সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

একা এবং একা (পর্ব তের) : আহসান হাবীব


প্রকাশিত:
৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২২:৪৭

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৩৫

 

(আহসান হাবীব মূলত একজন প্রফেশনাল কার্টুনিস্ট। তিনি পেশাগত কারণে সাধারনত কমিকস, গ্রাফিক নভেল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করেন। তিনি যখন লিখেন তখন তার মাথায় থাকে কমিকস বা গ্রাফিক নভেলের কনটেন্ট। তার গল্পের পিছনে থাকে স্টোরি বোর্ডের মত ছবির চিত্রকল্প। এই কারণেই তার লেখায় একটা সিনেমাটিক ড্রামা থাকে প্রায়শই। তিনি মনে করেন যেকোনো গ্যাজেটেই/ফরম্যাটেই হোক, স্ক্রিনে যে গল্প পাঠক পড়ছে, সেখানে তার সাব-কনসান্স মাইন্ড ছবি খুঁজে। আর তাই ‘প্রভাত-ফেরী’র পাঠকদের জন্য তার এই ধারাবাহিক ইন্ডি নভেল ‘একা এবং একা ’ )

 

পর্ব- তের

চারদিন পর বিরুনদা নদী থেকে মজিদ স্যারের লাশ উদ্ধার করল পুলিশ। এ খবর সরযুবালা বিদ্যানিকেতনে পৌঁছাতে খুব বেশী সময় লাগলো না। হাউ মাউ করে সবচে বেশী কাঁদল স্কুলের দপ্তরী কুদ্দুস। কাঁদতেই পারে। তার চাকরীদাতা চাচা;  হোক সম্পর্ক দূরের। শেষ পর্যন্ত এসিসটেন্ট হেড স্যার আব্দুর রহমান সাহেব এসে কুদ্দুসকে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ঠান্ডা করলেন।

কুদ্দুস ফোপাতে ফোপাতে কোন রকমে বলল, চাচা নেই এই স্কুলে তার পক্ষে আর কাজ করা সম্ভব না...  ইত্যাদি ইত্যাদি।

 

দুদিন পরে স্বাভাবিক ভাবেই স্কুলে মিটিং বসল। স্কুল কমিটির মেম্বাররা সব আসলেন। স্কুলের হেড স্যারের দায়িত্ব নিবে কে? রহমান স্যারের নামই সবার আগে আসল। নিয়ম অনুসারে এসিসটেন্ট হেড স্যার হিসেবে তার নামই আসে। কিন্তু সেদিনই নিরুবালা আচার্য্য নামে এক মধ্য বয়সী মহিলা আসলেন স্কুলে। চোখে নিকেলের চশমা। সুচিত্রা সেনের মত মিষ্টি চেহারা। সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি জানালেন, তিনি মালয়েশিয়া থেকে এসেছেন। তার নাম নিরুবালা আচার্য্য।  তিনি সরযুবালা বিদ্যানিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা মানবেন্দ্র দাসের ভাস্তি।

-কাকা যে গতকাল মারা গেছেন আপনারা জানেন?

সবাই এক সঙ্গে চমকালো। স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা হেড স্যার নেই আর স্কুলের কেউ জানে না? ছি ছি কি কান্ড!! 

 

সরযুবালা বিদ্যানিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা হেডস্যার মানবেন্দ্র দাসের মৃত্যুতে স্কুলে দুদিন শোক পালক করা হল। একদিন স্কুল বন্ধ থাকল। স্কুল খোলার পর স্কুলের দায়িত্ব নিলেন হেড স্যারের ভাস্তি নিরুবালা আচার্য্য। তিনি মালয়েশিয়া থেকে পাকাপাকি ভাবে চলে এসেছেন। বিষয়টা সবাই আনন্দের সঙ্গেই মেনে নিলেন। নিরুবালা আচার্য্যের চেহারা ব্যাবহার সব মিলিয়ে তিনি যেন স্কুলের সবাইকে সম্মোহিত করে ফেললেন। সবাই ভাবল, হ্যাঁ ইনাকেই দরকার এই মুহুর্তে এই স্কুলে। শুধু ভিতরে ভিতরে ফুঁসতে লাগলে এসিসটেন্ট হেড স্যার আব্দুর রহমান। একদিন টিচার্স রুমে তিনি বলেই ফেললেন-

-উনি যে মানবেন্দ্র স্যারের ভাস্তি তার প্রমান কি? মালয়েশিয়া মুসলিম রাস্ট্র, উনি হিন্দু মহিলা ঐ দেশে তিনি কি করতেন?

অবশ্য তার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার কেউ প্রয়োজন বোধ করল না। হঠাৎ মাসুমা ম্যাডাম বলেই ফেললেন

-নিরুবালা ম্যাডাম কি সুন্দর না?
-সুন্দর ধুয়ে পানি খাব আমরা? আমাদের এখন দরকার এডমিনেস্ট্রেশন... কড়া এডমিনেস্ট্রশেন।

এবারও তার প্রশ্নের উত্তর কেউ দিল না। মনিকা ম্যাডামের খুব বিরক্ত লাগছিল। বোঝাই যাচ্ছে প্রধান শিক্ষক না হতে পারার ক্ষোভটা উনি আর তার ভিতওে ধরে রাখতে পারছেন না। আব্দুর রহমান সাহেব অবশ্য থামলেন না। গলার রগ ফুলিয়ে ফের বলতে শুরু করলেন-

-আরেকটা জিনিষ খেয়াল করুন। মানবেন্দ্র স্যারের পদবী দাস আর উনার ভাস্তি আচার্য্য । তিনি আচার্য্য হলেন কিভাবে?... এ্যাঁ? হিন্দুদের কাস্টের একটা ব্যাপার আছে না?

-আরে বাবা নিশ্চয়ই উনার বিয়ের পর পদবী বদলেছে। বললেন ড্রইং টিচার ঢালি স্যার

-কই উনার স্বামীকেতো দেখলাম না
-কি আশ্চর্য উনি কি এখন স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে স্কুল করবেন নাকি? এবার সবাই হো হো করে  হেসে উঠল। থতমত খেয়ে গেলেন রহমান স্যার।

এ সময় দরজায় কুদ্দুসের মাথা দেখা গেল

-স্যার?
-কি?
-ম্যাডাম আপনেরে ডাকে।
-আমার এখন ক্লাশ আছে আমি এখন উনার সাথে আড্ডা মারতে যাব নাকি?
-আড্ডা মারতে ডাকে নাই ম্যাডাম কি কামে যেন ডাকছে আপনেরে।

কুদ্দুস হয়ত কথাটা ভেবে বলে নি। তবে দ্বিতীয় দফায় সবাই হেসে উঠল। রহমান স্যার ফ্যাকাশে মুখে রাগে কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাড়ালেন। সবাই হাসি হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ড্রইং টিচার ঢালি স্যারের মুখটা একটু বেশী হাসি হাসি মনে হল রহমান স্যারের, এই ফাজিল লোকটাকে একদিন একটা শিক্ষা দিতে হবে...। তবে আব্দুর রহমান স্যার আর দাড়ালেন না ঝড়ের বেগে বের হয়ে গেলেন টিচার্স রুম থেকে।   

 

-ম্যাডাম ডেকেছেন?
-জি আসুন বসুন। একটা ব্যাপারে ডেকেছি। আমি আসলে স্কুলের কাগজপত্র সবকিছুতে একটু চোখ বুলাচ্ছিলাম। আপনার ফাইলে দেখলাম। ডিগ্রী আর মাস্টার্সের সার্টিফিকেট দুটো নেই। আপনি জমা দেন নি?
-কই না দিয়েছিলাম তো।
-না নেই। এই যে আপনার ফাইল আপনি চেক করুন। রহমান স্যার ঢোক গিলে ফাইল নেড়ে চেড়ে দেখতে লাগলেন।
-হয়ত ভুল করে দেয়া হয়নি। আপনি আগামী কাল ফটো কপি পাঠিয়ে দিলেই হবে।
-জি আচ্ছা। যাই তাহলে ক্লাশ আছে ।
-একটু বসুন। রহমান স্যার টের পেলেন তার গলার ভিতরটা শুকিয়ে আসছে। এই মহিলার ভিতর কিছু একটা আছে। চট করে ধরা যায় না। তার প্রবল ব্যক্তিত্বের সামনে দুর্বল চিত্তের যে কেউ কুকড়ে যেতে বাধ্য।
-সপ্তাহে আপনার ক্লাশ কয়টা?
-এ্যাঁ ইয়ে... প্রতিদিন তিনটা ক্লাশ করে সপ্তাহে তিন ছয় আঠারটা
-কিন্তু গত মাসে আপনি দেখছি মাত্র ছ’টা ক্লাশ নিয়েছেন
-না না কি বলছেন ম্যাডাম? হয়ত ক্লাশ এটেনডেন্ট খাতায় আমার সাইন করা হয় নাই
-কেন?

রহমান স্যার মনে মনে বললেন ‘সাইন করব কি ? ঐ হারামজাদা মজিদের চামচা কুদ্দুস কি এটেনডেন্ট খাতা ঠিক মত দেয় যে তিনি সাইন করবেন?’ মুখে বললেন-

-ম্যাডাম গতমাসটা বড্ড ঝামেলার একটা মাস ছিল। মজিদ স্যার ঠিকমত আসেন নি স্কুলে। খাতা-পত্রতো সব উনার রুমেই থাকে...
-আচ্ছা আপনি আসুন। কুদ্দুস??
-জি ম্যাডাম।

কুদ্দুসের একটা সমস্যা হয়েছে এই ম্যাডামের চোখের দিকে সরাসরি তাকাতে পারে না। মনে হয় এই ম্যাডাম তার ভিতরের  সব কিছু দেখে ফেলছে। এই স্কুলে আর এক মুহুর্তে থাকা সম্ভব না। আজ কালের মধ্যেই চাকরীতে ইস্তফা দিতে হবে। কারণ সে কয়েকটাা ঠিক করেছে ১) বেতন বন্ধ। সে গরীব মানুষ বেতন ছাড়া চলবে কিভাবে? মেস ভাড়া বাকি পড়েছে দুই মাস ২) মজিদ স্যার তার চাকরীদাতা, তিনি নেই । তার জন্য তার মন আর এই স্কুলে টিকছে না। ৩) মা অসুস্থ্য মার কাছে থাকা দরকার...          

এর মধ্যে একদিন পুলিশের  একটা পিকাপ ভ্যান এসে থামল স্কুল কম্পাউন্ডে। পুলিশ এসেছে সাবেক প্রধান শিক্ষক মজিদ স্যারের  মৃত্যুর ব্যাপারে তদন্ত করতে।  সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুন প্রধান শিক্ষিকা নিরুবালা আচার্য্য ব্যবস্থা  করে দিলেন;  টিচার্স রুমে ওসি সাহেব যাকে যাকে মনে করেন তাকে তাকে ডেকে প্রশ্ন করবেন।  প্রথমেই ডাকা হল এসিসটেন্ট হেড মাস্টার আব্দুর রহমান স্যারকে।

-আপনি মজিদ সাহেবকে কতদিন ধরে চিনেন?
-খুব বেশী দিন না। এই স্কুলে ঢোকার পর থেকে।
-কবে ঢুকেছেন এই স্কুলে?
-আট মাস
-আগে কোথায় ছিলেন?
-আগে একটা ব্যাংকে ছিলাম
-ব্যাংকার থেকে টিচার?
-টিচিংয়ে আমার একটা ট্রেনিং আছে... নিমকোতে একটা কোর্স করেছি...
-মজিদ সাহেবের  মৃত্যুর পরতো আপনারই হেড মাস্টার হওয়ার কথা ছিল তাই না ? এই প্রশ্নে কেমন যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন রহমান স্যার। তোতলাতে তোতলাতে বললেন ‘ কি বোঝাতে চাচ্ছেন আপনি?’
-কিছু বোঝাতে চাচ্ছি না। আপনার কি মনে হয় মজিদ সাহেবেকে কে মারতে পারে?
-আমি কি করে বলব?
-স্কুলে কারো সাথে তার কি মনো-মালিন্য হয়েছিল? বা স্কুলের বাইরে কারো সাথে ?
-আমার জানা নাই
-আপনার কাউকে সন্দেহ হয়?
-না
-জোড়া খুনের আসামী মারুফ স্যারকে আপনি পেয়েছিলেন?
-এ্যাঁ হ্যাঁ... দু একবার দেখা হয়েছে উনার সাথে
-কথা হয় নাই?
-না।
-উনার সাথে কোনো যোগাযোগ আছে?
-উনার সাথে যোগাযোগ থাকবে কেন?
-আচ্ছা আপনি আসুন। স্কুলের পিয়ন আর দারোয়ানদের একটু পাঠান

 

কুদ্দুস ঢুকেই ‘স্যারগো’ ‘স্যারগো’ বলে  হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলো । ওসি সাহেব তাকে কাঁদতে দিলেন। তারপর কান্না একটু থামলে ঠান্ডা স্বরে বললেন-

-কি তোমার পুরস্কারের টাকা নিতে তো আর থানায় আসলানা?
-স্যার ট্যাকা দিয়া আর কি হইব? আমগো হেড স্যার নাই...
-নাকি তার থেকে বেশী টাকা তোমার হাতে আসছে?
-কি ক্কি বলেন স্যার?
-তুমিতো ঐ দিন ব্যাংক থেকে টাকা তুলছিলা...?
-জি স্যার স্যার-ম্যাডামগো বেতনের টাকা, সাথে তৈয়ব চাচাও ছিল। ঐ টাকা হেড স্যারের হাতে দিছি... তৈয়ব চাচা জানে। সেই স্যারের সাথে শেষ দেখা। বলে ফের হাউ মাউ খাউ করে কাঁদতে লাগল।

-তুমি যে এত কাঁদলা চোখ দিয়াতো এক ফোটা পানি বার হল না ঘটনা কি? কুদ্দুস মাছের চোখে তাকিয়ে থাকল ওসি সাহেবের দিকে বাকরুদ্ধ হয়ে। ওসি সাহেব আরো দুয়েকজন শিক্ষকের সাথে কথা বলে চা-সিঙ্গারা খেয়ে বিদেয় হলেন বিকেল তিনটার দিকে। সেদিন আর কোনো ক্লাসই হল না স্কুলে। ছুটি হয়ে গেল।

-কিরে আপু আজ সকাল সকাল ছুটি যে?
-আজ স্কুলে পুলিশ এসেছিল?
-কেন? মারুফ স্যারের ব্যপারে?
-না মজিদ স্যারের ব্যাপারে সবাইকে ডেকে ডেকে জিজ্ঞেস-টিজ্ঞেস করলো
-তোদেরও?
-না মেয়ে শিক্ষকদের ডাকে নি। শুধু ছেলেদের।
-বাহ মজাতো
-মজা কেন?
-তোদের ডাকল না মজা না। আচ্ছা মারুফ স্যারের পরে কি হল আপু?
-আমি জানি না।
-আচ্ছা আপু কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?
-বল
-মারুফ স্যারের কথা বললেই তুই লাল হয়ে যাস কেন? তুই নির্ঘাত প্রেমে পড়েছিস তাইনা? লুনাটিক লাভ বলা যায়
-ভাগ, ফাজিল একটা।

ছোট বোন শর্মি চলে গেলে পরে মনিকার মনে হল। মারুফের সাথে প্রেম-ভালবাসার হওয়ার মত ঘনিষ্ঠতা তার কখনই ছিল না। বরং মনিকা খারাপ ব্যবহারই করেছে লোকটার সঙ্গে । একটা কথা শর্মিকে বলা যেত, সেটা হচ্ছে মানুষে মানুষে প্রেম-ভালবাসা হয় আসলে সবসময় বিপরীত লিঙ্গ বিষয়ক আকর্ষনের কারণে না। আসলে মানুষ মনে হয় রহস্য পছন্দ করে বিশেষ করে মেয়েরা বেশী রহস্য প্রিয়। ছেলেদের ভিতর তারা রহস্য খোঁজে! মারুফ লোকটার ভিতর অনেক রহস্য ... কেন এমনটা মনে হল মনিকার কে জানে। মনিকার গলার কাছটা কেমন ব্যথা ব্যথা লাগছে।

মৃত্যু পর্যন্ত লোকটাকে জেল খাটতে হবে? আহা... জীবন এমন কেন? রহস্যময় লোকটা এখন জেলখানার ভিতর কি করছে কে জানে! মনিকার বড্ড জানতে ইচ্ছে করে।

লোকটা বুদ্ধিমান, অন্তত মারুফের তাই মনে হল। সেদিনের ভাঙাভাঙির পর থেকে লোকটা আড়ালে চলে গেছে। মারুফ এখন নিয়মিত খাবার পাচ্ছে। ভিতরের পরিবেশ শান্ত। জেলখানার খাবার ক’দিন ধরে আসছে বাইরে থেকে। খাবারের মানও মনে হচ্ছে বেশ ভাল। মাঝে মধ্যেই সেই আম গাছ তলায় মারুফ এসে বসে। মারুফ একা না আরো অনেকেই মুখ চেনা আসামীরা এসে বসে। সেই অধ্যাপক সাদৃশ্য ভদ্রলোকও আসেন মাঝে মধ্যে; দুজনের মধ্যে  ভাব বাচ্যে কথা হয়

-আজকের আবহাওয়াটা বেশ। আকাশের দিবে তাকিয়ে বললেন প্রফেসর
-হ্যাঁ বেশ বাতাস, গুমোট ভাবটা আর নেই।

-আছে, গুমোট ভাবটা আছে... প্রফেসর বিশেষ চোখে তাকায় মারুফের দিকে ‘আমি ভিতরের গুমোটের কথা বলছি ...’

-বুঝতে পারছি। হাসে মারুফ।
-প্রস্তুত থাকা ভাল। আজ রাতে কারেন্ট থাকবে না। বিদ্যূতের কাজ হচ্ছে মেইন লাইনে। সুযোগটা নিতে পারে কেউ। মারুফ অবাক হয়, এই লোকটা আগে থেকেই অনেক কিছু জেনে যায় কিভাবে?
-অন্ধকারেই মানুষের প্রকৃত চেহারা বেরিয়ে আসে।

কথাটা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে লোকটা। যাকে মারুফ মনে মনে প্রফেসর ডাকতে শুরু করেছে। একদিন লোকটাকে তার নাম জিজ্ঞেস করতে হবে। ভাবে মারুফ। লোকটা তখনও আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবছে।

 

প্রফেসরের কথাই ঠিক। ঠিক সন্ধ্যার আগে আগে কারেন্ট চলে গেল। নিজের সেল এ যাওয়ার সময় টের পেল দুজন কয়েদী তাকে অনুসরন করছে। তাদের মধ্যে সাড়ে ছ’ফিট  লম্বা লোকটা নেই। তবে নিশ্চয়ই আশে-পাশেই কোথাও আছে সে। প্রকৃতিতে হায়েনারা যেমন  জানে তার ভয়ঙ্কর চোয়াল নিয়ে অপেক্ষা করাই উত্তম, কারণ সুযোগ এনে দিবে অন্যরা। মারুফ ফিস ফিস করে নিজেকে বলল ‘আমাকে অনুসরণ করো না। আমি তোমাদের পথ দেখাতে পারব না। আমার সামনেও যেও না আমি তোমাদের পথ প্রদর্শক হিসেবেও হয়ত মেনে নিতে পারব না ... বরং আমার দু পাশে আস...’ সত্যি সত্যিই তারা দু পাশ থেকে আক্রমনটা করল। বাক্যটা কার মনে করার চেষ্টা করতে করতে মারুফ প্রথম আক্রমনটা প্রতিরোধ করল দু হাতে। নিজের শক্ত দু হাতের উপর আস্থা আছে মারুফের। যারা আক্রমন করেছে এরা কেউ অতটা পেশাদার না। মারুফ নিজেই কি পেশাদার? তবে মারুফ জানে... তার কোরিয়ান ট্রেনার হো চি কিম শিখিয়েছে ‘যদি প্রথম আঘাতকে প্রতিরোধ করতে পার সঠিকভাবে, তবে ধরে নাও  দ্বিতীয় আঘাতটা হানবে তুমি ...!’

 

(চলবে)

একা এবং একা - পর্ব এক
একা এবং একা - পর্ব দুই
একা এবং একা - পর্ব তিন
একা এবং একা - পর্ব চার
একা এবং একা - পর্ব পাঁচ
একা এবং একা - পর্ব ছয়
একা এবং একা - পর্ব সাত
একা এবং একা - পর্ব আট
একা এবং একা পর্ব- নয়

একা এবং একা - পর্ব দশ
একা এবং একা - পর্ব এগারো
একা এবং একা - পর্ব বারো

লেখক: আহসান হাবীব
কার্টুনিস্ট/ সম্পাদক
উম্মাদ, স্যাটায়ার কার্টুন পত্রিকা
 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top