক বলে যাচ্ছে হরহর করে, আপনার এই ছেলেটি আজ অসাধ্য সাধন করেছে। বখাটেরা আপনার মেয়েকে উত্যক্ত করতে গেলে আপনার এই ছেলেটি ওদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাই দেখে এলাকার সব লোক মিলে বখাটে গুলোকে এমন ধোলায় দিয়েছে সব গুলোকে যে শেষ পর্যন্ত জামা কাপড় খুলে নাকে খত দিয়ে এলাকা থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। যা করতে আগে কেউ সাহস পায়নি।। কিন্তু আপনার এই বীর ছেলেটি করেছে, মাথায় একটু আঘাত লেগেছে। আমরা ওষুধ দিয়ে বেঁধে দিয়েছি।কোন চিন্তা করবেন না।

মুহিত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে শবনমের অসহায় মুখ আর ছেলের জন্য মায়ের গর্বিত বুক। যে ছেলেকে এতোদিন সহ্য করতে পারেনি সেই ছেলেই তার বোনের অসম্মান সহ্য করতে না পেরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এক ঝটকায় ছেলেকে বুকে তুলে নেয় শবনম। চিৎকার দিয়ে কেঁদে ওঠে আমার ছেলে আমার সোনা পাখি বলে।

মুহিত ভাবতে থাকে মেয়েদের অধিকার রক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য ঘরে ঘরে এক একজন রাহানের জন্ম নেয়া উচিৎ।যাতে এই সমাজে মেয়েদের প্রতি কোন অবিচার না হয়।

 

পান্না বদরুল
উত্তর ইব্রাহিমপুর, কাফরুল, ঢাকা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top