সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


ব্লাক এন্ড বিজিবি : রাজ


প্রকাশিত:
২০ অক্টোবর ২০২০ ২১:১৩

আপডেট:
২০ অক্টোবর ২০২০ ২২:১০

 

গভীর রাত। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। প্রচন্ড শীত। কুয়াশার চাদরে ঢাকা। সীমান্তে টহল দিচ্ছি আমরা  একদল বিজিবি। হাবিলদার স্যার সামনে রয়েছেন। আমি নতুন খুব উৎসাহ নিয়ে  টহল দিচ্ছি। ইদানিং ব্লাক (ভারতে থেকে অবৈধ পথে চোরাচালান)  বেড়ে গেছে । মাঝে মাঝে আমরা ধুমকেতুর মতো টচলাইট  অন করি। আমার হাতে একটি টচলাইট। হঠাৎ আমার চোখে কি যেন একটা ভেসে আসলো? আমি কৌতূহলী হয়ে সাথে সাথে টচলাইটটি অন করলাম। দেখতেছি একটি মেয়ে  বসে আছে। আমি বললাম এই মেয়ে এত রাতে কি করো?  আমি তার মুখে মুখে টচলাইট টি ধরলাম। হাবিলদার স্যার তা দেখে রেগে গিয়ে ধমক দিয়ে বললেন, ধূর মিয়া করো কি?  টচলাইট অফ করো। আমি টচলাইট অফ করলাম । স্যার বলল এদিকে আসুন। আমি স্যারের কাছে গেলাম । স্যার বললেন, ও একজন মহাজন। মহাজন কিছু বুঝলেন কি?  আমি মাথা নেড়ে বললাম  "না "। স্যার বলল -ও ব্লাক করে। যারা ব্লাক করে তাদেরকে মহাজন বলে। তারপরও  ওকে ছারলাম কেন জানো? আমি বললাম তাতো জানিনা স্যার। তাহলে শোনো। ওর নাম জহুরা বয়স ৩৫ এর মতো। ওর আরো তিন বোন রয়েছে। বাবা মা নেই। ও হলো তাদের সংসারেরর একমাএ উর্পাজনকারী।

ওর ছোট বোন তহুরার জন্মের সময়  ওর বাবা মারা যায়। তার কয়েক বছর পরে তার মা মারা যায়। মারা যাওয়ার সময় তার আরো দুই বোন কে  তার হাতে শপে দিয়েছিল।  যাতে কোনদিন সে তাদের ছেড়ে না যায় ও না  কষ্ট দেয়। তাদের কথা চিন্তা করে আজ পর্যন্ত সে বিয়ে করেনি। তার মেঝো বোন কে সে বিয়ে দিয়েছে এই ব্লাক করে। আর তার ছোট বোনটিকে বিয়ে দিতে পারলে এই কাজ সে আর কোনদিন করবে না। তার ছোট বোনটিকে বিয়ে দেবার জন্য সে উঠে পরে লেগেছে। এই এলাকার সবাই তাকে চিনে। কেউ তারে কোন কিছু বলেনা ও ক্ষতি করেনা। কারন সবাই জানে সে খুব দুঃখী মেয়ে । আমরা জানি সেটা। তুমি নতুন তাই জানো না। আমি জানি তাকে এভাবে সুযোগ দেওয়া  ঠিক না। তারপরও তার করুন মুখটা ও তার ছোট বোনটির জন্য তাকে ছাড় দিলাম। হাবিলদার স্যারের গলার সুর আরো নরম হতে লাগল। জানো ওকে দেখলে খুব মায়া হয়। আমার মেয়ের মুখের ছবিটা  ভেসে আসে। এই সামান্য ব্লাকে কয় টাকা আর রোজগার করে সে। দেখো তারপরও  তারা সেভাবেই সুখি। আমি জেনেশুনে যদিও ভুল করলাম। তারপরও ঔ মেয়েটির করুন   জীবনের জন্য  ওকে ছাড় দিলাম। আমরা সবাই  চুপচাপ শুনে আছি। হাবিলদার স্যার সত্যি খুব বড় মনের মানুষ।  ইস যদি জানতাম তাহলে ও ভাবে টচলাইট টি তারমুখে মুখে মারতাম না। অনুতাপে ভুগলাম কিছুটা সময়  ধরে। সেদিনের পর থেকে আর চোখে পড়েনি সেই মেয়েটিকে।  এরপরে পরের মাসে আমার সে বিজিবি ক্যাম্প থেকে বদলি হয়ে যায়। পরে জহুরার আর দেখা মেলেনি। সে কেমন আছে জানিনা । তার ছোট্ট  বোনটিকে  সে বিয়ে দিতে পেরেছে কিনা তাও জানিনা। সে ভাল থাকুক এটাই আমার কামনা।

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা


বিষয়: রাজ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top