সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

ধ্রুবপুত্র (পর্ব পঁয়ত্রিশ) : অমর মিত্র


প্রকাশিত:
২৯ মার্চ ২০২১ ১৮:৪৭

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৩১

ছবিঃ অমর মিত্র

 

শূদ্র, নারী এবং দাস বিশ্বাসের উপযুক্ত নয়। উতঙ্ক সর্বনাশ করে দিয়েছে এই অবন্তীদেশের। অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়ে গিয়েছিল সিংহাসন অধিকারের, জেনে বুঝে শূদ্ররা রাজার বিপক্ষে যাবে কেন? প্রধান পুরোহিত বলছিলেন উতঙ্কের ভিতরে দানব লুকিয়ে আছে। উতঙ্ককে তিনিও ভয় করেন। কেন যে ভয় হয় তাঁর তা জানেন না। উতঙ্ককে দেখলেই গা হিম হয়ে আসে কেন? ওর ভিতরের দানবটিকে তিনি দেখতে পান মনঃচক্ষুতে।

আছেন এখন সেনাপতি বিক্রম এবং প্রধান পুরোহিত। শ্ৰেষ্ঠীর আসার কথা, এখনো আসেননি। দুজনে শ্রেষ্ঠীর পদশব্দের জন্য কান পেতে আছেন। পূর্ণিমার পর এখন বৈশাখের কৃষ্ণপক্ষ ব্যাপ্ত। ঘরে দীপ জলছে। দীপের আলোয় দুটি মানুষের ছায়া মস্ত হয়ে কাপছে পাথরের দেওয়ালে। বাতাস নেই আজ কোথাও। গুমোটে এই ঘর দমবন্ধ অবস্থায় আছে যেন। 

বিক্রম বললেন, শূদ্র পল্লীর সকলে জানে উতঙ্কই আগুন দিয়ে গেছে, রাজার পাপে তাদের যে এই সর্বনাশ, সে কথা কেউ বলছে না, আমার কাছে ভেঙে পড়েছে সবাই, ভয়ে তারা উতঙ্ককে কিছু বলতে পারেনি, শ্রেষ্ঠীর দাসটি অতি নিষ্ঠুর। 

হ্যাঁ, সে কথা কে না জানে, শ্রেষ্ঠী তাকে ওই ভাবে তৈরি করেছেন। বললেন পুরোহিত। 

কেন? 

ধনরত্ন রক্ষা করতে হলে অমন দাসই প্রয়োজন হয়।। 

তাহলে! আমাদের সামনে থেকে সুযোগ চলে যাচ্ছে দ্বিজদেব....। কথা বলতে বলতে থামলেন। সেনাপতি। পায়ের শব্দ পাচ্ছেন তিনি। শ্রেষ্ঠীই আসছেন। দেবদাসী তো নূপুরের শব্দ শোনায়। অনুমান ভুল হল না। এলেন শ্রেষ্ঠী। তার মুখখানি উদ্বিগ্ন, চিন্তাক্লিষ্ট। নগরে এত রটেছে তা জানতেন না শ্রেষ্ঠী। সে রাতে কিছুই  জানতেন না তাই উতঙ্ককে নিয়েই ছুটে গিয়েছিলেন রত্নাকর সাগর ধারে। শ্রেষ্ঠী তার আসন গ্রহণ করে দেখলেন প্রধান পুরোহিত এবং সেনাপতি বিক্রমের কপালে চিন্তার ভাঁজ। তিনি দুটি রেশম পেটিকা রাখলেন মেঝেতে। অস্ফুট গলায় বললেন, আপনার গ্রহণ করুন।

নেওয়া যাবে কিন্তু একী করেছে উতঙ্ক? প্রধান পুরোহিত বললেন।

জানিনা সত্যিই ওরা তাকে দেখেছিল, না শোধ নিতে উতঙ্কর কথা বলে বেড়াচ্ছে, উতঙ্ক তো নিষ্ঠুর, উতঙ্কর প্রহারে কত জন রক্তাক্ত হেয়েছ! শূদ্রপল্লী সুযোগ পেয়েছে এইটি।

নাকি এও এক নিষ্ঠুরতা? ধীরে ধীরে বললেন সেনাপতি বিক্রম, সকলের সম্মুখে অগ্নি  সংযোগে হিংস্রতা শিখরে উঠেছে, উতঙ্ক তাইই করেছে, সকলকে জানিয়ে তাদের সর্বস্ব পুড়িয়ে দিয়েছে, এই রকম নির্দেশ ছিল?

কেন থাকবে এমন নির্দেশ? শ্রেষ্ঠী বিব্রত এবং বিরক্তও।

তারপরেও উতঙ্ক নিয়ে গেছে আপনাকে, সে নিজে দেখতে চেয়েছিল তার নিষ্ঠুরতার ফলাফল, আপনাকে দেখাতেও চেয়েছিল।

চুপ করে আছেন শ্রেষ্ঠী। তাঁর মনে পড়ছিল আগুন দিয়ে ঘোড়া চালিয়ে ফিরে এল উতঙ্ক। ভয়ানক উল্লাসে সে কাঁপছিল। সে আর দেরি করতে চাইছিল না। রথে ঘোড়া জুতে অপেক্ষা করছিল। বুড়ি দাসীকে বারবার পাঠাচ্ছিল প্রভুর কাছে। প্রভু চাঁদের আলোয় রত্নাকর সাগর ধারে যাবেন। তখন ওই দিকের আকাশ লাল।

সেনাপতি বিক্রম বলছিলেন সুযোগটা চলে যাচ্ছে। এই একটি ঘটনা রাজার পক্ষে চলে যাচ্ছে। এত যে বৃষ্টিহীনতা, খরা, জলহীনতা, ফসলহানি, দেবদাসী ধর্ষণ পথেঘাটে লুণ্ঠন, রাজার সন্তানহীন জীবন, কুশাসন—সবই মুছে গেছে উতঙ্কর নিষ্ঠুরতায়। সবাই এখন উতঙ্কর কথা বলছে। কেউ বলছে না রাজার পাপে এই ঘটনা ঘটছে। শ্রেষ্ঠীর নিষ্ঠুর দাস কত নিষ্ঠুর তা বলতে গিয়ে নগরবাসী বলছে সেই রাতেই দগ্ধ শূদ্রপল্লী দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল সে শ্রেষ্ঠীকে। শ্রেষ্ঠী জানতেন না। শ্রেষ্ঠী যদি একা  যেতেন উতঙ্কর কথা শুনতে পেতেন। ওই রাত্রে উতঙ্ককে আবার দেখে ভয়ে কুঁকড়ে গিয়েছিল শূদ্রজনেরা। উতঙ্ক যেন মূর্তিমান ভয়। নিরীহ শূদ্ররা বুঝে উঠতেই পারছে না উতঙ্ক এমন কেন? তার রথের ধারে কোনো দরিদ্রজন, শূদ্র বালকও এসে গেলে প্রহরণ এসে পড়ে পথচারীর গায়ে। উতঙ্ক কেন আগুন দিল তাদের কুটিরে?

শ্রেষ্ঠীর গায়ে লাগছিল তাঁর নিজ হাতে তৈরি দাসের নিন্দা। সেনাপতি বলছেন, শূদ্ররা যদি তাঁর কাছে বিচার না পেয়ে রাজার কাছে যায়, সে এক ভয়ানক ঘটনা হবে। রাজার কাছে সুবিচার পেলে তারা রাজাকে রক্ষা করবে প্রাণ দিয়ে। হীন জাতি হলেও শূদ্রজাতি অবিশ্বাসী নয়, বিশ্বাসঘাতক নয়, প্রভুকে তারা ঈশ্বরের মতো দ্যাখে। এরপর কি আর সিংহাসন অধিকার করা যাবে নগরবাসী যদি রাজার পাশে থাকে সেনাধ্যক্ষকে ছেড়ে?

শ্রেষ্ঠী বললেন, তাহলে কী উপায়?

উতঙ্ক এত নিষ্ঠুর কেন? জিজ্ঞেস করেন প্রধান পুরোহিত।

এ প্রশ্ন অবান্তর, আমার মনে হয় ওরা কোনো সত্য খুঁজে না পেয়ে উতঙ্ককেই শেষ করে  দিতে চায় এই অজুহাতে। উতঙ্ক কেন সকলের সামনে আগুন দেবে? দিলে তাকে ধরবে না কেন শূদ্রজনেরা, আর যদি না ধরতেই পারে, আমি যখন গেছি তাকে নিয়ে তারা তো কোনো কথাই বলেনি।

সেনাপতি বিক্রম বললেন, এর ব্যাখ্যা তো দিয়েছি, এখন ওই নিষ্ঠুর দাসের শাস্তি না হলে আমাদের সমস্ত পরিকল্পনা নষ্ট হয়ে যাবে।

শ্রেষ্ঠী বললেন, অবন্তী দেশের কল্যাণের জন্য আমি উতঙ্ককে আপনাদের হাতে তুলে দিতে পারি, এখন সে গৃহবন্দী রয়েছে, তাকে দেখে বুঝতে পারবেন সে কতটা নির্দোষ, যত নিষ্ঠুর মনে হয় ততো নিষ্ঠুর নয়, সেই রাতের পর থেকে কখনো কাঁদছে, কখনো মৌন হয়ে থাকছে, আঘাতে ব্যক্তিবিশেষকে রক্তাক্ত করা আর একটি পল্লীতে অগ্নিসংযোগ এক বিষয় নয়, আগুন দিয়ে উতঙ্ক ভয় পেয়ে গেছ, সে ভাবতে পারেনি আগুন এভাবে সব কিছুকে ধ্বংস করে দিতে পারে, নির্বোধ দাস, জানত না আগুনের শক্তি এমন।

আপনি কী বলতে চান? সেনাপতি  জিজ্ঞেস  করলেন।

কিছুই বলছি না, বলছি যারা উতঙ্ককে শেষ করে দিতে চায় তারা শূদ্র, শূদ্রের কথা কি সত্য হবে? এরপর তারা যে দাবি করবে তাইই মেনে নিতে হবে।

পুরোহিত জিজ্ঞেস করলেন উতঙ্ক কি শূদ্র নয়?

পাহাড়িয়া।

পাহাড়িয়ারা কি শূদ্র নয়, শূদ্রই, সে যখন দাস, সে শূদ্রই, আর  শূদ্রর কথা শোনা হবে কেন, শূদ্রপল্লী পুড়েছে, তারা সব রত্নাকর সাগরের ধারে বসে আছে, তাদের সর্বস্ব গেছে, এখন শূদ্র উতঙ্কর প্রাণ যাক অবন্তী দেশের সেনাপতির সুবিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য, উতঙ্ক শ্রেষ্ঠীর দাস, তার যদি মৃত্যু হয় তবে  অবন্তীর কল্যাণ হবে, কল্যাণ হবে

প্রধান পুরোহিতের কথায় গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। শ্রেষ্ঠী কেঁপে উঠেছেন। তিনি ভাবতে পারেননি উতঙ্কর মৃত্যুদণ্ডের কথা উচ্চারণ করতে পারবেন দ্বিজদেব। তাঁর আদেশেই উতঙ্ক গিয়েছিল শূদ্রপল্লীতে আগুন দিতে। কথা ছিল সে লুকিয়ে আগুন দিয়ে ফিরে আসবে। কিন্তু তা পারেনি। সে এখন বিপন্ন। বিপন্ন হয়েছে এই তিনজনের পরিকল্পনা রূপায়ণে। তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব কি এই তিনজনের নয়?

প্রধান পুরোহিত হয়ত অনুমান করেছেন শ্রেষ্ঠীর মনের ভাব। তিনি মৃদু স্বরে বললেন, আপনি হয়ত দুঃখ পাবেন, দাসটি আপনার অনুগত, সাহসী এবং মনোমত নিষ্ঠুরও, কিন্তু শূদ্রপল্লীতে আগুন জ্বালানোর কথা ছিল রাজার পাপের ভার বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে, আগুন আকাশ থেকে নেমেছে, সন্তানহীন ধর্ষক রাজা মহাকাল মন্দির অপবিত্র করেছেন, আর রক্ষা নেই, মহাকালের রোষে ছারখার হয়ে যাচ্ছে অবন্তী দেশ—এই সত্য কি প্রতিষ্ঠা করা গেছে?

উতঙ্কর মৃত্যুতে তা হবে?

না হোক, উতঙ্ক যে উন্মাদ হয়ে এ কাজ করেছে তা জেনে যাবে শূদ্রজন, আর জেনে যাবে সেনাপতি বিক্রম কত সুশাসক, তাঁর বিচারে শ্রেষ্ঠীর দাসও রেহাই পাবে না, এতে সেনাপতি এবং শ্রেষ্ঠী দুইজনের সুনাম বৃদ্ধি পাবে, ধন্য ধন্য করবে নগর, ওর মৃত্যুই হোক, আগুনেই পুড়িয়ে মারা হোক ওকে।

শ্রেষ্ঠী সুভগ দত্ত মাথা নামিয়ে বসেছিলেন। আজ পর্যন্ত উতঙ্ক তাঁর কোনো কথাই অমান্য করেনি। কোনো প্রশ্ন তোলেনি। প্রভু যা বলবেন, তাই-ই সত্য। উতঙ্ককে তিনি যদি বলে দিতেন নিজেকে লুকিয়ে অগ্নিসংযোগ করে আসতে, উতঙ্ক তাই-ই করত। তিনি সে নির্দেশ দেননি, স্বাভাবিক ভাবে সেই প্রয়োজন বোধ করেননি, তাই উতঙ্কও আগুন দেওয়ার হিংস্র আনন্দে নিজেকে আড়াল করতে পারেনি। প্রভুর ইচ্ছাপূরণ করছে  সে। প্রভু যখন বলেছেন শূদ্রপল্লী পুড়িয়ে দিতে, সেই ইচ্ছায় যেন ওই পল্লীর মানুষজনেরও সায় আছে। এমনই ধারণা ছিল উতঙ্কর। বিষণ্ণতা ছেয়ে ফেলছিল শ্রেষ্ঠীকে। উতঙ্ককে তিনি নিজের মতো করে নির্মাণ করেছেন। মনে পড়ে যাচ্ছে দরিদ্র পাহাড়িয়া মা বাবার কোল থেকে প্রায় কেড়ে নিয়ে এসেছিলেন তিনি শিশু উতঙ্ককে।

শ্রেষ্ঠী বললেন, উতঙ্ক যদি নগর ছেড়ে চলে যায়?

না, সর্বসমক্ষে মৃত্যু, শূদ্রপল্লী তখন শান্ত হবে, অগ্নিতে মৃত্যু এক্ষেত্রে বিধি।

শূদ্ররা কি দাবি করেছে তা?

সেনাপতি বললেন, না, সে সাহস তাদের নেই যে শ্রেষ্ঠীর দাসের মৃত্যু দাবি করবে, কিন্তু সুশাসন, সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন উতঙ্কর মৃত্যু।

চুপ করে থাকলেন শ্রেষ্ঠী। একজন মানুষকে যতটা নিষ্ঠুর করে তোলা যায়, উতঙ্ককে সেইভাবে তৈরি করেছেন তিনি। শিশুকাল থেকেই হিংস্রতার শিক্ষা দিয়েছেন। তাকে কাঁচা মাংস খাওয়ানোর অভ্যেস করেছিলেন শ্রেষ্ঠী। উতঙ্কর এমন প্রভু ভক্তি যে নিজেকেও হত্যা করতে পারে সে প্রভুর কথায়। শ্রেষ্ঠীর চোখ চকচক করে ওঠে। মনে পড়ে শিশু উতঙ্কর কী রোষ! পাহাড়িয়া শিশু জম্মসূত্রেই প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করার শক্তি অর্জন করে থাকে। প্রতিকূল পরিবেশ সব সময়ই তাদের সঙ্গী,  অন্নের অভাব তো আছেই। তবু শিশু উতঙ্ক প্রায় পক্ষকাল না খেয়ে ছিল ওকে ওর মা-বাবার কোল কেড়ে আনার পর। কেড়েই এনেছিলেন তিনি। দরিদ্র পাহাড়িয়া মা কিছুতেই ছাড়তে চায়নি শিশুটিকে। শ্রেষ্ঠী তার বাবাকে বশীভূত করেছিলেন নানা দ্রব্যে, মণিমুক্তোয় এবং মদিরায়। সেই মদিরা ছিল দ্রাক্ষারস থেকে প্রস্তুত, কপিশা নদীতীরের এক বণিক তাঁকে উপহার দিয়েছিল। মনে পড়ে যাচ্ছে সব। সুরা, মদিরাই জুটত না সেই পুরুষটির। সে গৃহকর্ম করত, তার স্ত্রী, উতঙ্কর পাহাড়িয়া মা পরিশ্রম করে অন্ন সংস্থান করত। ওই দেশের ওই রীতিই ছিল। তিনি যদি উতঙ্ককে না নিয়ে আসতেন, উতঙ্কও ওইরূপ হয়ে যেত। স্ত্রীলোকের অর্জন করা অন্নে বেঁচে থাকত। শিশুটিকে নিয়ে আসার পর কতদিন দ্বিপ্রহরে বা মধ্যরাতে আচমকা অবোধ্য পাহাড়িয়া ভাষায় মা-বাবার জন্য কাঁদত চিৎকার করে। দাসী তাঁকে বলেছে, ঘুমের ঘোরেও নাকি শিশুটি কাঁদত। সেই উতঙ্ক এখন সব ভুলে পরিপূর্ণ পুরুষ। সাহসী। সাহসীরাই তো নিষ্ঠুর হয়। উতঙ্কর ভয়ে শ্রেষ্ঠী গৃহে কোনোদিন তস্করের ছায়া পড়েনি। একবার পদাঘাতে একটি সারমেয়র জীবনান্ত ঘটিয়েছিল সে।

শ্রেষ্ঠী ভেঙে পড়ছেন, বললেন, উতঙ্কর উপর আমার এত যে মায়া তা জানতাম না।

প্রধান পুরোহিত বললেন, আর একটি পাহাড়িয়া নিয়ে আসুন।

এখন আর গড়ে তোলার বয়স নেই।

প্রধান পুরোহিত বললেন, অবন্তী দেশের জন্য এইটুকু ত্যাগ করতেই হবে।

শ্রেষ্ঠী যেন বিলাপ করলেন, ওকে যদি বলে দিতাম গোপনে আগুন দিয়ে আসতে! হায়!

প্রধান পুরোহিত এবার বিচলিত হলেন, পাহাড়িয়া, কিন্তু শূদ্রই তো বটে। শূদ্রের জন্য এত হা হুতাশ কেন? আপনি এই নগরের গৌরব, এই ঘটনায় কুমার বিক্রমের গৌরব যেমন বৃদ্ধি পাবে, আপনারও,  আর তাতে ওই প্রধান গণিকা দেবদত্তাকে অধিকার করা সহজ হয়ে উঠবে।

শ্রেষ্ঠী বললেন, সত্য, কিন্তু শূদ্র জাতিকে সন্তুষ্ট করার জন্য উতঙ্ককে আগুনে পুড়িয়ে  মারা কি সুবিচার হবে, ভেবে দেখুন।

আপনি অনর্থক যুক্তির জাল বিস্তৃত করতে চাইছেন, উতঙ্ককে মরতেই হবে, সে না মরলে মহাকাল বিরূপ হবেন। গমগম করে উঠল প্রধান পুরোহিতের কণ্ঠস্বর, মহাকাল মন্দির অপবিত্র করেছেন রাজা ভর্তৃহরি, তাঁকে সিংহাসনচ্যুত করা আমাদের পবিত্র কর্তব্য, আর তা করতে উতঙ্কর মৃত্যু চাই-ই, শূদ্রর প্রাণ নিবেদন করব যেন আমরা ভগবান মহাকালকে, মহাকাল দেবেন সিংহাসন, সেই সিংহাসনে বসবেন বিক্রম।

শ্রেষ্ঠী সুভগ দত্ত ঘাড় নিচু করে আছেন। উতঙ্ক নিজেকে ঘরবন্দী করে রেখেছে। শ্রেষ্ঠী তেমন নির্দেশ দিয়েছেন। অগ্নিকাণ্ড ঘটে যাওয়ার পর পাঁচদিন পার হয়েছে। নগরে রটনা হয়ে গেছে শ্রেষ্ঠীর দাস উতঙ্কই ঘটিয়েছে তা। কিন্তু শুধুই উতঙ্কর নামে রটেছে, শ্রেষ্ঠীর কথা কেউ বলছে না। বরং বলছে শ্রেষ্ঠী আহার নিদ্রা ত্যাগ করে সেই রাতেই ছুটে গিয়েছিলেন বিপন্ন মানুষের পাশে। ধনবানের নামে অভিযোগের আঙুল ওঠে না, তাই ওঠেনি। দাস উতঙ্ককে কত ঘৃণা করত মানুষ তা এই রটনায় টের পাওয়া যাচ্ছে।

শ্রেষ্ঠী বললেন, আপনাদের প্রস্তাব গ্রহণ করলাম, আপনারা যা চাইছেন তা হোক, তবে ওকে যেন মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ না করতে হয়, অন্য ভাবে মারা হোক।

প্রধান পুরোহিত হাসলেন, এই অপরাধের দণ্ড ওই-ই, আপনি কি প্রত্যক্ষ করবেন না দণ্ড?

না।

কিন্তু শোকও করবেন না, উতঙ্কর শোকহীন মৃত্যু আপনাকে মহৎ করে তুলবে নগরেরর মানুষের মনে।

প্রধান পুরোহিতের কোনো কথাই শুনতে পাচ্ছিলেন না শ্রেষ্ঠী। তাঁর পিঠে সেনাপতির কর স্পর্শ করল।

চলবে

 

ধ্রুবপুত্র (পর্ব এক)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব দুই)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তিন)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চার)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পাঁচ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ছয়)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সাত)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আট)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব নয়)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব দশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব এগার)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব বারো)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চৌদ্দ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পনের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ষোল)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সতের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আঠারো)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব উনিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব কুড়ি)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব একুশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব বাইশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তেইশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চব্বিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পঁচিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ছাব্বিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সাতাশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আটাশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব উনত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব একত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব বত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তেত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চৌত্রিশ)

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top