সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১


কনে দেখা : নুজহাত ইসলাম  নৌশিন


প্রকাশিত:
৩ নভেম্বর ২০২০ ২০:৫৯

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:৪৫

 

ইশ্, কি মিষ্টি মুখটা! এশা গভীর মনযোগ দিয়ে সামনে বসা চুপচাপ মেয়েটাকে দেখছে। একমাত্র  বড় ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা। একটু যাচাই তো করতেই হয়। তার ভাই তো আর যার তার মতো না। পুতুলের মতো একটা ভাবী না হলে কি চলে? সবাইকে দেখানোর মতো একটা ব্যাপার -স্যাপার আছে না।

মা, তোমার  নাম কি বললে জানি?

একটু আগেই  একবার নাম জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। এখন আবার একই প্রশ্ন। এশা এর মধ্যে  দু’গ্লাস লেবু আর মাল্টার শরবত খেয়ে ফেলেছে আর ভাবছে মেয়েটা কি তার ভাবী হবে?  হলে তো মন্দ  হয় না। লম্বায় যা একটু কম কিন্তু  বাকি সব তো একদম দশে নয়। এক পারসেন্টে তো কিছু  যায়  আসে না।  কিন্তু যার জন্য মেয়ে দেখা সেই তো গুম হয়ে বসে আছে। যেন পারলে মুখের উপর  বলে দেয় এই ছোটখাটো পুতুল মার্কা মেয়ে  আমার পছন্দ  হচ্ছে না। তার ভাই  আগেই  শর্ত দিয়েছিলো অবশ্য , বিয়ে আমি করবো তবে একটা-

এশার মা আগ্রহ ভরে বড় ছেলের দিকে তাকিয়ে  ছিলেন। তার হীরার টুকরো ছেলে না জানি কি বলে। এরকম ছেলে কি আর সহজে হয়। যেমন দেখতে তেমন বিদ্যা। হীরা একটা।

তবে একটা শর্ত, মেয়ে  লম্বা হওয়া চাই। কথাটা শুনে এশার মায়ের মন বোধহয়  একটু খারাপই হলো। তিনি নিজেও তেমন লম্বা না। গড়পড়তা হিসেবে ছোটখাটো মানুষই। তার ছেলে লম্বা মেয়ের আবদার  করছে। তার মেয়ে এশা বিয়ের বয়সী ,সব দিক থেকে  ঠিক। যা একটু লম্বা কম। কিন্তু  ছেলের বউ তো সব দেখে শুনে আনতে হবে।

কি নাম বললে,  মিতু?  ওহ হ। একটু জোরে বলবে তো। এশার মামা খসখস গলায় কথাটা শেষ করে মুখে পান ঠেসে দিলো। জঘন্য একটা দৃশ্য। এশার মনে হচ্ছে এরা মেয়েকে খামোখা হয়রান করছে। এক প্রশ্ন দুইবার, কোন মানে হয়!

কিরে তুই কোথায় যাচ্ছিস? এশার মা ভ্রূ কুঁচকে এশাকে কোন রকমে প্রশ্ন করে আবার মেয়ে দেখায় মনযোগ  দিলেন।  ভালো করে এখন দেখে বাসায় গিয়ে  বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে এই মেয়েকে কোনদিক থেকে বাদ দেওয়া  যায় । এই নিয়ে  চার নম্বর মেয়ে দেখা হচ্ছে । আগের তিনজনের কারো দাঁতের মাঝে ফাঁক, কারো চুল পড়া সমস্যা । এসব থাকলে তো হবে না। এখনকার মেয়ে গুলো কি যে। এত এত সমস্যা !  মার্কেটে কত সুন্দর মেয়ে দেখা যায় , খালি নিজের ছেলের বেলা দেখতে গিয়ে দেখলেন, সুন্দরী মেয়ের বড্ড বেশি আকাল।  

এশা ধীর পায়ে এক ঘর ভর্তি লোককে আড়াল করে চলে আসলো। বারান্দায় রেলিং এ ভর দিয়ে মনে হচ্ছে , আজ ভাদ্রের আকাশটা কেমন জানি। মন খারাপ  টাইপ। অথচ বাসা থেকে  বেরুনোর সময় ও কত আনন্দ  লাগছিলো।

মিস এশা ম্যাডাম, চিনি ক চামচ দেবো?

এশা পিছনে ফিরে চমকে গেলো।  কোনমতে সামলে বলল, বাহ্! তুমি  বেশ কাজের ছেলে তো।

জ্বি, ম্যাম। এখন বলুন চিনি ক চামচ? 

এশা গভীর চোখে তাকিয়ে বলল, দু চামচ। চোখ নামিয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে মনে হল সে যদি আজ না আসতো বেশ ভালো  হতো। যার অনুরোধে আসা সে দিব্যি বোনের বিয়ের জন্য আসা লোকজনদের সাথে ক্রমাগত হেসে কথা বলছে। আচ্ছা তার বড় ভাই তার বিয়ের সময় কি করবে? যদি তার ছোট বোনের বিয়ে হাইট কম বলে ভেঙে যেতে বসে! উফ্, আর ভাবাতে ভালো লাগছে না। এশা নিজের অজান্তেই মাথা ঝাকিয়ে শিউরে উঠলো।

নিন, চা।  আমার বোনকে কেমন দেখলেন?

মিষ্টি।  

কি, চা মিষ্টি? 

আরেহ্ না, আপনার বোন অনেক মিষ্টি মেয়ে ।

জুবায়ের আরেক কাপ চা নিজের জন্য  নিয়ে এশার পাশে রেলিঙে ভর দিয়ে  দাঁড়ালো। জানেন, আমার বোনটা না অনেক  সরল আর গভীর ভাবে মানুষকে ভালোবাসতে জানে। কিন্তু একটাই কমতি- আচ্ছা  বাদ দিই এসব কথা। চা টা খেয়ে নিন। আকাশ মেঘে ঢাকা  শাওন ধারা ঝরে। বৃষ্টি নামবে বলে।

চায়ে চুমুক দিয়েই মনটা ভালো হয়ে উঠলো। চায়ের গুণের জন্য না পাশে থাকা মানুষটার জন্য  কে জানে! নিজের অজান্তেই হেসে উঠলো এশা।

কি হলো, হাসছেন যে?

চা টা বেশ ভালো বানিয়েছেন।

এতে হাসির কি আছে? বুঝি না আপনাকে, এই বলে রেলিঙে ভর দিয়ে জুবায়ের হাসতে লাগল। হাসি জিনিসটাই এমন সংক্রামক ব্যাধি টাইপ। পাশাপাশি দাঁড়ানো মানব- মানবী অকারণেই হাসতে লাগলো।

মা, তোমাকে তো বলেছিলাম। তাই না? এশার অনুরোধে গেলে। এখন এশাকেই বলো ওদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতে।

আহহা, খোকা এমন করছিস কেন? মেয়েতো খারাপ না।

কি বলছো মা? এরচে আগের দেখা  তিনজন ভালো ছিলো। আমার হাইটের সাথে এই মেয়ে যায় কোনভাবে?  বলো তুমি?

রেহানার বেগম মুখ বিরস করে বললেন, তোর  বাবা ও তো অনেক  লম্বা, তা বলে আমার সাথে  কি বিয়ে  হয়নি?

খোকা মুখ বেশি রকম বিরক্ত  করে বলল, মা, এখানে তোমাদের কথা আসছে কেন? আর বাবা কি করেছেন বা করবেন এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তুমি  ওদের  না করে দাও। আমার ভালো  লাগছে না।

দিনের শুরুটা সুন্দর  হলেও, সব সময়  সুন্দর  হয় না। আজকের দিনটা যেমন। বুক ডিপ ডিপ করছে।‘ না ‘কথাটা বলা এত কঠিন কে জানতো?

ফোনের অপর পাশ থেকে উৎসাহী  গলা- ম্যাম, কি অবস্থা? চায়ে চিনি ঠিক ছিলো তো?  হা হা হা...

এই মানুষ টাকে এখন একটা মন খারাপের খবর দিতে হবে। ভাবতেই মন কেমন লাগছে।

আচ্ছা , শুনুন।

জ্বি, ম্যাম। বলুন।

আপনার বোন অনেক  মিষ্টি  কিন্তু  বাসায়  আসলে –

গভীর নীরবতা ভেঙে একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে অপর পাশ থেকে  কণ্ঠটা বলে উঠলো বুঝতে পারছি । এর আগেও দুই বার এরকম হয়েছে।

টু টু টু... কেটে গেলো।

অন্ধকার বারান্দায় দেয়াল ঘেঁষে এশা বসে রইল। ঘন ঘন মেঘ ডাকছে। মেঘ ডাকার শব্দ টা যেন আপ্রাণ চেষ্টা  করছে ওই গোটা কয়েক শব্দকে ঢাকার, ‘ এর আগেও দুই বার এরকম  হয়েছে’।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top