ধ্রুবপুত্র (পর্ব সাঁইত্রিশ) : অমর মিত্র


প্রকাশিত:
১২ এপ্রিল ২০২১ ১৯:২৭

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৩৭

ছবিঃ অমর মিত্র

                          

মরণ কী ভয়ানক! মরণের নাড়ি ছেঁড়া আর্তনাদ যেন এখনো আচ্ছন্ন করে রেখেছে সুভগ দত্তকে। একটি পরিত্যক্ত পর্ণকুটিরে শৃঙ্খলিত করে, তাতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়েছে, উতঙ্ককে।  বহু মানুষ এসেছিল সেই মৃত্যু দেখতে। শ্রেষ্ঠী জানতেন না তাঁর দাস কত ঘৃণার্হ মানুষ ছিল। কেউ শোক করেনি। করছেও না। সকলে যেন একটি ইতর প্রাণীর মৃত্যু দেখছে, এই ভাবেই দাঁড়িয়ে ছিল নিষ্কম্প। বরাহ যেমন মৃত্যুকালীন আর্তনাদে দশদিকের নৈঃশব্দ চূর্ণ করে, তেমনি ছিল উতঙ্কর আর্তনাদ। বরাহর মরণ কান্নায় যেমন মানুষ উদাসীনই থাকে, তেমনই উদাসীন ছিল মানুষ  উতঙ্কর মৃত্যুকালে তার নিকটে দাঁড়িয়ে। সুভগ দত্ত যেন শুনেছিলেন সেই পাহাড়িয়া শিশুর মায়ের জন্য কান্না। মনে পড়ে গিয়েছিল সব।

নগরে ধন্য ধন্য রব উঠেছে। শ্রেষ্ঠী তাঁর প্রিয় দাসকে তার অপরাধের জন্য ক্ষমা করেননি। অপরাধ লুকোতে চাননি, বরং উতঙ্ককে ধরিয়ে দিয়েছেন তিনিই। তিনিই নাকি প্রথম বুঝতে পারেন নিষ্ঠুর উতঙ্ক যেমন অকারণ নিষ্ঠুরতায় আনন্দ পেত, তেমন এক আনন্দের জন্যই শূদ্রপল্লীতে অগ্নিসংযোগ করে রাতের অন্ধকারে। নগরের মানুষ শ্রেষ্ঠী সুভগ দত্ত এবং সেনাপতি বিক্রমের গুণকীর্তন করছে। শ্রেষ্ঠী এবং সেনাপতি কত মহৎ। শূদ্রজাতির পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। শূদ্রর ঘর পুড়িয়েছে আর এক শূদ্র, সেই শূদ্র প্রাণও দিল ওই অপরাধে। ধন্য সুভগ দত্ত! উতঙ্কর মৃত্যু এই নগরকে নিঃশ্বাস ফেলতে দিচ্ছে আবার। শ্রেষ্ঠী তো জানতেন না কত নিষ্ঠুর ছিল তার পোষা দাসটি, আগে জানলে আগেই তাকে মেরে ফেলা হত নিশ্চিত। এতদিনে উজ্জয়িনীর পথঘাট নিরাপদ হলো। আচমকা উতঙ্কর রথের প্রহরণ গায়ে এসে পড়বে না, রথের চাকায় প্রাণ যাবে না, বিকলাঙ্গ হয়ে বাঁচতে হবে না।

তিনদিন হলো উতঙ্ক পুড়ে মরেছে, শ্রেষ্ঠী নিজেকে স্বেচ্ছাবন্দী রেখেছেন। নিজের গোপন শোক নিয়ে তিনি যাপন করছেন নিদ্রাহীন দিন-রাত্রি। নিজের লোভই নিরপরাধ দাসের প্রাণ নিল! তেমনই যেন মনে হচ্ছে শ্রেষ্ঠীর। নগরে যে তাঁর নাম সম্ভ্রমের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে এই সংবাদে যেন আরো ম্রিয়মান তিনি। ঘরে বসে সব খবর পাচ্ছেন সুভগ দত্ত।

খবর পাঠিয়েছিলেন রাজা ভর্তৃহরি। সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন শ্ৰেষ্ঠী। শুনেছেন রাজা বিরূপ হননি। কেননা নগরের মানুষ বিরূপ হয়নি, আনন্দ করছে, তাই। সকলে আনন্দ করছে, যেমন শূদ্র থেকে ব্রাহ্মণ পর্যন্ত, রাজকর্মচারী থেকে বীট মহাপার্শ্ব পর্যন্ত। এতটা ধারণার অতীত ছিল শ্ৰেষ্ঠীর।

এখন তাঁর মনে হচ্ছে উতঙ্কের মৃত্যু যেন তাঁকে রক্ষা করেছে। উতঙ্কর জন্যই তাঁর প্রতি সাধারণ মানুষের বিরূপতা বাড়ছিল ক্রমাগত। উতঙ্ক মরেছে বলে নগরের মানুষ আসছে তাঁকে অভিনন্দন জানাতে, আশীর্বাদ করতে। লোকে বলে যাচ্ছে সুভগ দত্ত হয়ত পাপমুক্ত হলেন। না জেনে একটি দানবকে প্রশ্রয় দিয়েছিলেন তিনি। উতঙ্ককে লালন করাই ছিল শ্রেষ্ঠীর পাপ। উতঙ্কর মৃত্যু সেই পাপ সঙ্গে নিয়ে গেছে। মহাপাপী উতঙ্ক শূদ্রপল্লীতে আগুন দিয়ে মানুষের বিলাপ শুনতে গিয়েছিল। উতঙ্ককে সেই আগুনই গিলে খেয়েছে বুঝি। এক পাপে শূদ্রপল্লী পুড়েছে, অন্য পাপে উতঙ্ক মরেছে।

এখন অবন্তী দেশ অগ্নিময়। অগ্নিই এখানে সর্বশক্তিমান। এই নগরে, এই অবন্তীদেশে অগ্নির মুখোমুখি হতে পারে এমন কেউ নেই। অগ্নির বিপক্ষেই এখানে কেউ নেই। মেঘ নেই, ছায়া নেই--সব যেন অগ্নির হাঁমুখে প্রবেশ করেছে। সমস্ত দিন অগ্নিময় হয়ে থাকে প্রকৃতি যখন, শূদ্রপল্লী তো অগ্নির গ্রাসে যাবেই। উতঙ্ক হয়ত অগ্নির নির্দেশেই এই কাজ করেছিল। আর তাই তাকে অগ্নিই হরণ করেছে। পাপী উতঙ্ক, নিষ্ঠুর, হৃদয়হীন উতঙ্কর ভবিতব্য এমনই ছিল, পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া।

মহাকাল মন্দির থেকে ডাক এসেছিল, শ্রেষ্ঠী যাননি। সেনাপতি বিক্রমের দূত এসে দেখে গেছে স্বেচ্ছা নির্বাসনে রয়েছেন শোকার্ত সুভগ দত্ত। মানুষের জন্য মানুষের এত মায়াও জন্মায়। তিনি নিজে তো নিষ্ঠুর হতে পারেন না, রক্ত দেখতে পারেন না, অথচ তিনিই বা কী করে নিষ্পাপ পাহাড়িয়া বালককে এত নিষ্ঠুর করে গড়ে তুলেছিলেন ?

এখন রাত অনেক। শ্রেষ্ঠীর চোখে ঘুম নেই। সমস্ত পুরী নিঝুম, ঘুমিয়ে আছে সবাই। দাস দাসীরা। জেগে নেই কেউ। সুভগ দত্ত এসে দাঁড়িয়েছেন খোলা প্রাঙ্গণে। মাথার উপরে বৈশাখের আকাশ। নিদ্রাহীন গ্রহ নক্ষত্রের দল। মাথার উপর উত্তরআকাশে সপ্তর্ষিমণ্ডল পশ্চিম ঘেঁষে উত্তর থেকে দক্ষিণে নেমে এসেছে। ছায়াপথ। আলোর পথ--আকাশগঙ্গা। উত্তর দিকে আকাশগঙ্গার গা ঘেঁষে ব্রহ্মহৃদয় নক্ষত্রটি জ্বলজ্বল করছে। নক্ষত্র দলের দিকে তাকিয়ে নিঃসঙ্গ ধনপতি কেঁদে উঠলেন। উতঙ্কর মৃত্যু তাঁকে যেন নির্বান্ধব করে দিয়েছে এই বিশ্বসংসারে। উতঙ্ক ছিল দাস। দাস যে এত আপনার হয়ে উঠেছিল তা তিনি জানতেন না। পাহাড়িয়া, শূদ্র যে ধনপতি বৈশ্যর প্রিয়জন হতে পারে তা শ্রেষ্ঠী কোনোদিন ভাবেননি।

উতঙ্ক নেই। এই পুরীতে যেন কেউ নেই। এই যে তিনি জেগে আছেন, আর সকলে ঘুমিয়ে, উতঙ্ক  বেঁচে থাকতে এমন কখনো হয়নি যে সে জানবে না তার প্রভু নিদ্রাহীন রাত্রি যাপন করেছেন। এই প্রাঙ্গণে তিনি একা দাঁড়িয়ে থাকবেন, অথচ নিকটেই দাঁড়িয়ে থাকবে না উতঙ্ক, এমন কখনো হয়নি। শিকারী কুকুরের মতো ছিল উতঙ্কর ঘ্রাণ। সে ঠিক টের পেয়ে যেত সব।

উতঙ্ক, উতঙ্ক হে। কেঁদে উঠলেন  ধনপতি সওদাগর আবার।
প্রভু! নীল অন্ধকার যেন সাড়া দিল।
মরণে খুব বেদনা উতঙ্ক?
প্রভু যা চেয়েছেন!
আগুন তোকে খেয়ে নিল উতঙ্ক?
প্রভু হে, মরণে খুব ব্যথা।
খুব ব্যথা। খুউব?
প্রভু! বরাহর মরণে কত কষ্ট, তেমন!
মার কথা মনে পড়েছিল উতঙ্ক? ফিসফিস করলেন সুভগ দত্ত।
প্রভু! প্রভু হে, আমি মরলাম কেন?
সুভগ দত্ত নিশ্চুপ। তাঁর বিহ্বল দুটি চোখ অন্ধকারের এদিক ওদিকে দেখতে চাইছিল। তিনি আবার ডাকলেন, উতঙ্ক, উতঙ্ক হে?
প্রভু আমি মরলাম কেন?
আগুন দিলি শূদ্রঘরে?
শূদ্রঘরে আগুন দিলে কী হয় প্রভু?
সুভগ দত্ত চুপ করে থাকলেন। শূদ্র ঘরে আগুন দিলে শূদ্রই মরে। মরেছে তাই উতঙ্ক। উতঙ্ক হে, আগুন থেকে বেরিয়ে আসতে পারলি নে?
উতঙ্ক ডাকল, প্রভু, প্রভু হে, আমি কেন মরলাম?
সুভগ দত্ত বললেন, অবন্তীদেশের জন্য, অবন্তীর কল্যাণের জন্য।
শূদ্রপল্লী পোড়ালাম কেন প্রভু?
অবন্তীর কল্যাণের জন্য।
আমার মরণে লোকে আনন্দ করে কেন প্রভু?
সুভগ দত্ত বললেন, সেও অবন্তীর কল্যাণের জন্য।
সুভগ দত্ত শুনলেন, অবন্তীর কল্যাণ হোক, রাজার মঙ্গল হোক।
রাজার মঙ্গলে অবন্তীর অকল্যাণ।
তাহলে রাজার অমঙ্গলে অবন্তীর কল্যাণ, প্রভু এই কি সত্য?
সত্য। ধনপতি বণিক কুঁকড়ে যাচ্ছিলেন, উতঙ্ক তোর মরণে আমি কষ্ট পাই।
নগরের মানুষ আনন্দ করে, তুমি কেন কষ্ট পাও প্রভু?
উতঙ্ক হে, তোর মরণে আমিই আগুনে পুড়ি।
কেউ পোড়েনা, তুমি পোড় কেন প্রভু, আমাকে মরণে পাঠালে তুমিই।

সুভগ দত্ত দুহাতে মুখ ঢাকলেন। তাঁর মনে হচ্ছিল পিঠের কাছেই এসে দাঁড়িয়েছে উতঙ্ক। উতঙ্কর ঘন ঘন নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন তিনি। উতঙ্ক ঘুরে এল তাঁর সম্মুখে, বলল, কতদিন বাদে উত্তরের পাহাড়ে গেলাম প্রভু!
কী দেখলি উতঙ্ক, এখন কি বরফে ঢেকে আছে?
না প্রভু, জল হয়ে নেমে গেছে নদী, ভয়ানক আগুনে নদীর জল উড়ে গেছে আকাশে, জলাশয়, দহ, নদী, নালা, সরোবর কোথাও জল নাই প্রভু, আমার মাও নাই, বাবাও নাই।
তারা কোথায়?
দুঃখে কোন দেশে চলে গেছে মা আমার, বাবা মরে গেছে দুঃখে দুঃখে, না খেয়ে খেয়ে।
উতঙ্ক হে, আমার বড় ব্যথা লেগেছে তোর মরণে।
এসব সত্য নয় প্রভু, এমন মরণের জন্যই আমাকে এনেছিলে তুমি পাহাড় থেকে, সেই পাহাড়ে মা নাই, দুঃখে কোন দেশে চলে গেছে, বাবা মরে গেছে ছেলের জন্য কষ্ট পেয়ে পেয়ে।
থাক উতঙ্ক, আবার কেন বলা ?
না প্রভু! মা যদি শোনে এমন মরণের সংবাদ, মা আমার আরো দূরে চলে যাবে, আরো আরো দূরে, বাবা আমার আবার মরে যাবে, আবার আবার, মরণ ছাড়া তার আর কেউ থাকবে না।
উতঙ্ক হে, গণিকা যদি ভালবাসত এমন হত না।
তা তুমি জান প্রভু?
জানি, কিন্তু গণিকার ভালবাসা আমার আর চাইনে, সেনাপতি সিংহাসন চায়।
ধনপতি চায় প্রধান গণিকাকে।
তুই মরেছিস সেইজন্য উতঙ্ক।
এ তুমি জেনেছ প্রভু?
জেনেছি, উতঙ্ক হে, তোর মতো মরণ যেন আর কারোর না হয়।
প্রতিদিন কত মরে এমন! প্রভু হে, তুমি বাণিজ্যে যাও।
যাব বাণিজ্যে, যাব।
তুমি বণিক, নগরে আছো বলে উতঙ্কর মরণ দেখলে, যদি যেতে বাণিজ্যে, উতঙ্ক বেঁচে থাকত, প্রভু হে বাণিজ্যে না গিয়ে তুমি উতঙ্ককে নিষ্ঠুর করলে, উতঙ্ককে পুড়িয়ে মারলে।

ধনপতি সুভগ দত্ত মাথা নামিয়ে ছিলেন। তিনি টের পাচ্ছিলেন এই নগরে থাকা তাঁর পক্ষে অসহ্য হয়ে উঠবে দিন দিন। এই নগরে উতঙ্কের রথ দাপিয়ে বেড়াত। সেই রথখানি পড়ে আছে রথশালায়। নতুন সারথী ওই রথ চালাবে না। সে অন্য এক পারিযানিক রথে মন্দগতিতে চলবে রাজপথ দিয়ে। উতঙ্কর রথের ঘোড়া দুটি বনায়ু দেশের। তারা কত শান্ত হয়ে গেছে। উতঙ্কর ক্রমাগত আঘাতে ঘোড়া দুটি উন্মাদের মতো হয়েছিল যেন। বিশ্রামে থাকতে থাকতেও আচমকা তীব্র হ্রেষা ধ্বনিতে রাতের অন্ধকার ভেঙে দিত। সুভগ দত্ত বুঝতে পারছিলেন তাঁকে বেরোতেই হবে। থাকুক গণিকা। এখন বুঝতে পারছেন ভুল হয়ে গেছে খুব। দেবদত্তার জন্য তিনি উতঙ্ককে হারালেন। প্রধান পুরোহিত বলেন, শূদ্র এবং নারী, দুই-ই পরিত্যজ্য। প্রধান পুরোহিতের সমস্ত কথা সত্য জেনেও নারী বিনে তো থাকতে পারেননি। রমণীবিহীন পুরুষমানুষ বাঁচে কী করে? জীবনের যত আস্বাদ সবই তো স্ত্রীলোকে। তাঁর নিজের স্ত্রী আছে, সন্তান আছে, কিন্তু দেবদত্তা ব্যতীত এ জীবন যেন রোদে পুড়ে যায়, অঙ্গার হয়ে যায় পুড়ে পুড়ে। অথচ স্ত্রীলোকই যে ধ্বংসের কারণ তা টের পাওয়া যাচ্ছে এখন। দেবদত্তার জন্য ধ্রুবপুত্রকে তিনি দূর নির্বাসনে পাঠিয়েছেন। হায় ধ্রুবপুত্র! হে ধ্রুবসখা! তোমার সন্তানটিকেও আমি রক্ষা করতে পারিনি হে, যত্ন করে বাঁচতে দিইনি। সে বেঁচে আছে না মরে গেছে, কোনো খবর নেই। সব ওই গণিকার জন্য। রূপে পোড়ায় যে আমাকে দিন রাত্রি।

প্রভু! বাণিজ্যে যাও, নগরে থাকলে তুমি গণিকার দাস হয়ে যাবে।
কী বলছিস উতঙ্ক?
সত্য বলি প্রভু, এখনই তো মনে মনে তার দাস হয়েই আছ, ওই মেয়েমানুষের হাত থেকে রেহাই পাবে না নগর না ছাড়লে।
সত্য না উতঙ্ক, আমি কারো দাস নই। সুভগ দত্ত বললেন।
তুমি দেবদত্তার দাস, দাস বলে উতঙ্ককে দিয়ে পাপ করালে, পাপ করিয়ে পুড়িয়ে মারলে উতঙ্ককে, উতঙ্ক তো শূদ্রপল্লীতে আগুন দিতে যায়নি, তুমি বলেছিলে, সে আদেশ শিরোধার্য করেছিল, দেবদত্তার জন্য এমন হলো বটে, কিন্তু সে নারী এসবের কিছুই জানে না।
সুভগ দত্ত বললেন, দেবদত্তা আমাকে চায় না।

তবু তুমি তার দাস, যেমন সেনাপতি দাস হয়েছে রানীর, রানী ভানুমতীর জন্য সেনাপতি সিংহাসন চায়, সিংহাসন আর নারী এক হয়ে যায় প্রভু, তুমি যত শীঘ্রই পারো, উজ্জয়িনী থেকে বেরিয়ে পড়ো, বাণিজ্যে চলো প্রভু, উতঙ্ককে পোড়ালে, নগরে থাকলে আরো কত কী পোড়াবে প্রভু, নিজেকে আর পুড়িয়ো না।
সুভগ দত্ত বললেন, যাব বাণিজ্যে।
তাই যাও, কত দেশ দ্যাখোনি তুমি, যাও প্রভু বাণিজ্যে যাও, খুঁজে আনো ধ্রুবপুত্রকে, উতঙ্ক তবে জ্বলন থেকে বাঁচবে, জ্বলছি আমি। 

সুভগ দত্ত অন্ধকারে বসে পড়েছেন প্রাঙ্গণের পোড়া ঘাসের উপর। দু হাতে মুখ ঢেকে কাঁদছেন। উতঙ্ক তার সামনে আঁধার হয়ে বসে আছে, ফিসফিস করছে, কাঁদো প্রভু, কেঁদে আগুন নিভাও, আমিও কাঁদি প্রভু, কেঁদে ব্যথা কমাই, প্রভু হে, মানুষ উতঙ্করে তুমি মানুষ করে গড়োনি, এখন তার মরণে তাই মানুষ আনন্দ করে, যেন এক বন্য বরাহ পুড়েছে আগুনে, শিয়াল মরেছে, শজারু মরেছে, যেন এক উন্মাদ কুকুর মরেছে, প্রভু মানুষ যত বলে বেশ হয়েছে উতঙ্ক মরেছে, মানুষ যত ধন্য ধন্য করে, আমি জ্বলে যাই, পুড়ে যাই, আগুন নেভেনি প্রভু, জল নাই, মেঘ নাই বুক শুকায়ে মরে যাই, কেন তুমি নিষ্ঠুর করেছিলে আমারে, মন কেন পাথর করে দিয়েছিলে প্রভু?

সুভগ দত্ত বললেন, ক্ষমা কর উতঙ্ক।
ক্ষমায় কি জ্বলন যায়, এখন বুঝি মানুষের উপর কোনো মায়া ছিল না, রক্তদানে , সুখ হতো, আর্তনাদে সুখ হতো, প্রভু সেই সুখ কি তোমারও হতো?
না, উতঙ্ক না।
হতো প্রভু, না হলে কোনোদিন তো নিষেধ করনি, আমাকে থামাওনি।
চুপ কর উতঙ্ক।
উতঙ্ক বলে, দয়া আর মায়া কী তা শিখাওনি তুমি, মরণের পর জেনেছি তা, তোমার জন্য মায়া হয় প্রভু, গণিকার জন্য ধ্রুবপুত্রকে নির্বাসন দিলে, মারলে উতঙ্ককে, তোমার কোনো মায়া নাই, তুমি বাণিজ্যে যাও প্রভু, তবে মায়া জানবে, দয়া জানবে, নতুবা তোমার মরণেও মানুষ আনন্দ করবে, আনন্দ করবে। 
দুটি হাত তুলে সুভগ দত্ত আর্তনাদ করে উঠলেন, থাম উতঙ্ক থাম! তোর আগুন আমাকে ঘিরে নিল উতঙ্ক, তোর মনে কি মায়া নেই, আমি তোর প্রভু তো!
নিশ্চুপ হয়ে গেল পৃথিবী এরপর।

চলবে

 

ধ্রুবপুত্র (পর্ব এক)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব দুই)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তিন)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চার)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পাঁচ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ছয়)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সাত)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আট)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব নয়)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব দশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব এগার)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব বারো)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চৌদ্দ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পনের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ষোল)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সতের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আঠারো)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব উনিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব কুড়ি)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব একুশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব বাইশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তেইশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চব্বিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পঁচিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ছাব্বিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সাতাশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আটাশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব উনত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব একত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব বত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তেত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চৌত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পঁয়ত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ছত্রিশ)

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top