সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১

একই উঠানে মসজিদ ও মন্দির: লালমনিরহাটে সম্প্রীতির অনুপম দৃষ্টান্ত : আবু আফজাল সালেহ


প্রকাশিত:
৩১ অক্টোবর ২০২০ ২০:৫১

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৪৬

ছবিঃ একই উঠানে মসজিদ ও মন্দির

 

‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’- এ নীতি মেনেই লালমনিরহাট শহরের পুরাণ বাজারের কাছেই রয়েছে মসজিদ ও মন্দির। এখানেই মসজিদ ও কালীবাড়ি দুর্গা মন্দির একই উঠানে। প্রধান দুই ধর্মের লোকজন প্রার্থনার জন্য একই ক্যা¤পাস ব্যবহার করে থাকেন। দুটি প্রতিষ্ঠানের দেওয়াল পাশাপাশ; প্রায় লাগোয়া। এ এক ধর্মীয় সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত- ভাবতেই ভালো লাগা জাগে।

ভোরে ফজরের সময় মোয়াজ্জিমের কণ্ঠে মিষ্টি আজান শেষে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করে চলে যাওয়ার পরে ঠিক পাশেই মন্দিরে শোনা যায় উলু ধ্বনি! পূজা-অর্চনার অনুষ্ঠান। এমনই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন বহন করছে  শতবর্ষী মসজিদ ও মন্দির দুটি। মসজিদের মুয়াজ্জিন মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, ‘আমাদের এখানে একই উঠানে দুইটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। একটা মসজিদ ও আরেকটা মন্দির। এখানে আমরা যারা মুসলমান এবং হিন্দু ভাইয়েরা আছি যে যার ধর্ম সুষ্ঠুভাবে পালন করছি। আমরা নামাজ পড়ছি, তারা পূজা করছে। কেউ কারও ধর্মে কোনও হস্তক্ষেপ করছি না। আমাদের মাঝে ধর্মীয় আচার-বিধি পালন করা নিয়ে কোনও দ্বন্দ নেই।’

ছবিঃ শারদীয় দুর্গা পূজার সময়

সাপ্তাহিক লালমনিরহাট বার্তার স¤পাদক ও  একাত্তরের গেরিলা কমান্ডার এস এম শফিকুল ইসলাম কানু জানান, ‘১৮৩৬ সালে দুর্গা মন্দির প্রতিষ্ঠার আগে এখানে কালী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় পুরাণ বাজার এলাকা অনেকের কাছে কালীবাড়ি নামে পরিচিত হয়ে উঠে। এরপর মন্দির প্রাঙ্গণে ১৯০০ সালে একটি নামাজ ঘর নির্মিত হয়। এ নামাজ ঘরটিই পরবর্তীতে পুরাণ বাজার জামে মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে। এরপর থেকে কোন বিবাদ ও ঝামেলা ছাড়াই সম্প্রীতির সঙ্গে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করে আসছে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ।’ দুর্গাপূজার সময় ঢাক ঢোল ও বাদ্য যন্ত্র বাজানো নিয়ে সমস্যা হয় না। মসজিদ ও মন্দির কমিটির সদস্যরা বসে ঠিক করে নেই কখন এবং কিভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করা হবে। নামাজের সময়গুলোতে সকল প্রকার বাদ্য বাজনা বন্ধ রাখা হয় এবং নামাজ শেষে মুসুল্লিরা দ্রুত মসজিদ ত্যাগ করে পূজারীদের জন্য সুযোগ করে দেন। এটাই এখানে নিয়ম। এসব তথ্য যোগ করেন আরও কয়েকজন।

এলাকাবাসীর কয়েকজন জানান, দীর্ঘ দিন ধরে একই উঠানে মসজিদ মন্দির হলেও উভয় ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির বন্ধনে থেকে স্ব স্ব ধর্ম পালন করে আসছেন। কিন্তু ধর্ম পালন নিয়ে কখনও কোন বাক-বিতণ্ডাও হয়নি বলে জানা যায়। শালীনতা বজায় রেখেই একই উঠানে দীর্ঘদিন বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছেন উভয় ধর্মের মানুষ।

ছবিঃ শারদীয় দুর্গা পূজার সময়

মন্দিরটিতে রয়েছে শ্রী শ্রী কালী মূর্তি, দেবাদিদেব মহাদেব, শ্রী শ্রী বাবা লোকনাথ। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় স্বাভাবিক নিয়মে চলছে পূজার্চনা(করোনার আগে)। এখানে রয়েছে শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির। প্রতিবছর জাঁকজমক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় শারদীয় দুর্গা পূজা। ধর্মীয় সম্প্রীতি কি, ধর্মীয় সম্প্রীতি কাকে বলে আর তা কেমন হওয়া উচিৎ এটা জানার জন্য, দেখার জন্য সবার এখানে আসা উচিৎ। মন্দিরের পুরোহিত সঞ্জয় কুমার চক্রবর্তী বলেন,‘মন্দিরে নিয়মিত পূজার্চনা হয়। আজান ও নামাজের সময় বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ রাখা হয়। ধর্মীয় সম্প্রীতির বিঘ্ন ঘটে এমন অবস্থার মধ্যে আমাকে কোনদিনই পড়তে হয়নি। বরং স্থানীয় মুসল্লিদের সহযোগিতা পেয়ে আসছি।’


উভয় ধর্মের বাসিন্দারা এটা নিয়ে গর্ব করেন। লালমনিরহাটে দুবছর চাকুরি করার সুযোগে আমি নিজেও তা লক্ষ্য করেছি। পৃথিবীজুড়ে চলমান সহিংসতা আর সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের সংবাদের মধ্যে এমন দৃশ্য নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। একই আঙ্গিনায় মন্দির ও মসজিদ স্থাপন করেছে ধর্মীয় সম্প্রীতির বিরল দৃষ্টান্ত।


যাতায়াত:

ঢাকা থেকে বাস ও ট্রেনে লালমনিরহাট যাওয়া যাবে। লালমনি এক্সপ্রেস কমলাপুর থেকে রাতে ছেড়ে সকালে লালমনিরহাটে পৌঁছায়। এছাড়া কুড়িগ্রাম এক্স. অথবা রংপুর এক্সপ্রেসে রংপুর/কাউনিয়া নেমে বাস/ট্রেনে লালমনিরহাট। লালমনিরহাট হচ্ছে রেলের বিভাগীয় শহর। এরপর রিক্সা/অটোতে পুরান বাজারের ঐতিহাসিক এ স্থানে যাওয়া যাবে।

থাকা ও খাওয়া:

থাকা ও খাওয়ার জন্য মধ্যমমানের কিছু হোটেল রয়েছে মিশন মোড় ও রেলগেটের কাছাকাছি। ঐতিহাসিক স্থানের ঠিক কাছেই বহুতল খাঁন আবাসিক হোটেলে বিলাসী থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা আছে।    

 

আবু আফজাল সালেহ
কবি ও প্রাবন্ধিক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top