সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০

দ্যা প্রফেট (নবম অনুচ্ছেদ) : কাহলীল জীবরান 


প্রকাশিত:
২০ জানুয়ারী ২০২১ ১৭:৪০

আপডেট:
২০ জানুয়ারী ২০২১ ১৮:১২

ছবিঃ কাহলীল জীবরান এবং অনুবাদক রোজীনা পারভীন বনানী 

 

মূল: কাহলীল জীবরান 
অনুবাদ: রোজীনা পারভীন বনানী 

 

ঊনবিংশতি

তারপর একজন পণ্ডিত ব্যক্তি বললেন, আমাদের কথোপকথন সম্বন্ধে বলুন।

তিনি উত্তরে বললেন:

যখন তোমার চিন্তা তোমার শাস্তি ভঙ্গ করে তখন তুমি কথা বল; এবং যখন তুমি তোমার হৃদয়ের নিস্তব্ধতায় বাস করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড় তখন তুমি তোমার ঠোঁটে বাস কর, এবং শব্দ একটা বৈচিত্র্য এবং একটা বিনোদন এবং তুমি যত বেশি কথা বলবে, তোমার চিন্তার অর্ধেক নিহত হবে।

চিন্তা মহাশূন্যের একটা পাখি, যা একটা শব্দের বাক্সের ভিতর এর ডানা মেলে দিতে পারে কিন্তু উড়তে পারে না। তোমাদের ভিতর তারাও আছে যারা একা থাকার ভয়ে বাঁচাল লোককে খোঁজে। শব্দহীন একাকীত্ব তাদের চোখে তাদের নগ্ন সত্তাকে উদঘাটন করে এবং তারা সেখান থেকে পালাতে চায়।

তোমাদের মাঝে তারাও আছে যারা কথা বলে, এবং কোন জ্ঞান এবং পূর্বধারণা ছাড়াই একটা সত্যকে প্রকাশ করে যা তারা নিজেরাই বুঝতে পারে না এবং তারাও আছে যাদের ভিতর সত্য আছে, কিন্তু তারা এটা শব্দে প্রকাশ করে না।

এই সমস্ত মানুষের বক্ষে আত্না শব্দহীন ছন্দের ভিতর বাস করে। যখন তুমি রাস্তার ধারে বা বাজারে তোমার বন্ধুর সাক্ষাত পাবে, তোমার ভিতরের চাঞ্চল্য যেন তোমার ঠোঁটের দিকে প্রবাহিত হয়ে সরাসরি তোমার জিহ্বাকে পরিচালিত করে। আত্মার স্বর তোমার কন্ঠস্বর হয়ে যেন তার কানের মর্মস্হলে কথা বলে; তার আত্মা তোমার হৃদয়ের সত্যকে ধারণ করবে যেভাবে মাদকের স্বাদকে স্মরণ করা হয়। যখন সেই মাদকের রঙও বিস্মৃত হয়ে যায় এবং সেই পাত্রও আর থাকে না।

 

বিংশতি

একজন জ্যোতির্বিদ বললেন, প্রভু, সময় কী? 

তিনি উত্তর দিলেন:

তুমি সময়কে পরিমাপ করবে অপরিমেয় এবং পরিমাপহীন ভাবে। তুমি তোমার স্বভাবকে ঘন্টা ও ঋতুর সাথে খাপ-খাওয়াবে এবং সেই অনুসারে তোমার আত্মার গতিকে পরিচালনা করবে। সময়কে দিয়ে তুমি একটি ঝরনা তৈরি করতে পার যার তীরে বসে তুমি এর প্রবাহ লক্ষ্য করতে পারবে। তথাপি তোমার ভিতরে যে অশেষ বাস করে সেও জীবনের অসময়সাপেক্ষতার ব্যাপারে সতর্ক, এবং জানে যে গতকাল হচ্ছে আজকের স্মৃতি এবং আগামীকাল হচ্ছে আজকের স্বপ্ন।

যা তোমার ভিতর ধ্যান করে এবং গান গায় তা এখনও অগণিত নক্ষত্রকে মহাশূণ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার সেই প্রথম মুহূর্তের ভিতর বাস করে। তোমাদের ভিতর কে তার নিজের ভিতরের সীমাহীন ভালবাসার ক্ষমতাকে অনুভব করে না? তথাপি কে তার জীবনের কেন্দ্রবিন্দুকে বেষ্টন করে রাখা সীমাহীন ভালবাসাকে অনুভব করে না, এবং ভালবাসার চিন্তা থেকে ভালবাসার চিন্তায় চলাচল করে না, অথবা ভালবাসার কাজ থেকে অন্য ভালবাসার কাজে? এবং সময় কি ভালবাসার মতই অবিভক্ত এবং পদক্ষেপহীন নয়?

কিন্তু যদি তোমার চিন্তায় তুমি সময়কে ঋতুর হিসাবে পরিমাপ কর, তাহলে খেয়াল রেখো যেন প্রত্যেক ঋতুই অন্যান্য সব ঋতুর চারিদিকে আবর্তন করে, এবং যেন আজকের দিন গতদিনের স্মৃতিকে সাগ্রহে আলিঙ্গন করে রাখে এবং ভবিষ্যৎকে ব্যাকুল আকাঙক্ষা।

 

একবিংশতি

নগরীর বয়োজ্যেষ্ঠ লোকদের একজন বললেন, আমাদের পাপ এবং পূণ্য সম্বন্ধে বলুন ।
এবং তিনি উত্তর দিলেন:

তোমার ভিতরের পূণ্য সম্বন্ধে আমি বলতে পারি, কিন্তু পাপ সম্বন্ধে নয়। পূণ্যের নিজের ক্ষুধা এবং তৃষ্ণার দ্বারা যন্ত্রণা প্রাপ্তিই কি পাপ নয়? প্রকৃতপক্ষে যখন পূণ্য ক্ষুধার্ত হয় তখন খাদ্য খোঁজে এমনকি অন্ধকার গুহায়ও এবং যখন তৃষ্ণার্ত হয় তখন নষ্ট পানিও পান করে। যখন তুমি তোমার নিজের সঙ্গে একাত্ম হয়ে থাকো তখন পূণ্যবান। তথাপি যখন তুমি তোমার নিজের সঙ্গে একাত্ম হয়ে থাকো না তখনও তুমি পাপী নও ।

একটি বিভক্ত বাড়ি চোরের আড্ডাখানা নয়; এটা শুধুমাত্র একটা বিভক্ত বাড়িই। একটা জাহাজ মাস্তুল ছাড়া বিপদসংকুল দ্বীপের ভিতর লক্ষ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াবে তথাপি গভীর তলদেশে তলিয়ে যাবে না। যখন তুমি নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করবে তখন তুমি সৎ। যখন তুমি নিজের জন্য কিছু উপার্জন করবে তখনও তুমি মন্দ নও। যখন তুমি কোন কিছু উপার্জনের চেষ্টা কর তখন তুমি যে শিকড় পৃথিবীকে দৃঢ়ভাবে আকঁড়ে থাকে এবং এর বক্ষ থেকে রস শুষে নেয় তার মত ।

নিশ্চয়ই গাছের ফল কখনো শিকড়কে বলতে পারে না, “আমার মত হও, পরিপূর্ণভাবে পরিপক্ব হও এবং সর্বদা তোমার প্রাচুর্যতাকে বিলিয়ে দাও” । ফলের কাছে বিলিয়ে দেওয়াটা একটা প্রয়োজন, তেমনিভাবে শিকড়ের কাছে গ্রহণ করাটা প্রয়োজন। তখন তুমি সৎ যখন পরিপূর্ণ জাগ্রত অবস্থায় কথা বল। তথাপি তখনও তুমি মন্দ নও যখন তুমি ঘুমন্ত এবং তোমার জিহ্বা কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই টলমল করে এবং বাঁধাপ্রাপ্ত কথা একটা দুর্বল জিহ্বাকে শক্তিশালী করে তোলে।

যখন তুমি তোমার লক্ষ্যের দিকে দৃঢ়ভাবে এবং স্পষ্ট পদক্ষেপে হাঁটতে থাক তখন তুমি সৎ। তথাপি তখনও তুমি মন্দ নও যখন তুমি তোমার লক্ষ্যের দিকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যাবে। এমনকি যারা খুঁড়িয়ে হাঁটে তারাও পিছনের দিকে যায় না। কিন্তু যে তুমি শক্তিশালী এবং দ্রুতগামী সেই তুমিও একজন খঞ্জ ব্যাক্তির সামনে দয়া দেখিয়ে খুঁড়িয়ে, হেঁটো না।

অগণিত পথ বেয়ে তুমি ভাল হতে পার, এবং যখন তুমি খারাপ তখনও তুমি শয়তান নও। তুমি শুধুমাত্র শ্লথ এবং অলস। দুঃখজনক এই যে হরিণ কখনও কচ্ছপকে দ্রুততার শিক্ষা দিতে পারে না। তোমার বিশাল সত্তার কামনায় লুকিয়ে আছে তোমার পূণ্য এবং এই কামনা তোমাদের সবার ভিতরেই আছে।

কিন্তু তোমাদের অনেকের সেই কামনাই প্রবল তোড়ে দ্রুতবেগে সমুদ্রের দিকে ধেয়ে যায়, যাওয়ার সময় পাহাড়ের গোপনীয়তাকে এবং বনভূমির গানকে বহন করে নিয়ে যায় এবং অন্যদের কাছে এই কামনা ছোট নদীর মত যা সৈকতে পৌঁছানোর আগে বিভিন্ন বাঁকে থেমেছে এবং লক্ষ্যে পৌঁছাতে দেরী করেছে।

কিন্তু যার কামনা বেশি সে যেন যার কামনা কম তাকে না বলে, “কি জন্য তুমি সাময়িকভাবে থেমেছ এবং দেরী করেছ”? কারণ সত্যিকার ভাল কখনও অনাবৃতকে জিজ্ঞাসা করে না, “তোমার পরিচ্ছদ কোথায়”? গৃহহীনকে বলে না, “তোমার বাড়িতে কি ঘটেছে”?

চলবে 

 

দ্যা প্রফেট (প্রথম অনুচ্ছেদ)
দ্যা প্রফেট (দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ)
দ্যা প্রফেট (তৃতীয় অনুচ্ছেদ)
দ্যা প্রফেট (চতুর্থ অনুচ্ছেদ)
দ্যা প্রফেট (পঞ্চম অনুচ্ছেদ)
দ্যা প্রফেট (ষষ্ঠ অনুচ্ছেদ)
দ্যা প্রফেট (সপ্তম অনুচ্ছেদ)
দ্যা প্রফেট (অষ্টম অনুচ্ছেদ)

 

রোজীনা পারভীন বনানী 
ঝিনাইদহ, বাংলাদেশ

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top