সিডনী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


ইসলামে ঈমান এবং আখলাক : হোসাইন মকবুল


প্রকাশিত:
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২২:৫৬

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:০৬

 

ইসলাম শব্দটি আমাদের সবার পরিচিত। ইসলাম একেশ্বরবাদী এবং আব্রাহামিক ধর্ম। ইসলাম কোরআন এবং নবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রদত্ত শিক্ষা পদ্ধতি এবং জীবনাদর্শ ( সুন্নাহ এবং হাদিস) অনুসরণে পরিচালিত। আল্লাহুর পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসুল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতকে এই ধর্ম পুনঃপ্রচার করেন। পবিত্র কোরআন ইসলাম ধর্মের মূল ধর্মগ্রহ্ন। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের মুসলমান বা মুসলিম বলা হয়।


ইসলাম শব্দটির উৎপত্তিগত অর্থ দুটি, এক. শান্তি, দুই. আত্মসমর্পণ করা। মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং বজায় রাখা ইসলামের অন্যতম আদর্শ। আত্মসমর্পণ অর্থ, এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করা।


ইসলামের মূল স্তম্ভ ৫ টিঃ

কালেমা (বিশ্বাস), নামাজ (প্রার্থনা), সিয়াম (উপবাস), যাকাত (দান) এবং হজ্ব (৯ জিলহজ্ব মক্কায় কাবা শরীফ প্রদক্ষিণ এবং আরাফাত ময়দানে অবস্থান)।
ইসলাম ধর্ম বিশ্বাসের মূল ভিত্তি আল্লাহর একত্বববাদ। ইসলামী বিশ্বাস মতে আদম (আঃ) হতে শুরু করে আল্লাহ প্রেরিত সকল পুরুষ ইসলামের বাণীই প্রচার করে গেছেন। কুরআনের সুরা ফাতিরে বলা হয়েছেঃ

হে নবী, তুমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র। আমি তোমাকে সত্যসহ  সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।। আর এমন কোন সম্প্রদায় নেই যাদের মধ্যে আমি আমার সতর্ককারী পাঠাই নি (২৩ঃ২৪)।


ইসলামের দৃষ্টিতে ইহুদি ও খৃষ্টান উভয় ধর্মাবলম্বীরাই ইব্রাহিম (আঃ) শিক্ষার ঐতিহ্য পরষ্পরা। উভয় ধর্মাবলম্বীকে কুরআনে ‘আহলে কিতাব’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। কুরআনে সুরা আল ইমরানে বলা হয়েছেঃ

(হে নবী, ওদের) বল, হে কিতাবিগণ, এসো সেই কথায় যা তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে এক, যেন আমরা আল্লাহ ব্যতীত কারও ইবাদত না করি, কোন কিছুকেই তার শরিক না করি, এবং আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ ব্যতীত উপাস্য হিসেবে গ্রহণ না করি। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বল, তোমরা সাক্ষী থাক অবশ্যই আমরা আল্লাহতে সমর্পিত হয়েছি। (৭:৬৪)।

ঈমান/আকীদাঃ

ঈমান অর্থ বিশ্বাস। আকীদা, বহুবচন আকাইদ একটি ইসলামী পরিভাষা যার অর্থ কিছু মূল ভিত্তির উপর বিশ্বাস। কুরআন এবং হাদীসে সর্বদা ‘ঈমান’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। দ্বিতীয় হিজরী শতক থেকে তাবিয়ী অর্থাৎ সাহবীদের ছাত্র ও পরবর্তী যুগের ঈমামগণ ধর্মীয় বিশ্বাসের খুটিনাটি বিষয় আলোচনার জন্য ঈমান ছাড়াও অন্যান্য কিছু পরিভাষা ব্যবহার করেন। এগুলোর মধ্যে আকীদাহ শব্দটিই অধিক প্রচলিত। চতুর্থ হিজরী শতকের পর থেকে এ পরিভাষাটির প্রচলন প্রাধান্য পায়।

ইসলামে ঈমান বা আকীদার একমাত্র উৎস হচ্ছে ওহী। ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে দু’প্রকারের ওহী প্রেরিত হয়েছে -- কিতাব (কুরআন) ও সুন্নাত (হাদীস)। কুরআন অনুসারে আল্লাহ রাসুলের প্রতি কিতাব ও হিকমত অবতীর্ণ করেছেন। হিকমতকে রাসুলের সুন্নাহ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। কুরআনের সাথে সুন্নাহর পার্থক্য হল, সুন্নাহর শব্দাবলী সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়, কিন্ত তথ্যসমুহ আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত।

মুমিন বা ঈমানদার হতে হলে একজন মানুষকে কি কি বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে তা মহান আল্লাহতালা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে তুলে ধরেছেন। এ ছাড়া রাসুলের হাদীসেও বিষয়টি ব্যাখা করা হয়েছে। ইসলামের পরিভাষায় এগুলিকে আরকানুল ঈমান বা ঈমানের স্তম্ভ বলা হয়। ঈমান বা আকীদার ৭ টি মৌলিক স্তম্ভঃ
এক, আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস
দুই, ফেরেশতাগণের উপর বিশ্বাস
তিন, আসমানী কিতাব সমুহের প্রতি বিশ্বাস
চার, নবী, রাসুলদের প্রতি বিশ্বাস
পাঁচ, পুনরুত্থানের অর্থাৎ আবার জীবিত হওয়ার প্রতি বিশ্বাস
ছয়, কিয়ামত, পরকাল বা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস
সাত, তাকদীর বা আল্লাহর নির্ধারণ ও সিদ্ধান্তের উপর বিশ্বাস।

সুরা বাকারায় মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেনঃ

পূর্ব এবং পশ্চিমে (দিক) তোমাদের মুখ ফেরানোর মধ্যে কোন পুণ্য নেই,  কিন্ত পুণ্য তার যে বিশ্বাস স্থাপন করেছে আল্লাহর প্রতি, পরকালের প্রতি, ফেরেশতাগণের প্রতি কিতাবসমুহ এবং নবীগণের প্রতি, এবং ধনসম্পদের প্রতি মনের টান থাকা সত্ত্বেও আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন অনাথ, অভাবগ্রস্থ, পথিক, সাহায্য প্রার্থনাকারীগণকে ও দাস মুক্তির জন্য অর্থ ব্যয় করে, এবং সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে, প্রতিশ্রুতি দিলে তা পূর্ণ করে, আর অর্থসংকটে, দুঃখ ও ক্লেশে ও সংগ্রাম, সংকটে ধৈর্য ধারণ করে - এরাই প্রকৃত সত্যপরায়ণ এবং এরাই মুত্তাকী। (সুরা বাকারাঃ ২২:১৭৭)
প্রকৃতপক্ষে, ইসলাম শুধু আনুষ্ঠানিকতার নাম নয়, ইসলাম হলো বিশ্বাস ও কর্মের সমন্বয়।

আখলাক/এহসানঃ

আখলাক বলতে সাধারণত আচার, আচরণ ও স্বভার চরিত্র বুঝায় যা মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং বিভিন্ন পরিবেশে অন্যদের সঙ্গে মেলামেশার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। এহসান শব্দের অর্থ সুন্দর করা। নিজেকে সুন্দর রাখা এবং অন্যেদের সঙ্গ একইভাবে সুন্দর ব্যবহার করা এহসানের অঙ্গ।  অন্যায়, অশ্লীলতা পরিহার করা, অসৎ কর্ম ও চিন্তা থেকে নিজেকে দুরে রাখা, হালাল ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ না করা- এসব ভালো কাজের মাধ্যমে জীবনকে পরিচ্ছন্ন এবং সুন্দর রাখা যায়। এহসান আখলাকেরই অংশ। আল্লাহতালা পবিত্র। কাজেই পবিত্র, ভালো এবং সুন্দর তাঁর নিকট গ্রহণযোগ্য। মানব জীবনের ব্যক্তিক, পারিবারিক এবং সামাজিক সকল দিকই আখলাকের অন্তর্ভুক্ত।

আখলাক দুই প্রকারঃ

এক, আখলাকে হামিদাঃ মানব জীবনের উত্তম গুণাবলীকে আখলাকে হামিদাহ বা প্রশংসনীয় চরিত্র বলে, যেমন, ধৈর্য, সততা, দেশপ্রেম, সমাজসেবা, প্রভৃতি।

দুই, আখলাকে যামিমাঃ মানব জীবনের খারাপ চরিত্রকে আখলাকে যামিমা বা নিন্দনীয় চরিত্র বলে, যেমন অহংকার, ঘৃনা, মিথ্যাচার, সুদ খাওয়া, ইত্যাদি।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, মুমিনদের মধ্যে সবার চেয়ে পূর্ণ মুমিন ঐ ব্যক্তি যে চরিত্রে সবার চেয়ে সুন্দর। (তিরমিযী)।


হোসাইন মকবুল
রাজশাহী

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top