সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

ধ্রুবপুত্র (পর্ব ঊনচল্লিশ) : অমর মিত্র


প্রকাশিত:
২৬ এপ্রিল ২০২১ ২১:৫৮

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৫১

ছবিঃ অমর মিত্র

                                               

রাজা দেখতে পাচ্ছিলেন ভয়ার্ত আচার্য মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন। রাজা ঘুরে গিয়ে আবার বৃষভানুর মুখোমুখি হলেন। দেখলেন প্রবীন জ্যোতির্বিদের দুটি চোখ বিস্ফারিত। রাজা বুঝতে পারছিলেন বৃষভানু কাঁপছেন। কারণটি ধরতে পারছেন না তিনি। কেমন যেন হতবুদ্ধি হয়ে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন বৃষভানুর সম্মুখে। তখন এগিয়ে এল তাম্রধ্বজ। সে বোধহয় আন্দাজ করেছিল আচার্য পড়ে যাচ্ছেন। ধরে ফেলল সে, আঁকড়ে ধরে জিজ্ঞেস করল, কী হলো আচার্য, অসুস্থ বোধ করছেন? 

আচার্য মাথা নামালেন, মাথা নাড়তে লাগলেন।

আপনি বরং বিশ্রাম নিন। বললেন রাজা। 

আচার্য বৃষভানু ভাঙা গলায় বললেন, আমি তো অরুন্ধতীকে দেখতে পাই না।

চমকে ওঠে তাম্ৰধ্বজ, শিহরিত হন রাজা, দুজনে একসঙ্গে যেন বলে ওঠেন, কী  বলছেন আচার্য, একি সত্য না হতাশা থেকে উদ্ভূত কল্পনা?

আচার্যর ঘাড় হেঁট হয়ে গেছে, তিনি ফিসফিস করে বলছেন, আমার দু’চোখ থেকে অরুন্ধতী সরে গেছেন, আমি আকাশটাকে দেখছি যেন ঢেউ, সে ঢেউ যেন অন্ধকারের নদীর, কোনোদিন তো এমন দেখিনি, এ কেমন সত্য? 

তাম্ৰধ্বজ ভয় পায়, আর্তনাদ করে ওঠে, কী বলছেন প্রভু? এ কি সত্য?

সত্য। 

এ কেমন সত্য, এ যে ভয়ানক কথা!

আচার্য ফিসফিস করে বলেন, গত দুটি মাস ধরে আমি আর অরুন্ধতীকে খুঁজে পাচ্ছি না তাম্ৰধ্বজ, প্রতিটি রাত ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে চোখে, শেষে নিদ্রার কাছে সমর্পণ করেছি নিজেকে, নিদ্রার বশীভূত হয়ে গেছি আমি, আকাশ অচেনা হয়ে গেছে হে। বলতে বলতে মাটিতে বসে পড়েন প্রবীণ জ্যোতির্বিদ। 

রাজা বললেন, আমি একথা বিশ্বাস করি না।

তাতে সত্য তো বদলাবে না, মহারাজ আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন বশিষ্টের পাশে ক্ষুদ্র তারাটিকে? 

রাজা ঘাড় কাত করলেন। তখন বৃষভানু  ধীরে ধীরে বললেন, অবন্তীর দুর্ভাগ্যের কারণ সন্ধান করতে গিয়ে আমি জেনে গেছি আমার মৃত্যু আসন্ন, মহারাজ অরুন্ধতী তারা যার চোখের সামনে থেকে সরে যায়, তার আয়ু ফুরিয়ে গেছে ধরতে হবে, আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি মরণ জেগে উঠেছে আমার সত্তার ভিতরে। 

প্রভু শান্ত হন, তাম্ৰধ্বজ বলে। 

উঠে দাঁড়ালেন বৃষভানু। তাঁর চোখ দুটির আলো যেন সত্যিই মৃতপ্রায়। অন্ধের মতোই তাকিয়ে আছে প্রধান জ্যোতির্বিদ, বলতে লাগলেন, আমি অবন্তী ত্যাগ করে চলে যাব, আমার মৃত্যুকে আমি প্রত্যক্ষ করতে পারছি মহারাজ। 

তাম্ৰধ্বজ বলল, প্রভু শান্ত হন, আমার দশার্ণ দেশে বেত্রবতী নদীর কুলে একটি লতা জন্মায় তার রস চোখে দিলে অন্ধত্ব কেটে যায় অনেক, দৃষ্টি স্বচ্ছ হয়, আমি যাব নিয়ে আসতে। 

বৃষভানু মাথা নাড়তে লাগলেন, তা আর হওয়ার নয়।

কেন প্রভু? 

ওই লতা শিপ্রার ওপারে বনমধ্যে পাওয়া যায়, আমি কি চেষ্টা করিনি, অনাবৃষ্টি আমার চোখের আলো নিয়েছে, তাম্ৰধ্বজ তুমি আমার পুঁথিগুলি নিয়ে এস।

পুঁথি আর কী হবে? জিজ্ঞেস করলেন ভর্তৃহরি। নিষ্ঠুর শোনাল যেন তাঁর কণ্ঠস্বর। 

সঙ্গে নিয়ে যাব।

সঙ্গে নিয়ে কী হবে?

জানিনা, সত্য কথাটি বলি মহারাজ, যদি কোনো আশ্চর্য ঘটনা ঘটে।

আশ্চর্য ঘটনা? 

হ্যাঁ, যদি এমন কারো সঙ্গে দেখা হয়, যে পারবে দুই চোখের আলো ফিরিয়ে দিতে, আমি আবার দেখতে পাব অরুন্ধতীকে।

রাজা চুপ করে থাকলেন। এমন কি হতে পারে? এমন কেউ থাকতে পারে যে এই  বার্ধক্যকে বিনষ্ট করতে পারবে? তাম্ৰধ্বজ চলে গেছে পুঁথির পেটিকা আনতে। আকাশের নীচে রাজা আর প্রায় অন্ধ জ্যোতির্বিদ মুখোমুখি। রাজা অবাক হয়ে দেখছিলেন আচার্যর মুখখানি। ধীরে ধীরে বললেন, এমন অত্যাশ্চর্য ঘটনা কি ঘটে? 

ঘটতে পারে, জগতের সব কিছু কি আমরা জানি, নাকি সমস্ত মানুষকে আমরা চিনি?

রাজা বিড়বিড় করলেন, সদ্ধর্মের মানুষদের এমন ক্ষমতা আছে শুনেছি।

বৃষভানু মাথা নিচু করলেন।

আপনি কি সদ্ধর্মী তান্ত্রিকের খোঁজে যাচ্ছেন?

বৃষভানু মাথা তুললেন না।

তারা কি সত্যিই পারে, তাদের কি এমন ক্ষমতা আছে?

বৃষভানু মাথা তুললেন, আমারও তো শোনা।

তারা কি বৃষ্টি নামাতে পারে?

কী জানি হয়ত পারে।

আপনি কি শুনেছেন তেমন কিছু? 

কল্পনা করতে পারি, আশা করতে পারি, সেই আশায় আমি চলে যাচ্ছি নগর ছেড়ে পথে, গ্রাম নগরে কোথাও কি এমন কাউকে পাব না, সদ্ধর্মী হোক বা না হোক, ব্রাহ্মণ হোক, শূদ্র হোক, যে এমন কিছু উপায় জানে যা আমার চোখের জ্যোতি ফিরিয়ে দেবে, মহারাজ আমি যাচ্ছি, যদি এমন কাউকে খুঁজে পাই যে বৃষ্টিও আনতে পারে, মেঘের সন্ধান জানে, তাকে নিয়ে  এই নগরে  ফিরব।

তাম্ৰধ্বজ সমস্ত কিছু শুনছিল। সে পুঁথির ছোট পেটিকাটি তুলে দিল বৃদ্ধ বৃষভানুর হাতে। কিন্তু বৃষভানু সেই পুঁথিগুলি বুকের কাছে আগলে স্খলিত পায়ে রওনা হলেই তাম্ৰধ্বজ আর পারে না, আচার্যকে আটকাতে গেল দু হাত বাড়িয়ে, তখন রাজা তাকে নিবৃত্ত করেন, তিষ্ট।

উনি কি সত্যই চলে যাচ্ছেন?

যেতে দাও। 

উনি তো সত্যিই অন্ধ, অন্ধকে কি পথে একা ছেড়ে দেব? আচার্যদেব দাঁড়ান। আর্তস্বরে ডেকে ওঠে তাম্ৰধ্বজ, কোথায় যাবেন প্রভু?

রাজা আবার নিবৃত্ত করেন তাম্ৰধ্বজকে, বললেন, উনি এমন কিছুর সন্ধানে চলেছেন যা ওঁর চোখের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেবে, উনি দৃষ্টি ফিরে পাবেন, এই দেশের অনাবৃষ্টির কাল শেষ হবে। 

তাম্ৰধ্বজ চাপা গলায় বলল, আপনি এত নিষ্ঠুর!

নিষ্ঠুরতা কোথায় দেখলে যুবক? 

আপনি ভেবেছেন অলৌকিক উপায় বৃষ্টি আসবে, আচার্য কোনো অলৌকিক শক্তিধারী মানুষকে নিয়ে ফিরবেন, তা কি সত্যি হবে? 

সত্যি হতেও তো পারে, উনি যদি তেমন কাউকে খুঁজে পান যিনি অন্ধের চোখে দৃষ্টি ফেরাতে পারেন, আকাশে মেঘ এনে বৃষ্টি নামাতে পারেন, এতে ওঁর কল্যাণ, উজ্জয়িনীর কল্যাণ, অবন্তীদেশের কল্যাণ। 

মহারাজ এমন মানুষ কি আছে সত্যি?

থাকতেও তো পারে, শোনা তো যায়। 

এত চক্ষুষ্মাণ থাকতে শেষ পর্যন্ত অন্ধের উপর নির্ভর করলেন মহারাজ, এত যৌবন থাকতে বার্ধক্যই কিনা আপনার আশ্রয় হলো। বলতে বলতে তাম্ৰধ্বজ টের পায় তার কথাগুলি রাজার সম্মুখে উচ্চারণের উপযুক্ত হচ্ছে না। সে মাথা নিচু করে। রাজা তার পিঠে হাত রাখলেন, তুমি তো আচার্যর শিষ্য।

হ্যাঁ মহারাজ।

তুমি কি গণনা জানো?

কিছুটা, তবে অনাবৃষ্টির রহস্য আমার আয়ত্বে নেই?

রাজা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, আচার্য বৃষভানু আমাকে কথা দিয়েছিলেন, ওঁর উপর নির্ভর করেছিলাম, কিন্তু উনি যে এমন হয়ে গেছেন এরই ভিতরে, তা জানতাম না। 

তাম্ৰধ্বজ বলল, আচার্য এই অন্ধকারে যে কোথায় গেলেন?

আমার বিশ্বাস উনি ফিরবেন, অনাবৃষ্টিই কি ওঁর অন্ধত্বের কারণ?

হতে পারে, অনাবৃষ্টি এই দেশে অন্ধত্ব আনছে, চোখে না হোক মনে তো নিশ্চয়।

রাজা ভর্তৃহরি অবাক হয়ে তাম্ৰধ্বজকে দেখলেন। কথাটি তাঁর মনে ধরেছে। তিনি বিষণ্ণ  হয়ে গেলেন। ব্যাপ্ত আকাশের দিকে তাকালেন। উদাস হয়ে গেলেন আকাশের দিকে তাকিয়ে। রানীর কথা মনে পড়ল। দেবদাসীর কথা মনে পড়ল। কী নাম যেন তার? ললিতা দাসী। রাজার মনে পড়ল গণিকা দেবদত্তার কথা। তারপর কারোর কথা মনে পড়ল না। সবাইকে ভুলে তিনি আকাশ পানে চেয়ে থাকলেন। চোখে জল চলে এল। ওফ্ কী একা! অন্ধের মতো নিঃসঙ্গ আর কেউ হয় না। সে আকাশ দেখতে পায় না, আলো দেখতে পায় না, কোনো প্রিয়জনকে দেখতে পায় না। রাজার মনে হলো এই মহাব্রহ্মাণ্ডে তিনি একা। আর কেউ নেই এই চরাচরে। তিনি থরথর করে কাঁপতে লাগলেন। 

অনেকসময় নিস্তব্ধ হয়েছিলেন রাজা এবং তাম্ৰধ্বজ। দুইজনের মধ্যে কাল যেন বহমান হয়ে যায় কালান্তরে। অপরিসীম নৈঃশব্দ্য ঘিরে রেখেছিল দুইজনকে। বহুক্ষণ বাদে তাম্ৰধ্বজ ডাক দেয়, মহারাজ, চুপ করে আছেন কেন? 

রাজা মাথা নামালেন আকাশ থেকে, অস্ফুটস্বরে বললেন, অরুন্ধতীকে দেখছিলাম। 

তাম্ৰধ্বজ বলল, অন্ধ আচার্য একা একা নদীতীর ধরে চলে গেলেন, আপনি রাজা,  তাঁকে নিবৃত্ত করলেন না  অলীক এক  আকাঙক্ষায়, কিন্তু রাজার ধর্ম কি এই? 

রাজা পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাম্ৰধ্বজকে দেখলেন। কথার উত্তর দিলেন  না। 

তাম্ৰধ্বজ বলল, অন্ধ আতুরকে তো রক্ষা করেন রাজা, রাজার কাছে অন্ধ আর চক্ষুমাণ, ধনী আর দরিদ্র, জ্ঞানী এবং অজ্ঞানী, সুন্দর আর অসুন্দর সবই তো সমান।

রাজা একটু সময় নিয়ে ধীরে ধীরে বললেন, রাজ্যের কল্যাণ আকাঙ্ক্ষায় আমি আচার্যকে যেতে  দিয়েছি, যখন রাজ্য পোড়ে অনাবৃষ্টির আগুনে তখন রাজা পক্ষপাতশূন্য হয়ে থাকতে পারেন না, বিচার করতে হয় কে অন্ধ কে চক্ষুষ্মাণ, যুদ্ধের কালে যেমন সবল সুস্থ পুরুষ প্রয়োজন, তারই দিকে রাজার পক্ষপাতিত্ব, তেমনি এই ভয়ানক প্রাকৃতিক দুর্বিপাকে চক্ষুষ্মাণ ব্যক্তিই রাজার আশ্রয় হবেন। 

তাম্ৰধ্বজ বলল, এই দুর্বিপাক কি প্রাকৃতিক?

প্রকৃতি যখন বিরূপ।

মহারাজ মানুষ ভাবছে এ হলো ভগবান মহাকালের রোষ।

রাজা বললেন, এই প্রকৃতিই মহাকালেশ্বর, আমি আশা করছি ফিরে আসবেন আচার্য বৃষভানু, তখন তাঁর দুই চোখ আবার দীপ্যমান হয়ে উঠবে, উজ্জয়িনীর আকাশ ছেয়ে যাবে মেঘে।

দুর্বিপাক যখন প্রাকৃতিক, প্রকৃতি ছাড়া কে দেবে মেঘ? 

রাজা চুপ করে থাকলেন, মাথা নাড়তে লাগলেন, তারপর বললেন, তবুও তো মানুষ বিস্ময়ের অপেক্ষায় থাকে, আচমকা এমন কিছু ঘটে যায় যা এ জীবনে মানুষ আগে কখনো ভাবেনি, তেমনই তো হতে পারে।

তাম্ৰধ্বজ বলল, বিস্ময়কর কোনো ঘটনার অপেক্ষায় থাকা মানে মানুষের নিজের কোনো কিছু সম্পাদনের দায় থাকে না। 

রাজা চুপ করে থাকলেন। তাম্ৰধ্বজ বুঝতে পারছিল নিজের ভিতরের দ্বন্দ্বে দীর্ণ হয়ে যাচ্ছেন উজ্জয়িনীর রাজা। ইনি কোমলমতি। বিপন্ন রাজা ভর্তৃহরি অন্ধ জ্যোতির্বিদকে রওনা করিয়ে দিলেন বন্ধুর পথে এমন একজনের খোঁজে যার অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে আছে কিনা সন্দেহ। কে নামাবে বৃষ্টি? প্রকৃতি ব্যতীত কার সেই ক্ষমতা আছে? তাম্ৰধ্বজ বুঝতে পারছিল চারদিক থেকে বিপর্যস্ত রাজা এখন কী করবেন, কী বলবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। সে আবার জিজ্ঞেস করে, আচার্যর নিষ্ক্রমণে কি উজ্জয়িনীর কল্যাণ হবে, এমন ধারণা করেছেন আপনি, নাকি সত্যিই ভেবেছেন আচার্য কোনো ঐন্দ্রজালিককে নিয়ে ফিরবেন? 

রাজা চমকে উঠলেন। অন্ধকারের দেওয়ালে পিঠ দিয়ে  মাথা নামালেন, ধীরে ধীরে বললেন, জানি না কিসে কী হয়, অনাবৃষ্টি ক্রমশ মরণের দিকে নিয়ে যাচ্ছে উজ্জয়িনীকে, অনাবৃষ্টিই মৃত্যু, আচার্য বললেন তিনি অন্ধ হয়ে মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করছেন যেন, অন্ধতাই তো জোতির্বিদের মৃত্যু, মনে হলো উনি ওঁর মৃত্যুকে সঙ্গে করে নগর ছেড়ে গেলে নগর বৃষ্টির মুখ দেখবে, প্রাণের চিহ্ন ফুটে উঠবে সবদিকে।

তাম্রধ্বজ টের পায় রাজা এক নিমজ্জিত মানুষ। কী করছেন, কী ভাবছেন নিজেই উপলব্ধি করতে পারছেন না। রাজা তো জ্ঞানী। আশ্চর্য! জ্ঞানী হয়েও তিনি বুঝতে পারছেন না ব্যর্থ মানুষের নিষ্ক্রমণে গাছের পাতাটিও কাঁপে না, ধুলো ওড়ে না পথে। বৃষভানুর নিষ্ক্রমণ হোক বা না হোক তাতে উজ্জয়িনীর কোনো পরিবর্তন হবে না। তাহলে কেন অসহায় মানুষটিকে যেতে দেওয়া? হয়ত আচার্য তাঁর ব্যর্থতা ঢাকতে অন্ধতার কথা বলেছেন। তাঁর গণনায় কিছুই তিনি খুঁজে পাননি তাই অন্ধ হয়ে নগর থেকে নিষ্ক্রমণ। সেই নিষ্ক্রমণের কারণটি পোক্ত করতে এক ঐন্দ্রজালিকের কল্পনা যে কিনা তাঁকে চক্ষুষ্মাণ করবে, আকাশে মেঘ আনবে অলৌকিক ক্ষমতায়। তাম্রধ্বজ চেয়ে থাকে অন্ধকারে। আচার্য নদীতীর ধরে মিলিয়ে গেছেন, ওই পথেই গিয়েছিল ধ্রুবপুত্র। ওইদিকে। তাম্ৰধ্বজ ধীরে ধীরে বলল কথাটা, এইভাবে না হোক, ওই পূর্বপথেই চলে গিয়েছিল আর একজন, ধ্রুবপুত্র। 

কে ধ্রুবপুত্র, তার কথা কেন?

সে নগরে নেই, সে চলে যাওয়ার পরে অবন্তীর আকাশ নির্মেঘ হয়ে গেছে। 

সে তো কত মানুষ গেছে, আবার কতজন এসেছে, যাওয়া আসা চলেছেই, তার সঙ্গে অনাবৃষ্টির কী সম্পর্ক? 

কথাটা খুব পরিষ্কার। তবুও তাম্ৰধ্বজ বলে, আমি খুঁজে খুঁজে এইটুকু জানতে পেরেছি মহারাজ, অনাবৃষ্টি যদি মৃত্যু হয়, বৃষ্টির দিন তাহলে জন্ম, আমার তো মনে হয় বৃষ্টি শুধু জন্ম নয় বৃষ্টিই হলো জ্ঞান, অনাবৃষ্টি হলো অজ্ঞানতা, ধ্রুবপুত্র ছিল প্রকৃত জ্ঞানী। 

রাজা বললেন, অবিশ্বাস্য! এই নগর থেকে জ্ঞান অন্তর্হিত হয়েছে? 

হয়েছে মহারাজ, দেখলেন তো আচার্যকে, তিনি তাঁর সমস্ত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে জরাগ্রস্থ হয়ে যাচ্ছেন, মহারাজ আপনি সমস্তদিকে তাকিয়ে দেখুন, আপনি ভেবে দেখুন, অজ্ঞানতা না হলে নগরে এই সমস্ত ঘটনা ঘটে যায়। 

কোন ঘটনা?

আপনি মনে করে দেখুন।

রাজা বললেন, কিন্তু তুমি কে?

আমি তো দশার্ণ দেশীয়... বলেছি তো মহারাজ।

রাজা অদ্ভূত চোখে দেখলেন তাম্ৰধ্বজকে। তাঁর যেন চেনা মনে হয় এই যুবকটিকে। দেখেছিলেন কি আগে কখনো? কবে কোথায় তা মনে করতে পারলেন না রাজা ভর্তৃহরি। ইদানীং এই হয়েছে। স্মৃতিবিভ্রম ঘটে যাচ্ছে প্রায়শ। 

চলবে

 

ধ্রুবপুত্র (পর্ব এক)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব দুই)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তিন)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চার)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পাঁচ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ছয়)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সাত)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আট)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব নয়)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব দশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব এগার)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব বারো)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চৌদ্দ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পনের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ষোল)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সতের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আঠারো)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব উনিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব কুড়ি)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব একুশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব বাইশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তেইশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চব্বিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পঁচিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ছাব্বিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সাতাশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আটাশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব উনত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব একত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব বত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তেত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চৌত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পঁয়ত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ছত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সাঁইত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আটত্রিশ)

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top